লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৪ - ফেব্রুয়ারী
২০৩৫ সালের মধ্যে গরিব থাকবে না কোনো দেশ
ছেলেবেলায় সাবানের বুদবুদ নিয়ে খেলেছেন অনেকেই। সাবানের বুদবুদে আলোর প্রতিফলনে তৈরি হতো নানা রং। আলো আর রংয়ের সংমিশ্রণে তৈরি নানা ডিজাইন দেখার পাশাপাশি কে কত বড় বুদবুদ তৈরি করতে পারে সেটাও ছিল প্রতিযোগিতার বিষয়। ছোটবেলার সেই সাবানের বুদবুদ নিয়ে এবার গবেষণায় নেমেছেন বিজ্ঞানীরা। হ্যাঁ, সাবানের বুদবুদ থেকেই এবার বিজ্ঞানীরা তৈরি করতে যাচ্ছেন পুরোদস্ত্তর একটি ডিসপ্লে। শুধু তাই নয়, এটি হবে এখন পর্যন্ত তৈরি সবচেয়ে পাতলা ডিসপ্লে। তার আগে ডিসপ্লে সম্পর্কে কিছুটা ধারণা নেয়া যাক।
কমপিউটার মনিটর : কমপিউটারের মনিটর ব্যবহার হতো ডাটা প্রসেসিংয়ের জন্য, যেখানে টেলিভিশন রিসিভার ব্যবহার হতো শুধু বিনোদনের জন্য। ১৯৮০ সাল থেকে কমপিউটারে মনিটর ব্যবহার হওয়া শুরু হয় ডাটা প্রসেসিং ও বিনোদনের জন্য। তখন টেলিভিশনে ধীরে ধীরে কমপিউটারের ফাংশন ব্যবহার হওয়া শুরম্ন হতে থাকে। আর কমপিউটারের আকৃতির অনুপাত 4t3 থেকে পরিবর্তিত হয়ে 16t9-এ আবর্তিত হয়।
প্রথমত, ইলেকট্রনিক কমপিউটার কিছু বাল্বের প্যানেলের সাথে যুক্ত থাকত, যেখানে আলাদাভাবে বাল্বগুলো যন্ত্রটি চালু ও বন্ধের নির্দেশ দিত। পরবর্তীতে এই লাইটের প্যানেলই মনিটর নামে পরিচিতি পায়। প্রথমদিকে মনিটর সীমিতসংখ্যক তথ্য প্রদর্শনের জন্য ব্যবহার হতো, যা ছিল ক্ষণস্থায়ী এবং প্রোগ্রামের আউটপুটের জন্য খুব অল্প সময় ব্যবহার হতো। সেই সময়ই বাল্বের এই শ্রেণীবিন্যাসে প্রতিস্থাপিত হয় ক্যাথোড রে টিউব। সিআরটি বা ক্যাথোড রে টিউব লাইটের ওই প্যানেল থেকে অনেক নমনীয়। পরবর্তীতে এই সিআরটি থেকে এলসিডি, প্লাজমা, ওএলইডি এবং এলইডি মনিটরের সৃষ্টি হয়।
প্রথম কমপিউটার মনিটরটি ছিল একবর্ণী, পিটপিট করা ছবি এবং যার ইমেজ মান ছিল খুব নগণ্য। আইবিএম চার রংয়ের সমন্বয়ে কালার গ্রাফিক্স অ্যাডাপ্টার যুক্ত করে, যার রেজ্যুলেশন ছিল ৩২০ বাই ২০০ পিক্সেল। পর আইবিএম ১৯৮৪ সালে অন্য একটি অ্যাডাপ্টার যুক্ত করে, যা ১৬টি রংয়ের সমন্বয়ে ৬৪০ বাই ৩৫০ পিক্সেল রেজ্যুলেশন প্রদর্শন করতে পারে। সিআরটি মনিটরের ট্রায়োড বৈশিষ্ট্যযুক্ত মনিটর হচ্ছে গামা মনিটর।
এলসিডি তথা লিকুয়েড ক্রিস্টাল ডিসপ্লেতে ছবির কোয়ালিটি উন্নত করার জন্য টিএফটি তথা থিন ফিল্ম ট্রানজিস্টর ব্যবহার করা হয়েছে।
বর্তমানে টেলিভিশন সেট, কম্পিউটার মনিটর, মোবাইল ফোন, ভিডিও গেম সিস্টেমে, পারসোনাল ডিজিটাল অ্যাসিস্ট্যান্ট, নেভিগেশন সিস্টেমে এবং প্রজেক্টরে এই টিএফটি-এলসিডি মনিটর ব্যবহার হচ্ছে।
সাবান থেকে ডি্সপ্লে : সাবানের বুদবুদকে বলা হয় মাইক্রো মেমব্রেন। এ মাইক্রো মেমব্রেনের ওপরেই ছবি প্রদর্শন কারার একটি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন গবেষকেরা। টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ইয়োইচি ওচিআইয়ের নেতৃত্বে আমত্মর্জাতিক এক গবেষক দল এই প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন। এই ডিসপেস্নতে ফ্ল্যাট অথবা ত্রিমাত্রিক উভয় ধরনের ছবিই প্রদর্শন করা যাবে। মূল উপাদান সাবানের ফেনা হলেও গবেষকেরা এতে আরও কিছু পদার্থ যোগ করেছেন একে স্থায়ী ডিসপ্লে পরিণত করতে। ডিসপ্লেতে ছবি প্রদর্শন করতে গবেষকেরা উদ্ভাবন করেছেন বাইডিরেকশনাল রিফ্লেকট্যান্স ডিস্ট্রিবিউশন ফাংশন বা বিডিআরডিএফ নামের বিশেষ একটি পদ্ধতি। কোনো অস্বচ্ছ তলের উপরে আলো কী করে প্রতিফলিত হয়, তা নির্ধারিত হয় এই ফংশন দিয়ে। আর এই পদ্ধতি ব্যবহার করেই সাবানের সাথে দুই ধরনের কলয়েড জাতীয় তরল মিশিয়ে অসম্ভব পাতলা ও নমনীয় বিডিআরএফ স্ক্রিন তৈরি করা হয়েছে। আমাদের পরিচিত ডিসপ্লেগুলো তাই অস্বচ্ছ হলেও এই ডিসপ্লেগুলোর স্বচ্ছতা এবং আলোকে প্রতিফলন করায় বদলে যাবে ক্ষণে ক্ষণে।
সাবানের বুদবুদকে ডিসপ্লের উপযোগী করে তোলার জন্য আরও ব্যবহার করা হয়েছে বিশেষ ধরনের আল্ট্রাসনিক শব্দতরঙ্গ। আর শব্দতরঙ্গগুলো এই ডিসপ্লেতে প্রদর্শিত ছবিগুলোর টেক্সচারকে প্রয়োজনমতো মসৃণ বা খসখসে করে তুলবে। ফলে এতে প্রদর্শিত ছবি হবে অনেক বেশি জীবমত্ম। এ প্রসঙ্গে এই গবেষণায় সম্পৃক্ত আরেক গবেষক যুক্তরাষ্ট্রের কার্নেগি মেলন বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালেক্সিস ওইয়ামা বলেছেন, আমাদের পরিচিত ডিসপ্লেগুলো সব ছবিকে একই ধরনের দেখায়। তবে বিভিন্ন বস্ত্তর ওপর নির্ভর করে ছবিগুলোতে আলাদা বৈশিষ্ট্য থাকে। যেমন : একটি প্রজাপতির ডানার ছবি হতে হবে প্রতিফলিত। আবার একটি বিলিয়ার্ড বলের ছবি হতে হবে মসৃণ। আমাদের স্বচ্ছ এই ডিসপ্লেতে বস্ত্তর ওপর নির্ভর করে ছবির টেক্সচারে পরিবর্তন আসবে। এতে করে ছবিতে জীবন্ত ভাবটি ফুটে উঠবে বলেই তারা জানিয়েছেন। আর কলয়েড কণার ব্যবহার বুদবুদগুলোকে অনেক বেশি শক্ত করে তুলবে, যাতে এগুলো সহজে ফেটে না যায়। একাধিক এই বুদবুদ স্ক্রিন একসাথে ব্যবহার করে ত্রিমাত্রিক ইফেক্টও তৈরি করা যাবে এই ডিসপ্লেতে। অর্থাৎ ত্রিমাত্রিক ছবিও উপভোগ করা যাবে এই ডিসপ্লের মাধ্যমে।
স্বচ্ছ ডিসপেস্ন নিয়ে আসছে এইচপি : বিজ্ঞান কল্পকাহিনীতে প্রায়ই দেখা যায় স্বচ্ছ সব ডিসপেস্ন। এসব ডিসপেস্নতে ডিসপেস্ন ভেদ করে ওপারের সবকিছুই দেখা যায়। বড় হলরম্নমে বা গাড়ির কাঁচেও এই ধরনের ডিসপেস্ন হরহামেশাই দেখা যায় এসব ছবিতে। ঠিক এই ধরনের ডিসপ্লে তৈরি করছে এইচপি। প্রায় ছয় বছর ধরে এইচপি কাজ করে যাচ্ছে এই ডিসপ্লে নিয়ে। ২০০৬ সালেই তারা এই ডিসপেস্নর জন্য প্যাটেন্টের আবেদন করেছিল। অবশেষে এই প্যাটেন্ট তারা লাভ করেছে গত বছর। এইচপি অবশ্য জানিয়েছে, অর্ধস্বচ্ছ ডিসপ্লে ইতোমধ্যেই ব্যবহার হচ্ছে বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে। তবে ডিসপ্লেগুলো টেক্সটের জন্য ভালো কাজ করে। গ্রেস্কেল বা ফুল কালার গ্রাফিক্সের জন্য ভালো কাজ করে। গ্রেস্কেল বা ফুল কালার গ্রাফিক্সের জন্য সেসব ডিসপ্লে তা তেমন একটা কার্যকর নয়।
টেলিভিশন চ্যানেলে ব্যবহার হওয়া সেসব ডিসপ্লের সীমাবদ্ধতাগুলো কাটিয়ে ওঠার চ্যালেঞ্জ নিয়েই কাজ করে যাচ্ছে এইচপি। শুধু তাই নয়, স্বচ্ছ এই ডিসপ্লেগুলো তারা নমনীয় করে তৈরি করার পরিকল্পনা নিয়েই নেমেছে কাজে। এতে ডিসপ্লেগুলোকে ভাঁজ করে সহজেই বিভিন্ন স্থানে বহন করে নেয়া যাবে। আবার এগুলোকে স্টোরেজ হিসেবে ব্যবহার করার সুবিধাও যোগ করার চিন্তা করেছে তারা। এইচপির পাশাপাশি স্যামসাংও এই প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে। তাদের গবেষণায় তারা অনেকটা এগিয়ে গেছে বলেও জানিয়েছে। স্যামসাং অথবা এইচপি অথবা সাবান ডিসপ্লের কোনো একটি গবেষণা যদি বাস্তবায়ন হয়, তবে তা নিঃসন্দেহে প্রযুক্তিবিশ্বে এক নতুন যুগের সূচনা করবে। কল্পবিজ্ঞানের কাহিনী আর বাস্তব অনেকখানিই চলে আসবে কাছাকছি
ফিডব্যাক : mfuzaratania@yahoo.com