লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম:
হিটলার এ. হালিম
মোট লেখা:২২
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৫ - ফেব্রুয়ারী
লেখার ধরণ:
স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন
তথ্যসূত্র:
উপগ্রহ প্রযুক্তি
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে অরবিটাল স্লট নিল বাংলাদেশ
মহাকাশে বাংলাদেশের নিজস্ব প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণের জন্য অরবিটাল স্লট বা নিরক্ষরেখা (১১৯.১ ডিগ্রি) লিজ নিল বাংলাদেশ।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। অরবিটাল স্লট লিজের জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সাথে রাশিয়ার ইন্টারস্পুটনিক ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব স্পেস কমিউনিকেশনের গত ১৫ জানুয়ারি বিটিআরসির সম্মেলন কক্ষে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়।
বিটিআরসির কমিশনার ও বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির আহবায়ক এটিএম মনিরুল আলম ও ইন্টারস্পুটনিকের মহাপরিচালক ভাদাম ই বেলোভ নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। চুক্তি মতে, বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ হবে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে। ২ কোটি ৮০ লাখ ডলার ব্যয়ে এ স্লট বরাদ্দ নেয়া হয়েছে।
স্যাটেলাইট প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৯৬৭ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থ ১ হাজার ৩১৫ কোটি ৫১ লাখ ও বাকি ১ হাজার ৬৫২ কোটি ৪৪ লাখ টাকা সংগ্রহ করা হবে বৈদেশিক উৎস থেকে।
জানা গেছে, স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহবান করা হবে। এতে স্যাটেলাইটের মূল অংশ তৈরি, উৎক্ষেপণ, গ্রাউন্ড কন্ট্রোল স্টেশন নির্মাণ ও বীমা অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
মহাকাশে বাংলাদেশের নিজস্ব স্যাটেলাইটের স্বপ্ন পূরণ হতে পারে ২০১৭ সালে। ওই বছরই সব কর্মযজ্ঞ শেষ হলে মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হবে বাংলাদেশের স্যাটেলাইট। এর আগে ২০১৩ সালের মধ্যেই মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু এ সম্পর্কে বাস্তব জ্ঞান না থাকায় বাংলাদেশ ঘোষিত সময় থেকে সরে আসে। বাড়ানো হয় প্রকল্পের মেয়াদ। সর্বশেষ ২০১৬ সাল পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়। অর্থ সংস্থান না হওয়ায় এরই মধ্যে এই প্রকল্পের মেয়াদ দুই দফা বাড়ানো হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে আপত্তি ওঠায় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সামনে শতকরা ৯ ভাগ ব্যয় কমিয়ে এনে একটি সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাব পেশ করা হয়। এর আগে বিটিআরসি রাশিয়ান স্যাটেলাইট কোম্পানি স্পুটনিক থেকে ১১৯ দশমিক ১ পশ্চিম কক্ষপথ স্লট কেনার সিদ্ধান্ত নেয়। অর্থ মন্ত্রণালয় ২৮ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে এই স্লট কেনার সিদ্ধামেত্ম আপত্তি জানিয়ে এর বাস্তবায়ন স্থগিত করে।
গত বছরের শুরুতে এক বৈঠকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এই প্রকল্পের আনুমানিক ব্যয় সম্পর্কে প্রশ্ন তোলেন ও বিটিআরসিকে প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধন করতে নির্দেশ দেন। তিনি বিটিআরসি বরাবর পাঠানো এক চিঠিতে এই প্রকল্পের আনুমানিক ব্যয় ৩ হাজার ২৫৩ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা করার সুপারিশ করেন।
এর আগে ২০১২ সালে একনেক ৩ হাজার ২৫৩ কোটি টাকা আনুমানিক ব্যয়ে এই প্রকল্প অনুমোদন করে। কিন্তু অর্থমন্ত্রীর আপত্তির কারণে বিটিআরসি এই বছর মার্চে ২ হাজার ৯৬৭ দশমিক ৯৬ কোটি টাকার একটি সংশোধিত প্রস্তাব পেশ করে।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান সুনীল কান্তি বোস কমনওয়েলথ টেলিকমিউনিকেশন ফোরাম শেষে বলেছিলেন, ‘আমরা সরকার থেকে নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি।’
এর আগে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য এবং যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রী (বর্তমানে সাবেক) আবদুল লতিফ সিদ্দিকী জানিয়েছিলেন, অর্থের সংস্থান, অরবিটাল স্লট ক্রয়, স্যাটেলাইট নির্মাণ এবং উৎক্ষেপণ করতে ২০১৭ সাল পর্যন্ত লেগে যাবে। মন্ত্রীর ঘোষিত সময়ের মধ্যেও স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠানো সম্ভব হবে কি না তা নিয়েও জল্পনা-কল্পনা কম হয়নি।
জানা গেছে, এখনও অর্থের সংস্থান হয়নি। ৬টি বহুজাতিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ দেখিয়েছিল এর আগে।
উৎক্ষেপণ জটিলতা, অর্থ সংস্থানের উৎস নিশ্চিত না হওয়া এবং নিজস্ব অরবিটাল স্লট (নিরক্ষরেখা) বরাদ্দ না পাওয়ায় মহাকাশে বাংলাদেশের নিজস্ব স্যাটেলাইটের যাত্রার সময় বারবার পিছিয়ে যায়।
এর আগে মহাকাশে বাংলাদেশের নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের জন্য এ অরবিটাল স্লট বরাদ্দকারী প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়ন (আইটিইউ) বাংলাদেশকে নিরক্ষরেখার ১০২ ডিগ্রির পরিবর্তে ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রিতে (পূর্ব) স্লট বরাদ্দ দেয়। অর্থের সংস্থান না হওয়ায় রাশিয়ার মহাকাশবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ইন্টারস্পুটনিকের ৮৪ ও ১১৯ ডিগ্রিতে নিজস্ব দুটি স্লট থাকায় সংস্থাটির সাথে দুই মাসের একটি শর্তহীন চুক্তি করে সরকার।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্প শুরুর আগেই বিদেশি বিশেষজ্ঞ বা পরামর্শক নিয়োগ এবং প্রকল্প গবেষণায় সরকারের ব্যয় হয়েছে ৮৬ কোটি টাকা। এই টাকা সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে খরচ করেছে।
সরকার দীর্ঘমেয়াদে ইন্টারস্পুটনিকের কাছ থেকে ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রি অবরিটাল স্লট ভাড়া নিতে চাইলেও প্রাথমিকভাবে ১৫ বছরের চুক্তি হয়েছে। তবে এই চুক্তি ১৫ বছর করে ৪৫ বছর পর্যন্ত বাড়ানো যাবে। এই প্রকল্পে সরকারের যে টাকা খরচ হবে তা স্যাটেলাইট ভাড়া দিয়ে ৮ বছরে তুলে এনে এই প্রকল্পকে লাভজনক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।
বাংলাদেশের কক্ষপথে বা অরবিটাল স্লটে (৮৮-৯১ ডিগ্রি) এরই মধ্যে রাশিয়ার দুটি, জাপান ও মালয়েশিয়ার একটি করে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। অরবিটাল স্লটের ৮৮-৮৯ ডিগ্রি এখনও খালি থাকলেও আইটিইউ ওই জায়গা বাংলাদেশকে না দিয়ে বরাদ্দ দেয় ১০২ ডিগ্রিতে।
কিন্তু প্রভাবশালী দেশ যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, মধ্যপ্রাচ্যসহ এশিয়ার কয়েকটি দেশ তাতে বাধা দেয়। দেশগুলোর আপত্তির মুখে বাংলাদেশ বিকল্প পথ খুঁজতে থাকে। বিকল্প হিসেবে ৬৯ ডিগ্রিতে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের প্রস্তাব দেয়া হয় বাংলাদেশকে। কিন্তু বিকল্প প্রস্তাবেও আপত্তি তোলে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও চীন।
২০০৭ সাল থেকে মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠানোর কথা শোনা যাচ্ছে। বর্তমান সরকারের গত মেয়াদে বারবার বলা হয়, ওই মেয়াদের মধ্যেই প্রথম স্যাটেলাইট মহাকাশে উড়বে। এ বিষয়ে বাস্তব জ্ঞান থাকায় ওই ঘোষণা শেষ পর্যন্ত কথার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। ওই ঘোষণার পরে ৮ বছর পার হয়ে গেলেও মাত্র শুরু হয় অরবিটাল স্লট লিজ নেয়া। এখন আরএফপি ডাকা হবে, অর্থের সংস্থান খোঁজা হবে, স্যাটেলাইট বানানোর অর্ডার দেয়া হবে, উৎক্ষেপণ গ্রাউন্ড স্টেশন তৈরি হবে, নির্দিষ্ট সময় পরে তা বুঝে পেয়ে তবেই না স্যাটেলাইট ওড়ানো হবে মহাকাশে। ২০১৭ সালের মধ্যে তা হবে?
ফিডব্যাক : hitlarhalim@yahoo.com