লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম:
মোহাম্মদ ইশতিয়াক জাহান
ইমেইল:rony446@yahoo.com:
মোট লেখা:৮৮
লেখা সম্পর্কিত
লেখার ধরণ:
আইপি প্রযুক্তি
ম্যাক অ্যাড্রেসের সাথে আইপি অ্যাড্রে বন্ডিং
তথ্যপ্রযুক্তি বর্তমানে এতটাই সহজলভ্য হয়েছে, মাত্র ১৫০০ টাকা খরচ করে বাসা/অফিসে ওয়াইফাই জোন তৈরি করা সম্ভব। পাশাপাশি এর রাউটারটি ব্যবহার করে নেটওয়ার্কের ইন্টারনেটের ব্যান্ডউইডথ কন্ট্রোল করা সম্ভব। এ বিষয়ে অক্টোবর ২০১৪ সংখ্যায় বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। ওই আলোচনায় ইন্টারনেটের ব্যান্ডউইডথের গতি কন্ট্রোল, ব্যান্ডউইডথ কন্ট্রোলারের সুবিধা, ব্যান্ডউইডথ কন্ট্রোলারের ধরন এবং ব্যান্ডউইডথ কন্ট্রোল করার নিয়মাবলী দেখানো হয়েছে। নির্দিষ্ট কিছু কনফিগারেশন সেট করে দিয়ে কিছু আইপি অ্যাড্রেসের ব্যান্ডউইডথ কন্ট্রোল করা যাবে। তবে কেউ ওই কমপিউটারে নতুন আইপি অ্যাড্রেস পরিবর্তন করে নিলে তা ব্যান্ডউডথের কন্ট্রোলের বাইরে চলে যাবে। এ ধরনের ব্যবহারকারীরকে কন্ট্রোল করতে হলে আপনাকে অতিরিক্ত কিছু সার্ভিস কনফিগার করে নিতে হবে। রাউটারে আইপি অ্যাড্রেস ও ম্যাক অ্যাড্রেসকে বন্ডিং করে দিতে হবে এবং বন্ডিং অবস্থায় থাকা কমপিউটারগুলো ছাড়া অন্য কোনো কমপিউটার ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত হতে পারবে না, এ বিষয়টি লক্ষ রাখা প্রয়োজন। আইপি অ্যাড্রেসের সাথে ম্যাক অ্যাড্রেসের বন্ডিং নিয়ে এ লেখাটি সাজানো হয়েছে। তবে শুরু করার আগে বেসিক কিছু বিষয় জানা থাকা প্রয়োজন।
আইপি অ্যাড্রেস
ইন্টারনেট প্রটোকলের সংক্ষিপ্ত রূপ হচ্ছে আইপি অ্যাড্রেস। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীকে ইন্টারনেটের সাথে সংযোগের ক্ষেত্রে এ আইপি অ্যাড্রেসের প্রয়োজন হয়। ইন্টারনেটে আইপি অ্যাড্রেস সবসময় ইউনিক হয়ে থাকে।
ম্যাক অ্যাড্রেস
ইন্টারনেট বা লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্কে (LAN) যুক্ত হওয়ার জন্য প্রয়োজন হবে ল্যান কার্ড বা ইথারনেট কার্ড এবং ওই নেটওয়ার্কে সংযোগ স্থাপনের জন্য ক্যাট-৫/৬ ক্যাবল। ল্যান কার্ড বা ইথারনেট কার্ডে একটি ম্যাক অ্যাড্রেস থাকে, যা এই ল্যান কার্ডের Physical Address হিসেবে ব্যবহার হয়। ল্যান কার্ডের ফিজিক্যাল অ্যাড্রেস হচ্ছে একটি ইউনিক অ্যাড্রেস, যা ওই ল্যান কার্ডের জন্য প্রযোজ্য হবে। বাজারে যত ল্যান কার্ড পাওয়া যায়, তার একটির সাথে অন্যটির ফিজিক্যাল অ্যাড্রেস বা ম্যাক অ্যাড্রেস ভিন্ন হবে। কখনও এক অ্যাড্রেসের সাথে অন্য অ্যাড্রেস মিলবে না বা মিল থাকবে না।
ম্যাক অ্যাড্রেসের সাথে আইপি অ্যাড্রেস বন্ডিং
আমরা জানি, আইপি অ্যাড্রেস ও ম্যাক অ্যাড্রেস ইউনিক হয়ে থাকে। একটি আইপি অ্যাড্রেস যেকোনো ল্যান কার্ডে স্থাপন করা যায়। তবে নেটওয়ার্ক অ্যাক্টিভ অবস্থায় একটি আইপি অ্যাড্রেস একাধিক ল্যান কার্ডে ব্যবহার করা যায় না। কারণ, ইউনিক হিসেবে তখন ওই আইপি অ্যাড্রেসটি নেটওয়ার্কে চিহ্নিত হয়ে থাকে। আগে অনেকেই আইপি অ্যাড্রেসের সাথে ইন্টারনেট শেয়ারিং দিতেন। ফলে ওই আইপি অ্যাড্রেসটি যেকোনো কমপিউটারে বসিয়ে নিলেই কমপিউটার ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত হওয়া যেত। এতে দেখা যায়, একটি কমপিউটারের সংযোগকে পর্যায়ক্রমে একাধিক কমপিউটারে ব্যবহার করা হতো। কিন্তু বর্তমানে ইন্টারনেট সেবাদানকারী সংস্থাগুলো (আইএসপি) কমপিউটারের ম্যাক অ্যাড্রেসের সাথে আইপি অ্যাড্রেসকে এমনভাবে বাইন্ড করে দেয়, ফলে ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত আইপি অ্যাড্রেসটি যেকোনো কমপিউটারে বসালেই ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত হওয়া যায় না, বরং এর সাথে ল্যান কার্ডটি খুলে ওই কমপিউটারে সংযুক্ত করতে হয়। ল্যান কার্ডের ম্যাক অ্যাড্রেসের সাথে আইপি অ্যাড্রেসকে বাইন্ড করার এ ধরনের পদ্ধতিকে আইপি-ম্যাক বন্ডিং বলা হয়। অর্থাৎ নেটওয়ার্কের কোনো আইপি অ্যাড্রেসকে স্ট্যাটিক হিসেবে ম্যাক অ্যাড্রেসের সাথে এমনভাবে এন্ট্রি দেয়া যায় যে, নেটওয়ার্কে ওই আইপি ও ম্যাক অ্যাড্রেসটি ম্যাচ করলেই ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত হতে পারবে, অন্যথায় কমপিউটারটি ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত হবে না।
ব্যান্ডইউডথ কন্ট্রোল করার জন্য টিপি লিঙ্কের মধ্যে 300Mbps Wireless N Routers, 150Mbps Wireless N Routers, 54Mbps Wireless G Routers বা এ ধরনের রাউটার ব্যবহার করতে পারেন (উপরে উল্লিখিত রাউটার ছাড়া অন্য রাউটারে বন্ডিংয়ের সুবিধা রয়েছে কি না তা রাউটার কেনার আগে জেনে নিন)। এবারের সংখ্যায় টিপি লিঙ্কের ওপরে উল্লিখিত রাউটারে ম্যাক অ্যাড্রেসের সাথে আইপি অ্যাড্রেসের বাইন্ড করার পদ্ধতি ধাপে ধাপে দেখানো হলো :
ধাপ-১ : ধরে নিচ্ছি আপনার কমপিউটারে টিপি লিঙ্ক রাউটার, ইন্টারনেট সঠিকভাবে যুক্ত রয়েছে এবং ইন্টারনেট সঠিকভাবে কাজ করছে। এবার আপনার কমপিউটারের আইপি অ্যাড্রেসটি পরিবর্তন করে ১৯২.১৬৮.০.২ এবং সাবনেট মাস্ক হিসেবে ২৫৫.২৫৫.২৫৫.০ সেট করে দিন (রাউটারের ইউজার গাইড থেকে জেনে নিতে পারবেন ডিফল্ট আইপি অ্যাড্রেসটি কোন রেঞ্জের)।
ধাপ-২ : আপনার কমপিউটারের ওয়েব ব্রাউজারটি চালু করে http://192.168.0.1 টাইপ করে এন্টার চাপুন। এতে রাউটারে প্রবেশ করার লগইন পেজ আসবে। ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড হিসেবে অ্যাডমিন টাইপ করে এন্টার চাপুন।
ধাপ-৩ : অ্যাডমিন প্যানেলের বাম পাশের প্যানেল থেকে আইপি ও ম্যাক বাইন্ডিংয়ে ক্লিক করে Binding Setting-এ ক্লিক করুন। এবার ARP Binding-এর এনাবল অংশটি সিলেক্ট করে সেভ বাটনে ক্লিক করুন।
ধাপ-৪ : এবার ARP List-এ ক্লিক করে রাউটারের ARP টেবলটি দেখতে পাবেন। রাউটারে সংযুক্ত সব ডিভাইসের ম্যাক ও আইপি অ্যাড্রেসটি দেখতে পাবেন। যদি নিশ্চিত হয়ে থাকেন, এখানে থাকা আইপি ও ম্যাক অ্যাড্রেসগুলো আপনার পরিচিত, তাহলে Load বাটনে ক্লিক করে Add বাটনে ক্লিক করুন। এবার Bind All-এ ক্লিক করুন। এতে এক ক্লিকে আপনার রাউটারে যুক্ত থাকা সব আইপি ও ম্যাক অ্যাড্রেস বাইন্ডিং হয়ে যাবে।
ধাপ-৫ : যদি আপনি নিশ্চিত না হন যে কোন আইপি অ্যাড্রেসটি কার এবং তার ম্যাক অ্যাড্রেসটি সম্পর্কে পরিচিত নন, তাহলে ম্যানুয়ালি আইপি অ্যাড্রেসের সাথে ম্যাক অ্যাড্রেসকে বাইন্ড করে দিতে পারেন। এর জন্য অ্যাডমিন প্যানেলের বাম পাশের প্যানেল থেকে বাইন্ডিং সেটিংয়ে ক্লিক করুন। এবার Add New বাটনে ক্লিক করলে একটি পেজ প্রদর্শিত হবে। এখন যে ডিভাইসের ম্যাক অ্যাড্রেসের সাথে আইপি অ্যাড্রেসটি বাইন্ড করতে চাচ্ছেন তা এখানে বাইন্ড অপশনটিতে টিক (চ) মার্ক দিয়ে ম্যাক অ্যাড্রেসের ঘরে ম্যাক অ্যাড্রেসটি ও আইপি অ্যাড্রেসের ঘরে আইপি অ্যাড্রেসটি টাইপ করে সেভ বাটনে ক্লিক করুন।
ধাপ-৬ : কনফিগারেশনটি ঠিক থাকলে রাউটারটি একবার রিস্টার্ট দিন। এবার আপনার কাজ শেষ। এবার যে কমপিউটারকে বন্ডিং করেছেন, ওই কমপিউটারের আইপি অ্যাড্রেসটি পরিবর্তন করে দেখুন কমপিউটারে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন না। অর্থাৎ রাউটারে সেটআপ করা নির্দিষ্ট ম্যাক ও আইপি অ্যাড্রেস ম্যাচ করলেই আপনি ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন।
কমপিউটারের ম্যাক অ্যাড্রেস বের করা
যেকোনো কমপিউটারের ম্যাক অ্যাড্রেস খুব সহজেই বের করা সম্ভব। ল্যান কার্ড রয়েছে এমন কোনো কমপিউটারে ম্যাক অ্যাড্রেস বের করতে হলে কমান্ড প্রম্পটে একটি কোড টাইপ করে এন্টার প্রেস করলে আইপি ও ম্যাক অ্যাড্রেসটি প্রদর্শিত হবে। বিষয়টি স্পষ্ট করার জন্য নিচের ধাপ দুটি দেখুন।
০১. উইন্ডোজ এক্সপিতে ম্যাক অ্যাড্রেস বের করার জন্য স্টার্ট®রান®পসফ টাইপ করে এন্টার চাপুন। এবার কমান্ড প্রম্পটে ipconfig/all টাইপ করে এন্টার চাপলে ওই কমপিউটারের ল্যান কার্ডের আইপি ও ম্যাক অ্যাড্রেসটি দেখতে পাবেন।
০২. লিনআক্স/উবুন্টুতে ম্যাক অ্যাড্রেস বের করার জন্য প্রথমে টার্মিনাল উইন্ডোটি চালু করতে হবে। এবার টার্মিনালে ifconfig/all টাইপ করে এন্টার চাপুন। এতে ওই অপারেটিং সিস্টেমে কত আইপি ও ম্যাক অ্যাড্রেস বসানো রয়েছে তা জানতে পারবেন।
সতর্কতা
ধরুন, আপনার নেটওয়ার্কে থাকা ৫০টি কমপিউটারের মধ্যে ৪০টি ম্যাক ও আইপি বন্ডিং করে দিয়েছেন। কিন্তু বাকি ১০টির ইউজাররা একটু চালাকি করলেই ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত হতে পারবেন। তাই ম্যাক ও আইপি অ্যাড্রেস কারও সাথে শেয়ার করবেন না এবং থার্ড পার্টি সফটওয়্যার ব্যবহার করে কেউ যেনো ম্যাক অ্যাড্রেস ও কমপিউটারের আইপি বের করতে না পারে, সেদিকে লক্ষ রাখুন
ফিডব্যাক : rony446@yahoo.com