লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
বাংলাদেশের নিজস্ব স্যাটেলাইটের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে?
বাংলাদেশের নিজস্ব স্যাটেলাইটের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে?
বাংলাদেশের নিজস্ব স্যাটেলাইটের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে কমপিউটার জগৎ-এ ইতোপূর্বে প্রচ্ছদ প্রতিবেদনসহ বেশ কিছু দাবিধর্মী লেখা প্রকাশিত হয়েছে। কমপিউটার জগৎ-এ প্রকাশিত নিজস্ব স্যাটেলাইটের দাবিকে অনেকের কাছে হাস্যকর মনে হয়েছিল, কেউ কেউ এ নিয়ে ব্যঙ্গ করতে কার্পণ্যও করেনি প্রথম দিকে। অবশ্য পরে আওয়ামী লীগ সরকার নিজস্ব স্যাটেলাইটের গুরুত্ব যথার্থ উপলব্ধি করে এবং কীভাবে বাংলাদেশ নিজস্ব স্যাটেলাইটের স্বপ্ন পূরণ করা যায়, তার জন্য উদ্যোগী হয়। কিন্তু এই উদ্যোগে ছিল যথেষ্ট আনাড়িপনা। কেননা স্যাটেলাইট কী, কীভাবে কেনা যায় ইত্যাদি বিষয়ে তেমন কোনো বাস্তব অভিজ্ঞতা ছিল না কারও। স্যাটেলাইট তো মাত্র কয়েক কোটি টাকার সহজলভ্য জিনিস নয় যে, যখন খুশি তখন চাইলেই পাওয়া যাবে।
নিজস্ব স্যাটেলাইট পেতে হলে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোকে প্রথমেই চেষ্টা করতে হবে অর্থের ব্যবস্থা করা। এরপর রয়েছে সুবিধাজনক অরবিটাল লিজ নেয়াসহ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহবান করা। এতে স্যাটেলাইটের মূল অংশ তৈরি, উৎক্ষেপণ, গ্রাউন্ড কন্ট্রোল স্টেশন নির্মাণ ও বীমা অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
বাংলাদেশ মহাকাশে নিজস্ব প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণের জন্য অরবিটাল স্লট বা নিরক্ষরেখা (১১৯.১ ডিগ্রি) লিজ নেয়। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। অরবিটাল স্লট লিজের জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সাথে রাশিয়ার ইন্টারস্পুটনিক ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব স্পেস কমিউনিকেশনের গত ১৫ জানুয়ারি বিটিআরসির সম্মেলন কক্ষে এক চুক্তি স্বাক্ষর হয়। চুক্তি অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ হবে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে। ২ কোটি ৮০ লাখ ডলারের ব্যয়ে এই স্লট বরাদ্দ নেয়া হয়।
স্যাটেলাইট প্রকল্পে খরচ ধরা হচ্ছে ২ হাজার ৯৬৭ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থ ১ হাজার ৩১৫ কোটি ৫১ লাখ ও বাকি ১ হাজার ৬৫২ কোটি ৪৪ লাখ টাকা সংগ্রহ করা হবে বৈদেশিক উৎস থেকে।
উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৩ সালের মধ্যে মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু এ সম্পর্কে বাস্তব জ্ঞান না থাকায় বাংলাদেশ ঘোষিত সময় থেকে সরে আসে। বাড়ানো হয় প্রকল্পের মেয়াদ। সর্বশেষ ২০১৫ সাল পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়। অর্থ সংস্থান না হওয়ায় এরই মধ্যে এ প্রকল্পের মেয়াদ দুই দফা বাড়ানো হয়।
সরকার দীর্ঘমেয়াদে ইন্টারস্পুটনিকের কাছ থেকে ১১৯.১ ডিগ্রি অরবিটাল স্লট ভাড়া নিতে চাইলেও প্রাথমিকভাবে ১৫ বছরের চুক্তি হয়েছে। তবে এই চুক্তি ১৫ বছর করে ৪৫ বছর পর্যন্ত বাড়ানো যাবে। এ প্রকল্পে সরকারের যে খরচ হবে, তা স্যাটেলাইট ভাড়া দিয়ে ৮ বছরে তুলে আনা যাবে।
বাংলাদেশের কক্ষপথ অরবিটাল স্লট ৮৮-৯১ ডিগ্রিতে এরই মধ্যে রাশিয়ার দুটি, জাপান ও মালয়েশিয়ার একটি করে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। অরবিটাল স্লট ৮৮-৯৯ এখনও খালি থাকলেও আইটিইউ ওই জায়গা বাংলাদেশকে না দিয়ে বরাদ্দ দেয় ১০২ ডিগ্রিতে। কিন্তু প্রভাবশালী দেশ যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ তাতেও বাধা দেয়। এসব দেশের আপত্তির কারণে বাংলাদেশকে বিকল্প পথ হিসেবে ৬৯ ডিগ্রিতে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের প্রস্তাব দেয়া হয়। কিন্তু বিকল্প এ পথেও আপত্তি জানায় মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও চীন।
এসব ছাড়া রয়েছে অর্থের সংস্থান, স্যাটেলাইট বানানোর অর্ডার দেয়া, উৎক্ষেপণের গ্রাউন্ড স্টেশন তৈরি ইত্যাদি কাজ। তাই সবার মনে সংশয়- এবারও কি নির্দিষ্ট সময়ে নিজস্ব স্যাটেলাইট মহাকাশে উৎক্ষেপণ সম্ভব হবে? না কি এবারও পিছিয়ে আসতে হবে উল্লিখিত সময় থেকে।
আমরা সব সংশয় দূর করে ২০১৭ সালের মধ্যে নিজস্ব স্যাটেলাইট পেতে চাই। তা না হলে পরবর্তী সময়ে খালি অরবিটাল স্লট পাওয়া আরও কঠিন হয়ে পড়বে। তখন নিজস্ব স্যাটেলাইটের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে আমাদের।
রিপন
সবুজবাগ, পটুয়াখালী
মেক বাই বাংলাদেশ রূপকল্প
বাস্তবায়িত হোক
কোনো কিছুতে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য না থাকলে তা কখনই অর্জিত হয় না। লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যবিহীন জীবন মাঝিবিহীন নৌকার মতো, কখন কোথায় ভেসে যাবে- কেউ বলতে পারে না। তাই আমাদের সবার জীবনে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থাকতে হবে। এ কথা শুধু আমাদের প্রাত্যহিক জীবনযাত্রার জন্য প্রযোজ্য তা নয়, বরং অন্যান্য ক্ষেত্রের জন্যও প্রযোজ্য। তবে এ কথা সত্য, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থাকলেই হবে না, তা বাস্তবায়নে থাকতে হবে আন্তরিকভাবে সচেষ্ট।
সম্প্রতি দেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) খাতের উন্নয়নের অংশীদার প্রতিটি সংগঠনের সমন্বিত অংশ নেয়ার মধ্য দিয়ে ‘মেক বাই বাংলাদেশ’ রূপকল্প ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ কমপিউটার সমিতি (বিসিএস)। এ রূপকল্প অনুযায়ী ২০১৮ সালের মধ্যে আইসিটি খাত থেকে জিডিপিতে ২ শতাংশ অবদান রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৭ সালের মধ্যে আইসিটি হার্ডওয়্যার ইনস্টলেশন খাত থেকে ১ বিলিয়ন ও ২০১৮ সালের মধ্যে সফটওয়্যার খাত থেকে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
তবে হার্ডওয়্যার ইনস্টলেশন খাত থেকে ১ বিলিয়ন ও সফটওয়্যার খাত থেকে ৫ বিলিয়ন ডলারের আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ অনেকের কাছে বিশেষ করে বাংলাদেশে আইসিটিসংশস্নষ্টি ব্যবসায়ীদের কাছে অকল্পনীয় স্বপ্ন। অবশ্য এর পেছনে যথেষ্ট যৌক্তিক কারণও আছে। কেননা, বাংলাদেশের হার্ডওয়্যারের বাজার পুরোটাই ভেন্ডরনির্ভর বা আমদানিনির্ভর। ফলে এখান থেকে খুব বেশি যে সুবিধা আদায় করা যাবে, তা বলা যাবে না। অর্থাৎ আমাদের হার্ডওয়্যার খাত উৎপাদনমুখী না হয়ে যদি শুধু ভেন্ডরনির্ভর হয়, তাহলে ২০১৭ সালের মধ্যে আইটি ইনস্টলেশন খাত থেকে ১ বিলিয়ন ডলার আয় করা সম্ভব তো হবে না, শুধু স্বপ্ন হিসেবেই থেকে যাবে।
মেক বাই বাংলাদেশ রূপকল্পে ২০১৮ সালের মধ্যে সফটওয়্যার খাত থেকে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা কোনোমতেই অসম্ভব নয় তা আমি এ বলছি না, তবে সংশয় থেকেই যায়। কেননা, এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য যে ধরনের অবকাঠামোগত সুবিধা থাকা দরকার, এ মুহূর্তে আমাদের দেশে সে ধরনের অবকাঠামোগত সুবিধা নেই বললেই চলে। শুধু তাই নয়, এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরির বা গঠন করার কোনো উদ্যোগই দেখা যাচ্ছে না।
যেহেতু ২০১৮ সালের মধ্যে ৫ বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নেই, তাই খুব সহজেই বলা যায়, এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না। তবে এ কথা সত্য, এ মুহূর্ত থেকে যদি আমরা সবাই মিলে ঐকান্তিকভাবে চেষ্টা করি, তাহলে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব। তা না হলে তা শুধু কথার কথা হিসেবে থেকেই যাবে, বাস্তবায়ন হবে না কখনও। সুতরাং, এ ক্ষেত্রে আমরা প্রযুক্তিপ্রেমীরা কখনই প্রত্যাশা করি না, বিসিএসের ঘোষিত রূপকল্প কল্পনাই হয়ে থাকুক।
বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের রূপকল্পের কথা শোনা গেলেও সেগুলোর বেশিরভাগই বাস্তবায়ন হতে দেখা যায় না। তবে এ ক্ষেত্রে আমরা চাই কমপিউটার সমিতির মেক বাই বাংলাদেশ রূপকল্প বাস্তবায়িত হবে।
কবির আলী
টাঙ্গাইল