লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
অনলাইনে ফটো শেয়ারিং
প্রযুক্তিবিশ্বে ২০০৪ সালকে বলা হয় নতুন করে দেখার বছর। কারণ এ বছর জনপ্রিয় সামাজিক অনলাইন মাধ্যম ফেসবুকের যাত্রা শুরু হয়। নিজের তোলা ছবিকে অনলাইনে তুলে দেয়ার সাইট ফ্লিকারও চালু হয় একই বছর। ফ্লিকারে ছবি, এমনকি ভিডিও অন্য সবার সাথে শেয়ার করা সম্ভব। ২০০৪ সালে ফ্লিকার চালু হলেও ইয়াহু সাইটটি কিনে নেয় ২০০৫ সালে। ছবি শেয়ারিংয়ের এই সাইটটির উদ্যোক্তা ক্যাটেরিনা ফেইক।
ফেইক পেনসিলভানিয়ায় জন্মগ্রহণ করলেও তার বাবা ছিলেন জার্মানির অধিবাসী। ভাসার কলেজ থেকে ১৯৯১ সালে সণাতক শেষ করেন তিনি। ফেইক সেলুন ডটকম নামে একটি প্রতিষ্ঠানে নববইয়ে আর্ট ডিরেক্টর হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। তখন থেকেই তিনি অনলাইন কমিউনিটি সংঘবদ্ধ করার কাজে মন দেন। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের সফটওয়্যার এবং ম্যাগাজিন বের করার কাজও শুরু করেন। পরে ১৯৯৭ সালে নেটস্কেপ প্রতিষ্ঠানের কমিউনিটি ফোরামের সংগঠক হিসেবে চাকরি পান। এর কয়েক বছর পর স্বামী স্টুয়ার্ট বাটারফিল্ডকে নিয়ে ২০০২ সালে লুডিকর্ম নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তারা দুইজন অনলাইন গেম তৈরি শুরু করেন। এ সময়ই ছবি নিয়ে তারা কাজ শুরু করেন। হুট করেই মাথায় আসে ছবি শেয়ারিংয়ের বিষয়টি। কী করে নিজের তোলা ছবি অন্যের সাথে শেয়ার করা যায়, তা নিয়ে কাজ শুরু করেন তারা। ২০০৪ সালে এসে সফল হন তারা। বিশ্বের যেকোনো ব্যক্তির যেকোনো স্থান থেকে তোলা ছবি ভিডিও ওয়েবসাইটে আপলোড করে দেয়ার কাজটি সম্ভব করে তোলেন। তারা এই সাইটটির নাম দেন ‘ফ্লিকার’। চালুর সাথে সাথে জনপ্রিয়তা পায় এই সাইটটি। প্রচুর ছবি আর ভিডিও আপলোড হতে থাকে এতে। একসময় এটি আর চালাতে পারছিলেন না তারা। পরে ২০০৫ সালে ইয়াহুর কাছে সাইটটি বিক্রি করে দেন তারা।
ইয়াহু ফেইকের কাজে মুগ্ধ হয়ে চাকরিতেই নিয়ে নেয়। সেখানে টেকনোলজি ডেভেলপমেন্ট বিষয়ে কাজ শুরু করেন ফেইক। পরে ২০০৮ সালে তিনি ইয়াহু থেকে ইস্তফা দেন এবং ২০০৯ সালে সামাজিক যোগাযোগের সাইট Hunch (nvbP) নিয়ে কাজ শুরু করেন। এখনও তিনি হানচ নিয়েই ব্যসত্ম সময় কাটাচ্ছেন।
সামাজিক যোগাযোগের সাইটগুলোর জনপ্রিয়তার কারণে ছবির ব্যবহার এখন অনেক বেড়ে গেছে। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং এসব সাইটে সবাই প্রচুর পরিমাণে ছবি আপলোড করে থাকেন, আর তাই ছবি সম্পাদনা করার সফটওয়্যারের চাহিদাও বেড়ে গেছে। ছবি সম্পাদনার কাজে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হওয়া সফটওয়্যার অ্যাডোবি ফটোশপ। তবে এর বাইরেও রয়েছে বেশ কিছু সফটওয়্যার, যেগুলোর মাধ্যমে সাধারণ ব্যবহারকারীরা সহজেই সম্পাদনা করতে পারেন ছবি। আর ছবিতে যোগ করতে পারেন নানা ইফেক্ট। এরকম কিছু সফটওয়্যারের কথা এখানে তুলে ধরা হলো।
কিট্রিফাই
যারা কখনই ছবি সম্পাদনার কোনো সফটওয়্যার বা অ্যাপ ব্যবহার করেননি, তাদের জন্য আদর্শ একটি সফটওয়্যার হতে পারে এই কিট্রিফাই। এটি মূলত একটি অনলাইন অ্যাপ। তাই এটি ব্যবহারের জন্য ইন্টারনেট সংযোগ এবং অ্যাডোবি ফ্ল্যাশ সমর্থিত একটি ওয়েব ব্রাউজার প্রয়োজন হবে। খুব সহজে কিট্রিফাইয়ের মাধ্যমে ছবিতে যোগ করা যায় নানা ধরনের ইফেক্ট। এছাড়া ছবির আকার ছোট-বড় করা বা ছবি ক্রপ করার মতো ছোটখাটো কাজগুলো তো করা যায়ই। ছবিতে মজার মজার কিছু ইফেক্ট যোগ করার সুবিধাও এর মাধ্যমে পাবেন। citrify.com সাইট থেকে ব্যবহার করা যাবে ছবি সম্পাদনার সহজ এই অ্যাপ্লিকেশন।
ফটোর
ছবি সম্পাদনার আরেকটি অনলাইন অ্যাপ ফটোর। এই সাইটে ছবি সম্পাদনার মৌলিক কাজগুলোর পাশাপাশি অ্যাডভান্সড লেভেলের কিছু কাজও করা যায়। এসব কাজের মধ্যে রয়েছে টোন এবং কালার অ্যাডজাস্টমেন্ট, লেন্স কালেকশন, ক্রপ, রোটেট, রিসাইজ প্রভৃতি। এর বাইরেও ছবিতে যোগ করা যায় নানা ধরনের ইফেক্ট। রয়েছে ডিজিটাল নানা ডিজাইনের ফ্রেম যুক্ত করার সুবিধা। কালার স্প্যাশ বা বিগ অ্যাপারেচার ফিচারের মাধ্যমে ছবির রং এবং ফোকাসেও পরিবর্তন নিয়ে আসা যায়। বিনামূল্যে অনলাইনে এই ছবি সম্পাদনার অ্যাপটি ব্যবহার করা যাবে www.fotor.com সাইট থেকে।
গিম্প
এই টুল মূলত লিনআক্সের জন্য তৈরি হলেও উইন্ডোজ বা ম্যাক সিস্টেমেও ব্যবহার হতে পারে গিম্প। একে অনেকেই ফটোশপের বিকল্প হিসেবে তুলনা করে। ছবির মৌলিক এবং অ্যাডভান্সড লেভেলের সম্পাদনা করা, ইচ্ছেমতো আকা আকির সুবিধা, ক্রপ করা, রিসাইজ করা, বিভিন্ন ফরম্যাটের মধ্যে রূপান্তর করা, প্লাগ ইন ব্যবহার করে জিআইএফ ফাইল তৈরি করা, ব্যাচ প্রসেসিংয়ের কাজ করাসহ প্রয়োজনীয় সব কাজই করা যায়। তাই অনেকেই এই টুলকে অ্যাডভান্সড লেভেলের সফটওয়্যার হিসেবে গণ্য করেন। যেকোনো পর্যায়ের ব্যবহারকারীরা এটি ব্যবহার করতে পারবেন। http://www.gimp.org সাইটে গেলেই পাওয়া যাবে বিনামূল্যের এ সফটওয়্যার।
পিকাসা
শুধু ছবি সম্পাদনাই নয়, অনলাইনে ছবির অ্যালবাম তৈরি করার কাজটি করতেও আপনাকে সাহায্য করবে পিকাসা। গুগলের কিনে নেয়া এই অ্যাপটির মাধ্যমে সহজেই আপনি ছবি সম্পাদনার কাজটি করতে পারবেন। বিনামূল্যেই ব্যবহার করা যায় এই অ্যাপটি। তবে তার জন্য গুগল অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে বিনামূল্যে নিবন্ধনের কাজটি করে নিতে হবে। পিকাসা ইনস্টল করে নিলেই এটি পিসির সব ছবিকে ব্রাউজ করে নেবে। এতে রয়েছে স্মার্ট ফেস ডিটেকশন প্রযুক্তি। ফলে কোনো ছবিতে কাউকে চিহ্নিত করলে পিকাসা নিজে নিজেই তার সব ছবিতে তাকে চিহ্নিত করে নেবে। ছবি সম্পাদনার জন্য এখানেও রয়েছে যাবতীয় টুল। ওয়ান-টাচ টুলের পাশাপাশি আলাদা করেও ছবি সম্পাদনা করা যাবে। আর অনলাইনে ছবির অ্যালবাম তৈরি করার মাধ্যমে অনলাইনেও ছবির ব্যাকআপ রাখার ব্যবস্থা রয়েছে এতে। http://picasa.google.com সাইট
থেকে বিনামূল্যে ডাউনলোড করা যাবে এটি।
ইরফান ভিউ
ছবি সম্পাদনার জন্য খুব বেশি ফিচার না থাকলেও ইরফান ভিউ সহজ একটি বিনামূল্যের সফটওয়্যার। এর সাহায্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ছবির রং সমন্বয়, উজ্জ্বলতা কমানো/বাড়ানো, কন্ট্রাস্ট কমানো/বাড়ানো, রেডআই দূর করা, ছবি বস্নার করা প্রভৃতি মৌলিক কাজগুলো করা যায়। পাশাপাশি এর মাধ্যমে সহজে ছবির নাম পরিবর্তন এবং এক ফরম্যাট থেকে অন্য ফরম্যাটে রূপান্তরের কাজটি করা যায়। এর সবচেয়ে বড় সুবিধাটি হলো এর মাধ্যমে একাধিক ছবির নাম ও ফরম্যাট এক ক্লিকেই পরিবর্তন করা যায়। আবার ছবি এডিট করার সময়ও এক কমান্ডেই সব ছবিতে একই ধরনের পরিবর্তন করা যাবে। এর এই ‘ব্যাচ প্রসেসিং’ সুবিধাটিই একে জনপ্রিয় করে তুলেছে। http://www.irfanview.com সাইটে গিয়ে এটি ব্যবহার করা যাবে
ফিডব্যাক : kdsubho@gmail.com