লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
সত্য নাদেলার চ্যালেঞ্জ : মাইক্রোসফটের রূপান্তর
সত্য নাদেলা। মাইক্রোসফটের নতুন সিইও। তিনি যখন দায়িত্ব নিলেন, তখন মাইক্রোসফট ২২ হাজার ৬০০ কোটি ডলারের ব্যালেন্সশিট নিয়ে এক লাভজনক কোম্পানি। এরপরও বলা দরকার, এর প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানিগুলো কিন্তু মাইক্রোসফটকে টপকে গেছে। যেমন উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে অ্যাপল ও গুগল পেছনে ফেলে দিয়েছে মাইক্রোসফটকে। টেনেহিঁচড়ে চলা আমলাতান্ত্রিকতা থেকে মাইক্রোসফটকে একটি ফাইটিং মেশিনে রূপান্তর করা নতুন সিইও সত্য নাদেলার সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এরই ওপর আলোকপাত করে এ লেখা। লিখেছেন গোলাপ মুনীর।
বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে মাইক্রোসফটে সবকিছুই ভালোয় ভালোয় চলছে। কোম্পানি ২০১৪ সালের দ্বিতীয় কোয়ার্টারের জন্য ২৪৫০ কোটি ডলার রাজস্ব আয় ও ৮০০ কেটি ডলার মুনাফার কথা ঘোষণা করেছে। এর অর্থ মাইক্রোসফট চলতি অর্থবছরে প্রক্ষেপিত ৮৪০০ কোটি ডলারের চেয়েও বেশি মূল্যের সেলস টার্গেট অর্জন করার মতো অবস্থানে রয়েছে। মাইক্রোসফটের জনশক্তি ১ লাখ ৩০ হাজার জনে পৌঁছানোর পরিকল্পনাও চলছে যথারীতি। বাড়ানো হচ্ছে এর কমার্শিয়াল অপারেশন। ‘অফিস ৩৬৫’-এর সুবাদে এর ক্লাউড সার্ভিস রেভিনিউ বেড়েছে ১০৭ শতাংশ। কমার্শিয়াল/বিজনেস সেক্টরে উইন্ডোজের অবস্থান শক্তিশালী থাকলেও মাইক্রোসফটের কনজ্যুমার সাইড ক্রমেই দুর্বল হচ্ছে। ‘এক্সবক্স ওয়ান’ ও ‘এক্সবক্স ৩৬০’ বিক্রি হয়েছে যথাক্রমে ৩৯ লাখ ও ৩৫ লাখ। কিন্তু ডিভাইস ও কনজ্যুমার হার্ডওয়্যার ডিভিশনে গ্রস মার্জিন ৪৬ শতাংশ কমে ৪০ কোটি ডলারে নেমেছে।
গত দশ বছরে মাইক্রোসফটের রাজস্ব আয়ের গড় প্রবৃদ্ধি ছিল ৯.৪ শতাংশ। এর আগের দশকে এই গড় প্রবদ্ধি হার ছিল ২৪ শতাংশ। সাবেক সিইও স্টিভ বেলমারের ১২ বছর সময়ে এই বিখ্যাত সফটওয়্যার কোম্পানি ছিল লাভজনক। এরপরও এটি প্রতিদ্বন্দ্বীদের সাথে প্রতিযোগিতায় হেরে যায়। মাইক্রোসফটের বাজার মূলধনায়ন ২০০২ সালের ২৮ হাজার ৮৯০ কোটি ডলার থেকে ২০১৩ সালে নেমে আসে ২২ হাজার ৬৮০ কোটি ডলারে। অপরদিকে অ্যাপলের বাজার মূলধনায়ন একই সময়ে ৬৮০ কোটি ডলার থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ৪৫ হাজার ৬০০ কোটি ডলারে। অ্যাপল ও গুগল চালু করে অ্যান্ড্রয়িড, আইফোন ও আইপ্যাডের মতো ডিজরাপটিভ টেকনোলজি। কিন্তু মাইক্রোসফটের মোবাইল, মিউজিক, স্মার্টফোন ও ট্যাবলেটের ক্ষেত্রে অগ্রগতিতে গতি ছিল না।
মাইক্রোসফটের এই ভালো-মন্দের অবস্থা থেকে সহজেই অনুমেয়, নতুন সিইও সত্য নাদেলার সামনে চ্যালেঞ্জ হচ্ছে এ কোম্পানিকে নতুন রূপ দেয়া। কারণ, মাইক্রোসফটের ওয়েব ও মোবাইল ডিভাইসের মূল ব্যবসায়ের সম্প্রসারণ থামিয়ে দিয়েছে গুগল ও অ্যাপল। উদাহরণ টেনে বলা যায়, উইন্ডোজ ফোন ৮.১ পর্যালোচনায় অনুচ্চ প্রশংসা পেলেও আইফোন ও অ্যান্ড্রয়িড এরই মধ্যে বিশ্বব্যাপী স্মার্টফোনের ৯৭ শতাংশ বাজার দখল করে ফেলেছে।
নোকিয়া ডিল
এরপরও আরেকটি প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন আছে। প্রশ্ন মাইক্রোসফটের নোকিয়া কেনার বিষয় নিয়ে। নতুন সিইও হিসেবে তিনি এক সঙ্কটময় প্রশ্নের মুখোমখি : মাইক্রোসফ কি একটি সফটওয়্যার কোম্পানিই থাকবে, না এটি একটি হার্ডওয়্যার কোম্পানিও হবে? মাইক্রোসফটকে যদি বিশ্বের সবচেয়ে বড় সফটওয়্যার কোম্পানির অংশ থাকতে হয়, তাহলে কি সত্য নাদেলার উচিত হবে তার কোম্পানির মোবাইল হ্যান্ডসেট ডিভিশনকে মুনাফা অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে কাজে নামানো? মাইক্রোসফটের চেয়ারম্যান থাকার সময় বিল গেটস স্মার্টফোন তৈরিতে এ কোম্পানির উদ্যোগে বাধা সৃষ্টি করে আসছিলেন। বিষয়টি সাবেক সিইও স্টিভ বেলমারের বিদায়কে ত্বরান্বিত করে। প্রথমে নাদেলাও বিল গেটসের মতো একই কাজটিই করেন। পরে অবশ্য তিনি মত পরিবর্তন করেন।
গত এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে মাইক্রোসফট নোকিয়ার মোবাইল হ্যান্ডসেট বিজনেস ৫৪৪ কোটি ইউরোর বিনিময়ে কিনে নেয়ার কাজটি সম্পন্ন করে। এর অর্থ মাইক্রোসফটের নতুন সিইও সত্য নাদেলার এ ধরনের ব্যবসায় নিয়ে মাথাব্যাথা আছে। সাবেক সিইও স্টিভ বেলমার ৯ মাস আগে নোকিয়া কিনে নেয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন। তখন এ ঘোষণাকে দেখা হয় মাইক্রোসফটের মার্জিন ডাইলুটিং তথা মার্জিন বাড়ানোর একটি উদ্যোগ হিসেবে। কারণ, কোম্পানির মূল ব্যবসায় সফটওয়্যার সরবরাহ ও বিজনেস কাস্টমারদের সার্ভিস জোগানোর অবস্থা তেমন ভালো যাচ্ছিল না। হয়তো সত্য নাদেলা ধরেই নিয়েছিলেন, নোকিয়া কিনে নেয়া ছাড়া তখন মাইক্রোফটের হাতে বিকল্প খুব কম ছিল, কিংবা একেবারেই কোনো বিকল্প ছিল না। নোকিয়ার ৯০ শতাংশ হ্যান্ডসেটে রয়েছে উইন্ডোজ ফোনের সফটওয়্যার। অতএব প্রতিযোগিতায় হেরে যাওয়ার ঝুঁকি এড়াতে নোকিয়া মাইক্রোসফটের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। অন্য কোনো হ্যান্ডসেট উৎপাদক কোম্পানি যদি নোকিয়া কিনে নিত, তবে তা হতো স্মার্টফোন শক্তি হিসেবে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে মাইক্রোসফটের প্রত্যাশার প্রতি বড় ধরনের এক আঘাত। ভুললে চলবে না, স্মার্টফোন হচ্ছে এখন ডমিনেন্ট কমপিউটিং প্ল্যাটফর্ম। কিন্তু নোকিয়াকেও অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আজকের অবস্থানে আসতে হয়েছে। এখন স্টিভ বেলমারের উত্তরসূরি সত্য নাদেলার কাজ হচ্ছে নোকিয়া ডিলকে কার্যকরভাবে কাজে লাগানো। এর অর্থ হচ্ছে- হয় হ্যান্ডসেট বিজনেসকে আকর্ষণীয় লাভজনক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া, নয়তো বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এমন বিশ্বাস জন্মানো যে, বৃহত্তর বাজিমাত করার জন্য স্মার্টফোন একটি উত্তম ক্ষেত্র। বিশেস্নষকেরা বলছেন, মাইক্রোফটের জন্য বড় সঙ্কট হচ্ছে এই দুই মনোভাবের মধ্যে আটকে পড়া। ওয়ালস্ট্রিট বিনিয়োগকারীরা সত্য নাদেলাকে কোন পথে নিতে চান, তা কোনো ব্যাপার নয়। বেলমারের বিদায় বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশায় একটা ঝাঁকুনি সৃষ্টি হয়েছে। এরা মনে করছেন নোকিয়া ডিল নিয়ে নতুন করে ভাবা হবে। মাইক্রোসফট বোর্ড নাছোড়বান্দার মতো সাবেক সিইও বেলমারে মতের বিরোধিতা করে আসছিল। পর্যবেক্ষকদের মতে, নতুন নেতৃত্বের অধীনে ভিন্নরূপ কিছু দেখা যেতে পারে। নাদেলার অবস্থান এই পুনর্ভাবনার সম্ভাবনা জাগিয়েছে। তার পূর্বসূরি বেলমার মাইক্রোসফটের ‘ডিভাইস অ্যান্ড সার্ভিস’ভিত্তিক স্ট্র্যাটেজি অবলম্বনের কথা বলে গেছেন। আর সত্য নাদেলা নতুন সিইও হিসেবে গত এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে প্রথম প্রকাশ্য মন্তব্যে জোর দিয়েছেন ‘সার্ভিসের’ ওপর। তিনি অবশ্য সূক্ষ্মভাবে কোম্পানির স্ট্র্যাটেজিক ফোকাস নিয়ে গেছেন ‘মোবাইল অ্যান্ড ক্লাউড’-এর দিকে। এই সূত্রায়নের মাধ্যমে তিনি জোর দিয়েছেন মাইক্রোসফটকে হার্ডওয়্যার কমপিউটিং বিজনেসে না নিয়েই মোবাইল কমপিউটিংয়ে এগিয়ে নেয়ার ব্যাপারে।
অ্যালিয়াঁজ গ্লোবাল ইনভেস্টর্সের পোর্টফোলিও ম্যানেজার সেভাস্টেইন থমাস এ কোম্পানির শেয়ারেরও মালিক। তিনি বলেছেন, নতুন সিইও’র মন্তব্য এবং মাইক্রোসফট বোর্ডের পিছুটান দৃষ্টে বলা যায়, সম্ভবত মাইক্রোসফটের হ্যান্ডসেট বিজনেসকে বাধ্য করা হবে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর। এ বছর গুগল এর নিজস্ব হ্যান্ডসেট ব্যবসায় ‘মটোরোলা’ চীনা টেকনোলজি গ্রুপ লেনোভোর কাছে বিক্রির ঘোষণা দিয়েছে। বিষয়টি থেকে বোঝা যায়, হার্ডওয়্যারের মালিকানা মোবাইল স্ট্র্যাটেজির অপরিহার্য অংশ নয়- এ অভিমত সেভাস্টেইন থমাসের। নোকিয়া হ্যান্ডসেট বিজনেস তাদের জন্য বিজনেস হতে পারে- সত্য নাদেলা এমনটি প্রমাণ করতে যদি চান, তবে তাদেরকে জোরালোভাবে এ কাজে নামতে হবে। তবে এরই মধ্যে সত্য নাদেলা স্পষ্ট করে দিয়েছেন- মাইক্রোসফটের বিজনেস এখন আর শুধু উইন্ডোজকে ঘিরে চলবে না। তার নজর সফটওয়্যার-এনাবলড সার্ভিসের প্রতিও।
মাইক্রোসফটে নাদেলা
১৯৯২ সালে তিনি যোগ দেন মাইক্রোসফটে। কারণ তিনি স্পষ্ট দেখতে পেয়েছিলেন- কী করে মাইক্রোসফট মানুষের ক্ষমতায়ন করে জাদুর মতো কাজ করে দুনিয়াকে পরিণত করতে পারে আরও ভালো এক স্থানে। তিনি বলেন : ‘Many company aspire to change the world. But very few have all the elements required- talent, resource and perseverance. Microsoft has proven that it has all these in abundance.’ এ থেকে এটুকু স্পষ্ট সত্য নাদেলা মাইক্রোসফট ও এর কালচারকে ভালো করেই জানতেন-চিনতেন।
২২ বছর মাইক্রোসফটে কাজ করে গত ৪ ফেব্রম্নয়ারি তিনি এর সিইও পদে উন্নীত হন। সিইও হওয়ার আগে তিনি ছিলেন এ কোম্পানির ক্লাউড অ্যান্ড এন্টারপ্রাইজ গ্রুপের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট, দায়িত্ব ছিল কোম্পানির কমপিউটিং প্ল্যাটফর্ম, ডেভেলপার টুল ও ক্লাউড সার্ভিস গড়ে তোলা এবং পরিচালনা করা। তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন উইন্ডোজ অ্যাজিউরকে অ্যামাজনের ক্লাউডের প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী করে তুলতে। আর ক্লাউড কমপিউটিংকে প্রধান আয়ের খাতে পরিণত করায় তিনি ছিলেন যথেষ্ট অভিজ্ঞ। প্রশ্ন আসে, মাইক্রোসফটের ভবিষ্যৎ এখন তিনি কোথায় নিয়ে দাঁড় করাতে চান? নাদেলা ভবিষ্যৎ মাইক্রোসফটকে দেখেন একটি ‘ডিভাইস অ্যান্ড সার্ভিস কোম্পানি’ হিসেবে, যার মূলধন হবে ‘ক্লাউড পাওয়ার’। তিনি বলেন, ‘মাইক্রোসফটকে একটি ডিভাইস ও সার্ভিস কোম্পানির ধারণায় ফিরিয়ে আনাই হচ্ছে আমাদের ভিশন। এর অর্থ কি এই যে, আমরা মানুষের কাছে আমাদের সফটওয়্যার পৌঁছাব না?’ এর উত্তর ‘না’। উইন্ডোজ পাওয়া যাচ্ছে আমাদের ডিভাইসের বাইরেও। উইন্ডোজ সার্ভার পাওয়া যাচ্ছে আমাদের ডাটা সেন্টারের বাইরে। আমরা একে গুরুত্বপূর্ণ ভাবি, কারণ সেখানে সব সময় থাকবে ডিস্ট্রিবিউটেড কমপিউটিং। একই সাথে গ্রাহকের চাহিদা হচ্ছে, আমাদেরকে সিনারিও পূর্ণ করতে হবে। এর অর্থ একটি ক্লাউড প্ল্যাটফর্ম রান করা, একটি ক্লাউড সার্ভিস রান করা। আমরা আমাদের কোম্পানিকে এসব শীর্ষের দিকেই নিয়ে যাচ্ছি।
মাইক্রোসফটে যারা কাজ করেন তাদের কাছে পাঠানো এক ই-মেইল বার্তায় নতুন সিইও সত্য নাদেলা লিখেছেন : ‘আওয়ার ইন্ডাস্ট্রি ডাজ নট রেসপেক্ট ট্র্যাডিশন- ইট অনলি রেসপেক্টস ইনোভেশন।’
২০০১ সালে তিনি সহায়তা করেন ছোট ও মাঝারি কোম্পানির জন্য বিশেষায়িত পণ্য ব্যবস্থাপনায়। ২০০৭ সালে তার সতর্ক পর্যবেক্ষণ ছিল মাইক্রোসফটের সার্চ ইঞ্জিন বিং-এর ওপর। ২০০৭-এর দিকে তিনি ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন শুরু করেন মাইক্রোসফটের সার্ভার ও ক্লাউড প্ল্যাটফর্মগুলোর। এ থেকেই উদ্ভব ঘটে মাইক্রোসফটের ক্লাউড কমপিউটিংয়ের উদ্যোগগুলোর। মাইক্রোসফটের ক্লাউড প্ল্যাটফর্ম হচ্ছে বিং, এক্সবক্স লাইভ, অফিস ৩৬৫ এবং উইন্ডোজ অ্যাজিউরের মতো মাইক্রোসফট সার্ভিসের পেছনে কাজ করা অবকাঠামো।
আগেই উল্লেখ করা হয়েছে সিইও হওয়ার আগে নাদেলা নেতৃত্ব দিয়েছেন মাইক্রোসফটের ক্লাউড ও এন্টারপ্রাইজ ডিভিশনের। তার নেতৃত্বের ফলে গত কোয়ার্টারে কোম্পানি রেকর্ড পরিমাণ রেভিনিউ অর্জন করতে সক্ষম হয়। যেখানে সত্য নাদেলা, সেখানে প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা প্রচুর।
ক্লাউডে নজর
ক্লাউডের দিকে নজর দেয়া মাইক্রোসফটের জন্য অপরিহার্য উদ্যোগ। ব্যক্তি ও ব্যবসায়িক গ্রাহকেরা মাইক্রোসফটের যেসব ট্র্যাডিশনাল সফটওয়্যার পণ্য তাদের মেশিনে যুক্ত করে, সেগুলো অনলাইন সার্ভিস হিসেবে কোম্পানির একই ক্ষমতাসম্পন্ন ক্রমবর্ধমান পণ্যের সাথে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে। এগুলোর মধ্যে আছে গুগল, অ্যামাজন, সেলসফোর্স, ড্রপবক্স, বক্স ও অন্যান্য। মোবাইল মিউজিক, স্মার্টফোন, ট্যাবলেট ও অ্যাপের ক্ষেত্রে মাইক্রোসফট সুবিধা করতে না পারলেও ক্লাউডে এর অবস্থান শক্ত। সত্য নাদেলার মতে, এখন মাত্র তিনটি কোম্পানি ক্লাউড বিজনেস পরিচালনা করছে : গুগল, মাইক্রোসফট ও অ্যামাজন। তিনি বিশ্বাস করেন, এ ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ দিতে প্রতিযোগী আসবে কমই। কেউ বলতে পারেন না আমি আগামীকালই এ ব্যবসায় নামব। এর জন্য প্রতিবছর খরচ করতে হবে ৫০০ থেকে ৬০০ কোটি ডলারের মূলধন। সে মাত্রায় এরই মধ্যে না থাকলে আপনি কখনও এ ব্যবসায় যেতে পারবেন না।
নাদেলার সুবিধা হলো তিনি ক্লাউডের কাজের অভিজ্ঞতায় অভিজ্ঞ। এ ক্ষেত্রে তিনি পরিচালনা করে আসছিলেন মাইক্রোসফটের টপ স্পট। আর ক্লাউডে তার চরম সাফল্য প্রমাণিত। তিনি মাইক্রোসফটের লেগাসি প্রোডাক্ট উইন্ডোজ ও অফিস সম্পর্কে তেমন কিছু বলেন না। অথচ এগুলো এ কোম্পানির মানি মেকার। এর অর্থ তার নজর ইনোভেশনের দিকে। আর এটাই মাইক্রোসফটের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
মাইক্রোসফটের শুরু একটি দুর্বল কম্পিটিশন মেশিন হিসেবে। এর নেতৃত্বে ছিলেন অসমান্তরাল মেধাবী ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন একদল তরুণ। কিন্তু এক সময় এটি অনিচ্ছাকৃতভাবে আটকা পড়ে আমলাতাড়িত কালচারে। এখানে পুরস্কৃত হন এমন ম্যানেজারেরা, যারা ইনোভেটিভ আইডিয়াগুলোকে গলা টিপে হত্যা করেন, কিংবা ভিন্ন পথে পরিচালিত করেন, নয়তো বিলম্বিত করেন। অথচ এগুলোর মাধ্যমে কোম্পানির মধ্যে আসতে পারত একটি ইপিক চেঞ্জ।
মাইক্রোসফটে পরিবর্তন
সত্য নাদেলার সাফল্য নিশ্চিত করার অপরিহার্য করণীয় হচ্ছে মাইক্রোসফটের কালচারে পরিবর্তন আনা। সফল নেতাদের কাজ হচ্ছে প্রতিযোগিতা না করে বরং কর্পোরেট কালচারের লালন। বিশেষ করে মাইক্রোসফটের বেলায় এটি খুবই প্রাসঙ্গিক, যেখানে পণ্য ও সেবা অবশ্যই সমন্বিত করতে হবে এর প্ল্যাটফর্ম এবং ডিভাইসের সাথে। এটাই নাদেলার চ্যালেঞ্জ। নাদেলা এ চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে ভালো করেই জানেন। তিনি বলেছেন, ‘আজ আমি যে বিষয়টির ওপর নজর দিচ্ছি তা হলো- কী করে লিডারশিপ টিমের কার্যকারিতা সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছানো যায়, কী করে আমরা ১ লাখ ৩০ হাজার এমপ্লয়ির ইন্টেলেকচ্যুয়াল প্রপার্টি কাজে লাগাতে পারি এবং কী করে এমনসব উদ্ভাবন করতে পারি, যেখানে অতীতের কোনো ক্যাটাগরি ডেফিনিশন কোনো ব্যাপার নয়। এখন কোনো সাংগঠনিক কাঠামো বিদ্যমান সেটা কোনো বিবেচ্য নয়। কারণ, কোনো প্রতিযোগিতা ও উদ্ভাবন এসব সীমা-পরিসীমা মেনে চলে না। অতএব আমরা কী করে সেলফ অর্গানাইজিং ক্যাপাবিলিটি গড়ে তুলতে পারি, সেটির ওপরেই কি জোর দেয়া উচিত নয়? আর হাই-টেক বিজনেস হচ্ছে সেরা বিজনেসগুলোর একটি।’
এখন দেখার বিষয়
অতএব এখন দেখার বিষয় সত্য নাদেলা তার এই সচেতনতা কাজে লাগিয়ে বাস্তবে প্রয়োগ করে মাইক্রোসফটে পরিবর্তন আনার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কতটুকু সফল হতে পারেন। কোম্পানিকে নিয়ে যেতে পারেন নবতর উচ্চতায়।
একনজরে সত্য নাদেলা
সত্য নাদেলা। জন্মের সময়ের নাম বুক্কাপুরম নাদেলা সত্যনারায়ণ। তার জন্ম ভারতের টেকনোলজি পাওয়ার হাউস হায়দ্রাবাদে। জন্ম ১৯৬৭ সালে। তিনি তেলেগু সম্প্রদায়ের লোক। স্কুলের লেখাপড়া হায়দ্রাবাদ পাবলিক স্কুলে। ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিগ্রি নেন মনিপাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। বিয়ে করেন ১৯৯২ সালে। স্ত্রী অনুপমা নাদেলা। তিনি তার বাবার আইএএস ব্যাচমেট কে আর ভানুগোপালের কন্যা। সত্য নাদেলা অনুপমাকে চিনতেন স্কুলজীবন থেকেই। স্ত্রী অনুপমা আর এক পুত্র ও দুই কন্যাসন্তান নিয়ে নাদেলা থাকেন ওয়াশিংটনের ভেলেভ্যুতে। শখের বিষয় ক্রিকেট ও কবিতা।
১৯৯০ সালে স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যান এমএস করার জন্য। উইসকনসিন ইউনিভার্সিটি-মিলাওয়াকি থেকে কমপিউটার সায়েন্সে এমএস করে একই বছরে এমবিএ ডিগ্রি নেন ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো বুথ স্কুল অব বিজনেস থেকে। ১৯৯২ সালে টেকনোলজি স্টাফের সদস্য হিসেবে যোগ দেন সান মাইক্রোসিস্টেমে। ১৯৯২ সালেই চলে যান মাইক্রোসফটে। ২০১৪ সালের ৪ ফেব্রম্নয়ারি হন এর সিইও। সিইও হওয়ার আগে ছিলেন এ কোম্পানির ক্লাউড অ্যান্ড এন্টারপ্রাইজ গ্রুপের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট। সিইও হিসেবে প্রথম এক বছর তিনি প্রতিমাসে বেতন পাবেন ১ লাখ ডলার। ২০১৩ সালে আয় করেন ৭৬ লাখ ডলার।