লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
আইসিটি খাতকে অবিলম্বে সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে ঘোষণা করা হোক
আইসিটি খাতকে অবিলম্বে সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে ঘোষণা করা হোক
বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার বিভিন্ন কারণে সমালোচিত-আলোচিত হওয়া সত্ত্বেও তথ্যপ্রযুক্তিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী, পেশাজীবীসহ এ সংশ্লিষ্ট ছাত্র-ছাত্রী ও সচেতন শিক্ষিত সমাজের কাছে এক প্রযুক্তিবান্ধব সরকার হিসেবে বিবেচিত। কেননা, এ সরকারের শাসনামলে মোবাইল ফোনের একচেটিয়া মনোপলি ব্যবসায়ের অবসান ঘটে, তথ্যপ্রযুক্তিসংশ্লিষ্ট পণ্যে ওপর ভ্যাট-ট্যাক্স প্রত্যাহার করা হয়, বছরে দশ হাজার প্রোগ্রাম তৈরির লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়, ঘোষিত হয় ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ও ভিশন ২০২১।
আপাতদৃষ্টিতে এ সরকারের ঘোষিত বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি ও কর্মসূচি দেখে মনে হয় তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান খুব শিগগিরই কোরিয়া, চীন, ভিয়েতনাম ও ভারতের কাছাকাছি উপনীত হবে। লক্ষ্য যদি না থেকে, তাহলে কোনো উদ্দেশ্য হাসিল হয় না। সুতরাং সরকারের বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি সাধারণ মানুষের কাছে অতিরঞ্জিত বা কল্পনাবিলাস বলে মনে হলেও সাধুবাদ জানাতেই হয় সরকারকে। কেননা, সরকারের ঘোষিত প্রতিশ্রুতি সাধারণ জনগণকে কিছুটা হলেও স্বপ্নে বিভোর করে। তবে এ কথাও সত্য, সরকারের ঘোষিত লক্ষ্য পূরণের জন্য যে উদ্যোগে কাজ হওয়ায় কথা, যে ধরনের কর্মযজ্ঞ দেখা যাওয়ার কথা, তেমনটি মোটেও দেখা যাচ্ছে না। ফলে অনেকেই মনে করেন, সরকারের এসব ঘোষণা ও প্রতিশ্রুতি নিছকই রাজনৈতিকভাবে সমর্থন ও সুবিধা আদায়ের কৌশল মাত্র।
সাধারণ জনগণ এমন কথা বলছেন, তার বিভিন্ন কারণও রয়েছে। যেমন, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি এখন সব ধরনের ব্যবসায়-বাণিজ্যে উৎপাদনে প্রত্যক্ষ অবদান রাখছে, তখনও একে অন্য ধরনের বিষয় বলে আলাদা করে দেখছে সরকার ও সরকারের নীতিনির্ধারণী মহল।
যেকোনো ধরনের আর্থিক, বাণিজ্যিক ও শিল্প উৎপাদন সম্পর্কিত বিষয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার আবশ্যিক হয়ে গেছে। বৈদেশিক বা অভ্যন্তরীণ যেকোনো যোগাযোগ হচ্ছে অনলাইনে ব্যাংকিং এবং লেনদেন সংক্রান্ত ব্যাপারগুলো নতুন প্রযুক্তির যোগাযোগ ছাড়া সম্ভব নয়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিনির্ভর এমন অনেক নতুন আভাস এ দেশের ব্যবসায় ও আর্থিক খাতে প্রচলন হয়ে গেছে।
এ পরিস্থিতিতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের বিশেষায়িত বিকাশ কেনো হচ্ছে না সেটা একটা প্রশ্ন এবং বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রশ্নটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের জন্য বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হচ্ছে এ কারণেই যে- আমাদের অভ্যস্ততায় তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি এই যুগে একটা ত্রৈমাসিক বিবর্তনের মধ্যে রয়েছে।
ইলেকট্রনিক, তৈরী পোশাক শিল্প, ফুড ইন্ডাস্ট্রি বা ওষুধ শিল্প সবকিছুতেই আইসিটিনির্ভর কোয়ালিটি কন্ট্রোলের একটি ভূমিকা রয়েছে। অর্থাৎ এসব খাতে আমাদের দেশের নতুন প্রজন্মের মেধাবী কর্মকর্তা ও দক্ষ প্রকৌশলী শ্রমিকেরা তাদের অবদান রাখছেন।
কিন্তু নীতিনির্ধারিক স্তরে আইসিটি শিল্পের মৌলিক বিষয়াবলী নিয়ে যখন কথা বলা হয়, তখনই প্রস্তাবনার পর্যায়েই আইসিটিকে খাটো করে দেখানো হয় এই যুক্তি তুলে যে, এই খাতে দক্ষ-প্রযুক্তিবিদ শ্রমজীবীর অভাব রয়েছে। কিছুদিন আগের অবস্থা ছিল আরও নেতিবাচক। এখন খাটো করা হচ্ছে। কিন্তু তখন পত্রপাঠই নাকচ করে দেয়া হতো। কারণটা ছিল নীতিনির্ধারকদের মধ্যে অহেতুক আইসিটিভীতি আর শীর্ষ পর্যায়ে অজ্ঞতা। এখন অবস্থা অনেকটা ইতিবাচক বলা যায়। তারপরও কিছু সমস্যা রয়ে গেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশের যে কর্মপরিকল্পনা নির্বাচনী অঙ্গীকার হিসেবে পরবর্তীকালে করেছিলেন, সেগুলোর অর্থায়ন থেকে নিয়ে সঠিক ও বাস্তবায়নের পদক্ষেপ রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নেয়া হয়েছে দায়সারাভাবে। সরকারি ওয়েবসাইটগুলোর ই-টেন্ডার, ই-পার্চেজ ইত্যাদি বিষয়কে সাফল্য হিসেবে খুব একটা ধরা যায় না। ই-গভর্ন্যান্স ধারণায় আছে, কিন্তু কাজে নেই। অন্যদিকে সেবা দেয়ার বিষয়গুলো অনায়াসে করা যেত, সেগুলো আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আক্রান্ত হয়ে পড়ে আছে।
এখানে উল্লিখিত বিষয়াদি নিয়ে পর্যালোচনা করলে সুস্পষ্টভাবে বলা যায়, বাংলাদেশের এখন প্রয়োজন আইসিটিভিত্তিক বড় শিল্প ও ব্যবসায়িক উদ্যোগে বিনিয়োগ। তৃণমূলে সেবা কার্যক্রম বিস্তারের পাশাপাশি আরও দুটো কাজ জরুরিভিত্তিতে করা প্রয়োজন। যার একটি হচ্ছে নিজস্ব প্রযুক্তির উদ্ভাবনের জন্য গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যক্রমের জন্য উচ্চতর পর্যায়ে সুযোগ সৃষ্টি করা এবং আইসিটিবিষয়ক বড় শিল্প গড়ে তোলা। অভ্যন্তরীণভাবে সরকারি বিনিয়োগই এক্ষেত্রে আগে প্রয়োজন। কেননা, বেসরকারি অন্যান্য শিল্পোদ্যোগই আইসিটিকে অবলম্বন হিসেবে গ্রহণ করা হলেও আইসিটিভিত্তিক বড় ধরনের বিনিয়োগে এখনও আগ্রহী নয়। অভ্যন্তরীণ বাজারে চাহিদা থাকলেও ক্রেতার আস্থা না পাওয়ার অনিশ্চয়তা রয়েছে। এসব বিষয়কে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে আইসিটি খাতকে সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া এবং এ খাতের প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করার জন্য যা কিছু দরকার তা যেন অল্প সময়ের মধ্যে করা হয়।
জাফরউলস্নাহ খান
শেওড়াপাড়া, ঢাকা
সফল হোক ই-কমার্স
অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ
বর্তমান যুগ হচ্ছে ই-কমার্সের যুগে। দেশীয় ই-কমার্স খাতের উন্নতি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতেই গঠন করা হয়েছে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ তথা ই-ক্যাব। ইতোমধ্যেই ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটের ৫০টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-ক্যাবের সদস্য হয়েছে। লক্ষণীয়- বিসিএস, বেসিস প্রভৃতি সংগঠন যখন প্রথম প্রতিষ্ঠা করা হয় তখন সদস্য সংখ্যা ছিল ৫০টির কম। সে হিসাবে ই-ক্যাবের সদস্য সংখ্যা সমেত্মাষজনকই বলা যায়। ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে এক মহৎ উদ্দেশ্যে। ই-ক্যাব গঠনের উদ্যোগ হলো প্রতিটি গ্রামের মানুষ অনলাইনে তাদের পণ্য কেনাবেচা করবে, ট্যুরিজম খাতে ই-কমার্সের ছোঁয়া লাগবে এবং দেশের ৬৪টি জেলাতে ই-কমার্স ছড়িয়ে পড়বে। কয়েক কোটি লোক প্রতিদিন অনলাইনে ও মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কেনাকাটা করবে। কয়েক বিলিয়ন ডলারের বাজার হবে ই-কমার্স বাংলাদেশের। দেশের ৬৪টি জেলার বিখ্যাত পণ্যগুলো অনলাইন শপিং সাইটের মাধ্যমে চলে যাবে সারা বিশ্বে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় যেসব ই-কমার্স কোম্পানি রয়েছে সেগুলোর প্রতিনিধিত্ব করবে ই-ক্যাব। ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রিতে যারা কাজ করছেন, তারা একত্রে এ খাতের সব সমস্যা সমাধানসহ অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখবেন।
প্রথম থেকেই ই-ক্যাব সাতটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেবে। সেগুলো হলো : অনলাইন শপস, ই-পেমেন্ট ও ট্রানজেকশন, ই-সিকিউরিটি, ই-কমার্স সচেতনতা ও প্রশিক্ষণ, ই-কমার্স পলিসি ও গাইডলাইন, ডেলিভারি সার্ভিস এবং ই-সেবা। ই-ক্যাবের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য ২০টি স্ট্যান্ডিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি ই-কমার্সের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করবে। কমিটিগুলো হলো : ই-কমার্স পলিসি অ্যান্ড গাইডলাইন, ই-পেমেন্ট অ্যান্ড ট্রানজেকশন, কমপ্লায়েন্স অ্যান্ড ফ্রড ম্যানেজমেন্ট, ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড, গ্রামীণ ই-কমার্স, উদ্যোক্তা উন্নয়ন, গভর্নমেন্ট অ্যাফেয়ার্স, ই-কমার্স সচেতনতা, ই-সিকিউরিটি, ই-ব্যাংকিং অ্যান্ড মোবাইল কমার্স, ফেসবুক কমার্স, ডিজিটাল কনটেন্ট, ডেলিভারি সার্ভিস, ডিজিটাল মার্কেটিং, মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন, কোয়ালিটি ইমপ্রম্নভমেন্ট, নারী উদ্যোক্তা ও ই-কমার্স, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, ই-ট্যুরিজম অ্যান্ড ট্রাভেল এবং টেলিমেডিসিন ও ই-হেলথ।
আমরা ই-ক্যাবের সাফল্য কামনা করি। সেই সাথে প্রত্যাশা করি এ ব্যবসায়ের সাথে সংশ্লিষ্ট সবার আন্তরিক প্রচেষ্টা, ধৈর্য ও সহনশীলতা। কেননা এক খাতটি বাংলাদেশে একেবারেই নতুন এবং এখনও ই-কমার্স সম্পর্কে দেশের সাধারণ মানুষ তেমন কিছু জানেন না।
আবুল কালাম আজাদ
আদিতমারি, লালমনিরহাট