• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > ব্রাজিল সম্মেলনে বিশকে উপহার দিল
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: মোহাম্মাদ আব্দুল হক
মোট লেখা:১৭
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৪ - মে
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
ইন্টারনেট গভর্নেন্স
তথ্যসূত্র:
রির্পোট
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
ব্রাজিল সম্মেলনে বিশকে উপহার দিল

২০ এপ্রিল, ২০১৪। রাত সাড়ে ৯ টায় ব্রাজিলের সাও পাওলোর উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়ি। উদ্দেশ্য সেখানে ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স সম্পর্কিত একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দেয়া। মাঝে দুবাইয়ে ৮ ঘণ্টার যাত্রাবিরতি। ৫ঘন্টা আকাশে উড়ে পৌঁছি দুবাই। নির্ধারিত যাত্রাবিরতির পর আবার এমিরাতস বিমানে দুবাই থেকে ব্রাজিলের সাও পাওলোর উদ্দেশ্যে যাত্রা। এই প্রথম এত লম্বা যাত্রা, তাও আবার বিমানে। ভাবতেই খারাপ লাগছিল। যাই হোক অবশেষে ১৪ ঘন্টা ৩৫ মিনিট বিমানে থেকে সাও পাওলোর মাটিতে পা রাখলাম। অদ্ভুত এ জায়গার মানুষগুলো। পুর্তগিজ ভাষা ছাড়া তারা কিছুই বুঝে না। হোটেল ম্যানেজার গুগুল ট্রান্সলেটর ওপেন করে আমাকে ইংরেজি ভাষায় তার কথা বুঝিয়েছে। হোটেলে পৌঁছে ফ্রেশ হতে না হতেই ডিনারের সময় হলো। ডিনার শেষে দেখা ২১ তারিখ ক্যালেন্ডারে পাতা থেকে বিদায় নিয়েছে পর দিন ২২ তারিখ। এই বিশ্ব সম্মেলন উপলক্ষে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ হতে আসা নাগরিক সমাজের উদ্যোগে ‘গ্লোবাল মাল্টিস্টেকহোল্ডার মিটিং অন দ্যা ফিউচার অফ ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স’ বিষয়ে একটি প্রাক-সমন্বয় সভার আয়োজন করা হয়। সভায় নেটমুনডাইলের প্রকাশিত খসড়ার আউটকাম ডকুমেন্টসের ওপর নাগরিক সমাজের মতামত তুলে ধরা হয়। সভার শেষে একটি সংলাপের আয়োজন করা হয়। এ সংলাপে অন্যান্য রাষ্ট্রের সরকারি প্রতিনিধি দলের সাথে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের নেতা হাসানুল হক ইনু অংশ নেন।
ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স বিষয়ে গ্লোবাল মাল্টিস্টেকহোল্ডার মিটিং অন দ্যা ফিউচার অফ ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স (NETmundial) শিরনামে দুদিন- ব্যাপী বিশ্ব সম্মেলন ব্রাজিলের সাও পাওলোতে ২৩ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলন যৌথভাবে আয়োজন করেছে 1Net Forum এবং ব্রাজিল সরকারের ইন্টারনেট স্টিয়ারিং কমিটি। ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত চলে এ সম্মেলন। এই সম্মেলনের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল সকল দেশের মতামতের ভিত্তিতে একটি ‘রোডম্যাপ ফর দ্যা ফিউচার ইভোলিউশন অফ দ্যা ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স’ প্রণয়ন করা।

ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট দিলমা হোসেফ সম্মেলন উদ্বোধন করেন। উক্ত অনুষ্ঠানে অন্যান্য দেশের সরকারি প্রতিনিধিদের সাথে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স ফোরাম (বিআইজিএফ)-এর চেয়ারপারসন হাসানুল হক ইনু। ইতোমধ্যে তিনি নেটমুনডাইলের বৈশ্বিক বহুমুখী অংশীদারি উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে যোগ দিয়েছেন।

উদ্বোধনী বক্তৃতায় দিলমা হোসেফ ইন্টারনেট ব্যবস্থাপনায় সব দেশের, সব মানুষের প্রতিনিধিত্ব দাবি করে একটি দেশের কাছে জিম্মি না থাকতে বিশ্ববাসীকে আহবান জানান। তিনি বলেন, আমরা এমন একটি ভবিষ্যতের দিকে যাচ্ছি, যার পটভূমি আমরা যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করি, তারাই তৈরি করে দিয়েছি। এখানে মানুষের দাবি নিরাপত্তা, তথ্য ব্যবহারের স্বাধীন অধিকার ও দারিদ্রমোচন। আমরা কোনো দেশ বা পুঁজিলগ্নীকারীর ইচ্ছার দাস হতে পারিনা।

বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। তিনি ইন্টারনেটের কারিগরি উন্নয়নের পাশাপাশি কল্যাণকর উন্নয়নের আহবান জানান, যাতে মানুষের অধিকার ও সমতা নিশ্চিত হয়। সম্মেলনে তথ্যমন্ত্রী চার সদস্যের একটি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেয়। এ প্রতিনিধি দলে ছিলেন- সেন্টার ফর ই-পার্লামেন্ট রিসার্চের চেয়ারম্যান ড. আকরাম হোসেন চৌধুরী, বেসিস সদস্য আফরোজা হক, বিআইজিএফের মহাসচিব মোহাম্মদ আব্দুল হক এবং বাংলাদেশ এনজিওস নেটওয়ার্ক ফর রেডিও অ্যান্ড কমিউনিকেশনের সিইও এএইচএম বজলুর রহমান। এছাড়াও বাংলাদেশ থেকে সম্মেলনে অংশ নেন মন্ত্রীর দুইজন প্রোটকল কর্মকর্তা এপিএস মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ হিল কাইয়ুম, পিএস মো: সাজ্জাদ হোসেন, আমাদের গ্রামের পরিচালক রেজা সেলিম ও ইন্টারনেট সোসাইটি বাংলাদেশ ঢাকা চ্যাপ্টারের সহ-সভাপতি মো: জাহাঙ্গীর হোসেন।

সম্মেলনের শুরু দিন ইন্টারনেট দুনিয়ার নিরাপত্তা নিয়ে নতুন বিতর্কের শুরু হয়, যা উসকে দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। প্রেসিডেন্ট দিলমা গত বছর জাতিসংঘের অধিবেশনে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা বিভাগের বিরুদ্ধে কর্তৃত্ব-বর্হিভূত উপায়ে তথ্য সংগ্রহে আড়িপাতার অভিযোগ এনেছিলেন। প্রেসিডেন্ট নিজেও এর শিকার হয়েছিলেন, যা সারা বিশ্বে ব্যাপক বিতর্কের সূচনা করে। এই প্রেক্ষিতে দুদিনের এ আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট সম্মেলন আয়োজন করে ব্রাজিল। নেটমুনডাইল অবস্থান নিয়েছে মাল্টিস্টেকহেল্ডারদের সহযোগিতার পক্ষ। এখানে বিভিন্ন খাত- যেমন সরকার, নাগরিক সমাজ, বেসরকারি খাত, শিক্ষাবিদ এবং বিশ্ব কারিগরি সমাজ- সম্মিলিত হয়েছিল ইন্টানেট গভর্ন্যান্সের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনার জন্য, গণতান্ত্রিক পরিবেশের ব্যবস্থাপনার জন্য। এতে বিশ্বের ৯৭টি দেশ থেকে প্রায় ১৪০০ ইন্টারনেট অ্যাক্টিভিস্ট যোগ দেন। এরা ইন্টারনেটের নিরাপত্তা, ভবিষ্যৎ ব্যবস্থাপনা ও ব্যবহারকারীদের স্বার্থরক্ষায় দুনিয়া জুড়ে সরব।

সম্মেলনকে সামনে রেখে ব্রাজিলের সিনেট ২২ এপ্রিল একটি আইন পাস করে, যাতে সে দেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারী নাগরিকদের তথ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। আইনটির নাম হচ্ছে ব্রাজিলিয়ান ইন্টারনেট বিল অফ রাইটস (Marco Civil da Internet)। এই আইন অনুযায়ী ব্রাজিলের কোনো ব্যবহারকারীর ডেটা বা তথ্য অন্য কোনো দেশের এজেন্সি বা কোম্পানি তথা টুইটার, ফেসবুক, গুগল ও ইহাহুসহ কেউ অপব্যবহার করতে পারবে না বা ভোক্তা স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হয়, এমন কোনো তথ্য পাচার বা সরবরাহ করতে পারবে না।

২৪ এপ্রিল ‘নেটমুনডাইল মাল্টিস্টেকহোল্ডার ষ্টেটমেন্ট’-এর চূড়ান্ত রূপ দেয়া হয় ৪৬টি দেশের স্বেচ্ছাসেবক প্রতিনিধিদের দেয়া ১৮৮টি কনট্রিবিউশন প্রক্রিয়াজাত করে। দুই দিনের অনুষ্ঠানে ৯৭টি দেশ থেকে আসা অংগ্রহণকারীরা সুযোগ পান আলোচনা অধিবেশনের মাধ্যমে ডকুমেন্ট পর্যালোচনার। এই অধিবেশনে ১৩৭০টি মন্তব্য বিবেচনায় আনা হয়, যেগুলো নেটমুনডাইলের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছিল। সেইসাথে রিয়েল টাইমে বিশ্বজুড়ে ৩০টিরও বেশি রিমোট হাবে প্রতিদিনের ২০০-এরও বেশি দর্শকদের পেশ করা মতামতও বিবেচনায় আনা হয়।

পরিশেষে নেটমুনডাইলের চেয়ারম্যান ভিরজিলিও অ্যালমিডা সমাপনী অনুষ্ঠানে নির্ধারিত সময়ের প্রায় তিন ঘন্টা পর, অনেক চাপ, বাধা বিপত্তি, প্রভাবশালী রাষ্ট্রের প্রভাব, অনেক মতৈক উপেক্ষা করে ইন্টারনেট গভর্ন্যান্সের রোড ম্যাপ উপস্থাপন করেন। বিস্তারিত : netmundial.br ওয়েব সাইটে।
২৬ এপ্রিল মধ্যরাতে সাও পাওলো থেকে ঢাকার উদ্দ্যেশ্যে যাত্রা শুরু। ২৮ এপ্রিল সকাল ৮.৩০ মিনিটে ঢাকাতে অবতরন। ভবিষ্যতে ইন্টারনেট গভর্ন্যান্সের রোডম্যাপ ও ইন্টারনেট আইন নিয়ে বিস্তারিত লেখা হবে কমপিউটার জগৎ-এ
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০১৪ - মে সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস