লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
গেমের জগৎ
দ্য ইনক্রেডিবল অ্যাডভেঞ্চার অব ভ্যান হেলসিং
প্রথমেই বলে নেয়া ভালো, গেমটির নাম শুনে মনে ভ্যান হেলসিংয়ের কথা মনে হলেও আসলে এখানে আব্রাহাম ভ্যান হেলসিংয়ের পুত্র হিসেবেই গেমারকে সব দুর্দান্ত অ্যাডভেঞ্চার চালাতে হবে। কে এই ছেলে? এই প্রশ্নের উত্তর গেমারদের জন্যই তোলা থাক। তাকে আর তার টেডমার্ক হ্যাটকে খুঁজে বের করতে হবে। গেমারকে ঘুরে বেড়াতে হবে ইউরোপের সবচেয়ে গথিক এবং ঐতিহাসিক প্রাচুর্যপূর্ণ স্থান ব্রগোভিয়াতে। ব্রগোভিয়া- যেখানে বিজ্ঞান আর রূপকথা দুইয়ে মিলে গড়ে তুলেছে এমন এক রাজ্য, যা ভ্যান হেলসিং পুত্রের জন্য স্বর্গই মনে হবে। আছে জাদুকরী দুই মাথাসমৃদ্ধ গরু, যা কি না আবার বুড়ো মানুষের মতো জ্ঞানসমৃদ্ধ কথাও বলতে পারে। গেমার হয়তো এতক্ষণে আন্দাজ করেই ফেলেছেন, আর যাই হোক ব্রগোভিয়া এক মজার জাদুর শহর। সাথে থাকবে হেলসিংয়ের সব সময়ের সঙ্গী নারী-ভূত ক্যাটারিনা। ক্যাটারিনার আছে লম্বা এক ইভোল্যুশন ট্রি, যা তাকে বিভিন্ন ধরনের পাওয়ার দেবে। পাওয়ার ট্রির সবচেয়ে শক্ত ব্যাপার হলো ক্যাটারিনার ট্রান্সফরমেশন, যা ক্যাটারিনাকে বিভিন্ন শত্রুকে ধ্বংস করারও শক্তি দেবে, যা গেমারকে পরবর্তী লেভেলগুলোতে বেশ সাহায্য করবে।
ঘটনা চলবে বিজ্ঞান আর ধর্মের সংঘাতের মধ্য দিয়ে। থাকছে আরও রিফাইনড হ্যাকিং, সস্ন্যাশিং আর ডাবল স্কিল ক্যালিভার। এক্সপ্লসিভ মডিফায়ারের জন্য ১, স্টানের জন্য ২, ডাবল ড্যামেজের জন্য ৩ প্রভৃতি নানা ধরনের হটকি গেমটিকে আরও আকর্ষণীয় এবং দ্রুতলয়ের করে গড়ে তুলেছে। পুরো গেমটির পরিকল্পনা এমনভাবে করা হয়েছে, যাতে গেমারকে তার প্রতিটি পদক্ষেপে সর্বোচ্চ মনোযোগের ব্যবহার করতে হয়। কখনও এমন কোনো যুদ্ধক্ষেত্র আসবে না, যেখানে অন্যান্য অনেক গেমের মতোই চোখ বুঁজে মাউস ক্লিক করতে থাকলেই গেম শেষ হয়ে যাবে। হেলসিংয়ের উইপন অব চয়েস হচ্ছে তার পুরনো, দীর্ঘদিনের বিশ্বসত্ম সোর্ড আর তার চেয়েও বিশ্বস্ত বন্দুক। মিথলজিক্যাল মিনটুরস, আর বিশাল বিশাল মাকড়সা আর টার কোটেড বুলেট সব মিলিয়ে যেকোনো সময় যেকোনো কিছু ঘটতে পারে। চারপাশ দিয়ে ভয়ঙ্কর সব শত্রু একটু অসাবধান হলেই শেষ করে দিতে পারে সবকিছু।
পাওয়ার প্যাক অ্যাকশন গেমারদের জন্য সবচেয়ে বড় সুখবর হলো যেকোনো মুহূর্তে গেমের যেকোনো লেভেলে লড়াই কল্পনার চেয়েও ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে, যা গেমারকে চ্যালেঞ্জ করবে প্রতিমুহূর্ত, আর গেমারও মিটিয়ে নিতে পারবেন নিজের মনমতো সব ধরনের ব্যাটল টেকনিকের চাহিদা। গেমটি গেমারকে নিয়ে আসবে তার নিজস্ব কমফর্ট জোনের বাইরে, যা তাকে দেবে অন্যসব গেম থেকে ভিন্নতর অভিজ্ঞতা। সব মিলিয়ে দ্য ইনক্রেডিবল অ্যাডভেঞ্চার অব ভ্যান হেলসিংই হয়তো হয়ে উঠতে পারে গেমারের সবচেয়ে প্রিয় অ্যাকশন রোল প্লেয়িং ঘরানার গেম।
গেম রিকোয়ারমেন্ট
উইন্ডোজ : এক্সপি/ভিস্তা/৭, সিপিইউ : পেন্টিয়াম ৪.২ গিগাহার্টজ/এএমডি অ্যাথলন এক্সপি ২০০০+, র্যা ম : ২ গিগাবাইট উইন্ডোজ ভিস্তা/২ গিগাবাইট উইন্ডোজ ৭, ভিডিও কার্ড : জি ফোর্স ৫০০০ সিরিজ জিটিএস/রেডিওন (সমতুল্য) ২৫৬ মেগাবাইট উইথ পিক্সেল শেডার, হার্ডডিস্ক : ৪ গিগাবাইট
সিরিয়াস স্যাম ২
বর্তমান গেমিং বিশ্বে সবচেয়ে বিখ্যাত থার্ড পারসন অ্যাকশন-অ্যাডভেঞ্চার এবং থার্ড পারসন শুটিং জনরার গেম সিরিজ সিরিয়াস স্যাম। ভিনগ্রহী প্রাণীদের থেকে তার পৃথিবী রক্ষার অনবদ্য কাহিনি। পরবর্তী পর্বগুলোতে এই সিরিজের সর্বশেষ গেম নিয়ে কথা বলার আগে এই সিরিজের দ্বিতীয় গেমটি সম্পর্কে কিছু বলে নেয়া দরকার। যে বছর গেমটি বেরুল, তখনকার সময়ের শ্রেষ্ঠ গ্রাফিক্স ইঞ্জিন এবং থ্রিডি ইঞ্জিনে তৈরি হয় গেমটি। ক্রোয়েশিয়ান গেম ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি ক্রো টিম এই গেমটি যখন তৈরি করে তখন তাদের মূল লক্ষ্য ছিল এমন কোনো গেম সৃষ্টি করা, যা তৎকালীন ঝিমিয়ে পড়া গেমিং জগতকে এক ঝাঁকুনিতে জাগিয়ে তুলে সিরিয়াস স্যামকেও ছাড়িয়ে যাবে।
পৃথিবী যখন মিসরকেন্দ্রিক সভ্যতাতে ভর করে এগিয়ে চলছে, তখন পৃথিবীর উত্তরোত্তর উন্নতি ভিনগ্রহবাসীদের মোটেও পছন্দ হচ্ছিল না। তাই তারা ঝাঁকে ঝাঁকে নেমে আসে পৃথিবীর সভ্যতার কেন্দ্রকে ধ্বংস করে দেয়ার জন্য। সিরিয়াস স্যাম নামে এক অভিযাত্রী তখন তপ্ত রোদ্দুরে মিসরের পিরামিডগুলোকে দেখে নিজের জ্ঞান-পিপাসা মিটাচ্ছিল। অনিন্দ্যসুন্দর সেই দিনের আকাশ-কাল করে তখন সেই এলিয়েনরা নেমে আসে পিরামিডগুলোতে। স্যাম প্রথম দিকে কিছু বুঝে উঠতে না পারলেও পরে খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়। এরপর থেকে থেমে থাকা হয়নি স্যামের। সিরিয়াস স্যাম ২ নিয়ে এসেছে পৃথিবীর নানা অজানা স্থান আর ভিনগ্রহীদের হাত থেকে স্যামের পৃথিবী বাঁচানোর অনবদ্য কাহিনি।
সিরিয়াস স্যাম এমন একটি গেম, যা নিয়ে একবার বসে পড়লে যেকোনো গেমার কোনোভাবেই আর গেমটি শেষ না করে উঠতে পারবে না। টানা খেলে গেলে সম্পূর্ণ গেমটি শেষ করতে লাগতে পারে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা। এর মাঝে যদি বাংলাদেশের চিরায়ত ব্যবস্থা অনুসারে বিদ্যুৎ গেমপেস্নতে বিঘ্ন ঘটায়, তাহলে গেমটি না শেষ করে কমপিউটারের সামনে থেকে ওঠার কোনো কারণ নেই। এই কয়েক ঘণ্টার গেমপ্লেতে গেমার পাবে লক্ষাধিক এলিয়েন ধ্বংস করার আনন্দ। আছে অসম্ভব মারাত্মক সব অস্ত্র । আছে রিভলবার, শটগান, প্লাজমা গান, চেইন শ, মিনি গান, চেইন গান, রেইল গান, লেসার গান, গ্রাইন্ডার আরও নানা ধরনের অস্ত্র। আছে ডেস্ট্রাক্টেবল অবজেক্ট, ডিনামাইট, গ্রেনেড, স্মোক বম্ব, বস্নাস্ট বম্ব, ফ্ল্যাশ বম্ব, টাইম বম্বসহ আরও বহু ধরনের বম্বিং ইকুইপমেন্ট। গেমটিতে আছে ছোট ছোট এলিয়েন মনস্টার থেকে শুরু করে বিশালাকার দানব। আছে উড়ন্ত দানব, মানুষখেকো গাছগাছালি। আর এগুলোকে ধ্বংস করার জন্য স্যাম ব্যবহার করতে পারবে নানা ধরনের হেলিপ্যাড, টারেট প্রভৃতি। তাই প্রিয় গেমাররা, সিরিজের বাকি গেমগুলো খেলার আগে এখনই বসে পড়ুন সিরিয়াস স্যামের প্রথম
অভিযান নিয়ে।
গেম রিকোয়ারমেন্ট
উইন্ডোজ : এক্সপি/ভিস্তা/৭, সিপিইউ : পেন্টিয়াম ৪.২ গিগাহার্টজ/এএমডি অ্যাথলন এক্সপি ২০০০+, র্যা ম : ১ গিগাবাইট উইন্ডোজ ভিস্তা/১ গিগাবাইট উইন্ডোজ ৭, ভিডিও কার্ড : জি ফোর্স ৫০০০ সিরিজ জিটি এস/রেডিওন (সমতুল্য) ২৫৬ মেগাবাইট উইথ পিক্সেল শেডার, হার্ডডিস্ক : ৪ গিগাবাইট
গন হোম
গ্রিন ব্রায়ারের সবচেয়ে সুন্দর স্টেট অব দ্য আর্ট গেম ‘গন হোম’ বিশ্বব্যাপী শুধু সমাদৃতই হয়নি, মুগ্ধতায় আপন করে নিয়েছে সব গেমারের হৃদয়। গন হোমের সবচেয়ে অদ্ভুত সুন্দর দিক হলো এটি সত্য করে দিতে পারে যেকোনো কল্পনাকে। অদ্ভুতুড়ে কোনো কিছুর মাত্রাও ঠিক করা নেই এখানে। যেমন-তেমন কোনো একটা পাজল নিয়ে নিজের পরিচিত বাসত্মবতার মতো করে নিয়ে সমাধান করতে গিয়ে যেকোনো গেমারের নিজের ক্ষমতার ওপরই মুগ্ধতা এসে পড়বে। ফ্রিজের উপরে রাখা চিরকুট থেকে ফেলে দেয়া পেপারব্যাক বই, সালাদের উপরের ড্রেসিং থেকে পানির বোতল- সবকিছুতেই নজর রাখতে হবে গেমারের। ফুল ব্রাইট কোম্পানির প্রথম প্রচেষ্টার ফসল এই গেম নাড়িয়ে দিয়েছে পুরো গেমিং মার্কেটকে। তৈরি করেছে নতুন ভিত। ফার্স্ট পারসন এক্সপেস্নারেশন জনরার গেমটিতে নিখুঁতভাবে উঠে এসেছে প্রতিটি মানুষের জীবনচিত্র, যা হয়তো গেমার নিজের জীবনের সাথে মিলিয়ে ফেলে হঠাৎ বেশ অবাক হয়ে যাবেন হয়তো। আছে নানা ধরনের বই, ইচ্ছেমতো খাবার, যা ইচ্ছে করার স্বাধীনতা- সবকিছু মিলিয়ে গেমটি ছাড়িয়ে গেছে বায়োশক আর দিস ইজ আসকেও। বাস্তবতা-কল্পনা, ধাঁধা, সেগুলোর সমাধান- সব মিলিয়ে গন হোম কোথায় কী গিয়ে ঠেকছে হয়তো নিজেই ঠাহর করতে পারবেন না গেমার। একটা কথা বলে নেয়া ভালো, সারাক্ষণ নিভে যেতে থাকা বাতি, বাইরে বাড়তে থাকা ঝড়-বিজলী, ভয়ঙ্কর ব্যাকগ্রাউন্ড থিম- সব মিলিয়ে ভূতের বাড়ি মনে হলেও গন হোম মোটেও হরর গেম নয়। পড়ে থাকা কঙ্কাল, তাদের মৃত্যু, শেষ হয়ে যাওয়া পরিবারের ইতিহাস- সবকিছু খুঁজে বের করতে হবে প্রথম থেকে।
দিস ইজ দ্য মোস্ট পাওয়ারফুল পিস অব স্টোরি টেলিং আই হ্যাভ এভার সিন’- এরকমই ছিল প্রায় সব গেমারের অভিব্যক্তি। বাংলাদেশী গেমারদের ক্ষেত্রে যে এমনটাই হবে না, সেটা মনে হওয়ার কোনো কারণ নেই। সবচেয়ে সুন্দর ভয়েস ওয়ার্ক, বাসত্মবতার প্রচ- কাছাকাছি। গেমে কী হচ্ছে না হচ্ছে সেসব এখানেই সব বলে ফেলার ইচ্ছে নেই। কারণ প্রতিটি ইমোশনাল মার্ক আপ গেমের সবটা গড়ে তুলেছে অন্যসব গেম থেকে পুরো ভিন্নভাবে। গেমটির সম্পূর্ণ গেমিং আর্কিটেকচার সবকিছুকে এমন চমৎকারভাবে মোহনীয় করে তুলেছে, মনে হবে প্রতিটি জিনিস কাছে নিয়ে আরও নিখুঁতভাবে নিরীক্ষা করতে। সমস্যা হতে পারে যখন অনেক তথ্য সুন্দর করে মেমরিতে গুছিয়ে রাখার জন্য গেমার পিসি-কিবোর্ডের পাশাপাশি খাতা-কলম নিয়েও বসবেন।
সব মিলিয়ে গন হোমে খুঁত খুঁজে পাবেন না বললেই চলে। গেমিং হিস্ট্রিতে এরকম সফল ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ, অ্যাম্বিয়েন্ট স্টোরিলাইন বেশ কম। গ্রিন ব্রায়ারে থাকতে থাকতে হয়তো গেমারের নিজের বাড়ি ফিরতে নাও ইচ্ছে করতে পারে। গন হোম এমন এক ঘটনা দেখাবে, যা মনে থাকবে সারাজীবন। সুতরাং গেমারদের উচিত আর এক মুহূর্ত দেরি না করে গ্রিন ব্রায়ারের রহস্য উদ্ধারে লেগে পড়া।
গেম রিকোয়ারমেন্ট
উইন্ডোজ : এক্সপি/ভিস্তা/৭, সিপিইউ : পেন্টিয়াম ৪.২ গিগাহার্টজ/এএমডি অ্যাথলন এক্সপি ২০০০+, র্যা ম : ২ গিগাবাইট উইন্ডোজ ভিস্তা/২ গিগাবাইট উইন্ডোজ ৭, ভিডিও কার্ড : জি ফোর্স ৫০০০ সিরিজ জিটিএস/রেডিওন (সমতুল্য) ২৫৬ মেগাবাইট উইথ পিক্সেল শেডার, হার্ডডিস্ক : ৬ গিগাবাইট
ফিডব্যাক : alyousufhridoy@yahoo.com