• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > ই-বর্জ্য : পরিবেশের হুমকি
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: মইন উদ্দীন মাহমুদ
মোট লেখা:২৭
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৪ - মার্চ
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
ই-সেবা
তথ্যসূত্র:
এ সময়ে
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
ই-বর্জ্য : পরিবেশের হুমকি
আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে সহজ ও সাবলীল করতে প্রায় প্রতিদিনই নিত্যনতুন প্রযুক্তিপণ্য আসছে। বিস্ময়কর ব্যাপার, ইদানীংকার প্রযুক্তিপণ্যের আগমন যত দ্রুত ঘটে, প্রস্থানও ঠিক তত দ্রুত ঘটে। মূলত আরও উন্নত প্রযুক্তিপণ্য উদ্ভাবনের কারণেই প্রযুক্তিপণ্যের দ্রুত প্রস্থান ঘটে থাকে। অবশ্য এর পেছনে প্রধান অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে উন্নত থেকে উন্নততর প্রযুক্তিপণ্যের প্রতি আমাদের মাত্রাতিরিক্ত আসক্তি এবং প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে নতুন নতুন প্রযুক্তিপণ্য দিয়ে নিজেদেরকে অন্যদের চেয়ে অধিকতর আধুনিক ও অগ্রগামী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার মনমানসিকতা। সাধারণত এ প্রযুক্তিপণ্যগুলো থাকে আমাদের সাথে, বাসায়, কর্মক্ষেত্রসহ সর্বত্রই। এসব প্রযুক্তিপণ্যে রয়েছে কঠিন ধাতু এবং ক্ষতিকর বিষাক্ত উপাদান, যা শুধু আমাদের স্বাস্থ্যের জন্যই ক্ষতিকর নয়, বরং পরিবেশের জন্যও খুবই ক্ষতিকর ও ঝুঁকিপূর্ণ যদি না তা যথযথভাবে রিসাইকেল করা হয়। লক্ষণীয়, বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বেড়ে চলা বৃহদাকার উৎপাদন খাত হয়ে উঠেছে ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ইক্যুইপমেন্ট ইন্ডাস্ট্রিজ।
লক্ষণীয়, সামান্য কয়েক দিনের ব্যবহার হওয়া প্রযুক্তিপণ্যগুলো বিশেষ করে ইলেকট্রনিক্স ও ইলেকট্রিক্যাল ইক্যুপমেন্ট, যা ট্রিপল ই (ঊঊঊ) হিসেবে পরিচিত, খুব দ্রুতই সেকেলের পণ্য হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে এবং প্রতিস্থাপিত হচ্ছে নতুন প্রযুক্তিপণ্য দিয়ে। বিস্ময়করভাবে যার স্থায়িত্ব খুবই সামান্য। পুরনো পরিত্যক্ত ও বাতিল ইলেকট্রনিক্স পণ্যগুলোর খুব সামান্য কিছু সময় ব্যবহার হয় সেকেন্ডহ্যান্ড পণ্য হিসেবে এবং বাকিগুলো ই-ওয়েস্ট তথা ই-বর্জ্য হিসেবে খুবই অসচেতনভাবে আবর্জনার স্তূপ করা হয় আমাদের চারপাশের কোথাও না কোথাও। এমন অবস্থা আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর তুলনায় উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে অনেক বেশি ঘটে থাকে। ই-বর্জ্য সৃষ্টির ক্ষেত্রে বিশ্বে সবচেয়ে এগিয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্র। এতে যে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে শুধু তাই নয়, বরং স্বাস্থ্যের জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ বটে। আর এ কারণেই ই-ওয়েস্ট পদবাচ্যটি বর্তমানে বিশ্বে সবচেয়ে পরিচিত ও আলোচিত বিষয়গুলোর মধ্যে একটি হয়ে উঠেছে।

ই-বর্জ্য কী?

ই-ওয়েস্ট বা ই-বর্জ্য পদবাচ্য দিয়ে সব ধরনের ইলেকট্রিক্যাল ইলেকট্রনিক্স ইক্যুইপমেন্ট বা ট্রিপল ই পণ্যকে বুঝায়, যেগুলো ব্যবহার অযোগ্য বা বাতিল বা সেকেলের হয়ে গেছে। ই-ওয়েস্টের তালিকায় থাকতে পারে টিভি কমপিউটার, মোবাইল ফোন, ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রোওয়েব ওভেন, ইলেকট্রনিক্স খেলনা, হোম এন্টারটেইনমেন্ট, স্টেরিও, সার্কিটারি সংবলিত বিজনেস আইটেম এবং বৈদ্যুতিক শক্তিসহ ইলেকট্রিক্যাল কম্পোনেন্ট বা ব্যাটারি। ই-ওয়েস্টকে একেক দেশে একেকভাবে নির্দিষ্ট করা হয়। যেমন যুক্তরাষ্ট্রে কনজ্যুমার ইলেকট্রনিক্স, যেমন টিভি ও কমপিউটার ইত্যাদিকে বুঝায়। আর ইউরোপে সবকিছুকেই বুঝায় যেখানে ব্যাটারি বা পাওয়ার কর্ড আছে।

ই-বর্জ্যের সাম্প্রতিক চিত্র

সম্প্রতি জাতিসংঘের অংশীদারী প্রতিষ্ঠান সলভিং দ্য ই-ওয়েস্ট প্রবলেম (StEP) একটি নতুন ইন্টারেক্টিভ ই-ওয়েস্ট ম্যাপ প্রকাশ করে। এসটিইপির সংগ্রহ করা ডাটা থেকে জানা যায়, সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক্স পণ্যের ব্যবহার ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ায় ই-ওয়েস্ট বা ই-বর্জ্যের পরিমাণ আগামী বছরগুলোতে ৩৩ শতাংশ করে বেড়ে ২০১৭ সালের মধ্যে বার্ষিক ৬ কোটি ৫০ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হবে। এখানে গত বছর ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স আইটেম থেকে ই-বর্জ্য উৎপন্ন হয় ৪ কোটি ৯০ লাখ মেট্রিক টন। এ তথ্য প্রকাশ করা হয় ১৮৪টি দেশের তুলনামূলক ই-বর্জ্যের বার্ষিক ডাটা পর্যালোচনা করে। এই ভয়ানক পূর্বাভাসমূলক রিপোর্ট প্রকাশ করে সলভিং দ্য ই-ওয়েস্ট প্রবলেম। এই পরিমাণকে এমনভাবে বলা যায়, ১১টি বিশাল পিরামিড বা ২০০টি অ্যাম্পায়ার বিল্ডিংয়ের সমান ওজন কিংবা বলা যায়, ই-বর্জ্য বোঝায় ৪০ টনি ট্রাকগুলোকে একটি হাইওয়ে রাস্তায় একটির পর একটিকে এক লাইনে দাঁড় করালে যার দৈর্ঘ্য হবে ভূ-বিষুবরেখার তিন-চতুর্থাংশ সীমার সমান। এ রিপোর্টে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, সারাবিশ্বের ৭০০ কোটি জনগণের প্রতিজন গড়ে বছরে ৭ কেজি করে ই-বর্জ্য সৃষ্টি করে।
সারাবিশ্বে কী পরিমাণ ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ইক্যুইপমেন্ট বিক্রি হয়, কী পরিমাণ ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স পণ্য পরিত্যক্ত হয়ে ই-বর্জ্যে পরিণত হয়, তা পর্যবেক্ষণ করে এসটিইপি। এসটিইপির প্রকাশিত ম্যাপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার নিয়ম, বিধান, পরিকল্পনা ও দিকনির্দেশনা। এসটিইপির প্রকাশিত ইন্টারেক্টিভ ই-ওয়েস্ট ম্যাপ থেকে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের অন্য রাষ্ট্রগুলো ব্যবহার হওয়া পুরনো ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স পণ্যগুলো তৃতীয় বিশ্বের অনুন্নত দেশগুলোতে রফতানি করে। যুক্তরাষ্ট্র অন্য যেকোনো ইলেকট্রিক্যাল পণ্যের চেয়ে বেশি সিআরটি মনিটর এবং অন্য যেকোনো ইলেকট্রনিক্স পণ্যের চেয়ে বেশি সেলফোন রফতানি করে। লক্ষণীয়, ই-বর্জ্য উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র এককভাবে গত বছর ১ কোটি ৩ লাখ মেট্রিক টন ই-বর্জ্য উৎপাদন করে। এরপরই চীনের অবস্থান। চীন গত বছর ৮ মিলিয়ন মেট্রিক টন ই-বর্জ্য উৎপাদন করে। এসটিইপির গবেষণায় প্রকাশিত হয়, আমেরিকার প্রতিটি অধিবাসী প্রতিবছর গড়ে ২৯ দশমিক ৮ কেজি হাইটেক পণ্য ই-বর্জ্য হিসেবে সৃষ্টি করে, যা চীনের নাগরিকদের চেয়ে ছয়গুণ বেশি। এ ক্ষেত্রে চীনের প্রতিটি নাগরিক বছরে ৫ দশমিক ৪ কেজি হাইটেক পণ্যের ই-বর্জ্য সৃষ্টি করে।

চীন বর্তমানে ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ইক্যুইপমেন্টের পণ্য উৎপাদন করে বিশ্ববাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ই-বর্জ্য তৈরির ক্ষেত্রে চীন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে সামান্য পিছিয়ে থাকলেও খুব শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যাবে। যাই হোক, ই-বর্জ্য যুক্তরাষ্ট্র ও চীনকে গ্রাস করে ফেলেছে। কেননা, গত বছর চীন ১২ দশমিক ২ মিলিয়ন মেট্রিক টন বৈদ্যুতিক পণ্য বাজারে সরবরাহ করে। পক্ষন্তরে যুক্তরাষ্ট্র বাজারে বৈদ্যুতিক পণ্য সরবরাহ করে প্রায় ১১ মিলিয়ন মেট্রিক টন।

যুক্তরাষ্ট্র প্রতিবছর ২৬ হাজার ৫০০ টন ই-বর্জ্য বিশ্বের বিভিন্ন গরিব দেশগুলোতে পাঠায়। মোবাইল ফোন ফর্মে ১ কোটি ৪০ লাখ টন ব্যবহার হওয়া ইলেকট্রনিক্স পণ্য প্রতিবছর রফতানি করে। ব্যবহার হওয়া বেশিরভাগ মোবাইল ফোনের গন্তব্য হলো হংকং, ল্যাটিন আমেরিকাসহ ক্যারিবীয় দেশগুলো। পুরনো কমপিউটারগুলো সাধারণত পাঠানো হয় এশিয়ার দেশগুলোতে। ভারি আইটেমগুলো যেমন টিভি ও কমপিউটার মনিটরের চালান যায় মেক্সিকো, ভেনেজুয়েলা ও চীনে।

ই-বর্জ্য সৃষ্টিকারী দেশগুলোর মধ্যে আরেকটি দেশ হলো ব্রিটেন, যার অবস্থান বর্তমানে বিশ্বে ষষ্ঠ। এ দেশটি বর্তমানে প্রতিবছর ১ কোটি ৪০ লাখ টন ই-বর্জ্য সৃষ্টি করে। ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থানের মধ্যে রয়েছে ই-বর্জ্য সৃষ্টি করার ক্ষেত্রে। ব্রিটেনের ই-বর্জ্যের তালিকায় রয়েছে অনাকাঙ্ক্ষিত ফ্ল্যাট-স্ক্রিন টিভি থেকে শুরু করে মোবাইল ফোন, ফ্রিজ ও মাইক্রোওয়েব পর্যন্ত সবকিছুই। প্রতিবছর ব্রিটেন জনপ্রতি ২১ দশমিক ৮ কেজি ই-বর্জ্য সৃষ্টিকারী দেশ হিসেবে র্যািঙ্কিংয়ে ২২তম স্থান দখল করে আছে।

অস্ট্রেলীয় ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিক্সের মতে, অস্ট্রেলিয়া হলো বিশ্বের দশম বৃহত্তম ই-বর্জ্য উৎপাদনকারী দেশ। এ দেশটিতে ই-বর্জ্য সৃষ্টির হার অন্যান্য বর্জ্য সৃষ্টির তুলনায় তিনগুণ বেশি। বিশেষজ্ঞদের মতে, অস্ট্রেলিয়ায় বসতবাড়িতে কমপক্ষে ২২ ধরনের ইলেকট্রনিক পণ্য ব্যবহার হয়, যেগুলো খুব তাড়াতাড়ি পরিত্যক্ত হয় শুধু আরও উন্নত ও আধুনিক প্রযুক্তিপণ্যের প্রতি মাত্রাতিরিক্ত আসক্তির কারণে এবং সৃষ্টি করে ই-বর্জের স্তূপ।
অন্যদিকে আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত প্রতিবছর ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ইক্যুইপমেন্ট উৎপাদন করে ৪৩৬২ মেট্রিক কিলোটন, যেখানে ফলাফল হিসেবে পাওয়া যায় ২৭৫১ মেট্রিক কিলোটন ই-বর্জ্য। এসব ই-বর্জ্যে থাকে বিষাক্ত উপাদান, যেমন সীসা, পারদ, ক্যাডমিয়াম, আর্সেনিকসহ অন্যান্য স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর উপাদান।

কোন দেশ কত ই-বর্জ্য সৃষ্টি করছে
ই-বর্জ্যের ক্ষতিকর প্রভাব

যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলো প্রচুর পরিমাণে পুরনো ও সেকেলের ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স পণ্য চীন, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তান, বাংলাদেশর মতো অনুন্নত বিশ্বে রফতানি বা দান করে ই-বর্জ্যের ডাম্প করে আসছে। চীন, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশগুলো শুধু স্থানীয়ভাবে ই-বর্জ্যের মাত্রা বাড়িয়ে যাচ্ছে তা নয়, বরং ই-বর্জ্য নিয়ে কারবারও করছে। সহজ কথায় যাকে বলা যায় ই-বর্জ্যের পুনর্ব্যবহার বা রিসাইকেল করছে। লক্ষ্যণীয়, পরিত্যক্ত ই-বর্জ্য নিয়ে কাজ করতে গেলে কঠোর নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়, যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মেনে চলতে দেখা যায় না। অথচ এসব ই-বর্জ্য পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব যেমন ফেলে, তেমনি খুবই ক্ষতিকর।

ই-বর্জ্য ধারণ করে বিষাক্ত নানা উপাদান : সীসা, ফসফরাস, পারদ, ক্যাডমিয়াম, গ্যালিয়াম, আর্সেনাইট ইত্যাদি, যা স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। ক্যাডমিয়াম পরিবেশকে দারুণভাবে দূষিত করে এবং কিডনি ও হাড়ের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। পারদ মানুয়ের স্নায়ু ব্যবস্থাকে দারুণভাবে প্রভাবিত করে। মোবাইল ফোনে কপার, টিন, কোবাল্টসহ প্রায় ৪০ ধরনের ধাতু থাকে, যেগুলোর বর্জ্য স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য খুবই ক্ষতিকর। প্রতিটি প্রযুক্তিপণ্যেই সমন্বিত রয়েছে কোনো না কোনো ক্ষতিকর ধাতব উপাদান। তাই বলে প্রযুক্তিপণ্য ব্যবহার পরিহার করতে হবে এমনটি কেউ বলছেন না ভাবছেন না। বরং সবাই ভাবছেন কীভাবে ই-বর্জ্যকে কাজে লাগানো যায় অর্থাৎ ই-বর্জ্যকে রিসাইকেল বা পুনঃচক্রায়ন করা যায়।

ই-বর্জ্যের পুনঃচক্রায়ন

সাধারণত ই-বর্জ্য খুবই অসতর্ক ও অসচেতনভাবে আমাদের চারপাশে উন্মুক্ত স্থানে, যেখানে-সেখানে, আবর্জনার সত্মূপে ফেলা হয়। আমাদের দেশে ভাঙা-পুরনো জিনিসপত্র সংগ্রহকারীরা বিভিন্ন ধরনের বর্জ্যের সাথে সাথে ই-বর্জ্যও কুড়িয়ে নিয়ে যায়। শুধু তাই নয়, এদের মধ্য থেকে কেউ কেউ ময়লা-আবর্জনার স্তুপ থেকে সংগ্রহ করা বিভিন্ন ই-বর্জ্য থেকে মূল্যবান ধাতু যেমন সোনা, তামা, সীসা, টিন উদ্ধারের জন্য শক্তিশালী অ্যাসিড ব্যবহার করে খুবই অসতর্ক ও অসচেতনভাবে। সরকার বা সিটি কর্পোরেশনের বৈধ অনুমতি ছাড়াই এ ধরনের কাজ সম্পন্ন হয়ে থাকে। সবচেয়ে বিস্ময়কর ও ভয়ঙ্কর ব্যাপার, এসব কাজে নিয়োজিত শ্রমিকেরা কাজের সময় প্রতিরোধমূলক কোনো ব্যবস্থা হিসেবে হ্যান্ডগস্নাভস বা কোনো মুখোশও ব্যবহার করে না।

ইতোমধ্যে চীন ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশে ই-বর্জ্য রিসাইক্লিংয়ের জন্য বিভিন্ন সংগঠন যেমন গড়ে উঠেছে, তেমনি গড়ে উঠেছে ই-বর্জ্য সংগ্রহ করে রিসাইক্লিংয়ের জন্য বিভিন্ন শিল্পস্থপনা। ই-বর্জ্য রিসাইকিংয়ে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া বেশিরভাগ ই-বর্জ্য রিসাইক্লিং কার্যক্রমে ব্যবহার হয় খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ম্যানুয়াল প্রক্রিয়া, যা পরিবেশ ও কর্মচারীদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। কোনো কোনো রিসাইক্লিং প্রসেসে ক্ষতিকর অ্যাসিড ব্যবহার করা হয় সার্কিটবোর্ড ভেজানোর জন্য। সার্কিটবোর্ড অ্যাসিডে ডুবানো হয় মূলত সার্কিটবোর্ড থেকে মূল্যবান ধাতু সংগ্রহ করার জন্য। ধাতু সংগ্রহ করার পর পরিত্যক্ত বিষাক্ত অ্যাসিডকে কোনো ধরনের পরিশোধন না করেই অসচেতনভাবে উন্মুক্ত নর্দমায় বা ভূমিতে ফেলা হয়। এ ধরনের কর্মকা- পরিবেশের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এ ধরনের অনিয়ন্ত্রিত কার্যকালাপ সংঘটিত হয় বাংলাদেশসহ অনুন্নত বিশ্বের অনেক দেশে। ঝুঁকিপূর্ণ ই-বর্জ্যের শৃঙ্খলাবদ্ধই হলো রিসাইক্লিংয়ের প্রধান কাজ।

দুঃখের বিষয়, অনুন্নত বিশ্বের অনেক দেশের মতো আমাদের দেশেও ই-বর্জ্য সম্পর্কে জনসাধারণের মাঝে জনসচেতনতার বড় অভাব। বেশিরভাগ সাধারণ মানুষ মনে করেন ইলেকট্রনিক্স পণ্যের যত্রতত্র ব্যবহার তেমন ঝুঁকিপূর্ণ নয় এবং তা যেনতেনভাবে উন্মুক্ত জায়গায় আবর্জনার স্তূপ করলে স্বাস্থ্যের পরিবেশের কোনো ক্ষতি হয় না। তবে এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। আমাদের সমাজের অনেকেই এখন বুঝতে পারছেন ইলেকট্রনিক্স পণ্য ধারণ করে স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ উপাদান এবং সেগুলো যেখানে-সেখানে না ফেলে দিয়ে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে রিসাইকেল করা উচিত। যদি পরিত্যক্ত ইলেকট্রনিক্স পণ্য যথাযথভাবে রিসাইকেল করা না হয়, তাহলে আমাদের চারপাশের পরিবেশ দূষিত হতে পারে, পানি দূষিত হতে পারে ভারি ধাতু, পারদ, সীসা ইত্যাদি দিয়ে। তাই ই-বর্জ্যকে কখনই উন্মুক্ত মাটিতে যেমন ফেলা উচিত নয়, তেমনি অন্যান্য গৃহস্থালি বর্জ্য, স্ক্র্যাপ ডিলারদের কাছেও বিক্রি বা দেয়া উচিত নয়, বিশেষ করে যারা অনিয়ন্ত্রিতভাবে উন্মুক্ত জায়গায় ই-বর্জ্য নিয়ে কাজ করেন।

লক্ষণীয়, ই-বর্জ্য সম্পর্কে যারা কিছুটা ধারণা রাখেন, তারাও হয়তো জানেন না মোবাইল ফোনে অতি মূল্যবান ধাতু, সোনা, সিলভার ও প্লাডিয়াম ছাড়া থাকে ক্ষতিকর বিষাক্ত উপাদান সীসা, জিঙ্ক ও আর্সেনিক। যখন ব্যাটারিসহ ফোনসেট উন্মুক্ত ভূমিতে ফেলে দেয়া হয়, তখন তা ভূমি ও পানিকে দূষিত করে। আমাদের অজ্ঞতা ও অসচেতনতার কারণে পরিত্যক্ত ও বাতিল ফোনসেট যেখানে-সেখানে ফেলে দেয়ার হার ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। এ প্রবণতা পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ।

আমরা যা করতে পারি

বিশ্বব্যাপী ই-বর্জ্য এক বড় সমস্যা সৃষ্টি করছে, যা মূলত শুরু হয়েছে আমাদের মাধ্যমেই। সুতরাং আপনার পুরনো পিসি বা মোবাইল ফোন বাতিল করার আগে ভালো করে ভেবে দেখুন। যদি আপনার পিসি তুলনামূলকভাবে ভালো ও কার্যোপযোগী অবস্থায় থাকে, তাহলে সেই কমপিউটার বা ল্যাপটপকে সম্পূর্ণরূপে বাতিল না করে যাদের দরকার তাদেরকে দান করুন। এ ছাড়া ব্যবহারোপযোগী অথচ বাতিল কমপিউটার সংগ্রহ করে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দিতে পারেন যারা যেখানে-সেখানে অব্যবহার হওয়া বাতিল ই-বর্জ্য ফেলবে না

ফিডব্যাক : mahmood@comjagat.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস