• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > দুর্নীতি আর অনিয়মের ফাঁদে আইসিটি খাত
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: কজ
মোট লেখা:১০৪১
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৪ - আগস্ট
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
সম্পাদক
তথ্যসূত্র:
সম্পাদকীয়
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
দুর্নীতি আর অনিয়মের ফাঁদে আইসিটি খাত
অন্যেরা করে বেশি, বলে কম। আর আমরা বলি বেশি, করি কম। তবে উল্টোদিকে এটিও সত্য, আমরা অনিয়ম আর দুর্নীতি করি বেশি। নিয়ম-শৃঙ্খলার ধার ধারি কম। ডিজিটাল বাংলাদেশ নিয়ে আমাদের দেশে যেভাবে প্রচার-প্রচারণা, এর অর্ধেকও সঠিক হলে আমরা পেতাম অন্য এক বাংলাদেশ। আমাদের নেতানেত্রীরা যেমনটি বলেন তাতে মনে হয়, প্রযুক্তিতে এরই মধ্যে আমরা আকাশ ছুঁয়েছি, এবার বুঝি মহাকাশ ছুঁব। এ খাতে আমাদের সফলতার ঝুড়ি একেবারে পরিপূর্ণ। কিন্তু বাস্তবে কী তাই? আসলে বাস্তবতাটা ভিন্ন। নইলে ২০১৪ সালে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের গ্লোবাল আইটি রিপোর্টে বাংলাদেশের অবস্থানের অবনতি ঘটত না। এই রিপোর্টের নেটওয়ার্ক রেডিনেস ইনডেক্সে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৮ দেশের মধ্যে ১১৯তম। গত বছরের ইনডেক্সে আমাদের অবস্থান ছিল ১৪১ দেশের মধ্যে ১১৪তম স্থানে। এই পিছিয়ে যাওয়ার পেছনে যদি বিজারক হিসেবে কাজ করে আইসিটি খাতের নানা অনিয়ম, দুর্নীতি আর দায়িত্বশীলদের অবহেলা, তবে তা কখনই মেনে নেয়া যায় না। বাংলাদেশে কার্যত ঘটছে কিন্তু তাই। অনিয়ম, দুর্নীতি আর অবহেলা যেনো এ খাতে স্থায়ী বাসা বেঁধে বসেছে।
দৈনিক সমকাল এক রিপোর্টে জানিয়েছে- কর্মকর্তাদের দলাদলি আর দুর্নীতিতে পিছিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস লিমিটেডের তথা বিটিসিএলের বড় বড় প্রকল্প। এ কোম্পানির প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের একাধিক পক্ষ অবৈধ যোগসাজশ করে নিজেদের পছন্দের বিদেশী কোম্পানিকে কাজ দেয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। এ নিয়ে চলে এক ধরনের যুদ্ধ। এর ফলে একের পর এক মামলা আর অভিযোগের ফাঁদে আটকে যায় বড় বড় প্রকল্প। অনুসন্ধানে জানা গেছে- বড় প্রকল্পের টেন্ডারকে কেন্দ্র করে কর্মকর্তাদের দলাদলিতে ঢাকা-কক্সবাজার ট্রান্সমিশন ব্ল্যাকহোল লিঙ্ক আপগ্রেডেশন এবং ঢাকার টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (টিএনডি) প্রকল্পের লট-বি’র কাজ গত তিন বছরেও বাস্তবায়ন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। উল্লিখিত প্রথম প্রকল্পটি কতটুকু প্রয়োজন ছিল, তা নিয়ে বিটিএসএলের ভেতরে এখনও বিতর্ক চলছে। এ ধরনের বিতর্ক থেকে একের পর এক মামলা হচ্ছে। মামলাযুদ্ধে বাড়ছে বিটিসিএলের অতিরিক্ত খরচ।
অপরদিকে আমরা আজ পর্যন্ত ভিওআইপিকে একটি সুষ্ঠু ও বৈধ ব্যবসায়ের ধারায় ফিরিয়ে আনতে পারিনি। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন তথা বিটিআরসির মনিটরিংয়ের অভাব, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে স্থবিরতা, প্রভাবশালী মহলের কায়েমী স্বার্থ, আইনের দুর্বলতাসহ নানা কারণে বাংলাদেশে অব্যাহতভাবে চলছে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায়। এসব দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে বরং সময়ের সাথে ভিওআইপি ব্যবসায়ীরা এদের অবৈধ এ কারবার আরও চাঙ্গা করে তুলছে। বেশ কয়েক বছর ধরে গণমাধ্যম থেকে এই অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায় বন্ধে নানা পদক্ষেপের কথা শুনে এলেও কোনো কার্যকর ফলোদয় আমরা দেখতে পাইনি। সম্প্রতি এ ক্ষেত্রে চলমান অবৈধ ব্যবসায় রোধে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় কলরেট কমানোর উদ্যোগ নেয়। এতেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বরং এরপরও এই অবৈধ ব্যবসায় আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে ও বিদেশে অবস্থানকারী প্রভাবশালী ব্যক্তি, ব্যবসায়ী, রাজনীতিক, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ও বিটিআরসির কতিপয় দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তা একজোট হয়ে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তুলে এই অবৈধ ব্যবসায় চালিয়ে যাচ্ছে। এরা এভাবে প্রতিমাসে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে নিজেদের মধ্যে ভাগ-ভাটোয়ারা করে নিচ্ছে বলে গণমাধ্যম সূত্রে প্রকাশ। এই সিন্ডিকেটের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এতটাই শক্তিশালী যে এর বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়ে এই অবৈধ ব্যবসায় কিছুতেই বন্ধ করা যাচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশও কাজে আসছে না।
একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত তথ্যমতে, অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায় থেকে প্রভাবশালী চক্রটি বছরে ১২ হাজার কোটি টাকা লুটেপুটে খাচ্ছে। এক সময় এই হাইটেক ব্যবসায় গোপনে চললেও এখন তা অনেকটা ওপেন সিক্রেট। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে চুনোপুঁটিদের কখনও কখনও ধরা হলেও এর মূল হোতারা বরাবর থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। এদিকে এই ব্যবসায়কে বৈধ করার কথা বলে বিটিআরসি ২৭ ধরনের ৮৪০টি লাইসেন্স দিয়েছে। প্রতিটি লাইসেন্স দিয়েই ভিওআইপি করার সুবিধা রয়েছে। এর বাইরে ভিস্যাটের লাইসেন্স বাতিল করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত তা বাতিল করা হয়নি। অভিযোগ আছে, ভিস্যাটের মাধ্যমে ভিওআইপি করা হচ্ছে। বিটিসিএলের ব্যান্ডউইডথ ব্যবহার করেই ঢাকার বাইরেও ভিওআইপি কল হচ্ছে।
বিটিআরসি সূত্রমতে, চলতি জুলাই মাসে প্রতিদিন আন্তর্জাতিক কলের পরিমাণ পাঁচ কোটি মিনিটের কাছাকাছি। গত মাসেও তা প্রতিদিন গড়ে পাঁচ কোটি মিনিটের চেয়ে বেশি ছিল। কিন্তু সিঙ্গাপুরভিত্তিক একটি সংস্থার তথ্যমতে, বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে ১৫ কোটি মিনিটের মতো আন্তর্জাতিক কল আসে। আন্তর্জাতিক কলের তিন ভাগের এক ভাগ বৈধ হলেও বাকি দুই ভাগই অবৈধভাবে টার্মিনেট করা হয়। এর ফলে সরকার একদিকে যেমন বঞ্চিত হচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে, অন্যদিকে এই অর্থ পাচার হয়ে চলে যাচ্ছে বিদেশে।
দেশের মানুষ মনে করে সরকার চাইলে অল্প সময়ে এই অবৈধ ব্যবসায় ঠেকাতে পারে। কিন্তু সরকারের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা প্রভাবশালী চক্রের কারণে তা করতে দেয়া হচ্ছে না। এ ব্যর্থতার দায় ক্ষমতাসীনদেরকেই নিতে হবে। ক্ষমতাসীনদেরই উচিত এ দায়ের সূত্র ধরেই জাতীয় স্বার্থে দ্রুত এই অবৈধ ব্যবসায় বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া। আশা করি, অন্তত এবার জাতীয় স্বার্থে তা করতে আন্তরিক পদক্ষেপ সরকারের পক্ষ থেকে আসবে। কারণ, অনেক হয়েছে। এবার থামার পালা।


পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০১৪ - আগস্ট সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস
অনুরূপ লেখা