লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
মোবাইল অ্যাপস ডেভেলপমেন্ট কর্মসূচি সফল হোক
মোবাইল অ্যাপস ডেভেলপমেন্ট কর্মসূচি সফল হোক
সময়ের এক ফোঁড়, অসময়ের দশ ফোঁড় বা ইংরেজিতে ‘A stitch in time save nine’ প্রবাদবাক্যটি আমাদের দেশে নীতি-নির্ধারণী মহলের ওপর এক যথার্থ উপদেশ বাণী হিসেবে প্রয়োগ করা যায় নির্দ্বিধায়। কেননা, গত ২০-২৫ বছরে সারা বিশ্বে আইসিটি ক্ষেত্রে এমনসব সুযোগ এসেছিল, যেগুলো কাজে লাগাতে পারলে আমাদের দেশের বর্তমান অবস্থা অনেক পাল্টে যেত। আমাদের দেশের বেকার সমস্যার সমাধান অনেকাংশেই যেমন হতো, তেমনি দেশের অর্থনীতির ভিতও অনেক মজবুত হতো।
যেসব সুযোগ-সুবিধা আমরা গত ২০-২৫ বছরে হারিয়েছি, সেগুলো হলো- ডাটা এন্ট্রির সুবর্ণ সুযোগ, অদূরদর্শিতা ও মিথ্যা জুজুবুড়ির ভয়ে প্রায় বিনামূল্যের ফাইবার অপটিক সংযোগ সুবিধা হাতছাড়া হওয়া, যা পরবর্তী সময়ে পেতে আমাদেরকে অপেক্ষা করতে হয়েছে প্রায় ২০ বছর, ইউরো মানি কনভার্সন ও ওয়াইটুকে সমস্যা সমাধানের সুবর্ণ সুযোগ ইত্যাদি। সে সময় আমাদের দেশের নীতি-নির্ধারণী মহল যদি একটু সচেতন হতো, তাহলে আমাদের দেশের অর্থনীতির চেহাটা অনেকখানি পাল্টে যেত।
আমরা সবাই জানি, সুযোগ একবার হাতছাড়া হয়ে গেলে তা আর ফিরে আসে না। এসব ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। সুতরাং অতীতে কোন কোন সুযোগ আমরা হাতছাড়া করেছি, তা নিয়ে হা-হুতাশ করে লাভ নেই। এখন আমাদের খেয়াল রাখতে হবে বর্তমান ট্রেন্ডকে। বর্তমান ট্রেন্ড হলো মোবাইল অ্যাপস। বর্তমানে স্মার্টফোনের জয়জয়কার অবস্থা হওয়ায় মোবাইল অ্যাপসের চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। গত মাসের অর্থাৎ জুলাই ২০১৪ সালের কমপিউটার জগৎ-এর প্রচ্ছদ প্রতিবেদনে তা তুলে ধরা হয়েছে।
বিস্ময়কর হলেও সত্য, বর্তমান সরকারের নীতি-নির্ধারণী মহল এবারই প্রথম সময়মতো কোনো ট্রেন্ডকে যথার্থ উপলব্ধি করতে পেরেছে। উপলব্ধি করেছে মোবাইল অ্যাপসের ব্যাপক চাহিদার কথা এবং এ ক্ষেত্রে দক্ষ জনবলের ব্যাপক অভাব রয়েছে তা বুঝতে পেরেছে। অবশ্য একটু দেরিতে হলেও যথার্থ উপলব্ধি করতে পেরে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় জনবল তৈরির জন্য।
জাতীয় পর্যায়ে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট এবং দক্ষতা বাড়ানোর কর্মসূচির আওতায় নাগরিকদের সেবা দেয়া ও নেয়া পর্যায়কে সহজতর করার লক্ষে ২০টি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ। বাংলাদেশের অ্যান্ড্রয়িড অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপারদের জন্য আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে যুক্ত হতে এতদিন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় বাধা হিসেবে ছিল বাংলাদেশ থেকে অনলাইনে লেনদেনের সুযোগ না থাকা। এ অসুবিধাটি অনুধাবন করে ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রচেষ্টায় এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে বাংলাদেশে অনুমোদন পেল ভার্চুয়াল কার্ড ব্যবস্থা। তবে বর্তমানে এ সুবিধা শুধু তথ্যপ্রযুক্তি খাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে।
সম্প্রতি সরকার মোবাইল অ্যাপস ডেভেলপমেন্টের জন্য দেশব্যাপী ব্যাপক প্রচারের পাশাপাশি বিভাগীয় শহরসহ বিভিন্ন জেলা শহরে শুরু করেছে মোবাইল অ্যাপসের প্রশিক্ষণ কর্মসূচিসহ মোবাইল অ্যাপস প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতার মধ্য থেকে শীর্ষ কয়েকজনকে পুরস্কৃত করা হচ্ছে। এ ধরনের কর্মসূচি নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ।
আমরা চাই জাতীয় পর্যায়ে মোবাইল অ্যাপস ডেভেলপমেন্ট ও দক্ষতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের এ কর্মসূচি সফল হোক। সেই সাথে আমরা এও প্রত্যাশা করি, মোবাইল অ্যাপস ডেভেলপমেন্টের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি মাত্র চার-পাঁচ দিনের মধ্যে যেন সীমাবদ্ধ না থাকে। কারণ, চার-পাঁচ দিনের প্রশিক্ষণে কেউ কেউ হয়তো সফলকাম নাও হতে পারে। তাই তাদের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচি আরও কয়েক দিনের জন্য বাড়ানো উচিত, যাতে তারা এ ক্ষেত্রে সফলকাম হতে পারে।
রিপন
সবুজবাগ, পটুয়াখালী
১ বিলিয়ন ডলার সফটওয়্যার রফতানির আশা!
কবি-সাহিত্যিকেরা কল্পনা করেন, স্বপ্ন দেখেন সুন্দর এক পৃথিবীর। আর বিজ্ঞানীরা কবি-সাহিত্যিকের কল্পিত রূপকে বাস্তবায়িত করেন। যার বাস্তব দৃষ্টান্ত রয়েছে ভূরিভূরি। যেমন, চাঁদে মানুষ যাওয়া, আকাশে ওড়া ইত্যাদি। কবি-সাহিত্যিকের কল্পিত রূপ বিজ্ঞানীরা যেহেতু অহরহ বাস্তবায়ন করে আসছেন, তাই আমাদের প্রত্যাশার মাত্রা বা স্বপ্নের মাত্রা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে, তা বাস্তবায়নযোগ্য হোক বা না হোক, তাতে কিছু যায়-আসে না।
এমনই এক স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন আমাদের দেশের সফটওয়্যার ও সেবা খাতের রফতানিকারকেরা। আমাদের দেশের সফটওয়্যার ও সেবা খাতের রফতানিকারকেরা সামনের চার বছরে ১ বিলিয়ন ডলারের সফটওয়্যার রফতানির স্বপ্ন দেখেন। যেখানে এ শিল্প খাতে সংশ্লিষ্ট অনেকেই ১০০ মিলিয়ন ডলারের সফটওয়্যার রফতানির হিসাবে মেলাতে পারেন না, সেখানে স্বাভাবিকভাবেই বলা যায়, এই অঙ্কটা বিশাল আকারের বটে। আবার এ দেশের প্রধানমন্ত্রী সামনের সাত বছরে ৫ বিলিয়ন ডলারের সফটওয়্যার রফতানির স্বপ্ন দেখেন!
অনেকেই এ প্রসঙ্গে ব্যঙ্গ করে বলেছেন, স্বপ্ন যদি দেখতেই হয় তবে ছোট অঙ্কের স্বপ্ন দেখব কেন? বিশাল বড় অঙ্কের স্বপ্ন দেখতে দোষ কোথায়? আসলে স্বপ্ন বড় কিংবা ছোট, সেটা মুখ্য বিষয় হওয়া উচিত নয় কোনোভাবে। মূল্য বিবেচ্য বিষয় হওয়া উচিত, স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমরা কতটুকু আন্তরিকভাবে কাজ করছি সেটা।
এ কথা সত্যি, আন্তরিকভাবে চেষ্টা করলে যেকোনো কঠিন কাজই করা সম্ভব। প্রত্যাশা বা স্বপ্ন যদি বড় না হয়, তাহলে ভবিষ্যতে এগিয়ে চলার গতিও মন্থর হতে বাধ্য। আর এ কারণে আমরা সবাই একটু বড় আকারেই স্বপ্ন দেখে থাকি। এসব স্বপ্নের কথা যদি দেশের শীর্ষ নেতৃত্বের কেউ বলে থাকেন, তাহলে দেশের সর্বসাধারণের কাছে এক ব্যাপক আশা-উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়। সৃষ্টি হয় না নতুন কর্মচাঞ্চল্য পরিবেশ।
কিন্তু দেশের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের আশার বাণী যদি হয়ে থাকে শুধু কথামালার ফুলঝুরি, তাহলে তা হবে এক দুঃখজনক ঘটনা। আমাদের দেশে এমন অনেক আশার বাণী বা স্বপ্নের কথা শুনিয়েছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় নেতারা, যার বাস্তবায়ন হতে খুব একটা দেখা যায়নি। অথচ সেগুলো ছিল বাস্তবায়নযোগ্য। একটু আন্তরিকভাবে চেষ্টা করলেই সেসব কাজ সফলতার আলো দেখতে পেত।
আমি কেন, আমরা অনেকেই মনে করি, যেকোনো স্বপ্ন বড় হলেও সেটা পূরণ করার সক্ষমতা আমাদের রয়েছে। আমাদেরকে প্রথমে খুঁজে বের করতে হবে স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথ কী? অনেকে মনে করছেন, এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথ বেসিস বা আমাদের স্বপ্নদ্রষ্টাদের জানা নেই। আমাদের ঘরের ভেতরের বাজারটি অর্থাৎ অভ্যন্তরীণ বাজারটি কেমন হতে পারে সেটাও হয়তো এদের জানা নেই। বিস্ময়করভাবে বেসিস বা তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় বিদেশের দিকে যতটা তাকায়, দেশের ভেতরে তেমনভাবে তাকায় না- এ অভিযোগ রয়েছে অনেকেরই। দেশের অভ্যন্তরীণ বাজার সম্পর্কে যদি ধারণা থাকত, তাহলে আনুমানিক লক্ষ্যমাত্রাও ধার্য করা সহজ হতো- যা হতো বাস্তবসম্মত, কল্পিত বা অবিশ্বাস্য নয়। যাই হোক, ১ বিলিয়ন ডলারের সফটওয়্যার রফতানির স্বপ্ন বাস্তবায়িত হোক, সেই প্রত্যাশা করি। আমাদের মনে রাখতে হবে, এ লক্ষ্য বাস্তবায়ন করা মোটেও অসম্ভব কিছু নয়, যদি আমরা আমাদের কাজে থাকি আন্তরিক।
ফিরোজ শাহ
গোলারটেক, মিরপুর