• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > টেক স্টার্টআপের বিস্ফোরণ
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: গোলাপ মুনীর
মোট লেখা:২৩৩
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৪ - মার্চ
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
ফিচার
তথ্যসূত্র:
প্রচ্ছদ প্রতিবেদন
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
টেক স্টার্টআপের বিস্ফোরণ
প্রায় ৫৪ কোটি বছর আগে আমাদের এই পৃথিবীতে প্রথম অবাক করা কিছু ঘটনা ঘটে। প্রাণের আকার বহুমাত্রিক হতে শুরম্ন করে, আর তা জন্ম দেয় এক ‘ক্যামব্রিয়ান এক্সপস্নশন’। তখন থেকে স্পঞ্জ ও অন্যান্য খুদ্র প্রাণীই ছিল মূলত পৃথিবী নামের এ গ্রহের মালিক। জানিয়ে রাখি, স্পঞ্জ হচ্ছে সহজে পানি শুষে নিতে পারে এমন ছোট ছোট ছিদ্রযুক্ত সরলদেহী সামুদ্রিক প্রাণী। কিন্তু মাত্র কয়েক লাখ বছরের মধ্যে প্রাণিজগৎ আরও বৈচিত্র্যময় হয়ে ওঠে। ঠিক অনেকটা এমনিভাবে একই ধরনের একটা কিছু আজ ঘটে চলেছে ভার্চু্যয়াল জগতে। ডিজিটাল স্টার্টআপগুলো অর্থাৎ নতুন নতুন ডিজিটাল ফার্ম নিয়ে আসছে বিচিত্র ধরনের নতুন নতুন সেবা ও পণ্য, যা ঢুকে পড়ছে অর্থনীতির আনাচে-কানাচে। এগুলো নতুন নতুন আকার দিচ্ছে সব সেক্টরের ইন্ডাস্ট্রিকে। এমনকি পরিবর্তন আনছে ফার্মগুলোর ধরন-ধারণেও। ‘সফটওয়্যার ইজ ইটিং দ্য ওয়ার্ল্ড’- এ অভিমত সিলিকন ভ্যালির ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট মার্ক অ্যান্ড্রিসেনের।

ডিজিটাল ফিডিংয়ের উন্মত্ততা জন্ম দিয়েছে একটি গ্লোবাল মুভমেন্টের। বার্লিন ও লন্ডন থেকে শুরম্ন করে সিঙ্গাপুর ও আম্মান পর্যমত্ম বেশিরভাগ বড় বড় শহরে এখন রয়েছে ‘স্টার্টআপ কলোনি’ বা ‘ইকোসিস্টেম’। এর মাঝে এগুলোর আবার রয়েছে শত শত স্টার্টআপ স্কুল (এক্সেলারেটর) এবং হাজার হাজার কো-ওয়ার্কিং স্পেস, যেখানে ২০ ও ৩০-এর কোটার বয়েসী কাজ-পাগল লোকেরা কুঁজো হয়ে বসে কঠোর মনোনিবেশে কাজ করছেন তাদের ল্যাপটপ নিয়ে। এসব ইকোসিস্টেম ব্যাপকভাবে পরস্পর সংযুক্ত। এ থেকে ব্যাখ্যা পাওয়া যায়, কেনো বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট উদ্যোক্তাদের আজ এতটা ভিড়। মধ্যযুগের জার্নিম্যানের মতো এরা ঘুরে বেড়ান নগর থেকে নগরে। এদের সামান্য ক’জন কয়েক সিমেস্টার কাটান ‘আনরিজেনেবল অ্যাট সি’-এর সাথে। আনরিজেনেবল অ্যাট সি হচ্ছে নৌকার ওপর একটি অ্যাক্সিলারেটর বা স্কুল। এর যাত্রীরা যখন কোড লেখেন, তখন এটি ঘুরে বেড়ায় বিশ্বব্যাপী। ‘কোড লেখেন, এমন যেকেউ হতে পারেন উদ্যোক্তা, পৃথিবীর যেকোনো স্থানে’- বলেন লন্ডনের ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট সাইমন লেভেনি।

ভাবতে পারেন, আমরা ফিরে যাচ্ছি আরেকটি ডটকম বিস্ফোরণের দিকে, যা হঠাৎ ফুঁৎকার দিয়ে ঘটতে বাধ্য। অবশ্য খাঁটি সফটওয়্যার স্টার্টআপের সংখ্যা এরই মধ্যে চরম পর্যায়ে পৌঁছে গিয়ে থাকতে পরে। অনেক নতুন অফারিং এখন বিদ্যমানগুলোর পুনরাবৃত্তি বই কিছু নয়। বিপদটা হচ্ছে অনেক বেশি পরিমাণ অর্থ খরচ করা স্টার্টআপে- এমনটিই সতর্ক করলেন মার্ক অ্যান্ড্রিসেন, যিনি নেটস্ক্যাপের সহ-প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে অনেক কাছে থেকে এই বিস্ফোরণ লক্ষ্য করেছেন। তিনি বলেন, ‘সর্বশেষ ফুঁৎকারের পর এর মনসত্মত্ত্বের আকার পেতে সময় নেয় দশ বছর। আর এমনকি আরেকটি ইন্টারনেট বিস্ফোরণ ছাড়া ৯০ শতাংশেরও বেশি স্টার্টআপ ধ্বংস হয়ে যাবে।’
গুরম্নত্বের দিক থেকে আজকের এই সময়টা সম্পূর্ণ আলাদা। আজকের উদ্যোক্তাগত বিস্ফোরণ ১৯৯০-এর দশকের ইন্টারনেট বিস্ফোরণের তুলনায় অধিকতর সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে। আর তা এত সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে যে, পূর্ববিজ্ঞেয় ভবিষ্যৎ পর্যমত্ম তা অব্যাহত থাকবে। ৫৪ কোটি বছর আগের ক্যামব্রিয়ান এক্সপস্নশনের একটি ব্যাখ্যা হচ্ছে, সে সময়ে জীবনের মৌলিক উপাদানগুলো আরও দ্রম্নত সংযোজনের মাধ্যমে পরিপূর্ণ করে তোলা হয়েছিল জটিল অর্গানিজমকে। একইভাবে ডিজিটাল সেবা ও পণ্যের জন্য বিল্ডিং বস্নকগুলো (মৌলিক উপাদানগুলো), অর্থাৎ ‘টেকনোলজিস অব স্টার্টআপ প্রোডাকশন’ এতটাই বিকশিত, সসত্মা ও সর্বব্যাপী হয়েছে যে, এগুলোকে সহজেই কম্বাইন ও রিকম্বাইন করা যেতে পারে। এসবের মধ্যে কিছু বিল্ডিং বস্নক হচ্ছে কোডের ছোট ছোট টুকরা, যা ইজি-টু-লার্ন প্রোগ্রামিং ফ্রেমওয়ার্কের (Such as Ruby on Rails) সাথে ইন্টারনেট থেকে ফ্রি কপি করা যায়। অন্যগুলো হচ্ছে ডেভেলপার (eLance, oDesk) পাওয়া, কোড (GitHub) শেয়ারিং করা এবং ইয়েজিবিলিটি (UserTesting.com) টেস্ট করার জন্য। এরপর আরও আছে অ্যাপিস্নকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস (এপিআইএস) ও ডিজিটাল পস্নাগ, যা বহুগণে দ্রম্নত বেড়ে চলেছে। এগুলো একটি সার্ভিসকে আরেকটি সার্ভিস ব্যবহারের সুযোগ করে দেয়। যেমন : ভয়েস কল (Twilio), ম্যাপ (Google) এবং পেমেন্ট (PayPal)। সবচেয়ে গুরম্নত্বপূর্ণগুলো হচ্ছে পস্ন্যাটফর্ম সার্ভিস, যেগুলো স্টার্টআপের অফারিং হোস্ট করতে পারে (অ্যামাজন ক্লাউড কমপিউটিং) এগুলো পরিবেশন (অ্যাপল অ্যাপ স্টোর) ও বিপণনের (ফেসবুক, টুইটার) মাধ্যমে। এরপর আছে ইন্টারনেট, যাকে বলা যায় ‘মাদার অব অল পস্ন্যাটফর্মস’। আর এই ইন্টারনেট এখন দ্রম্নত, সার্বজনীন ও তারবিহীন।

স্টার্টআপগুলো এখন চিমত্মাভাবনা করছে সবকিছুর আগে এসব পস্ন্যাটফর্ম নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানোর কথা। পরীক্ষা করে দেখছে, কী কী বিষয় ব্যবসায় ও জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিয় করে তোলা যায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা সম্ভব, কিছু কিছু ক্ষেত্রে অসম্ভব। গুগলের প্রধান অর্থনীতিবিদ হ্যাল ভেরিয়ান এর নাম দিয়েছেন ‘কম্বিনেটরিয়্যাল ইনোভেশন’। একদিক বিবেচনায় এসব স্টার্টআপ যা করছে, মানুষ সবসময় তা করে আসছে : ‘অ্যাপ্লাই নউন টেকনিকস টু নিউ প্রবলেমস’। প্রয়াত ফরাসি নৃবিজ্ঞানী ক্লডি লেভি-স্ট্রাউস এই প্রক্রিয়াকে বর্ণনা করেছেন bricolage (thinkering) অর্থাৎ ‘চিন্তাশীল’ নামে।

এন্টারপ্রিনিউরিয়্যাল এক্সপস্নশনেও টেকনোলজি অন্যভাবে শক্তি জুগিয়েছে। অনেক কনজ্যুমার ব্যবহার হয়েছেন বিভিন্ন ফার্মের অশ্রম্নতপূর্ব নামের ইনোভেটিভ সার্ভিস টেস্টিংয়ে। এবং ধন্যবাদ জানাতে হয় ওয়েবকে। কারণ, একটি স্টার্টআপ কীভাবে করতে হবে, ওয়েবের মাধ্যমে সেসব তথ্যে এখন সহজেই ঢুকে পড়া যায়। প্রোগ্রামিং টুল থেকে শুরম্ন করে ইনভেস্টমেন্ট টার্মশিট এবং ড্রেসকোড থেকে ভকেবুলারি পর্যমত্ম সবকিছুর স্টার্টআপের জন্য গেস্নাবাল স্ট্যান্ডার্ড বিকশিত হচ্ছে। এর ফলে এন্টারপ্রিনিউয়ার ও ডেভেলপারদের জন্য বিশ্বব্যাপী মুভ করা সহজতর হয়েছে।

নিজেই উদ্ভাবন করুন একটি কাজ

স্টার্টআপগুলোর জন্য অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তন নতুন গতিশীলতা সংযোজন করেছে। ২০০৮ সালের দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক মন্দার কারণ হয়ে ওঠে অনেক প্রত্যাশিত আগামী স্বর্ণযুগের বা মিলেনিয়েলসের। ১৯৮০-র দশকে জন্ম নেয়া লোকেরা এই অর্থনৈতিক মন্দার সময় থেকে কনভেনশনাল জবে তথা প্রচলিত কর্ম ক্ষেত্রে বিনিয়োগের আশা ছেড়ে দেয়। ফলে তাদের মনে এমন ধারণা জন্মে যে- হয় তাদের নিজেদের উদ্ভাবন করতে হবে, নয়তো একটি স্টার্টআপে যোগ দিতে হবে।

বিশেষ করে প্রচুরসংখ্যক মিলেনিয়্যাল আগ্রহী নয় কোনোভাবে একটি ‘রিয়েল’ জব পাওয়ায়। সাম্প্রতিক এক জরিপ চালানো হয় বিশ্বের ২৭টি দেশের ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়েসী ১২ হাজার লোকের ওপর। এদের দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি লোক মনে করেন, উদ্যোক্তা হওয়ার মাঝেই সুযোগ বেশি। এ থেকে একটি সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের আভাস মিলে। ‘তরুণেরা দেখছে, অন্যান্য জায়গায় উদ্যোক্তারা কী করছে এবং এরা সে ধরনের একটা চেষ্টা করতে চায়’- বললেন ইউইং ম্যারিওন কাউফম্যান ফাউন্ডেশনের জোনাথন ওর্টম্যান। এই ফাউন্ডেশন আয়োজন করে ‘গ্লবাল এন্টারপ্রিনিউয়ারশিপ উইক’।

সবশেষে বলা যায়, নগরগুলোতে নতুন আন্দোলনকে ফিরিয়ে আনায় স্টার্টআপগুলো হচ্ছে একটি অংশ। তরম্নণেরা ক্রমবর্ধমান হারে শহরতলি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে চলে যাচ্ছে, কোলাহল জমাচ্ছে আরবান ডিস্ট্রিক্টগুলোতে, যেগুলো হয়ে উঠছে নতুন নতুন ফার্মের প্রজননস্থল। এমনকি সিলিকন ভ্যালির ভরকেন্দ্র এখন আর ১০১ নম্বর মহাসড়ক বরাবর নয়, বরং সানফ্রান্সিসকোতে, মার্কেট স্ট্রিটের দক্ষিণে
এসব স্টার্টআপ যে ধরনের কাজে ব্যসত্ম, তা থেকে তাদের দ্রম্নত পরিবর্তনশীল টার্গেট সম্পর্কে একটা চিত্র পাওয়া যায়। এ কথা ঠিক, এসব স্টার্টআপের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা সফটওয়্যার অ্যানালগ যুগের প্রতিষ্ঠিত অবকাঠামোকে নিঃশেষ করে দিচ্ছে। উদাহরণ টেনে বলা যায়, সোশ্যাল নেটওয়ার্ক খরহশবফওহ মৌলিকভাবে পরিবর্তন এনেছে রিক্রুটমেন্ট বিজনেসে। অরৎনহন ওয়েবে বেসরকারি মালিকেরা স্বল্পকালীন ভাড়ার জন্য রুম ও ফ্ল্যাট অফার করে, যা হোটেল ইন্ডাস্ট্রির ক্ষতি করছে। আর টনবৎ নামের সার্ভিসের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ যাত্রী ও গাড়িচালকদের মধ্যে যোগাযোগ ঘটিয়ে দেয়া হয়।

এই সার্ভিস একইভাবে ক্ষতি করছে ট্যাক্সি বিজনেসের। অতএব এসব স্টার্টআপ কী কী কাজ করে তা উল্লেখ না করে বরং এই প্রতিবেদনে তুলে ধরার প্রয়াস পাব কীভাবে এরা অপারেট করে, কী করে এগুলো চর্চিত হয় অ্যাক্সেলেটরগুলোতে ও অন্যান্য সংগঠনে, কীভাবে এগুলোর অর্থায়ন চলে এবং কীভাবে এগুলো অন্যদের সাথে সহযোগিতা করে- ইত্যাদি বিষয়। এটি প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের এক কাহিনী, যে পরিবর্তন সৃষ্টি করছে একদল নতুন ইনস্টিটিউশন। আর বিশ্বব্যাপী সরকারগুলো এসব ইনস্টিটিউটে ক্রমবর্ধমান হারে সহযোগিতা যুগিয়ে যাচ্ছে।
স্টার্টআপগুলো চলে একটি আসক্তির ওপর। সবকিছুই ভীষণ উদ্দীপক। লোকজন তাতে অতিমাত্রায় চমৎকৃত হয়। তবে এই জগতের অন্ধকার দিকও আছে। ব্যর্থতা ডেকে আনতে পারে ধ্বংসযজ্ঞ। একজন উদ্যোক্তা হওয়ার অর্থ ব্যক্তিগত জীবন বিসর্জন দেয়া, ঘুম কমিয়ে দেয়া ও ফাস্টফুড খেয়ে বেঁচে থাকা। সম্ভবত এ কারণেই মহিলারা উদ্যোক্তা হওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী কম। আরও অশুভ দিক হচ্ছে, স্টার্টআপগুলো কর্মসংস্থান সৃষ্টির চেয়ে বিনাশই করতে পারে বেশি, অমত্মত স্বল্প মেয়াদে। এরপরও এই প্রতিবেদনের অভিমত দাঁড়াবে- স্টার্টআপের জগৎ আজ একটা পর্যালোচনার সুযোগ দেবে আগামী দিনের অর্থনীতিকে কীভাবে সংগঠিত করতে হবে। বিরাজমান মডেল হবে ছোট্ট প্লাটফর্মের ওপর চলা ইনোভেটিভ ফার্ম। এই প্যাটার্ন বা ধরন এরই মধ্যে বিকাশ লাভ করছে ব্যাংক, টেলিযোগাযোগ, বিদ্যুৎ এবং এমনকি সরকারি খাতের মতো নানা খাতে। যেমন : আর্কিমিডিসের মতো প্রাচীন দ্রুপদী বিজ্ঞানী এক সময় বলেছিলেন : ‘গিভ মি অ্যা পেস্নস টু স্ট্যান্ড অন, আই উইল মুভ দ্য আর্থ।’

ব্যবসায় সৃষ্টি

একটি স্টার্টআপ চালু করা খুবই সহজ, কিন্তু এরপরের কাজ হচ্ছে হাড়ভাঙা পরিশ্রম। ‘আমাদেরকে এমনকি আমাদের নিজের অফিসেও সার্ভার হোস্ট করতে হয়েছিল’- হেসে বললেন নাভাল রবিকাত্ম। ১৯৯৯ সালে তিনি ও তার কয়েকজন বন্ধু মিলে প্রতিষ্ঠা করেন তাদের প্রথম স্টার্টআপ Epinions, এটি কনজ্যুমার রিভিউয়ের একটি ওয়েবসাইট। ভেঞ্চার ক্যাপিটেলের জন্য তাদেরকে জোগাড় করতে হয়েছিল ৮০ লাখ ডলার। কমপিউটার কিনতে হয়েছিল সান মাইক্রোসিস্টেম থেকে, ডাটাবেজ সফটওয়্যার লাইসেন্স ওরাকল থেকে। আর ভাড়া করতে হয়েছিল আটজন প্রোগ্রামারকে। সাইটটির প্রথম সংস্করণ চালু করতে সময় নিয়েছিল কয়েক মাস। সে তুলনায় রবিকামেত্মর সর্বশেষ ভেঞ্চার সোশ্যাল নেটওয়ার্ক AngelList স্টার্টআপ ও বিনিয়োগকারীদের জন্য ছিল নিছক সময় নষ্ট করা। এতে খরচ হয়েছে হাজার হাজার ডলার, তার নিজের পকেট থেকে। হোস্টিং ও কমপিউটিং পাওয়ার পাওয়া যেত ইন্টারনেটের মাধ্যমে, সামান্য ফি দিয়ে। প্রয়োজনীয় সফওয়্যারের বেশিরভাগই ছিল ফ্রি। সবচেয়ে বড় খরচ ছিল দু’জন ডেভেলপারের বেতন। কিন্তু ধন্যবাদ জানাতে হয় তাদের কর্মক্ষমতাকে, এরা কয়েক সপ্তাহের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করে দিতে সক্ষম ছিলেন।
শুধু রবিকান্তই এ ধরনের ধারাবাহিক উদ্যোক্তা ছিলেন না। ১৯৯০-এর দশকে প্রথম ডটকম বিস্ফোরণ সূচিত হওয়ার পর থেকে স্টার্টআপ চালু করা অনেক সসত্মাতর হয়েছে, যা দ্রম্নত এগুলোর প্রকৃতিও বদলে দিয়েছে। আগে এক সময় বিজনেস পস্ন্যানে ছিল বড় ধরনের বাজি, তা আজ পরিণত কয়েক দফা ছোট ছোট পরীক্ষা, ও অব্যাহত উদঘাটনে। এই পরিবর্তন জন্ম দিয়েছে নতুন ধরনের ম্যানেজমেন্ট প্র্যাকটিসের।

সব নতুন প্রতিষ্ঠিত ফার্ম স্টার্টআপ হিসেবে কোয়ালিফাই হয় না। এ ক্ষেত্রের উলেস্নখযোগ্য বিশেষজ্ঞ স্টিভ ব্লাঙ্ক স্টার্টআপগুলোকে সংজ্ঞায়িত করেন সেইসব কোম্পানি হিসেবে, যেগুলো বিজনেস মডেলের সন্ধানে থাকে, যে মডেল এনে দেয় দ্রম্নত মুনাফাযোগ্য প্রবৃদ্ধি। আর এগুলোর লক্ষ্য একটি ‘মাইক্রো-মাল্টিন্যাশনাল’ হয়ে ওঠা, অর্থাৎ এই ফার্মটি বড় না হয়েও গেস্নাবাল। এগুলোর অনেকগুলোই নিছক ক্ষুদ্র ব্যবসায়, যেখানে ব্যবহার হয় ডিজিটাল টেকনোলজি। ক্রমবর্ধমান-সংখ্যক স্টার্টআপ হচ্ছে ‘সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজ’, যাদের রয়েছে একটি সামাজিক মিশন।
অতীতে সার্বজনীনভাবে স্টার্টআপগুলো শুরম্ন হতো একটি পণ্যের ধারণা নিয়ে। এখন বিজনেস সাধারণত শুরম্ন হয় একটি টিম নিয়ে- পরিপূরক দক্ষতাসম্পন্ন দু’জন লোক নিয়ে, যারা সম্ভবত পরস্পরকে ভালোভাবে চেনেন-জানেন। এদের ‘এন্টাপ্রিনিউয়ার’ না বলে অগ্রাধিকারভাবে বলা হয় ‘ফাউন্ডার’। সঠিক ধারণায় পৌঁছার আগে এসব ফাউন্ডার বিভিন্ন ধারণা নিয়ে কাজ করেন। এ ধরনের ফ্ল্যাক্সিবিলিটি বা নমনীয়তা প্রথম ইন্টারনেট বিস্ফোরণের সময় ছিল অচিন্তনীয়।

স্টার্টআপগুলোকে ছোটখাটো থেকে শুরম্ন করে প্রয়োজনীয় সবকিছুই, বিশেষ করে কমপিউটার অবকাঠামো তৈরি করতে হতো। আজকের দিনে একটি নতুন ওয়েবসাইট বা স্মার্টফোন অ্যাপিস্নকেশন পাওয়া যায় ওপেনসোর্স সফটওয়্যার অথবা সসত্মা পে-অ্যাজ-ইউ-গো সার্ভিস হিসেবে। একটি কুইক প্রটোটাইপ কয়েক দিনেই একত্রিত করা যাবে, যা থেকে প্রতিষ্ঠানের, বিশেষত ‘স্টার্টআপ উইকএন্ড’-এর সাফল্যের ব্যাখ্যা মিলে। ২০০৭ সালে এই স্টার্টআপ গড়ে তোলার পর থেকে এর ভলান্টিয়ারেরা আয়োজন করেছে এক হাজারেরও বেশি উইকএন্ড হ্যাকেথন। এতে ৫০০ শহরের এক লাখ লোক অংশ নেন। মঙ্গোলিয়ার উলানবাতুর ও রাশিয়ার পার্ম থেকেও লোকেরা এতে অংশ নেন।
হতে পারে সবচেয়ে বড় পরিবর্তনটা হচ্ছে, কমপিউটিং পাওয়ার ও ডিজিটাল স্টোরেজ আজ পরিবেশন করা হচ্ছে অনলাইনে। সবচেয়ে বড় ক্লাউড প্রোভাইডার ‘অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিসেস’-এ বেসিক প্যাকেজ হচ্ছে ফ্রি, আর এতে অমত্মর্ভুক্ত রয়েছে সার্ভার টাইমের ৭৫০ আওয়ার। যদি একটি নতুন ওয়েবসাইট অথবা স্মার্টফোন অ্যাপিস্নকেশন ব্যাপকভাবে সফল প্রমাণিত হয়, তবে প্রায় তাৎক্ষনিক ভাবে সামান্য ফি দিয়ে একটি নতুন ভার্চু্যয়াল সার্ভার সংযোজন করা সম্ভব হবে।

স্টার্টআপগুলোকে সার্ভিস জোগানোর পুরো ইন্ডাস্ট্রি তাদের নানা সুযোগও সম্প্রসারিত করে চলেছে। ‘অপটিমাইজলি’ নিজে একটি স্টার্টআপ। এটি এমন কিছু অটোমাইজ করে, যা ডেভেলপারদের কাজের অংশ হয়ে উঠেছে। আর এই কাজটি হচ্ছে : এ/বি টেস্টিং। সরল আকারে এর অর্থ হচ্ছে, একটি ওয়েবপেজে কিছু ভিজিটর দেখবে একটি বেসিক ‘এ’ ভার্সন, অন্যেরা দেখবে কিছুটা মোচড়ানো ‘বি’ ভার্সন। যদি একটি নতুন লাল ‘ইু ঘড়’’ বাটন পুরনো নীল বাটনের চেয়ে বেশি ক্লিক তৈরি করে, তখন সেখানে সাইটের কোড পরিবর্তন করা যাবে। বলা হয়, গুগল এখন এ ধরনের অনেক টেস্ট চালু রেখেছে, একই সময়ে এর সমান্যসংখ্যক ব্যবহারকারী দেখে এর ‘এ’ ভার্সন। লোকজন তাদের পণ্য কীভাবে দেখে, তা দেখার জন্য স্টার্টআপগুলো usertesting.com-এর মতো সার্ভিসে সাইনআপ করতে পারে। এর মাধ্যমে কেউ নতুন ওয়েবসাইট অথবা স্মার্টফোন অ্যাপিস্নকেশন চেষ্টা করে দেখতে পারে এবং তা করার সময় এরা যে কাজ করে, সে কাজের ভিডিও করতে পারে।

আজকাল স্টার্টআপগুলো থাকে একটি অব্যাহত ফিডব্যাক লুপে। এর অর্থ এগুলো চালাতে হবে এগুলোর পূর্বসূরি ডটকম থেকে আলাদাভাবে। কেউ এই নতুন ম্যানেজমেন্ট প্র্যাকটিস লেখার আগে পর্যমত্ম এটি ছিল একটি সময়ের প্রশ্ন। এই ম্যানেজমেন্ট প্র্যাকটিসটি হচ্ছে ঠিক ফ্রান্সিসকান খ্রিস্টান ভিন্ন ও গণিতবিদ Luca Pacioli-র লেখা ও পঞ্চদশ শতাব্দীর ভেনিস মার্চেন্টদের ব্যবহৃত প্রিন্সিপল অব ডাবল-এন্ট্রি বুক কিপিংয়ের মতো।
মি. বস্ন্যাঙ্ক তার বই ‘ফোর স্টেপস টু দ্য এপিফেনি’ এবং তার সাম্প্রতিকতম বই ‘স্টার্টআপ ওনার্স ম্যানুয়াল’-এ জানিয়েছেন, তার ভাষায় কী করে ‘প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্টের’ বিপরীতে ‘কাস্টমার ডেভেলপমেন্ট’ মোকাবেলা করতে হয়, কী করে জানতে হয় আসলে মানুষের চাহিদা কী। এমনকি মি. বস্ন্যাঙ্কের চেয়ে মি. রাইস বেশি জানিয়েছেন, স্টার্টআপগুলো কী করে তা বর্ণনা দেয় ভকেবুলারি বা শব্দভার। তাদের শুরু করা উচিত ‘মিনিমাল ভায়েবল প্রোডাক্ট’ বা এমভিপি নিয়ে, এটি শ্রোতাদের আগ্রহ পরিমাপের এক ধরনের ট্রায়াল বেলুন। তাদের উচিত অর্থবহ শিক্ষার জন্য তাদের আন্দাজ অনুমানগুলো পরীক্ষা করে দেখা। এবং তাদের কৌশল যদি কার্যকর না হয়, তবে তা বাতিল করে অন্য কোনো নতুন পণ্য নিয়ে শুরম্ন করা। ইনোভেশনের প্রয়োজনে মি. রাইস এমনকি নতুন ধরনের অ্যাকাউন্টিংয়ের পরামর্শ দিয়েছেন : স্টার্টআপগুলোকে অতি সতর্ক ও যথাযথভাবে নজর রাখতে হবে তাদের পরীক্ষা গুলো কোন পথে যাচ্ছে, তার ওপর। লক্ষ্য রখতে হবে কীভাবে এগুলো প্রভাব ফেলছে ‘মিনিংফুল মেট্রিকস’-এর ওপর। সোজা কথায়, শুধু ইউজারের সংখ্যা বাড়ানো নয়, বরং এরা এই পণ্য নিয়ে কী করছে তার ওপরও নজর রাখতে হবে।

স্টার্টআপগুলো কখনও কখনও ব্যবহার করে ওকেআর (অবজেকটিভ অ্যান্ড কি রেজাল্ট) নামের একটি সংশিস্নষ্ট পদ্ধতি। এটি উদ্ভাবন করেন ইন্টেলের চিপ প্রস্ত্ততকারক এবং পরবর্তী সময়ে তা গ্রহণ করে গুগল ও জিঙ্গা। ধারণাটি হচ্ছে, একটি কোম্পানির সব অংশ অর্থাৎ ডিপার্টমেন্ট, এর টিম ও এমনকি একজন চাকুরেও শুধু নিজেরা তাদের সুস্পষ্ট নির্ধারণ করে না, বরং নিজেদের সহায়তায় বয়ে আনে মুখ্য ফলাফল। প্যাসিওলি’র ধারণা বিকশিত হয়েছিল, কারণ তখন সবেমাত্র ছাপাখানা বৈনিসে গিয়ে পৌঁছে। ডাবল-এন্ট্রি বুককিপিং সম্পর্কিত তার ট্রিটিজ হচ্ছে সেখানে ১৪৯৪ সালের দিকে ছাপা হওয়া প্রথম বইগুলোর একটি। মি. রিসের বই ছড়িয়ে দিয়েছিল তার বাণী। তার অনেক বক্তব্যও এবং ইউটিউব ভিডিও একই সাথে সে কাজটিই করেছে। মি. রিস একে আখ্যায়িত করেছেন ‘lean movement’ নামে, এর অর্থ এই আন্দোলন যথেষ্ট উৎপাদনশীল ছিল না। বিশ্বব্যাপী ১০০০ লিন-স্টার্টআপ গ্রুপ নিয়মিত উদ্যোগটি নিয়ে আলোচনায় মিলিত হয়। Lean Startup Machine-এর মতো আউটফিটগুলো আয়োজন করে ওয়ার্কশপ। Luxr-সহ অন্যরা বিক্রি করে শিক্ষা উপকরণ।

অ্যাক্সেলারেটর

অ্যাক্সেলারেটর হচ্ছে সবচেয়ে বড় প্রফেশনাল-ট্রেনিং সিস্টেম, যার কথা আপনি কখনও শুনে না-ও থাকতে পারেন। TechStars প্রতিষ্ঠানটি হচ্ছে অ্যাক্সেলারেটরদের একটি চেইন। এগুলো গ্র্যাজুয়েশন শো বা সিরিমনির জন্য সুপরিচিত। এ ধরনের গ্র্যাজুয়েশন সিরিমনি এখন পৃথিবীর প্রায় সব জায়গায় দেখা যায়। পৃথিবীর কোথাও না কোথাও প্রতিদিনই হচ্ছে একটি ‘ডেমনস্ট্রেশন ডে’। সেরা অ্যাক্সেলারেটরগুলো এখন নিজেদেরকে মনে করে একেকটি নতুন বিজনেস স্কুল। অ্যাক্সেলারেটরগুলোর সঠিক সংখ্যা অজানা। f6s.com নামের একটি ওয়েবসাইট অ্যাক্সেলারেটর ও একই ধরনের স্টার্টআপ প্রোগ্রামের সার্ভিস জোগায়। এই ওয়েবসাইট বিশ্বব্যাপী দুই হাজারেরও বেশি অ্যাক্সেলারেটরের একটি তালিকা দিয়েছে। এর অনেকগুলোই এখন হয়ে উঠেছে বড় ব্র্যান্ড। যেমন : ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত প্রথম অ্যাক্সেলারেটর Y Combinator। অন্যগুলো গড়ে তুলেছে আমত্মর্জাতিক নেটওয়ার্ক। যেমন : TechStarts Ges Startupbootcamp। এরপরও রয়েছে কিছু সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অ্যাক্সেলারেটর : Startup Chile, Wise Guys (Estonia), Oasis500 (Jordan)। কিছু অ্যাক্সেলারেটর চলে বড় বড় কোম্পানির পৃষ্ঠপোষকতায়। যেমন : টেলিফোনিকা নামের একটি বড় টেলিফোন কোম্পানি বিশ্বব্যাপী ১৪টি অ্যাকাডেমির একটি চেইন।

মাইক্রোসফটও একটি চেইন তৈরি করছে। অনেক পর্যবেক্ষক অ্যাক্সেলারেটর বাবল বা বিস্ফোরণের ভবিষ্যদ্বাণী করেন। একবার যদি সে বিস্ফোরণ ঘটে, তবে তা একেবারে শেষ হয়ে যাবে, এমন সম্ভাবনা কম। অ্যাক্সেলারেটরগুলো শুধু স্টার্টআপগুলোতে গতিই আনে না, এগুলো যোগাযোগের নেটওয়ার্কে প্রবেশের সুযোগও করে দিচ্ছে। অধিকন্তু তাদের দিচ্ছে স্ট্যাম্প অব অ্যাপ্রোভাল। তাছাড়া এগুলো স্টার্টআপ সাপস্নাই চেইন চালনায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা চাহিদা মেটানোর জন্য বিজনেস স্কুলগুলোর উদ্ভব ঘটে উনিশতম শতকের মাঝামাঝি সময়ে। অ্যাক্সেলারেটরগুলো আজ একই শূন্যতা পূরণের চেষ্টা করছে। ধারণাটি হচ্ছে, স্টার্টআপগুলোকে কারিগরি, আইনি ও অন্যান্য সার্ভিস জোগান দেয়া। এরপরও অনেক প্রতিশ্রুতিরই বাস্তবায়ন হয়নি।

হার্ডওয়্যার স্টার্টআপ

কেন দক্ষিণ চীন হবে বিশ্বের সেরা হার্ডওয়্যার ইনোভেশনের ব্যসত্মতম স্থান? OH, NO, NOT-কে আপনি ভাবতে
পারেন একটি অ্যাক্সেলারেটর। কিন্তু এটি একটু আলাদা। টেবিলে শুধু বাধ্যতামূলক ল্যাপটপ ও স্মার্টফোনই নয়; আছে সার্কিট বোর্ড, ক্যাবল, স্ক্রু ড্রাইভার ও আরও কিছু পরিচিত জিনিস। এটি দেখতে অনেক পুরনো এক মোবাইল ফোনের মতো, আর এর সাথে লাগানো আছে বিদঘুটে আকারের নব। আরেকটি হচ্ছে সুইস ও বাটনসহ এক সেট ছোট ছোট বস্নক। আরেকটি হতে পারে কমপিউটার হেডসেটের মাইক্রোফোন, কিন্তু এটি স্থাপিত চশমার ওপর।
তার চেয়েও অবাক করা বিষয় হচ্ছে, Haxlr8r (উচ্চারণ hackcelerator), এটি একটি হোম। এই হোম লন্ডন বা সানফ্রানসিসকোর কোনো কো-ওয়ার্কিং স্পেস নয়, এটি শেনঝেনের এক অফিস ভবনের একাদশ তলা। শেনঝেন হচ্ছে দক্ষিণ চীনের গুয়াংডু প্রদেশের একটি বড় শহর। এই শহর হংকংয়ের কাছের পার্ল রিভার ডেল্টায় অবস্থিত। এটি ইলেকট্রনিকসের বিশ্ব-রাজধানী। পৃথিবীর বেশিরভাগ ডিজিটাল ডিভাইস এই নগরী ও এর আশপাশের কারখানাগুলোতে সংযোজিত হয়।

Karl Popper এক সময় বলেছিলেন history repeats itself, but never in the same way। ঠিক যেমন আজ সফটওয়্যার দিয়ে নতুন টেকনোলজি সহজ করে তুলেছে নতুন ধরনের ডিভাইস তৈরিকে। এসব ডিভাইসের বেশিরভাগই ইন্টারনেটসংশিস্নষ্ট। তবে পার্থক্যটা হচ্ছে সফটওয়্যার তৈরি এখনও কঠিনই থেকে গেছে। আর এজন্যই Haxlr8r আজ শেনজিনে। কার্ল পপারের বক্তব্যের জীবন্ত প্রমাণ Haxlr8r। এর টিম এক উপায়ে আমেরিকার প্রথম প্রজন্মের হার্ডওয়্যার স্টার্টআপের দুর্ভাগ্য এড়াতে পারে। এরা এদের আইডিয়ার বিষয়টি ছেড়ে দিতে পারে শীর্ষস্থানীয় ক্রাউডফান্ডিং সার্ভিস ‘কিকস্টার্টার’ ও ‘ইন্ডিগোগো’র ওপর।

যে টেকনোলজি আজ সফটওয়্যার সার্ভিস ডেভেলপকে এতটা দ্রুততর ও সসত্মাতর করেছে, তা হলো ক্লাউড কমপিউটিং, সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং ও এপিআইএস (অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেসেস)। হার্ডওয়্যারের জন্য তালিকায় আছে থ্রিডি প্রিন্টার্স, সেন্সর ও মাইক্রোকন্ট্রোলার, যা অ্যানালগ ও ডিজিটাল দুনিয়ার মধ্যে সেতুবন্ধ গড়ে তোলে। বেশিরভাগ কানেকটেড ডিভাইসের জন্য প্লাটফর্ম হচ্ছে স্মার্টফোন। একটি ক্যামব্রিয়ান এক্সপ্লেশন সৃষ্টি করে এসব উপাদান শুধু সফটওয়্যারেই অসংখ্য উপায়ে একসাথে করা যাবে না, ভৌত ইলেকট্রনিক ডিভাইসেও করা যাবে।

যখন ফাউন্ডারদের সবশেষ ব্যাচ গত আগস্টে হেক্সেলারেটরে পৌঁছে, তখন বিএলই (বস্নুটুথ ল’ এনার্জি) নামের স্ট্যান্ডার্ড-ভিত্তিক নতুন তারহীন চিপ সবেমাত্র ব্যাপকভাবে পাওয়া যেতে শুরম্ন করেছে। এগুলো আগের প্রজন্মের চিপের তুলনায় সসত্মাতর এবং কম বিদ্যুৎ খরচ করে। আর স্টার্টআপগুলোকে তাদের ডিভাইসে তা ব্যবহারের জন্য অ্যাপলের অনুমোদন নিতে হয় না এবং এর জন্য অর্থও পরিশোধ করতে হয় না। হেক্সেলারেটরের বেশিরভাগ টিম তাদের যন্ত্রে বিএলই চিপ ব্যবহার করে।

উল্লেখিত বস্নকগুলোর নাম Palette, যা আসলে উপাদানগুলোর এক ধরনের মিশ্রণ, যা সংযোজন করেন ডিজাইনার ও ফটোগ্রাফারেরা। তাদের প্রয়োজন এমন একটি ইন্টারফেস, যা কমপিউটারে বারবার করার মতো কাজগুলো করতে পারে। ‘ভিগো’ নামে ডাকা মাইক্রোফোনটি আসলে একটি তন্দ্রা মিটার (ড্রাউজিনেস মিটার)। এতে আছে একটি সেন্সর, যা পরিমাপ করে ব্যবহারকারী কী হারে চোখ পিটপিট করে। চোখ পিটপিট করার হার দেখে মাপা যায় ব্যবহারকারীর কতটুকু পরিশ্রান্ত। এর মাধ্যমে জানা যায় একজন গাড়িচালকের গাড়ি চালানো বন্ধ করা উচিত, কিংবা গাড়ি থামিয়ে এক কাপ কফি পান করে নেয়া উচিত। এসেছে একটি স্মার্টফোন অ্যাপ, আর Palette নিয়ে এসেছে পিসিতে চলার মতো একটি প্রোগ্রাম। ঠরমড় ব্যবহারকারীকে একটি ওয়েবসাইটে দেখাবে সময়ে সময়ে তার মনোযোগের মাত্রা কতটুকু ওঠানামা করে। এ ধরনের সুযোগ পণ্য কপি করাকেই শুধু কঠিন করেই তুলবে না, বরং সেই সাথে এর প্রস্ত্ততকারককে সুযোগ করে দেবে অতিরিক্ত অর্থ উপার্জনের।

মেকার্স অ্যান্ড শেকার্স

যখন দুই জয়েন্ট ভেঞ্চার ক্যাপিটেলিস্ট সিরিল এভার্সউইলার এবং ও’সুলিভান ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে Haxlr8r প্রতিষ্ঠা করেন, যৌক্তিক কারণেই এরা শেনঝেনকে বেছে নেন। সেখানে রয়েছে ইলেকট্রনিকসের ডজন ডজন শপিং মল। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড়টি হলো সেগ মার্কেট। নিচতলা সংরক্ষিত স্ক্রু, ক্যাবল ও চিপের জন্য। আর আপনি যত উপরে যাবেন, ততই পাবেন ফিনিশড প্রোডাক্ট : সার্কিট বোর্ড, নেটওয়ার্কিং ইকুইপমেন্ট, পিসি ইত্যাদি। ষষ্ঠ তলায় পাবেন বিভিন্ন গড়ন ও আকারের এলইডি পণ্য। শেনঝেনে গাদাগাদি করে আছে অনেক ধরনের পরিবেশক ও সেবাদাতা। এর ফলে হার্ডওয়্যার স্টার্টআপগুলোর কাজ সহজতর হয়েছে। আমেরিকায় একটি সার্কিট বোর্ড বানাতে লাগে কয়েক সপ্তাহ, আর শেনঝেনে লাগে তিন দিন। শেনঝেনে থাকলে একজন ফাউন্ডার দেখতে পাবেন প্রচুরসংখ্যক কারখানা।

শুধু Haxlt8r-B শেনঝেনের ম্যানুফেকচারিং পস্ন্যাটফর্মে পস্নাগইন করার একমাত্র অনন্যসাধারণ মডেল নয়। আরেকটি মডেল হচ্ছে । এটি মেকারদের হয়ে চুক্তিতে মেকিংয়ের কাজটি করে দেয়। ‘Haxlr8r হচ্ছে ব্যাকপেকার, যারা চায় নিজের জন্য কিছু করতে। অপরদিকে আমরা সুযোগ করে দিই গাইডেড ট্যুরের। এমনকি এজন্য আপনাকে এখানে আসতেও হবে না।’- বললেন এরিক প্যান। তিনিই ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন সিড স্টুডিও। গত বছর এই স্টুডিও কাজ করেছে ২০০ মেকারদের হয়ে। সিড স্টুডিও এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় ওপেনসোর্স হার্ডওয়্যার ম্যানুফেকচারার। যখন একজন মেকার সিডকে একটি সার্কিটবোর্ড তৈরি করে দিতে বলে, তখন এই ফার্ম ডিজাইনের একটি কপি রেখে দেয়, অন্য গ্রাহকেরা চার্জ ছাড়াই তা ব্যবহার করতে পারেন। শেনঝেনের বেশিরভাগ কারখানা কাজ করে বড় বড় গ্রাহকদের। এর রয়েছে বড় অ্যাসেম্বলি লাইন, যেখানে একজন শ্রমিক শুধু একটি কাজই করেন। শেনঝেনের সিড স্টুডিও চীনাদের একটি সৃষ্টি। অপরদিকে পিসিএইচ ইন্টারন্যাশনাল হচ্ছে পাশ্চাত্যের সৃষ্টি। পিসিএইচ ২০১৩ সালে আয় করে ১০০ কোটি ডলার। শেনঝেনে রয়েছে এমনি আরও অনেক সফল কোম্পানি।

পস্ন্যাটফর্ম

পস্ন্যাটফর্ম হচ্ছে তা, যাকে ভিত্তি করে কাজ করতে হয়। ডিজিটাল পস্ন্যাটফর্ম হবে আগামী দিনের অর্থনীতি ও এমনকি সরকারের কেন্দ্রবিন্দু। সঠিক পস্ন্যাটফর্মের জোগান দেয়ার ওপরই নির্ভর করবে এর সফলতা। বরাবরের মতো পথিপার্শ্বে নতুন পস্নাজা তৈরির আমলাতান্ত্রিক উপায়ের পরিকল্পনার বদলে নিউইয়র্ক সিটির ট্র্যান্সপোর্টেশন ডিপার্টমেন্ট একটি সড়কের পাশের একটি এলাকা অস্থায়ীভাবে চিহ্নিত করে দিয়ে স্থানীয় সংগঠন, স্থপতি ও নাগরিকদের ওপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে পরবর্তী করণীয়। এ কর্মসূচির আওতায় এ পর্যমত্ম ৫৯টি পস্নাজা তৈরি করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে আছে ব্রম্নকলিনের ‘পার্ক স্ট্রিট ট্রায়াঙ্গল’- এ যেনো এক শহুরে মরূদ্যান। এতে বড় বড় পটে লাগানো হয়েছে গাছ। গাছের ছায়ায় পাতা আছে বসার আসন।

আজকের ডিজিটাল দুনিয়ায় পস্ন্যাটফর্মের ওপর দাঁড়িয়েই চালাতে হয় নির্মাণকর্ম। আরও অনেক কাজ ও পণ্যের মৌল ইনপুট বা জোগান হতে পারে এই প্লাটফর্ম। কিন্তু যদিও ভৌত পস্ন্যাটফর্ম আমাদের চারপাশে দীর্ঘদিন থেকে চলে আসছে, কিন্তু ১৯৮০-র ও ১৯৯০-এর দশকের সফটওয়্যার শিল্পের উত্থানের আগে পর্যন্ত এ ধারণা আকর্ষণ সৃষ্টি করতে পারেনি। এই শিল্প দ্রুত বিভাজিত হয়ে পড়ে দুই অংশে : অপারেটিং সিস্টেম (প্লাটফর্ম) ও অ্যাপ্লিকেশন।
মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস তার প্রতিপক্ষর অনেক আগেই উপলব্ধি করতে পেরেছিলেনে- ক্ষমতা তাদের হাতেই থাকবে যারা নিয়ন্ত্রণ করবে অপারেটিং সিস্টেম, এ ক্ষেত্রে উইন্ডোজ। তিনি আরও দেখতে পেয়েছিলেন, একটি সফল প্লাটফর্ম ক্রিয়েট করার চাবিকাঠি হচ্ছে কার্যকর নেটওয়ার্কের জন্য এর চারপাশে একটি বলিষ্ঠ ইকোসিস্টেম গড়ে তোলা। উইন্ডোজে যত বেশি প্রোগ্রাম চলবে, তত বেশি ইউজার তা চাইবে। অতএব তত বেশি এটি আকর্ষণীয় হবে ডেভেলপারদের কাছে।

উইন্ডোজের মতো কিছু পস্ন্যাটফর্ম আছে, যেগুলো একটি ইন্ডাস্ট্রির পুরোটাই সার্ভ করে। অন্যগুলো ‘ক্লোজড’, এর অর্থ এগুলোর অ্যাক্সেস কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত, যেমনটি অ্যাপলের আইফোন। সবচেয়ে বেশি ব্যাপকভিত্তিকগুলো ‘ওপেনসোর্স’, যেগুলো কাউকে জিজ্ঞাসা না করে সবাই ব্যবহার করতে পারেন। যেমন : ওপেনসোর্স অপারেটিং সিস্টেম লিনআক্স। মাইক্রোসফটের সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হয়ে ইম্পেরিয়াল কলেজ অব বিজনেসের অ্যানাবেলি গাওয়ারের মতো শিক্ষাবিদেরা আরও গভীরে পৌঁছে দেখেত পান পস্ন্যাটফর্মগুলো হচ্ছে কমপ্লেক্স সিস্টেমের একটি ফিচার বা সাধারণ বৈশিষ্ট্য, তা অর্থনৈতিক হোক, কিংবা হোক জৈবিক। মুখ্য উপাদানগুলো রাখা হয় স্থিতিশীল, যাতে এগুলোকে কম্বাইন কিংবা রিকম্বাইন করে অথবা নতুন কিছু যোগ করে অন্যান্য অংশের দ্রম্নত উদ্ভব ঘটানো যায়। আর স্টার্টআপ দুনিয়ায় এমনটিই ঘটে চলেছে : নতুন ফার্মগুলো ওপেন সোর্স সফটওয়্যার, ক্লাউড কমপিউটিং ও সোশ্যাল নেটওয়ার্ক কম্বাইন কিংবা রিকম্বাইন করে নতুন সার্ভিস নিয়ে আসার জন্য। আসলে সার্ভিসের অনেকগুলোই অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস (এপিআইএস)- মিনি প্লাটফর্ম, যা গঠন করে আরেকটি ডিজিটাল পণ্যের ভিত্তি, অমত্মহীন পারমুটেশনের সুযোগ সৃষ্টি করে।

আজকের দিনে আইটি সেক্টরকে দেখতে দেখায় অনেকটা ফ্ল্যাট ইনভার্টেড পিরামিড : এর বটম বা নিচটা তৈরি কয়েকটি শক্তিশালী পস্ন্যাটফর্ম দিয়ে, আর এর শীর্ষদেশ আগের চেয়ে টুকরো টুকরো খ-াংশ হয়ে উঠছে। এ দুয়ের মাঝখানে আর কিছু নেই। যেহেতু সফটওয়্যার গিলে ফেলছে অধিক থেকে অধিক ইন্ডাস্ট্রি, এগুলো ক্রমবর্ধমান হারে এই আকার ধারণ করবে- এই ভবিষ্যদ্বাণী বোস্টন কনসালটিং গ্রম্নপের ফিলিপ এভান্সের। আইটি লেনদেন খরচ কমিয়ে দিয়ে অর্থনীতির বড় এটি অংশকে ঠেলে দিয়েছে নতুন আকার দেয়ার দিকে। আর তাকে যাতে পরিণত করা হয়েছে, এরা এর নাম দিয়েছে ‘Stack’- ইন্ডাস্ট্রি-ওয়াইড ইকোসিস্টেমস, যার এক প্রামেত্ম থাকবে তাদের ভ্যালু চেইনগুলোর বড় বড় প্লাটফর্ম এবং অন্যপ্রামেত্ম থাকবে বিচিত্র ধরনের মোডের প্রডাকশন, স্টার্টআপ ও সোশ্যাল এন্টাপ্রিনিউয়ার থেকে শুরু করে ইউজার-জেনারেটেড কনটেন্ট পর্যন্ত।

স্ট্যাকিং আপ

আইটি শিল্পের বাইরে এ ধরনের স্ট্যাক সবেমাত্র আকার নিতে শুরম্ন করেছে। ফিন্যান্সে ক্রেডিটকার্ড নেটওয়ার্ক পস্ন্যাটফর্মের মতো দীর্ঘদিন ধরে চলছে। এর ফলে ব্যাংকগুলোকে সুযোগ করে দিয়েছে তাদের পস্নাস্টিকমানি ইস্যুর। Yodlee সাড়ে ৫ কোটিরও বেশি ব্যাংক গ্রাহকের ফিন্যান্সিয়াল ডাটা সমাহার করে। এটি এখন স্টার্টআপ ও অন্যান্য ফার্মকে সুযোগ করে দিচ্ছে তাদের সিস্টেম প্লাগইনের। ব্যানকর্পসহ কিছু ছোট ছোট ব্যাংক নিজেদের দেখে পস্ন্যাটফর্ম হিসেবে। আশা করা হচ্ছে, First Data I TSYS-এর মতো বড় পেমেন্ট প্রসেসরগুলোও খুলবে তাদের নেটওয়ার্ক।
টেলিযোগাযোগ ও বিদ্যুতে রেগুলেটরেরা ফার্মগুলোকে বাধ্য করে সার্ভিস অ্যানাবন্ডল করতে। সেহেতু সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে স্মার্ট-মিটার অ্যাপের আবির্ভাবের। উদাহরণ টেনে বলা যায়, আমস্টারডামে একটি নতুন গ্রিড এমনভাবে স্থাপন করা হয় যে, একটি স্টার্টআপ এটি ব্যবহার করে এনার্জি-সেভিং অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলাপ করতে পারে। গাদা গাদা ফাইল সৃষ্টির শিল্পেও শক্তিধর পস্ন্যাটফর্মের উদ্ভব ঘটবে। যেমন : হেলথকেয়ার-সংশিস্নষ্ট ডাটা শিল্প।
এমনকি এই ‘প্লাটফরমাইজেন’ ছড়িয়ে পড়ছে জীবনের উপাদানেও। ডিএনএ’র সিকুয়েন্সিংয়ের চেয়ে এর সিনথেসাইজিং বা বিশ্লেষণ এখনও বেশি ব্যয়বহুল। কিন্তু দ্রুত এ খরচ কমে আসছে। আর এই আল্টিমেট পস্ন্যাটফর্মের জন্য একটি ইকোসিস্টেম এরই মধ্যে আকার নিতে শুরু করেছে। বিশ্বব্যাপী আধা ডজনেরও বেশি নগরে এখন রয়েছে বায়ো-হ্যাকারস্পেস (যেমন : ‘জেনস্পেস’ রয়েছে নিউইয়র্কে), যেখানে জেনেটিক হ্যাকারেরা শিখে কী করে গড়ে তুলতে হয় সরল বায়োলজিক্যাল মেশিন। ‘অটোডেস্ক’ একটি সফটওয়্যার ফার্ম। এটি ডেভেলপ করছে ডিএনএ’র ডিজাইন টুল, যার কোডনেম ‘Project Cyborg’। সিলিকন ভ্যালিতে এরই মধ্যে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি বায়োসিনেথেসিস স্টার্টআপ- যেমন : ‘ক্যামব্রিয়ান জেনোমিকস’, যা ডেভেলপ করছে সসত্মায় জিন প্রিন্ট করার একটি মেশিন। শেনঝেনে আছে বিজিআই (আগের পুরনো নাম ‘বেজিং জেনোমিকস ইনস্টিটিউট’)। এটি ইন্ডাস্ট্রি পর্যায়ে ডিএনএ সিকুয়েন্সিং করে।

ব্যবসায়িক পর্যায়েও পস্ন্যাটফর্মের প্রভাব অনুভূত হতে শুরম্ন করেছে। কোম্পানিগুলোকে হয় একটি একীভূত করতে হবে, নতুবা হতে হবে প্রগতির ইকোসিস্টেম, প্রতিযোগিতা করতে হবে স্টার্টআপ কিংবা অ্যাক্সেলারেটরের সাথে। যেমন : কোকা-কোলা বার্লিন ও ইসত্মাম্বুলসহ ৯টি শহরে অ্যাক্সেলারেটর চালুর পরিকল্পনা করছে। এ ধরনের উদ্যোগ একটি ফার্মের গঠন সম্পর্কিত ধারণায়ও পরিবর্তন আনবে। পস্ন্যাটফর্মের ছড়িয়ে পড়ার ফলে শ্রমিকদের জন্য আনবে দ্রম্নত বৈপস্নবিক পরিবর্তন। আরও অনেকেই হবেন ফাউন্ডার কিংবা চাকরি করবেন স্টার্টআপে। এরা হবেন টেকনোলজিক্যাল গার্ডেনের শ্রমিক, যে বাগানে ফুটবে হাজার হাজার ফুল, তবে মাত্র সামান্য ক’টি সত্যিকারের বড় আকার নেবে। সরকারগুলোকেও খাপ খাইয়ে চলতে হবে। অ্যান্টিট্রাস্ট কর্তৃপক্ষ গুলোকেও সতর্ক থাকতে হবে। কারণ, প্লাটফর্ম অপারেটরেরা তাদের প্রাধান্য বজায় রাখার জন্য জোরালো প্রণোদনা অব্যাহত রাখবে। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিধর হচ্ছে- অ্যামাজন, ফেসবুক ও গুগল। এগুলো পুঞ্জীভূত করবে বিপুল পরিমাণ ডাটা এবং নলেজ ইকোনমির জন্য গড়ে তুলবে একটি কেন্দ্রীয় ডাটাব্যাংক। নতুন দুনিয়ায় সরকারের ভূমিকা কোম্পানিগুলোর চেয়ে কম হবে না। বর্তমানে সরকারগুলো অনেকটা যেনো ‘ভেন্ডিং মেশিন’, যা মেটায় সীমিত পরিমাণ চাহিদা।

ডার্ক সাইড
গত বছর জোডি শ্যারমান আত্মহত্যা করেন। তার অনলাইন শপ ‘ইকোমম’ বিক্রি করত শিশুদের ইকো-ফ্রেন্ডলি হেলথ প্রোডাক্ট। এক সময় এই শপ নগদ অর্থের দারুণ টানাটানিতে পড়ে। কয়েক সপ্তাহ পর তার এই ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান এর ভার্চু্যয়াল ডোর বন্ধ করে দিয়ে তা বিক্রি করে দেয়া হলো। নতুন মালিক তা আবার চালু করেন গত জুনে। এমন কোনো প্রমাণ নেই যে, অন্যান্য হাই প্রেসার জবে নিয়োজিতদের তুলনায় উদ্যোক্তারা বেশি হারে আত্মহত্যা করেন। জোডি শ্যারমানের আত্মহত্যার একই সময়ে আত্মহত্যা করেন ইন্টারনেট অ্যাক্টিভিস্ট অ্যারন শোয়ার্টজ। একই সময়ে এই দু’টি আত্মহত্যা স্টার্টআপ দুনিয়ায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়। স্পষ্টবাদী সেরিয়্যাল

এন্টারপ্রিনিউয়ার জেসান ক্যালাকানিস একটি ব্লগপোস্টে লেখেন, একজন ফাউন্ডার হওয়ার কারণেই কী এদেরকে আত্মহত্যা করতে হয়। এ ধরনের মানসিক চাপ সৃষ্টি হওয়া স্টার্টআপগুলোর একটি ডার্ক সাইড বা অন্ধকার দিক। বিষয়টি সেই সাথে স্টার্টআপ কমিউনিটির উদ্বেগেরও বিষয়। আরও উদ্বেগের বিষয়- সফটওয়্যার ও স্টার্টআপ শুধু পৃথিবীটাকেই গিলে ফেলছে না, সেই সাথে গিলে ফেলছে কর্মসংস্থানও।

Peerby হচ্ছে আমস্টারডামভিত্তিক একটি সার্ভিস। এর প্রধান নির্বাহী বলেন, ‘আই ওয়ান্ট টু চেঞ্জ দ্য ওয়ার্ল্ড’। হ্যাঁ, তার এই সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সত্যিকার অর্থে সফল হলে তেমন কিছু ঘটতে পারে বৈ কি! এই সার্ভিস থেকে মানুষ তার প্রয়োজনীয় জিনিস কাছের আউটলেট থেকে আধঘণ্টার মধ্যে ভাড়া নিতে পারে। যেমন- ড্রিল মেশিন, আইসমেকার, ঘাস কাটার কল ইত্যাদি। কিন্তু এই সহায়তার অমত্মরালে রয়েছে এক অনিশ্চিত জগৎ। একজন ফাউন্ডারের কাজ হচ্ছে ‘নাথিং’ থেকে ‘সামথিং’ সৃষ্টি করা। কোনো কোনো সময় যার অর্থ মানুষের মধ্যে জাগিয়ে দেয়া এমন একটি আইডিয়া : ‘Building a startup is all about building credibilityÑ with investors, partners, customers, the media.’

বেশিরভাগ ফাউন্ডারের বেলায়ই অর্থ বা মানি একটি স্থায়ী উদ্বেগের বিষয়। ইনভেস্টরেরা তাদের একসাথে খুদ্র একটা তহবিল দেয়। ইনভেস্টরেরা এটি নিশ্চিত করতে চায়- চাকুরেদের বেতন ও অন্যান্য খরচ জুগিয়ে এরা নিজেরা যেনো কিছু পায়। অনেক ফাউন্ডারের বেলায় তাদের কোম্পানির বাইরে কোনো জীবন নেই, এরা এটিকে মনে করে তাদের পরিবার। অতএব এর ভালো-মন্দ তাদের মানসিক চাপে রাখাটা স্বাভাবিক। এটাকে বলা যায়, স্টার্টআপ জগতের একটি ডার্কসাইড। জানি না, জোডি শ্যারমান ও অ্যারন শোয়ার্টজ এই অন্ধকার দিকের শিকার কি না। এরপরও বলব, স্টার্টআপের আলোকিত দিকের পরিধি এরচেয়ে অনেক বড়
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস
অনুরূপ লেখা