• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > নজর কেড়েছে হাতিরঝিল ড্রিমস বিগিনস
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: ইমদাদুল হক
মোট লেখা:৩৭
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৪ - এপ্রিল
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
হাতিরঝিল ড্রিমস বিগিনস
তথ্যসূত্র:
গেমের জগৎ
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
নজর কেড়েছে হাতিরঝিল ড্রিমস বিগিনস

হাতিরঝিল। যানজটে নাকাল নগরীর জীবনে এনে দিয়েছে প্রশান্তি। কিন্তু এই প্রশান্তির সাক্ষাৎ সহজ নয়। রাজধানীর চিরচেনা জ্যাম ঠেলে সময় কুলিয়ে ওঠা দায়। আর ঢাকার বাইরের মানুষের জন্য মোহনীয় পর্যটন এলাকা হিসেবে আকর্ষণীয় হয়ে ওঠা এই অঞ্চলটিতে আসা আরও কঠিন। তবে বাসায় একটি কমপিউটার থাকলেই যেকেউ অবগাহন করতে পারবেন স্বপ্নময় হাতিরঝিলে। নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন বিনা কষ্টে। গুগল আর্থ বা গুগল ম্যাপিংয়ে নয়, ঘরের ছেলেদের হাত ধরেই হাতিরঝিলে জমিয়ে আড্ডা দিতে পারছেন কমপিউটার গেমপ্রেমীরা।

কোনো কিছুই যেনো আর স্থিত থাকছে না এক জায়গায়। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় ছড়িয়ে যাচ্ছে। পল্লবিত স্বপ্নগুলো গড়াগড়ি খাচ্ছে বৈঠকখানায়। একইভাবে রাজধারীর হাতিরঝিলও এখন ঠাঁই করে নিয়েছে ভার্চুয়াল জগতে। কমপিউটারে বসেই নয়নাভিরাম এই হাতিরঝিল ভ্রমণের রোমাঞ্চ ছড়িয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে ম্যাসিভ স্টার স্টুডিও। পথচলার প্রথম কদমেই মাত করল কমপিউটার গেমারদের। দেশে বসেই আমাদের তরুণরা উদ্ভাবন করল- হাতিরঝিল ড্রিমস বিগিনস। গেমটির মাধ্যমে হাতিরঝিলে কার রেসিং, বোটিং এমনকি ফ্লাইংয়ে মেতে উঠতে পারছেন মাঠ আর প্রান্তর হারিয়ে যাওয়া ঘরবন্দী শিশুরাও।

বাস্তবের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ রেখে গেমটির ডিজাইন করার চেষ্টা করেছেন নির্মাতারা। গেমটি তৈরিতে সময় লেগেছে সাত মাস। গেমটি তৈরি করতে কাজ করেছেন মোট ২৮ জন। গেমটির নকশা ও লেভেলগুলো ডিজাইন করেছে ছয়জনের একটি দল। গ্রাফিক্স আর অ্যানিমেশন করেছে পাঁচজনের একটি দল। সাউন্ড ও মার্কেটিংয়ে কাজ করেছে আলাদা দুটি দল। পুরো কাজটির নেতৃত্ব দিয়েছেন ম্যাসিভ স্টার স্টুডিওর কর্ণধার এসএম মাহবুব আলম।
তিনি জানান, বাণিজ্যিক গেম তৈরির লক্ষ্য ২০১২ সালে মিরপুরের শেওড়াপাড়ায় অফিস নিয়ে গবেষণার কাজ শুরু করেন তিনি। এ সময় তারা রানা প্লাজা, ইমার্জেন্সি রাশ, ঢাকা ট্রাফিক রুলস ও রক্তাক্ত-৭১ নামে চারটি কমপিউটার গেম তৈরি করেন। সেই হিসেবে ‘হাতিরঝিল ড্রিমস বিগিনস’ তাদের পঞ্চম গেম। তবে বাণিজ্যিকভাবে এটাই তাদের প্রথম গেম। ধারাবাহিকভাবে গেমটি প্রতিবছরই নতুন নতুন ভার্সনে প্রকাশ করা হবে। প্রথমে উইন্ডোজ প্লাটফর্মে তৈরি করা হলেও আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে গেমটির অ্যান্ড্রয়িড সংস্করণ প্রকাশ করা হবে। তখন পিসির পাশাপাশি স্মার্টফোনেও গেমটি খেলতে পারবেন গেমারেরা। এখানে প্রথম দুটি লেভেল বিনামূল্যে খেলা যাবে। এর দুই সপ্তাহ পর আইওএস প্লাটফর্মেও গেমটি ছাড়া হবে বলে জানান একসময় কমপিউটার গেম নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ইলেকট্রনিক আর্থ ই-স্পোর্টে কাজ করা এই স্বপ্নচারী মানুষটি।

‘হাতিরঝিল ড্রিমস বিগিনস’ সমাচার

হাতিরঝিলের তৈরি পটভূমিতে রোমাঞ্চকর এই গেমটিতে রেসিং, বোটিং উপভোগ করতে গেমারদের হতে হবে দক্ষ
ও ধৈর্যশীল। কেননা একটু ভুল হলে গোড়া থেকে শুরম্ন করতে হবে তাদের। এক এক করে পারি দিতে হবে ৩১টি লেভেল। দেশি এ গেমটির মাধ্যমে উঠে এসেছে রাজধানীর হাতিরঝিলের সৌন্দর্য। দেশে নির্মিত হলেও এর গ্রাফিক্স দেখে তা বোঝা দুষ্কর। গেমটিতে রয়েছে র্যা ম্পিং ও র্যা কভিত্তিক বিভিন্ন রোমাঞ্চকর আবহ ও হেলিকপ্টারের সাথে ঝুলমত্ম রাস্তা। সব লেভেলে রয়েছে পর্যায়ক্রমিক ধারাবাহিকতা। গেমটির দাম ১৫০ টাকা। গেমটির সীমাবদ্ধতা বলতে লোড হতে একটু বেশিই সময় নেয়। এছাড়া মাত্র চারটি কী ব্যবহার করা হয়েছে রেসিং ও বোটিংয়ে। আর পাঁচটি কী থাকছে ফ্লাইং করতে। গেমটিতে হাতিরঝিলের দৃষ্টিনন্দন রাসত্মায় গাড়ি চালানোর প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার পাশাপাশি ঝিলের পানিতে স্পিডবোট ছুটিয়ে কিংবা আকাশে চক্কর দিতে পারবেন গেমাররা। গেমটি খেলতে গেমারদের পিসিতে থাকতে হবে ন্যূনতম ২ দশমিক ৭০ গিগাহার্টজ ডুয়াল কোর প্রসেসর, ২ জিবি র্যাাম, হার্ডডিস্কে দেড় জিবি খালি জায়গা আর ১ জিবি গ্রাফিক্স কার্ড। অপারেটিং সিস্টেম হতে হবে উইন্ডোজ এক্সপি বা তার পরবর্তী সংস্করণ।

গেম নির্মাতাদের কথা

‘হাতিরঝিল ড্রিমস বিগিনস’ গেমটির নকশা করেছেন ম্যাসিভ স্টার স্টুডিওর কর্ণধার এসএম মাহবুব আলম। আর গেমটির প্রধান ডেভেলপার ফারহান মাহমুদের নেতৃত্বে নকশাকার, গ্রাফিক্স ও অ্যানিমেশন নির্মাতা, প্রোগ্রামার ও শব্দ প্রকৌশলীসহ মোট ২৩ জনের একটি দলের সাত মাসের ফসল এই গেমটি। পাঁচটি ভাগে ভাগ হয়ে দলের সদস্যরা এখনও কাজ করছেন গেমটির নতুন সংস্করণের জন্য। এই দলে রয়েছে মাহমুদ। মাশরুর ধানম-- সরকারি বয়েজ স্কুলে সপ্তম শ্রেণীতে পড়ছে। গেমটির শব্দ সংযোজন, গ্রাফিক্স ও লেভেল তৈরিতে কাজ করেছে সে। গেমটির প্রধান প্রকৌশলী ফারহান মাহমুদ তার বড়ভাই। তার কাছেই প্রযুক্তি শিক্ষার হাতেখড়ি হয়েছে মাশরম্নরের। পঞ্চম শ্রেণী থেকে কাজ শুরু করেছে সে।

গেমটির প্রধান ডেভেলপার ফারহান মাহমুদ জানান, গেমটি নির্মাণে গুগল স্কেচআপ প্রো, মায়া, থ্রিডি স্টুডিও ম্যাক্স ও বেস্নন্ডার সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়েছে। শব্দ সংযোজনের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে অডাসিটি ও ওপেন সোর্স সাউন্ড সফটওয়্যার। রেন্ডারিংসহ বেশিরভাগ কাজই করা হয়েছে বেস্নন্ডার সফটওয়্যার দিয়ে।
গেমটির প্রধান লেভেল ডিজাইনার নুর-ই আরাফাত জানান, গেমটিতে রয়েছে ৩১টি লেভেল। একটি শেষ না করে অন্য লেভেলে প্রবেশ করা যাবে না। লেভেলগুলোয় নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেয়া আছে। খেলতে না চাইলে বিআরটিসির বাস বা প্রাডো গাড়িতে করে ঘুরে বেড়ানো যাবে হাতিরঝিলে। রেসিং কার ছাড়া চালানো যাবে সিএনজিও অটোরিকশা। স্পিডবোট নিয়েও খেলা যাবে। বিমানে ওড়া যাবে। এছাড়া গেমটিতে পার্কিং নিয়েও আছে অন্যরকম একটি খেলা।

‘হাতিরঝিল ড্রিমস বিগিনস’-এর পরিকল্পক এসএম মাহবুব আলম জানালেন, বাংলাদেশে একটি বিশ্বমানের কমপিউটার গেম নির্মাণ প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে চান তিনি। ৬০ লাখ গেমারকে টার্গেট করে মাঠে নেমেছেন তিনি। দেশের বাইরেও বাংলাদেশের তরুণদের তৈরি গেম রফতানি করতে প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবল গড়ে তুলতে তিনি ইতোমধ্যেই হাতে নিয়েছেন বিশেষ প্রকল্প। স্কলাস্টিকা, অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল, আর্ক ইন্টারন্যাশনাল ও লরেটো ইন্টারন্যাশনালসহ রাজধানীর মোট ১৪টি স্কুলে প্রশিক্ষণ দেয়ার কাজ শুরু করেছেন তিনি। আর গত ২৪ মার্চ আত্মপ্রকাশের পর প্রথম সপ্তাহেই ‘হাতিরঝিল ড্রিমস বিগিনস’ গেমটির ২০ হাজার সিডি বিক্রি হওয়ায় আরও আশাবাদী হয়ে উঠেছেন তিনি

ফিডব্যাক : netdut@gmail.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস