• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > কবে উড়বে বাংলাদেশের স্যাটেলাইট?
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: হিটলার এ. হালিম
মোট লেখা:২২
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৪ - অক্টোবর
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন
তথ্যসূত্র:
রির্পোট
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
কবে উড়বে বাংলাদেশের স্যাটেলাইট?

শনির দশা ভর করেছে বাংলাদেশের নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ প্রকল্পে। একের পরে এক তারিখ পেছাচ্ছে, বাজেট কমছে, দেশ বদল হচ্ছে, কিন্তু মহাকাশে উড়ছে না স্যাটেলাইট। বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১-এর উদ্বোধন নিয়ে জনমনে ব্যাপক আগ্রহ থাকলেও ব্যয় সঙ্কোচনের অজুহাতে তা পিছিয়েছে। মহাকাশে বাংলাদেশের নিজস্ব স্যাটেলাইটের স্বপ্ন পূরণ হতে পারে ২০১৭ সালে। ওই বছরই সব কর্মযজ্ঞ শেষ হলে মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হবে বাংলাদেশের স্যাটেলাইট।

যদিও ২০১৩ সালের মধ্যেই মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু এ সম্পর্কে বাস্তব জ্ঞান না থাকায় বাংলাদেশ ঘোষিত সময় থেকে সরে আসে। বাড়ানো হয় প্রকল্পের মেয়াদ। সর্বশেষ ২০১৬ সাল পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বর্ধিত করা হয়। অর্থসংস্থান না হওয়ায় এরই মধ্যে এই প্রকল্পের মেয়াদ দুই দফা বাড়ানো হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জোর আপত্তি ওঠায় গত ১৬ সেপ্টেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সামনে শতকরা ৯ ভাগ ব্যয় কমিয়ে এনে একটি সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাব পেশ করা হয়। এদিন একনেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রকল্প অনুমোদন হয়। ২ হাজার ৯৬৭ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ’ শীর্ষক প্রকল্পটির বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে জুলাই ২০১৪ থেকে জুন ২০১৭ পর্যন্ত। প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয়ের মধ্যে জিওবি (বাংলাদেশ সরকার) ১ হাজার ৩১৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা এবং সংস্থার প্রকল্প সাহায্য ১ হাজার ৬৫২ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। বিডার্স ফাইন্যান্সিংয়ের মাধ্যমে প্রকল্প সাহায্যের ব্যবস্থা করা হবে।

একনেক বৈঠক শেষে জানানো হয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি কোম্পানি (স্পেস পার্টনারশিপ ইন্টারন্যাশনাল) এ কাজের পরামর্শ প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্যাটেলাইটটির নকশা ইতোমধ্যে তৈরি করেছে উল্লেখ করে বলা হয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অধীন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।

এ ছাড়া প্রকল্পের আওতায় টেলিকমিউনিকেশন ও ব্রডকাস্টিং সেবা দিতে ৪০টি ট্রান্সপন্ডারবিশিষ্ট বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটটি নির্মাণ করা হবে বলে জানানো হয়।

নির্মাণের পর স্যাটেলাইটটি অরবিটাল স্লটে স্থাপন করা হবে। ভূমি থেকে স্যাটেলাইটটি নিয়ন্ত্রণের জন্য দুটি গ্রাউন্ড স্টেশন স্থাপন করা হবে। এ প্রকল্পটি সফল হলে ব্রডকাস্টিং ব্যয় বাবদ বছরে ১১০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।

এর আগে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বিটিআরসি রাশিয়ান স্যাটেলাইট কোম্পানি স্পুটনিক থেকে নিরক্ষরেখার ১১৯ দশমিক ১ (পূর্ব) ডিগ্রিতে স্লট কেনার সিদ্ধান্ত নেয়। অর্থ মন্ত্রণালয় ২৮ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে এই স্লট কেনার সিদ্ধান্তে আপত্তি জানিয়ে এর বাস্তবায়ন স্থগিত করে দেয়।

এ বছরের শুরুতে এক বৈঠকে অর্থমন্ত্রী এএমএ মুহিত এ প্রকল্পের আনুমানিক ব্যয় সম্পর্কে প্রশ্ন তোলেন ও বিটিআরসিকে প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধন করতে নির্দেশ দেন। তিনি বিটিআরসি বরাবর পাঠানো এক চিঠিতে এ প্রকল্পের আনুমানিক ব্যয় ৩ হাজার ২৫৩ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা করার সুপারিশ করেন।

এরও আগে ২০১২ সালে একনেক ৩ হাজার ২৫৩ কোটি টাকা (আনুমানিক) ব্যয়ে এ প্রকল্প অনুমোদন করে। কিন্তু অর্থমন্ত্রীর আপত্তির কারণে বিটিআরসি চলতি বছর মার্চে ২ হাজার ৯৬৭ দশমিক ৯৬ কোটি টাকার একটি সংশোধিত প্রস্তাব পেশ করে।

মন্ত্রণালয়ের দলিলপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, স্যাটেলাইটের কক্ষপথ বিষয়ে বিকল্প পথ ভাবছে এবং উদ্বোধনের পর রক্ষণাবেক্ষণ প্রক্রিয়া ও ব্যয় সম্পর্কেও প্রশ্ন তুলেছে।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান সুনীল কান্তি বোস সদ্য শেষ হওয়া কমনওয়েলথ টেলিকমিউনিকেশন ফোরাম শেষে বলেছিলেন, আমরা সরকার থেকে নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি।

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য এবং যোগাযোগ প্রযুক্তিমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী জানান, অর্থের সংস্থান, অরবিটাল স্লট ক্রয়, স্যাটেলাইট নির্মাণ এবং উৎক্ষেপণ করতে ২০১৭ সাল পর্যন্ত লেগে যাবে। মন্ত্রীর ঘোষিত সময়ের মধ্যেও স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠানো সম্ভব হবে কি না তা নিয়ে এরই মধ্যে হিসাব কষা শুরু করে দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, এখনও অর্থের সংস্থান হয়নি। এ কারণে বন্ধ আছে অরবিটাল স্লট ক্রয়ের মতো বিষয়। শুধু ৬টি বহুজাতিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ দেখিয়েছে।

উৎক্ষেপণ জটিলতা, অর্থ সংস্থানের উৎস নিশ্চিত না হওয়া এবং নিজস্ব অরবিটাল স্লট (নিরক্ষরেখা) বরাদ্দ না পাওয়ায় মহাকাশে বাংলাদেশের নিজস্ব স্যাটেলাইটের যাত্রার সময় বারবার পিছিয়ে যাচ্ছে। ঘোষিত সময় বারবার পেছানোয় দিন দিন এ অনিশ্চয়তার পালা ভারি হচ্ছে।

বাংলাদেশ মহাকাশে নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের জন্য এখনও চূড়ান্তভাবে অরবিটাল স্লট (নিরক্ষরেখা) বরাদ্দ পায়নি। অরবিটাল স্লট বরাদ্দকারী প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়ন (আইটিইউ) বাংলাদেশকে নিরক্ষরেখার ১০২ ডিগ্রির পরিবর্তে ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রিতে (পূর্ব) স্লট বরাদ্দ দিলেও অর্থের অভাবে বাংলাদেশ তা এখনও নিজের করতে পারেনি। অর্থের সংস্থান না হওয়ায় রাশিয়ার মহাকাশবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ইন্টারস্পুটনিকের ৮৪ ও ১১৯ ডিগ্রিতে নিজস্ব দুটি স্লট থাকায় সংস্থাটির সাথে দুই মাসের একটি শর্তহীন চুক্তিও করে সরকার।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্প শুরুর আগেই বিদেশী বিশেষজ্ঞ বা পরামর্শক নিয়োগ এবং প্রকল্প গবেষণায় সরকারের ব্যয় হয়েছে ৮৬ কোটি টাকা। এ টাকা সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে খরচ করেছে।

সূত্র আরও জানায়, সরকার দীর্ঘমেয়াদে ইন্টারস্পুটনিকের কাছ থেকে ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রি অবরিটাল স্লটটি ভাড়া নিতে যাচ্ছে। এতে সরকারের যে টাকা খরচ হবে, তা স্যাটেলাইট ভাড়া দিয়ে ৮ বছরে তুলে এনে এই প্রকল্পকে লাভজনক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের কক্ষপথে বা অরবিটাল স্লট (৮৮-৯১ ডিগ্রি) এরই মধ্যে রাশিয়ার দুটি, জাপান ও মালয়েশিয়ার একটি করে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। অরবিটাল স্লটের ৮৮-৮৯ ডিগ্রি এখনও খালি থাকলেও আইটিইউ ওই জায়গা বাংলাদেশকে না দিয়ে বরাদ্দ দেয় ১০২ ডিগ্রিতে। কিন্তু প্রভাবশালী দেশ যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, মধ্যপ্রাচ্যসহ এশিয়ার কয়েকটি দেশ তাতে বাধা দেয়। দেশগুলোর আপত্তির মুখে বাংলাদেশ বিকল্প খুঁজতে থাকে। বিকল্প হিসেবে ৬৯ ডিগ্রিতে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের প্রস্তাব দেয়া হয় বাংলাদেশকে। কিন্তু বিকল্প প্রস্তাবেও আপত্তি তোলে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ও চীন

পেছনের কথা

২০১২ সালের ২৯ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান স্পেস পার্টনারশিপ ইন্টারন্যাশনালকে (এসপিআই) ১ কোটি ডলারের বিনিময়ে তিন বছরের জন্য পরামর্শক নিযুক্ত করেছে বিটিআরসি। চুক্তি অনুযায়ী ২০১৫ সালের মধ্যে মহাকাশে বাংলাদেশের স্যাটেলাইট পাঠানোর কথা রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের নিজস্ব অরবিটাল স্লট (নিরক্ষরেখা) না পাওয়া এবং স্পুটনিকের কাছ থেকে স্লট ক্রয় প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকায় এ নিয়ে অনিশ্চয়তা দিন দিন বাড়ছে।

পরামর্শক ফি (১ কোটি ডলার), স্লট ক্রয় (প্রায় সাড়ে ৩ কোটি ডলার) এবং স্যাটেলাইট তৈরি, উৎক্ষেপণ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজন ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা। সব মিলিয়ে বিশাল অঙ্কের টাকার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ। এই বিপুল অর্থের সংস্থান কোথা থেকে হবে সে বিষয়ে নিশ্চিত কোনো উৎস এখনও চিহ্নিত না হওয়ায় সরকার গত মেয়াদে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ প্রকল্প থেকে পিছিয়ে আসে।

জানা যায়, স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ প্রকল্পে পরামর্শক নিয়োগেই অনিয়ম হয়েছে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এসপিআই নামের যে প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়া হয়েছে, সে প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ২০০৯ সালে। অথচ বিটিআরসি পরামর্শক সংস্থা নিয়োগে যে ইওআই প্রকাশ করেছিল, সেখানে অন্যতম শর্ত ছিল আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানকে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। অথচ মাত্র দুই বছরের অভিজ্ঞ একটি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেয়ায় প্রশ্ন উঠেছে। এ বিষয়ে বিটিআরসির দাবি, এসপিআই যুক্তরাষ্ট্রের আরকেএফ কোম্পানির সাথে যৌথভাবে কাজটি পেয়েছে। যাদের ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা গেছে কোম্পানিটির নিবন্ধনের বয়স ৯ (বর্তমানে ১১ বছর) বছর। একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, এসপিআই এককভাবে কাজ পেয়েছে। অন্যদিকে আরকেএফের প্রধান নির্বাহী ফিল রুবিন জানান, যৌথ উদ্যোগে এ কাজ তারা পাননি। সাব কন্ট্রাক্টের কাজ পেয়েছেন।

এসপিআইয়ের প্রতিষ্ঠাতা ব্রুক বলেছেন, আরকেএফ তাদের কৌশলগত অংশীদার। এসপিআইয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে পাওয়া গেছে বাংলাদেশী এক কর্মকর্তার নাম। ওই কর্মকর্তা এসপিআইয়ের ব্যবসায় উন্নয়ন বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তিনি বাংলাদেশের একজন সাবেক প্রভাবশালী মন্ত্রীর ভায়রা। ওই মন্ত্রীর ভাইয়ের মাধ্যমে কাজটি পাওয়ার বিষয়ে তার হাত আছে বলে সূত্র দাবি করে।

ফিডব্যাক : hitlarhalim@yahoo.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস