• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > আইসিটি এবং আমাদের বাংলাভাষা
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: এম. ‍এ. হক অনু
মোট লেখা:১৬
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১০ - ফেব্রুয়ারী
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
ল্যাঙ্গুয়েজ
তথ্যসূত্র:
প্রচ্ছদ প্রতিবেদন
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
আইসিটি এবং আমাদের বাংলাভাষা
প্রযুক্তি উন্নয়নের সবচেয়ে কার্যকর হাতিয়ার। এটি আজ সুপ্রমাণিত এক সত্য। আজ সবাই স্বীকার করেছেন, জাতীয় জীবনে প্রযুক্তির সুফল সর্বোচ্চ মাত্রায় নিয়ে পৌঁছাতে হলে সাধারণ মানুষকে প্রযুক্তি প্রয়োগে সম্পৃক্ত করতে হবে। আর তা নিশ্চিত করতে হলে প্রযুক্তি প্রয়োগে মাতৃভাষাকে যথাসম্ভব বেশি মাত্রায় কাজে লাগাতে হবে। আমাদের বেলায়ও একথা পুরোপুরি সত্যি। তাই বাংলা কমপিউটিংয়ের পরিধি আমাদের বাড়ানো ছাড়া এর কোনো বিকল্প নেই। বাংলা কমপিউটিংয়ের একটা গ্রহণযোগ্য মাত্রায় তুলে আনার মধ্য দিয়ে তা সম্ভব হতে পারে। বাস্তবতা হলো বাংলা কমপিউটিংকে এগিয়ে নেয়ার জন্য আমাদের দেশে বিভিন্ন মহলের পক্ষ থেকে বিভিন্নভাবে নানা ধরনের গবেষণাকর্ম চলছে এবং নেয়া হচ্ছে নানা পদক্ষেপ। সেই সূত্রে আমরা বাংলা কমপিউটিংয়ে কিছুটা এগিয়েছি। কিন্তু এখনো গ্রহণযোগ্যমাত্রায় বাংলা কমপিউটিংয়ে পৌঁছাতে পারিনি। এ ক্ষেত্রে গবেষণাকর্মকে আরো জোরদার করা দরকার। দরকার সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের যৌথ উদ্যোগ। সে যাই হোক, বাংলা কমপিউটিংয়ের ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান এখন কোন পর্যায়ে সে বিষয়টি তুলে ধরে এ প্রচ্ছদ প্রতিবেদনে বিভিন্ন মহলের কর্মকান্ডের একটা চিত্র তুলে ধরার প্রয়াস পাব।

দু’ হাজার দশে বিজয়

২০১০ সালে ‘বিজয় একুশে’ বাংলা সফটওয়্যারের বেশ কয়েকটি নতুন সংস্করণ এসেছে। ‘বিজয় বায়ান্নো ২০১০’ একটি চমৎকার প্রকাশনা। এতদিন উইন্ডোজ ভিসতা বা উইন্ডোজ সেভেনে বাংলা লেখার জন্য ‘বিজয় একুশে’ কিনতে হতো। এর দাম পাঁচ হাজার টাকা। এবার ‘বিজয় বায়ান্নো ২০১০’ মাত্র ১০০ টাকায় লাইসেন্সসহ কিনে উইন্ডোজ ভিসতা বা উইন্ডোজ সেভেনের ৩২ বিট অপারেটিং সিস্টেমে ব্যবহার করা যায়। এ ছাড়াও এবার বিজয়-এর সবচেয়ে শক্তিধর সংস্করণ ‘বিজয় একুশে’র নতুন সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে। এতে আগের সব সুযোগ-সুবিধার সাথে একটি অতি চমৎকার ও প্রয়োজনীয় নতুন কনভার্টার যুক্ত হয়েছে। এ কনভার্টার দিয়ে ইউনিকোডে তৈরি করা ফাইল বিজয় কোডে রূপান্তর করা যায়। যারা ইন্টারনেটে ইউনিকোড বিষয়বস্ত্ত পান, তারা বিজয়ে আনার জন্য এই কনভার্টার ব্যবহার করতে পারবেন। বিশেষ করে মুদ্রণ ও প্রকাশনা এবং মাল্টিমিডিয়ার যেসব অ্যাপ্লিকেশনে ইউনিকোড কাজ করে না, সেখানে এই কনভার্টার খুবই সহায়ক হবে।



এবারের একুশে ফেব্রুয়ারিতে বিজয় একুশে প্রো বাজারে আসবে। এটি হবে বিজয়-এর এ যাবত সময়ের সর্বশ্রেষ্ঠ সংস্করণ। বিদ্যমান যাবতীয় সুবিধা ছাড়াও এই সংস্করণটি উইন্ডোজসহ অন্যান্য অপারেটিং সিস্টেম যেমন লিনআক্স, উইন্ডোজ মোবাইল ইত্যাদিতে কাজ করবে। এ সফটওয়্যার বিজয় কোড ছাড়াও ইউনিকোড ৫.২ বা বিডিএস ১৫২০:২০১০ সমর্থন করবে। এতে থাকবে বিজয়সহ অন্যান্য কীবোর্ড। তবে বিজয় ২০১০ সালে শুধু বাংলা লেখালেখির জগতে আবদ্ধ নেই। এ বছর থেকে এরা বাংলা সফটওয়্যারকেন্দ্রিক সফটওয়্যার উন্নয়নের ধারা বদলে দিয়েছে। তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে শিক্ষামূলক সফটওয়্যার। এরই মাঝে তাদের রাঙ্গামাটি কেন্দ্র এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড প্রথম থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠ্যবইয়ের সফটওয়্যার প্রকাশ করেছে। এরা বিজয় শিশুশিক্ষা নামের একটি শিশুশিক্ষার সফটওয়্যার প্রকাশ করেছে। এরা কমপিউটারে বাংলাসহ লেখালেখি করার জন্য ‘বিজয় লেখালেখি শেখা’ নামের সফটওয়্যার প্রকাশ করেছে। এছাড়াও আছে তাদের বাংলাভাষায় লাইব্রেরি ব্যবস্থাপনা করার সফটওয়্যার।

বাংলাসাহিত্যের ডিজিটাল বুক



বিশ্বসাহিত্যের এক অনুপম অংশ বাংলাসাহিত্য। চর্যাপদ থেকে আধুনিক বাংলাসাহিত্যের এই হাজার বছরের রত্নভান্ডার উদ্ধারের একটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে। বাংলা বিজয় কীবোর্ডের উদ্ভাবক আনন্দ কমপিউটার্স, সুদীর্ঘ পঞ্চাশ বছরের প্রকাশনা জগতের অভিজ্ঞতালব্ধ চলন্তিকা বইঘর, বিশ্বখ্যাত কমপিউটার নির্মাতা এইচপির বিজনেস পার্টনার ডাটা সলিউশন্স এবং গ্রাফিক্স, ডিজিটাইজেশন ও সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কমপিউটার গ্রাফিক্স অ্যান্ড ডিজাইন লিমিটেডের যৌথ প্রয়াস ‘আনন্দ চলন্তিকা লিমিটেড’। আনন্দ চলন্তিকা লিমিটেডের ডিজিটাল বুক প্রকল্পটির সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন আনন্দ কমপিউটার্সের স্বত্বাধিকারী ও বিজয় কীবোর্ড প্রণেতা মোস্তাফা জববার।

বাংলাভাষায় সর্বপ্রথম ‘আনন্দ চলন্তিকা লিমিটেড’ উদ্যোগ নিয়েছে বাংলা ভাষাভাষী সবার কাছে ডিজিটাল ফর্মে অতি সহজলভ্য করে বাংলাসাহিত্যের রত্নভান্ডারটিকে উপস্থাপন করতে। এর নাম দেয়া হয়েছে ‘ডিজিটাল বুক’। বাংলা একাডেমীর বইমেলার প্রাক্কালে ‘আনন্দ চলন্তিকা লিমিটেড’ প্রকাশ করেছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের যাবতীয় রচনাবলী, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচনাবলী, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচনাবলী, জীবনানন্দ দাশ রচনাবলী এবং সুকান্ত ভট্টাচার্যের রচনাবলীর ডিজিটাল বুক। ডিজিটাল বুকের প্রথম সংস্করণটিতে শুধু টেক্সট আকারে রচনাবলী প্রকাশ করা হয়েছে। এ থেকে যেকোনো সময় প্রয়োজনীয় অংশ প্রিন্ট নেয়া যাবে। এমনকি নিজের কমপিউটারে কপি করেও যেকোনো অংশকে পড়া যাবে।

বাংলা একাডেমী আয়োজিত একুশের বইমেলা ২০১০-এ বাংলাদেশ কমপিউটার সমিতি ৪২৫ ও মেলার মূল গেটের বিপরীতে ৪২৬ নম্বর স্টলে বিশেষ ছাড়ে মাত্র ৪০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে বাংলাসাহিত্যের পাঁচ মহাতারকার রচনাবলীর ডিজিটাল বুক।

মোস্তাফা জববার জানান, তাদের এ প্রকল্পের পরবর্তী প্রকাশনায় থাকছে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচনাবলী, মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচনাবলী, সুকুমার রচনাবলী, উপেন্দ্রকিশোর রায় রচনাবলী, চর্যাপদ, ময়মনসিংহ গীতিকা, আলাওল রচনাবলী, মীর মশাররফ হোসেন রচনাবলীসহ আরো গুরুত্বপূর্ণ বেশকিছু লেখকের রচনাবলী। আধুনিক প্রজন্মের লেখকরাও চাইলে তাদের রচনাবলীর ডিজিটাল বুক বের করতে পারবেন এ প্রতিষ্ঠানের সহায়তায়।

সমৃদ্ধ বাংলা ওয়েব পোর্টাল : কমজগৎ ডট কম



কমপিউটার জগৎ ১৯৯১ সালের মে মাসে প্রথম প্রকাশিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পত্রিকাটি বাংলাদেশের আইসিটি খাতে উন্নয়নে নিরলস ভূমিকা রেখে চলেছে। কমপিউটার জগৎ-এর এ ভূমিকা শুধু সমাজে মানুষের মাঝে প্রযুক্তি বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর প্রচেষ্টার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং বিভিন্ন সময়ে এই ম্যাগাজিনটি আইসিটি খাতের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইতিবাচক অবদান রাখার চেষ্টা করেছে। এই ধারাবাহিকতার পথ ধরে ২০০৯ সালে এর ওয়েবসাইটটি একটি পূর্ণাঙ্গ বাংলা ওয়েবপোর্টাল www.comjagat.com হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। উল্লেখ্য, বাংলাভাষায় হাতেগোনা পূর্ণাঙ্গ যে কয়টি ওয়েবপোর্টাল রয়েছে তার মধ্যে এর নাম সবার আগে উল্লেখ করতে হয়।

কয়েক বছর আগেও বাংলাভাষায় ওয়েবসাইট তৈরি করা খুবই জটিল কাজ ছিল। অপারেটিং সিস্টেমের সীমাবদ্ধতা, ফন্টের সমস্যা, ইউনিকোড নিয়ে জটিলতা ইত্যাদি কারণে ২০০৩ সালের আগে খুব বেশি বাংলা ওয়েবসাইট তৈরি হয়নি। আমরা যদি বর্তমানে ইন্টারনেটে বাংলাভাষায় তৈরি ওয়েবসাইটগুলোর দিকে তাকাই, তাহলে দেখব পূর্ণাঙ্গ পোর্টাল বলতে যা বোঝায়, তার ঘাটতি প্রবল। কমজগৎ ডট কম ওয়েবসাইটে পত্রিকার গত প্রায় ১৯ বছরে প্রকাশিত সব তথ্য থাকার পাশাপাশি আরো বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, এই পোর্টালে সব সুবিধাই বাংলাভাষায়।

নজরকাড়া ব্যাপার হলো, কমপিউটার জগৎ-এর পূর্ণাঙ্গ আর্কাইভ। এর মাধ্যমে সাধারণ পাঠক, গবেষক, সাংবাদিকসহ যেকোনো উৎসাহী ব্যক্তি খুব সহজেই গত প্রায় ১৯ বছরের সব কনটেন্ট বা বিষয়বস্ত্ত বিনামূল্যে ব্যবহার করতে পারবেন। এর ফলে কাউকে কষ্ট করে কমপিউটার জগৎ-এর অফিসে বা লাইব্রেরিতে যেতে হবে না পুরনো সংখ্যায় কী ছিল, তা জানার জন্য। তবে এই ওয়েবসাইটে শুধু যে সব কনটেন্টই পাওয়া যাবে তা নয়, বরং সেই কনটেন্টগুলো খুব সুন্দরভাবে সাজানো রয়েছে এবং তা খোঁজার জন্য খুব ভালো সার্চ ইঞ্জিনের ব্যবহার করা হয়েছে।

আর্কাইভের এই ধারণা কমপিউটার জগৎ যে শুধু নিজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে চায় তা নয়, এই ওয়েবসাইটে যেকোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বা যেকোনো ব্যক্তি তার সমুদয় তথ্য বিনামূল্যে আর্কাইভ করে রাখতে পারবেন। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশের বেশিরভাগ স্কুলেই এখন পর্যন্ত কোনো ওয়েবসাইট গড়ে ওঠেনি। অথচ প্রতিবছর এরা স্মরণিকাসহ বিভিন্ন তথ্য প্রকাশ করে থাকে। এসব তথ্য তারা খুব সহজেই একেবারে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে কমপিউটার জগৎ-এর ওয়েবসাইটে সংরক্ষণ করতে পারবে। এটি শুধু স্কুল নয়, বরং যেকোনো প্রতিষ্ঠান যাদের কোনো ওয়েবসাইট নেই কিন্তু ইন্টারনেটে তথ্য রাখা প্রয়োজন তাদের কাজে আসবে। এ যুগে বস্তুত সব প্রতিষ্ঠানেরই তথ্য সংরক্ষণ করা দরকার এবং কমজগৎ ডট কম ওয়েবসাইটে তা বিনামূল্যে করা যেতে পারে।

বাংলাভাষায় ব্লগিং এখন বেশ জনপ্রিয়। বর্তমানে ইন্টারনেটে বেশ কয়েকটি বাংলা কমিউনিটি ব্লগ রয়েছে এবং সেগুলো সাফল্যের সাথে এগিয়ে চলেছে। কমজগৎ ডট কম ওয়েবপোর্টালে ব্লগিংয়ের একটি সুবিধা রয়েছে। অন্যান্য কমিউনিটি ব্লগ থেকে কমজগৎ ডট কম ব্লগটি একটু আলাদা। যেহেতু এটি একটি আইসিটিসংক্রান্ত ম্যাগাজিন, তাই এই ব্লগে মূলত প্রযুক্তিসংক্রান্ত লেখালেখিকে বেশি উৎসাহিত করা হয়। ইতোমধ্যেই এর সদস্যসংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়ে গেছে এবং প্রতিদিনই নিত্যনতুন পোস্ট আসছে। প্রায় দেখা যাচ্ছে, কারো কোনো সমস্যা হয়েছে তখন তারা এই ব্লগে এসে তাদের সমস্যার কথা জানাচ্ছেন এবং ব্লগের অন্যান্য সদস্য সমস্যার সমাধান দেবার চেষ্টা করেন।

প্রতিদিন আইসিটি দুনিয়ায় ঘটে যাচ্ছে বিভিন্ন ঘটনা। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের আইসিটি খাতেও অনেক কিছুই ঘটে যাচ্ছে। কমজগৎ ডট কম-এ প্রতিদিন বাংলাদেশ ও বিশ্বের আইসিটিসংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু খবর প্রকাশ করা হয় এবং এর মাধ্যমে যারা এই দিকটাতে আগ্রহী তারা প্রতিদিনকার উল্লেখযোগ্য ঘটনা সম্পর্কে সংবাদ পেয়ে থাকেন। সংবাদ বা নিউজের এই ফিচারটি খুব সহজেই হোমপেজে পাওয়া যায় এবং হোমপেজে ঢুকলে খুব সহজেই একজন ব্যবহারকারীর সামনে ভেসে ওঠে আইসিটিসংক্রান্ত সাম্প্রতিকতম গুরুত্বপূর্ণ খবরসমূহ।

মুক্তসফটওয়্যার ও মুক্তআধেয়তে বাংলা



নববইয়ের দশকের শেষের দিকে ফ্রি সফটওয়্যার থেকে ওপেনসোর্স সফটওয়্যার কথার প্রচলন শুরু হয়। ফ্রি বললে সেটি অনেক সময়ই বিনামূল্যে পাওয়া যাবে বলে মনে হয়, যদিও ফ্রি শব্দটি এসেছে ইংরেজি ‘ফ্রিডম’ থেকে। এর অর্থ ‘মুক্তি’। স্টলম্যান সফটওয়্যারের চার ধরনের মুক্তির কথা বলেন : নিজের পছন্দমতো সফটওয়্যার ব্যবহারের সুযোগ, এর সোর্সকোড দেখা ও সম্পাদনার অধিকার, সফটওয়্যারের পুনর্বিতরণের সুযোগ এবং এ থেকে নতুন কোনো সফটওয়্যার তৈরি করে তা নিজের মতো করে ব্যবহার, বিতরণ ও বিক্রি করার সুযোগ।



প্রতিটি ওপেনসোর্স সফটওয়্যারেরই এ চার ধরনের সুবিধা থাকে। ওপেনসোর্সের এই ধারণাগুলোই বাংলাতে ওপেনসোর্সের ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। বাংলাভাষার সবচেয়ে বড় ওপেনসোর্স প্রকল্প হলো উইকিপিডিয়া। বাংলাভাষার সবচেয়ে বড় বিশ্বকোষ এই বাংলা উইকিপিডিয়া (bn.wikipedia. org)। এখানে প্রায় একুশ হাজার নিবন্ধ রয়েছে। একুশ হাজার আলাদা আলাদা বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে এখানে। এই প্রকল্পে ৬০ হাজারেরও বেশি নিবন্ধিত ব্যবহারকারী রয়েছেন। এখানকার অবদানকারীরা কোনো ধরনের পারিশ্রমিক ছাড়াই প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ ওপেনসোর্স নেটওয়ার্ক (বিডিওএসএন) যখন এই প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত হয়, তখন বাংলা উইকিপিডিয়াতে মাত্র ৫০০টি অন্তর্ভুক্তি ছিল। বিডিওএসএনের (bdosn.org) উদ্যোগে গঠিত হয় বাংলা উইকি দল। আয়োজন করা হয় সেমিনার, কর্মশালা। চালানো হয় প্রচার। অল্প কিছুদিনের মধ্যে বাংলা উইকিপিডিয়া গতি পায়। এটি এখন বাংলাভাষার সবচেয়ে বড় একক তথ্যআধেয়।

এই বিপুল পরিমাণ তথ্য সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করা সম্ভব হয়েছে অপর এক ওপেনসোর্স ডাটাবেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম মাইএসকিউএল ব্যবহারের ফলে। এখানে যেকোনো ধরনের তথ্য সংযোজন, পরিমার্জন বা অনুসন্ধানের কাজ বাংলায় করা সম্ভব।

কমপিউটারে বিভিন্ন ধরনের কাজ করার এবং বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহার করার জন্য অপারেটিং সিস্টেম নামে একটি মূল সফটওয়্যার থাকে। মুক্ত অপারেটিং সিস্টেম লিনআক্সের প্রায় সব ডিস্ট্রিবিউশন পুরোপুরি বাংলায় ব্যবহার করা যায়। লিনআক্স মূলত সার্ভার পরিচালনার কাজে ব্যবহার করা হয়, সেই সাথে এর ডেস্কটপ সংস্করণগুলো এখন বেশ জনপ্রিয়। ডেস্কটপ ব্যবহারকারীদের জন্য উবুন্টু (www.ubuntu.com) লিনআক্সের সবচেয়ে জনপ্রিয় ডিস্ট্রিবিউশন। এ অপারেটিং সিস্টেম ইনস্টল করার সময় থেকে প্রতিটি কাজই করা যায় বাংলায়। সম্পূর্ণ বাংলা ইন্টারফেসের পাশাপাশি ইংরেজিতে ব্যবহার করারও অপশন রয়েছে এখানে। উবুন্টুতে সব মেনু ফাইল ফোল্ডারের নাম বাংলায় ব্যবহার করা যাবে। শুধু উবুন্টুই নয় ফেডোরা (fedoraproject.org), সুসি (www.opensuse.org) বা লিনআক্স মিন্টের (www.linuxmint.com) মতো জনপ্রিয় সব লিনআক্স ডিস্ট্রিবিউশনে এ সুবিধা পাওয়া যাবে। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য তৈরি করা ল্যাপটপ কমপিউটারের প্রকল্প ‘ওয়ান ল্যাপটপ পার চাইল্ড (laptop.org/en/)’ সারা পৃথিবীতে আলোড়ন সৃষ্টিকারী এই কমপিউটারে যে অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করা হয়েছে তার মূলে রয়েছে মুক্ত কার্নেল লিনআক্স। সুগার ওএস (www.sugarlabs.org) নামের এই অপারেটিং সিস্টেমটিও পুরোপুরি বাংলায় স্থানীয়করণ হয়েছে। এই কাজগুলো সম্ভব হওয়ার কারণ এসব সফটওয়্যারের প্রতিটি মুক্ত সোর্সভিত্তিক।

অপারেটিং সিস্টেম ছাড়াও দৈনন্দিন কাজগুলো করার উপযোগী সফটওয়্যারও পাওয়া যাবে বাংলায়। যেমন ওয়ার্ড প্রসেসিং, স্প্রেডশিট তৈরি ও প্রেজেন্টেশন তৈরির জন্য জনপ্রিয় অফিস স্যুট হলো ওপেন অফিস ডট অর্গ (openoffice.org), ওয়েব ব্রাউজ করার সফটওয়্যার মজিলা ফায়ারফক্স (www.mozilla.com/), ই-মেইল ব্যবস্থাপনার সফটওয়্যার থান্ডারবার্ড (mozillamessaging.com/ en-US/thunderbird/), কমপিউটারে বার্তা দেয়া-নেয়ার বা ইনস্ট্যান্ট মেসেঞ্জার পিজিন (http://www.pidgin.im/), মিডিয়া প্লে¬য়ার ভিএলসি (www.videolan.org/vlc/), মিডিয়া লাইব্রেরি ও অডিও প্লে¬¬য়ার অ্যামার বাংলায় স্থানীয়করণ হয়েছে।

ওপেনসোর্স সফটওয়্যারগুলো বাংলায় ব্যবহার করা যাচ্ছে। এর কারণ সফটওয়্যার তৈরির সময় আন্তর্জাতিক অক্ষর বিন্যাসব্যবস্থা ব্যবহার করা হয়েছে। ইউনিকোড নামের এই বিন্যাসপদ্ধতিতে একটি মাত্র ফন্টে পৃথিবীর সব ভাষার সব অক্ষর সংযোজন করা থাকে। ব্যাপারটি অসম্ভব বলে মনে হতে পারে। কারণ, আসকি অক্ষর বিন্যাসে যেখানে ইংরেজি ভাষার অক্ষর আর কিছু অতিরিক্ত সঙ্কেত ব্যবহার করা যায়, সেখানে ইউনিকোডে কিভাবে এতগুলো অক্ষর রাখা সম্ভব। ওপেনসোর্সের মূলনীতিতে রয়েছে, ওপেনসোর্স সফটওয়্যার সবাই তার নিজের ভাষায় ব্যবহার করতে পারবে। পৃথিবীর সব মানুষকে সমান সুবিধা দিতেই এমন একটি মুক্ত লেখনপদ্ধতি তৈরি করা হয়েছে।

ইউনিকোড এবং লিনআক্স সার্ভারের কল্যাণে এখন বাংলায় ওয়েবসাইট তৈরির কাজও অনেক সহজ হয়ে গেছে। বর্তমানে সর্বাধিক জনপ্রিয় কনটেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ‘জুমলা’ (www.joomla.org) ব্যবহার করা যায় পুরোপুরি বাংলায়। মুক্ত ব্লগিং প্লাটফর্ম ওয়ার্ডপ্রেসেও (wordpress.org) বাংলা ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

ছবি থেকে বাংলা লেখা খুঁজে বের করা সফটওয়্যার, বাংলা লেখা পড়ে শোনানো, বাংলায় বলা নির্দেশ অনুযায়ী কমপিউটারে কোনো কাজ করার উপযোগী সফটওয়্যার উদ্ভাবন এবং মান উন্নয়নের মতো কাজও করা হচ্ছে।

কোথায় এই স্থানীয়করণের কাজ করা হয় :

ওপেনসোর্স প্রকল্পগুলো সমন্বয় করার জন্য বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় ওয়েবসাইট রয়েছে। এর কোনোটিতে দলগতভাবে কোনোটিতে আলাদা আলাদাভাবে করা যায়। আবার কোনো কোনো সফটওয়্যারের নিজস্ব ওয়েবসাইট থেকে স্থানীয়করণের কাজটি করা যায়। তবে স্থানীয়করণের কাজটি সবসময় দলগতভাবে করা উচিত। বাংলাভাষার মূল দলের সাথে অথবা মূল দলের অধীনে থেকে কাজ করা হলে কাজের অগ্রগতি দ্রুত হয়। কাজে সমন্বয় থাকে। জনপ্রিয় ওয়েবসাইটগুলো হলো : sourceforge.net,launchpad.net (বাংলাভাষার দল https://translations.launchpad.net/+ languages/bn), translationproject.org (বাংলাভাষার দল translationproject.org/ team/bn.html)।

ওয়েবসাইট ছাড়াও দেশ ও দেশের বাইরে অবস্থানরত বাংলাভাষীরা সম্মিলিতভাবে এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলাভাষায় ওপেনসোর্সের উদ্ভাবন ও সমন্বয়ের কাজ করছে। সেই সাথে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়েও পরীক্ষামূলকভাবে বিভিন্ন সফটওয়্যার তৈরির চেষ্টা চলছে। মুক্ত কনটেন্ট লেখা, মুক্ত সফটওয়্যার তৈরি, বাংলায় স্থানীয়করণ এবং সফটওয়্যারগুলোর ব্যবহার সহয়িকা তৈরি নিয়ে বিভিন্ন ধরনের কাজ হচ্ছে। উইকিপিডিয়ায় মুক্ত কনটেন্ট তৈরির কাজটি ব্যক্তিগতভাবে করা যায়। যেকেউ এখানে অবদান রাখতে পারেন, তবে নিবন্ধন করে নেয়া উত্তম পদ্ধতি। bn.wikipedia.org/ wiki/sprecial:userlogin পাতা থেকে নিবন্ধন করা যাবে। বাংলাভাষার বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার তৈরি নিয়ে বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ করছে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বাংলায় স্থানীয়করণের কাজটি করে অঙ্কুর (www.bengalinux.org)। জনপ্রিয় বেশ কিছু ওপেনসোর্স সফটওয়্যার বাংলায় লোকালাইজ করেছে ওই প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া মুক্ত বাংলা ফন্ট তৈরি করেছে, এমন বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যেমন একুশে (ekushey.org), ওমিক্রন ল্যাব (omicronlab.com) ইত্যাদি। বিডিওএসএনের পাশাপাশি এই প্রতিষ্ঠানগুলোও কাজ করে যাচ্ছে।

ব্যয়সাশ্রয়ী জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে অঙ্কুর

২০০২ সালের অক্টোবরে সূচনালগ্ন থেকেই স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ‘অঙ্কুর আইসিটি ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন’ বাংলাভাষা ও বাঙালি সংস্কৃতির সাথে মিল রেখে মুক্ত ও ওপেনসোর্স সফটওয়্যার স্থানীয়করণ করে আসছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে অপারেটিং সিস্টেম, ওয়ার্ড প্রসেসর, স্প্রেডশিট, প্রেজেন্টেশন টুল, ই-মেইল ক্লায়েন্ট, ইন্টারনেট ব্রাউজারসহ আরো বেশ কয়েকটি সফটওয়্যার। এছাড়া অঙ্কুর এ সফটওয়্যারগুলোর জন্য বাংলাভাষায় প্রশিক্ষণ উপকরণ তৈরি করেছে, যা সর্বসাধারণকে বাংলাভাষায় অনূদিত সফটওয়্যারগুলো ব্যবহারে সহায়তা করছে। ইংরেজিতে দক্ষতা অর্জন প্রয়োজন হয় না, এমন কাজে আইসিটির ব্যবহারে এ সফটওয়্যারগুলো ব্যয়সাশ্রয়ী এবং কার্যকর সমাধান।

অঙ্কুরের স্থানীয়কৃত সফটওয়্যার

অফিস স্যুট :
OpenOffice.org মুক্ত সফটওয়্যারগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় গুচ্ছ প্যাকেজ সফটওয়্যার। মাইক্রোসফট অফিসের সমকক্ষ এই সফটওয়্যার দিয়ে লেখালেখি, হিসেবনিকেশ, উপস্থাপনা, গ্রাফিক্সসহ সব কাজ করা যায়। ওপেনঅফিস.অর্গ বিশ্বের বেশিরভাগ ভাষায় এবং সব ধরনের অপারেটিং সিস্টেমে এই সফটওয়্যার কাজ করে। এটি ইন্টারনেট থেকে বিনামূল্যে সংগ্রহ করে কমপিউটারে চালানো যায়। এ ছাড়া এটি অন্য কাউকে বিতরণ করতে কোনো রকম লাইসেন্সের প্রয়োজন হয় না। বাংলা ওপেন অফিসের নতুন এই সংস্করণের অন্যতম বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে রয়েছে- হালনাগাদ করা বাংলা ইউজার ইন্টারফেস, বাংলা বানান পরীক্ষার জন্য লক্ষাধিক শব্দের বাংলা অভিধান এবং বাংলাভাষা বিশেষ সহায়িকা। এ ছাড়া এর সাথে প্রাথমিকভাবে যুক্ত করা হয়েছে বাংলাভাষায় হাইফেন লেখার সুবিধা এবং বাংলাদেশের জন্য বাংলা লোকাল ফাইল বাংলা একাডেমীর সুপারিশ করা বর্ণনানুক্রম নীতি অনুযায়ী তৈরি করা হয়েছে।

ইন্টারনেট ব্রাউজার :
Mozilla Firefox-কে সংক্ষেপে শুধু ফায়ারফক্স নামেও ডাকা হয়। ফায়ারফক্সে বর্তমানে যেসব সুবিধা পাওয়া যায় তার মধ্যে একই উইন্ডোতে একাধিক ওয়েব পেজ ব্রাউজিং, বানান শুদ্ধ করার ব্যবস্থা, উন্নত অনুসন্ধান ব্যবস্থা, সরাসরি বুকমার্কিং, ডাউনলোড ম্যানেজার ইত্যাদি অন্যতম। এছাড়া ফায়ারফক্স, থান্ডারবার্ড এবং সিমাঙ্কির জন্য অঙ্কুর তৈরি করেছে বাংলা বানান শুদ্ধ করার ব্যবস্থা।

ই-মেইল ক্লায়েন্ট :
Mozilla Thunderbird বা সংক্ষেপে থান্ডারবার্ড একটি ই-মেইল অ্যাপ্লিকেশন। এর মাধ্যমে ই-মেইল বিনিময় করা যায়। এছাড়াও থান্ডারবার্ডে রয়েছে উন্নত ই-মেইল ব্যবস্থাপনা, একাধিক ই-মেইল অ্যাকাউন্ট থেকে ই-মেইল সংগ্রহ, অ্যাড্রেসবুক ইত্যাদি ব্যবস্থা।

তাৎক্ষণিক বার্তাব্যবস্থা :
Pidgin একটি ইন্টারনেটভিত্তিক চ্যাটিং ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে একই সাথে একাধিক নেটওয়ার্কে লগ-ইন ও চ্যাটিং করা যায়। আপনি হয়ত আপনার বন্ধুর সাথে MSN-এ কথা বলছেন, এই একই সময়ে একই সাথে আপনি Yahoo কিংবা Google Talk ব্যবহারকারী বন্ধুটির সাথে আলাদা কোনো চ্যাটিং সফটওয়্যার ছাড়া পিজিন থেকেই কথা বলতে পারবেন।

মিডিয়া প্লে¬য়ার :
VLC media player-কে সংক্ষেপে ভিএলসি প্লেয়ার বলা হয়। ভিএলসি প্লে¬য়ার কমপিউটারে অডিও বা ভিডিও চালানোর একটি সফটওয়্যার।

7-Zip :
একটি ফাইল সঙ্কোচনের সফটওয়্যার। এটি একটি বিশেষ সফটওয়্যার, যা কোনো ফাইলকে ‘কম্প্রেশন বা সঙ্কোচন’ করে আকার ছোট করে, যাতে ইন্টারনেট বা অন্য কোনো মাধ্যমে তা স্থানান্তরে সুবিধা হয়।

সাহানা :
Sahana Free and Open Source Disaster Management System বা সাহানা একটি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সফটওয়্যার। দুর্যোগ সময়ে উদ্ভূত সমস্যাসমূহ সমন্বয়ের জন্য একটি ওয়েবভিত্তিক সহায়ক ব্যবস্থা। দুর্যোগ সময়ে বিভিন্ন বিষয়ে সমন্বয়বিষয়ক যেসব সমস্যা হয় যেমন- হারানো বিজ্ঞপ্তির সংবাদ প্রচার, আশ্রয় কেন্দ্রের পরিপূর্ণ তালিকা, স্বেচ্ছাসেবকদের যথাযথভাবে ব্যবহার করা, খাদ্য এবং পানীয় সরবরাহ ইত্যাদি সাহানা ব্যবহার করে সেগুলোর সমন্বয় করা সম্ভব।

হৈমন্তি :
‘হৈমন্তি’ বাংলাদেশে প্রথম প্রাযুক্তিক সৃষ্টি, যেখানে বাংলাভাষায় লিনআক্সভিত্তিক ফ্রি অপারেটিং সিস্টেম উবুন্টু ডেভেলপ করা হয়েছে। হৈমন্তিতে বাংলায় কনফিগারেশন ডকুমেন্টেশনসহ ইনস্টলের প্রক্রিয়া বর্ণনা করা আছে। অঙ্কুর ২০০৮ সালে ই-লোকালাইজেশন ক্যাটাগরিতে উবুন্টুভিত্তিক বাংলা ভাষায় অনূদিত লিনআক্স/GNU ডিস্ট্রিবিউশন ‘হৈমন্তি’র জন্য মান্থান পুরস্কার লাভ করে [manthanaward.org]।

এ ছাড়া অনুবাদিত অন্য অপারেটিং সিস্টেমগুলো হলো : ০১. ডেবিয়ান, ০২. রেডহ্যাট/ফেডোরা, ০৩. উবুন্টু এবং ০৪. ওএলপিসি।

বাংলাভাষার জন্য অঙ্কুরের তৈরি বিভিন্ন সফটওয়্যার ও টুল

অঙ্কুর বাংলা ইউটিলিটি :

সহজেই কমপিউটারে বাংলা সেটআপ করার জন্য অঙ্কুর তৈরি করেছে ইউটিলিটি টুলগুলো, যা এক ক্লিকেই বাংলা ভাষার সফটওয়্যারগুলো ইনস্টল করে। এটি যেসব সফটওয়্যার ইনস্টল করে সেগুলো হলো : ০১. বাংলার জন্য কমপ্লেক্স স্ক্রিপ্ট ইনস্টল, ০২. ইউনিকোড সমর্থিত কিছু বাংলা ফন্ট ইনস্টল, ০৩. দুইটি বাংলা কীবোর্ড (প্রভাত এবং জাতীয় কীবোর্ড লেআউট) ইনস্টল, ০৪. ছয়টি বাংলায় অনূদিত সফটওয়্যার ইনস্টল : ওপেন অফিস.অর্গ, মজিলা ফায়ারফক্স, পিজিন, VLC মিডিয়া প্লে¬য়ার, থান্ডারবার্ড, 7-ZIP এবং ০৫. এছাড়াও উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমে ব্যবহারকারী স্বয়ংক্রিয় আপডেট এবং ফায়ারওয়াল চালু কিংবা বন্ধ করতে পারেন।

বাংলা টাইপিং টিউটর :

একজন ব্যবহারকারী যেনো সহজেই কমপিউটারে বাংলা টাইপিংয়ে দক্ষ হয়ে উঠতে পারেন এর জন্য অঙ্কুর তৈরি করে বাংলা টাইপ শেখার এবং চর্চার জন্য সহায়ক উন্নতমানের একটি সফটওয়্যার। যাতে টাইপ করার একটি সহজ এবং আদর্শ নিয়মাবলী রয়েছে। ব্যবহারকারী একসেট পাঠ পরিকল্পনা চর্চার মাধ্যমে বাংলা টাইপে দক্ষতা অর্জন করতে পারবেন। এতে ব্যবহারকারী তার ইচ্ছেমতো এর ইন্টারফেস বাংলা এবং ইংরেজিতে করে নিতে পারবেন। বর্তমানে এটি অঙ্কুরের তৈরি করা প্রভাত লেআউট এবং জাতীয় কীবোর্ড লেআউট সাপোর্ট করে। কিন্তু এটি বাংলাভাষার অন্যান্য কীবোর্ড লেআউটেও ব্যবহার করা সম্ভব।

বাংলা শব্দের তালিকা বা শব্দকোষ :

অঙ্কুর তাদের করা সব সফটওয়্যারে ব্যবহৃত ইন্টারফেস শব্দগুলো নিয়ে একটি শব্দকোষ তথা গ্লোসারি তৈরি করেছে, যা পিডিএফ অথবা মুদ্রিত সংস্করণে রয়েছে।

ওয়ার্ডফর্জ (Wordforge) :

সহজেই সফটওয়্যার বাংলায় অনুবাদ করার জন্য অঙ্কুর তৈরি করেছে একটি স্থানীয়করণ টুল। এতে আছে ট্রানস্লে¬শন মেমরি, অভিধান সহযোগিতা, বানান পরীক্ষণ, ত্রুটি সংশোধন, রেফারেন্স ভাষা, অনুসন্ধান এবং প্রতিস্থাপন ব্যবস্থা, মন্তব্য সংযোজন ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য। এতে PO এবং XLIFF উভয় ফাইল ফরমেটে কাজ করা যায়।

অঙ্কুরের তৈরি প্রশিক্ষণ উপকরণসমূহ

বিগত বছরগুলোতে অঙ্কুর বাংলাদেশে ওপেনসোর্স সফটওয়্যার নিয়ে কাজ করতে গিয়ে এর ব্যবহার বাড়াতে মানসম্পন্ন সফটওয়্যার উন্নয়নের সাথে সাথে মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণ উপকরণের প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে। এরই প্রেক্ষিতে বিগত বছরে সফটওয়্যারের মানোন্নয়নের পাশাপাশি অঙ্কুরের করা স্থানীয়কৃত সফটওয়্যারগুলোর সাম্প্রতিকতম সংস্করণগুলোর জন্য বাংলাভাষায় শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা প্রশিক্ষণ উপকরণ তৈরি করেছে। এর মধ্যে অঙ্কুরের বাংলা অনূদিত সফটওয়্যারগুলোর প্রতিটির জন্য আলাদা টিউটোরিয়াল করেছে। এ থেকে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা খুব সহজেই সফটওয়্যারগুলো পরিচালনায় দক্ষ হয়ে উঠতে পারবেন। এছাড়াও শ্রেণীকক্ষে এ সফটওয়্যারগুলোর প্রশিক্ষণ দিতে কমপিউটারবিষয়ক শিক্ষকদের জন্য তৈরি করা হয়েছে আলাদা করে প্রশিক্ষণ গাইড।

অঙ্কুর বর্তমানে তাদের তৈরি করা বিভিন্ন উপকরণের মানোন্নয়নের কাজ করে যাচ্ছে। অচিরেই বাংলা কমপিউটিং ও ওপেনসোর্স সফটওয়্যার ব্যবহার করে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তিতে দক্ষ শিক্ষক গড়ে তুলতে বিভিন্ন জেলায় শিক্ষক এবং সংশি¬ষ্ট ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণ দিতে আগ্রহী, যারা পরবর্তী সময়ে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে এই প্রশিক্ষণকে সম্প্রসারিত করবেন।

অঙ্কুর আরও যা তৈরি করেছে

০১.
লিনআক্সের জন্য বাংলা-বাংলাদেশ (bn_BD) লোকাল ফাইল। লোকাল ফাইলে বাংলাভাষায় ব্যবহারের সব লোকাল নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে।

০২.
সব লিনআক্সে ব্যবহৃত X.org-এর জন্য প্রভাত এবং জাতীয় কীবোর্ড। এটি গ্রাফিক্স ফাইল সক্রিয় করে এবং অপারেটিং সিস্টেমের প্রদর্শনীতে কীবোর্ড প্রদর্শন করে।

০৩.
বাংলা বানান পরীক্ষক।

সাধারণ শব্দতালিকা

GNU Aspell-এর জন্য বাংলা শব্দতালিকা।
HunspellGi-এর জন্য বাংলা শব্দতালিকা।
Mozilla-এর জন্য বাংলা বানান পরীক্ষক।
OpenOffice.org-এর জন্য বাংলা বানান পরীক্ষক।

০৪.
MySQL ডাটাবেজ এবং OpenOffice.org-এ বাংলা শব্দের সর্টিং করার জন্য বাংলা একাডেমীর সাধারণ নিয়ম এবং আভিধানিক নিয়ম মেনে সর্টিংয়ের নিয়ম অনুযায়ী সোর্সকোডে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন এবং এর জন্য একটি কারিগরি নির্দেশিকা।

বাংলার জন্য অঙ্কুরের ওয়েবভিত্তিক টুলস

ইংরেজি-বাংলা অভিধান :

এটি একটি অনলাইন সেবা। এতে যেকেউ স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করতে পারে। এই অভিধানটি সাধারণ জিএনইউ (GPL) শর্তাবলীর অধীনে পাওয়া যাবে। এটি পাওয়া যাবে : www.bengalinux.org/english-to-bengali-dictionary/ সাইটে।

স্বয়ংক্রিয় অনুবাদক :

এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদের একটি কমপিউটার সফটওয়্যার সিস্টেম। এতে আপনি স্বেচ্ছাসেবী ইংরেজি শব্দ এবং বাংলা অর্থ যোগ করে এর শব্দভান্ডার সমৃদ্ধ করতে পারেন। এটি পাবেন : www.bengalinux.org/cgi-bin/anubadok/index.pl সাইটে।

অঙ্কুরের এসব কাজ www.ankur.org.bd ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে, ই-মেইল : feedback@ankur.org.bd। এছাড়াও বাংলায় অনূদিত সফটওয়্যারগুলো সংশি¬ষ্ট প্রজেক্ট সাইট হতেও ডাউনলোড করা যায়। অঙ্কুর আসন্ন বেসিস সফটএক্সপো ২০১০ [http://www.basis.org.bd]-এ তাদের যাবতীয় পণ্য ও সেবাসমূহ নিয়ে উপস্থিত থাকবে। যেকোনো পরামর্শ, তথ্য এবং অনুসন্ধানের জন্য মেইল করতে পারেন।

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের বাংলা কমপিউটিং এবং সিআরবিএলপি

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সেন্টার ফর রিসার্চ অন বাংলা ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং’ তথা ‘সিআরবিএলপি’ ২০০৪ সাল থেকে প্রযুক্তিক্ষেত্রে বাংলা কমপিউটিংয়ের উন্নয়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে গবেষণার কাজ করে আসছে। এরই মধ্যে আসকি থেকে ইউনিকোড কনভার্টার, ‘কথা : বাংলা টেক্সট টু স্পিচ এবং বাংলা ওসিআর’সহ বিভিন্ন ধরনের অ্যাপ্লি¬কেশন প্রকাশ করে আসছে। এছাড়া সাধারণ নিরক্ষর কিংবা কমপিউটার নিরক্ষর লোকদের কথা চিন্তা করে মাইক্রোসফটের সাথে মাইক্রোসফট উইন্ডোজ ভিসতা এবং অফিস ২০০৭ লোকালাইজেশনের কাজ করেছে। বর্তমানে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য বাংলায় কমপিউটার ব্যবহারের ‘সফটওয়্যার স্ক্রিন রিডার’ বা ‘কমপিউটার পর্দা পাঠক’ তৈরির কাজ করছে।

দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হলে সব স্তরে ডিজিটালপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। আর ডিজিটালপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হলে প্রযুক্তিকে মাতৃভাষার আওতায় আনতে হবে। সাধারণ নিরক্ষর, কমপিউটার নিরক্ষর, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী কিংবা শ্রবণ প্রতিবন্ধীসহ সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে কমপিউটার ব্যবহারের বিস্তার ঘটাতে হবে। আর সেজন্যই প্রয়োজন সবার জন্য মাতৃভাষায় কমপিউটারপ্রযুক্তি। মাতৃভাষায় কমপিউটারপ্রযুক্তির ব্যবহার সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে সিআরবিএলপি তার অগ্রযাত্রা শুরু করে ২০০৪ সালে। এই প্রযুক্তিগুলো আয়ত্ত করার মাধ্যমে মানবসম্পদ উন্নয়নে কাজ করছে বিগত কয়েক বছর। তৈরি করেছে বিভিন্ন ধরনের ব্যবহার উপযোগী সফটওয়্যার। সাধারণ মানুষের কাছে কমপিউটারকে তার নিজের ভাষাতে পৌঁছে দেয়ার কথা মাথায় রেখে মাইক্রোসফট কর্পোরেশনের সাথে যুক্ত হয়ে সফলভাবে মাইক্রোসফট উইন্ডোজ ভিসতা এবং অফিস ২০০৭ লোকালাইজেশনের কাজ শেষ করেছে সিআরবিএলপি। মাইক্রোসফট এই ল্যাঙ্গুয়েজ ইন্টারফেস প্যাক বিনামূল্যে ব্যবহারের সুবিধা দিয়েছে। যেকেউই মাইক্রোসফটের ওয়েবসাইট থেকে এ প্যাকেজ ডাউনলোড করে ব্যবহার করতে পারবে। অনেক আগেই সিআরবিএলপি ওসিআর তথা ‘অপটিক্যাল ক্যারেক্টার রিকগনিশন’ প্রকাশ করেছে এবং প্রতিনিয়ত নিরলসভাবে এর উন্নয়ন করে যাচ্ছে সিআরবিএলপির কর্মীরা। ইংরেজি শব্দের সাথে পরিচয় হতে প্রতিনিয়ত আমাদের ইংলিশ টু বাংলা ডিকশনারির পাতা উল্টাতে হয়। নতুন নতুন শব্দের জন্য এভাবে পাতা উল্টাতে আমরা কত না সময় নষ্ট করছি। এই কাজটি সহজতর করতে সিআরবিএলপি ইংলিশ টু বাংলা ডিকশনারি এবং বাংলা ব্যবহারিক অভিধান ডিজিটালে রূপান্তর করেছে, যেটি সরাসরি ওয়েব থেকে ব্যবহার করা যায়। শুধু শব্দের অর্থ জানা নয়, সেই সাথে জানা যাবে শব্দের উৎপত্তি, ব্যুৎপত্তিগত অর্থ, শব্দের বহুবিধ অর্থের সমাহার এবং শব্দের উচ্চারণ প্রক্রিয়া। সিআরবিএলপি থেকে প্রকাশিত ব্যবহারিক বাংলা অভিধান, বাংলা ওয়ার্ডনেট (শব্দজালিকা), বাংলা পরিভাষা, বাংলা উচ্চারণ অভিধান প্রভৃতি ডেমোগুলো এসব জানাতে সাহায্য করে। এছাড়াও সিআরবিএলপি ভাষাতাত্ত্বিক গবেষণার জন্য বিভিন্ন ধরনের রিসোর্স তৈরি করার কাজ অব্যাহত রেখেছে। ইংরেজি ভীতির জন্য অনেক সাধারণ কমপিউটার ব্যবহারকারী ই-মেইল ব্যবহার করছে না। এমন যদি হতো, মাউসের এক ক্লিকে ইংরেজি লেখাটি বাংলায় রূপান্তর হয়ে গেছে, তাহলে প্রযুক্তি ব্যবহারে আমাদের এই ইংরেজি ভীতিও চলে যেতো নিশ্চয়ই। দিনে দিনে ডিজিটালপ্রযুক্তি ব্যবহারকারীর সংখ্যাও বাড়বে। এরকম একটি সফটওয়্যার নিয়েও সিআরবিএলপি কাজ করছে, যা ইংরেজি ভাষা থেকে বাংলাভাষায় রূপান্তর করে দেবে। এই সফটওয়্যারটি তৈরি করতে অনেক সময়, ভাষাতাত্ত্বিক রিসোর্স ও জনবলের প্রয়োজন। সিআরবিএলপি এই ‘ভাষা রূপান্তরক’ সফটওয়্যারটির জন্য আপাতত ভাষাতাত্ত্বিক রিসোর্স সংগ্রহের কাজ করছে।

বাংলাদেশে প্রতিবন্ধীদের মধ্যে একটি বড় অংশ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। এই প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও এদের মধ্যে অনেকে ইংরেজি স্ক্রিন রিডার ‘কমপিউটার পর্দা পাঠক’ সফটওয়্যার ব্যবহার করে অনায়াসে কমপিউটার ব্যবহার করে আসছে। ব্যবহার করছে ইংরেজি টেক্সট টু স্পিচ। আগে বাংলা টেক্সট টু স্পিচ ছিল না। ফলে কমপিউটারে বাংলা ব্যবহারের কাজটি করতে পারত না দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা। সিআরবিএলপি ২০০৯ সালে বাংলাদেশী বাংলার জন্য সর্বপ্রথম বাংলা ‘টেক্সট টু স্পিচ’ প্রকাশ করে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য কমপিউটারে বাংলা ব্যবহারের একটি পথ তৈরি করে দিয়েছে। সবচেয়ে ভালো সংবাদ হলো, এই সফটওয়্যার ফ্রি এবং ওপেনসোর্স। সুতরাং যেকেউ এটি বিনামূল্যে ব্যবহার করতে পারবে এবং এর মান উন্নয়ন করতে পারবে। সিআরবিএলপি বর্তমানে স্ক্রিন রিডার সফটওয়্যার নিয়ে কাজ করছে, যাতে ‘কথা’ নামের বাংলা টেক্সট টু স্পিচ সফটওয়্যার যুক্ত থাকবে। এতে করে বাংলা টেক্সট টু স্পিচ সফটওয়্যারের ব্যবহার দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য আরো সহজ হবে বলে সিআরবিএলপি কর্তৃপক্ষ মনে করছে। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য একটি বড় বাধা হচ্ছে টেক্সট ইমেজ (মুদ্রিত টেক্সট চিত্র) পড়তে না পারা। সেজন্য সিআরবিএলপি বাংলা ওসিআর ও বাংলা টেক্সট টু স্পিচ দিয়ে ‘বাংলা টেক্সট ইমেজ টু স্পিচ’ সফটওয়্যার তৈরির পরিকল্পনা করছে। এতে করে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা যেকোনো বই, নথি, সংবাদপত্র প্রভৃতি স্ক্যান করে অথবা ছবি তুলে এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে সরাসরি শুনতে পারবে। এভাবেই এই সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের মধ্যে সাধারণ মানুষের মতো শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব এবং তাদের সাধারণ মানুষের মতো কর্মক্ষম করে তোলা সম্ভব।

এছাড়াও এই সফটওয়্যার ব্যবহার করে সিআরবিএলপি রুরাল ইনফরমেশন সার্ভিস তৈরি করার পরিকল্পনা করছে। এটি যেকোনো টাচস্ক্রিন সমন্বিত কমপিউটারের সাথে যুক্ত করে ব্যবহার করা যাবে।

সিআরবিএলপি’র গবেষণা দলটি বর্তমানে যেসব বিষয় নিয়ে কাজ করছে

অপটিক্যাল ক্যারেক্টার রিকগনিশন, স্পিচ প্রসেসিং (স্পিচ সিনথেসিস, স্পিচ রিকগনিশন), উচ্চারণ অভিধান এবং ভাষা রূপান্তরক, সিআরবিএলপি-তে তৈরি বাংলাভাষা প্রসেসিং টুলসমূহ মুক্ত এবং ওপেনসোর্স সফটওয়্যার, জিএনইউ পাবলিক লাইসেন্স ভার্সন-২-এর অধীনে স্বত্বপ্রাপ্ত। সিআরবিএলপি’র তৈরি করা সফটওয়্যারগুলোর ওয়েব ঠিকানা হলো :

০১. টেক্সট টু স্পিচ http://crblp.bracu.ac.bd/demo/tts
০২. ওসিআর http://crblp.bracu.ac.bd/demo/tts/
০৩. ইংলিশ টু বাংলা ডিকশনারি crblp.bracu.ac.bd/demo/e2bDictionary/e2bv1.5/
০৪. ব্যবহারিক বাংলা অভিধান http://crblp.bracu.ac.bd/demo/b2bDictionary/
০৫. পরিভাষা http://crblp.bracu.ac.bd/demo/porivasha/
০৬. বাংলা ওয়ার্ডনেট (শব্দজালিকা) crblp.bracu.ac.bd/demo/bangla_wordnet/
০৭. বাংলা উচ্চারণ অভিধান http://crblp.bracu.ac.bd/demo/PL/

আরো তথ্যের জন্য পরিদর্শন করা যেতে পারে সিআরবিএলপি’র ওয়েবসাইট http://crblp.bracu.ac.bd/। উলে¬¬খ্য, সিআরবিএলপি দলের সাথে যেকেউ যৌথভাবে কাজ করতে পারবে। সিআরবিএলপি মনে করে বাংলাভাষার প্রযুক্তিগত উন্নয়নে কিংবা ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরিতে এই ধরনের সফটওয়্যার অনেক সাহায্য করবে। আর এজন্য সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ের সবার অংশ নেয়া প্রয়োজন।

শেষকথা

পাঠক সাধারণ ইতোমধ্যেই আন্দাজ করতে পেরেছেন ধীরগতিতে হলেও বাংলাদেশে বাংলা কমপিউটিং নিয়ে বিভিন্ন মহল বিভিন্নভাবে কাজ করছে। এক্ষেত্রে আমরা দু’টি বিষয় লক্ষ করেছি। প্রথমত, বাংলা কমপিউটিংয়ে প্রত্যাশিত গতি ও ব্যাপকতার অভাব সুস্পষ্ট। আমাদের ও যুগের চাহিদা মেটানোর মতো জোরদার পদক্ষেপ এখনো নেয়ার অপেক্ষায়। ফলে এক্ষেত্রে গতিহীনতা এখনো বিদ্যমান। দ্বিতীয়ত, বাংলা কমপিউটিংয়ের ক্ষেত্রে আমরা দেশের বিভিন্ন মহলের গবেষণা ও উদ্যোগের যেসব সফটওয়্যার এ যাবত হাতে পেয়েছি, আনন্দ কম্পিউটার্সের বিজয় ছাড়া সেগুলো প্রত্যাশিত মাত্রায় ইউজার ফ্রেন্ডলি নয়। ফলে ব্যবহারকারীরা এসব বাংলা সফটওয়্যার ব্যবহারে প্রত্যাশিত মাত্রায় আগ্রহী হচ্ছে না। ফলে গবেষক ও উদ্ভাবক পক্ষও এধরনের বাংলা সফটওয়্যার উদ্ভাবনে সেভাবে উদ্যোগী হতে পারছে না। বিদ্যমান এ পরিস্থিতিতে গবেষক ও উদ্ভাবনে উদ্যোগীদের বড় ধরনের সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার খুবই প্রয়োজন। আশা করি, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ায় আগ্রহী এ সরকার এ প্রয়োজনটুকু মেটাতে কোনো ধরনের কার্পণ্য করবে না।

কজ ওয়েব

ফিডব্যাক : anu@comjagat.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস
অনুরূপ লেখা