লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
বাংলাদেশ আইসিটি এক্সপো-২০১৫ ভোক্তা-উৎপাদক-উদ্ভাবকের মিলন মেলা
‘মিট ডিজিটাল বাংলাদেশ’ আহবানে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশ আইসিটি এক্সপো ২০১৫। গত ১৫-১৭ জুন উদ্ভাবনী প্রদর্শনী, আইটি পণ্যের মেগা সেল, উৎপাদক লক্ষ্য পূরণে সভা-কর্মশালা- এই তিন আয়োজনে ভিন্ন মাত্রা পেয়েছিল তিন দিনের এই মেলা। হার্ডওয়্যার ও ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে অমিত সম্ভাবনায় ও দেশজ উদ্যোগের নান্দনিক উপস্থাপনায় প্রতিভাত হয় বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য ও সেবানির্ভর ডিজিটাল জীবনধারা। আইসিটি বিভাগ এবং বাংলাদেশ কমপিউটার সমিতির (বিসিএস) যৌথ উদ্যোগে উপস্থাপিত হয় দেশের হার্ডওয়্যার শিল্পের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় তথ্যপ্রযুক্তি পণ্যসেবা প্রদর্শনী। দেশী-বিদেশী প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, বিশ্লেষক ও উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণে রচিত হয় প্রযুক্তি শিল্পায়নের পথে বাংলাদেশের আগামীর পথরেখা। নানা আয়োজনে উপস্থাপিত হয় ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রগতি ও মানুষের মাঝে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের দ্বিতীয় ধাপ।
দুই যুগ পর
১৯৯৩ সাল থেকে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে তথ্যপ্রযুক্তি প্রদর্শনী আয়োজন করে আসছে বাংলাদেশ কমপিউটার সমিতি। সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প ঘোষণার পর ২০০৯ সাল থেকে এককভাবে ‘বিসিএস ডিজিটাল এক্সপো’, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ সামিট’ ও ‘বিসিএস আইসিটি ওয়ার্ল্ড’ নিয়মিত আয়োজন করে বিসিএস। তবে এবার আন্তর্জাতিক আবহে সরকারের আইসিটি বিভাগের সাথে মিলে বিসিএস আয়োজন করে ‘বাংলাদেশ আইসিটি এক্সপো ২০১৫’। এ মেলা উদ্বোধন করেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। দুই যুগ পর যেনো নতুন করে জেগে ওঠে বাংলাদেশ কমপিউটার সমিতি। আয়োজনে কিছুটা অপূর্ণতার ছাপ থাকলেও ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ রূপকল্প বাস্তবায়নের দ্বিতীয় ধাপে যাত্রা শুরু করে দিয়েছে এই মেলা। নিজস্ব ব্র্যান্ডের ডিজিটাল ডিভাইস উৎপাদনের পথে হাঁটার প্রত্যয় ফুটে উঠেছে মেলায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে। ‘মেইক বাই বাংলাদেশ’ দেশপ্রেমের নতুন এক সেস্নাগানে সণাত হয়েছেন দর্শনার্থীরা।
মেলা প্রাঙ্গণে
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের প্রায় ৬০ হাজার বর্গফুট আয়তন জুড়ে বাংলাদেশ আইসিটি এক্সপো ২০১৫ মেলায় অংশ নিয়ে শতাধিক দেশী-বিদেশী তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য উৎপাদক ও সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান। প্রাঙ্গণ জুড়ে ৪০টি প্যাভিলিয়ন এবং ৬৮টি স্টলে উপস্থাপন করা হয়েছে হালনাগাদ প্রযুক্তিপণ্য। দেশী আইটি কোম্পানি ফ্লোরা লিমিটেড, ড্যাফোডিল, গ্লোবাল ব্র্যান্ড, স্মার্ট টেকনলোজি, কমপিউটার ভিলেজ, ফাইবার অ্যাট হোমস, ওয়াল্টন, সিম্ফোনি, টেকনোনিডস, আনন্দ কমপিউটার্স, এক্সেল টেকনোলজি, সিস্টেক, সাউথবাংলা, মাইক্রোসান, ডাটাবিজ, আইবিসিএস প্রাইম্যাক্স, রিশিত কমপিউটার, জবসবিডি, ইউবিএস, পিসি মার্ট, কমপিউটার ভিলেজ, র্যাং গস ইলেকট্রনিক্স এবং কমপিউটার সোর্সের পাশাপাশি ডেল, এইচপি, কোনিকা মিনোলটা, প্রোলিংক, স্যামসাং, আসুস, সিসটেক, হুয়াই টেকনোলজিস বাংলাদেশ ইত্যাদি কোম্পানিও এই মেলায় অংশ নিয়েছিল। এছাড়াও মেলায় ছিল টেশিস, টেলিটক, কপিরাইট বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ক্যাবল শিল্প সংস্থা ও আইসিটি বিভাগসহ মোট ৭টি সরকারি প্রতিষ্ঠানও তাদের প্রযুক্তি পণ্যসেবার পসরা। প্রাঙ্গণের ‘মিল্কি ওয়ে’-তে ছিল পাওয়ার কুলিং, সার্ভার, ডাটা সেন্টার, নেটওয়ার্ক, ভার্চুয়ালাইজেশন এবং নিরাপত্তায় সব ধরনের তথ্যপ্রযুক্তির সমাধান। এখানেই ছিল ডেল, এইচপি, মাইক্রোল্যাব ছাড়াও রয়েছে অন্য স্পন্সরদের প্যাভিলিয়ন। বেসিস, টেলিটকসহ পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের স্টল ছাড়াও ফ্লোরা লিমিটেড, কমপিউটার সোর্স, স্মার্ট টেকনোলজিস, গ্লোবাল ব্র্যান্ড, ওয়াল্টন প্লাজাসহ ২৫টির বেশি প্যাভিলিয়ন ছিল। একটু সামনে এগিয়ে বাম দিকে গেলেই সাক্ষাত মিলেছে সিম্ফোনি মোবাইলের কার্নিভাল, অনলাইন মার্কেট প্লেস এখনই ডটকম, এনআরবি ব্যাংক লিমিটেড, বিজয় ডিজিটাল, কমপিউটার ভিলেজসহ প্রায় ৩০টি স্টল। এসব স্টলে ছিল ল্যাপটপ, পাওয়ার ব্যাংক, সাউন্ড সিস্টেম, পেনড্রাইভ ও ডাটা ক্যাবল। কার্নিভ্যালের পাশেই ছিল হারমোনিতে র্যাং গস ইলেক্ট্রনিক্স, হুয়াই টেকনোলজি বাংলাদেশসহ পাঁচটি প্যাভিলিয়ন। এছাড়া ডিবি টেকনোলজি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), সাউথ বাংলা কমপিউটারসহ ১৫টির বেশি স্টল। মেলা প্রাঙ্গণের প্রবেশ পথের ডান দিকে টেলিফোন শিল্প সংস্থার স্টলের ‘দোয়েল ল্যাপটপ’-এ ছিল দর্শনার্থীদের আলাদা দৃষ্টি। দোয়েলের অ্যাডভান্সড ১৬১২ আই৩, অ্যাডভান্সড আই৩ বায়ো, অ্যাডভান্সড ১৬১২ আই৫, স্ট্যান্ডার্ড ২৬০৩, অ্যাডভান্সড ই, ক্রমবুক এবং ট্যাব নিয়েও আগ্রহ ছিল দর্শনার্থীদের মধ্যে। একইভাবে ওয়াল্টন, সিম্ফোনি, সিএসএম, বিজয়, ড্যাফোডিল, পারফেক্ট, ফ্লোরা, টুইনমস ইত্যাদি আইটি ব্র্যান্ড আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের ভিড়ে দেশের পতাকা বহন করেছে। ব্যাংকিংয়ে প্রযুক্তির ব্যবহার তুলে ধরে এনআরবি ব্যাংক। ট্যাপ ট্যাপ অ্যান্ট গেম প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল রাইজআপল্যাবস। মেলায় ডেস্কটপ ল্যাপটপ, ট্যাব, প্রিন্টার, মনিটর, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর, ডিজিটাল ক্যামেরা, ফটোকপিয়ার, পাওয়্যার ব্যাংক ইত্যাদি নিত্য ব্যবহার্য ডিজিটাল ডিভাইসের পাশাপাশি মেলায় দর্শনার্থীদের নজর কাড়ে থ্রিডি প্রিন্টার।
থ্রিডি প্রিন্টারের চমক
আইসিটি এক্সপোতে দর্শনার্থীদের চমকিত করে ত্রিমাত্রিক প্রিন্টার। টেবিলের ওপর ফাঁপা বর্গাকৃতির এই প্রিন্টারটি দেখে দর্শনার্থীদের অনেকেই ঠাহর করতে পারছিলেন না ছাপার নামে কিভাবে বস্ত্তর গঠন অনুযায়ী গোটা বস্ত্তটাই তৈরি হয়ে যাচ্ছে। প্রিন্টারের পাশেই টেবিলে দেখা গেলো ত্রিমাত্রিক প্রিন্টিংয়ে ব্যবহৃত বিশেষ ধরনের প্লাস্টিক-রোল। অটোক্যাড, থ্রিডি এস ম্যাক্স কিংবা মায়া ইত্যাদি জনপ্রিয় ও বহুল প্রচলিত সফটওয়্যারে ডিজাইন করা মডেল দিয়েই মূলত থ্রিডি প্রিন্ট করা হচ্ছিল তিন নেতার মাজার, ফুলদানি ও নৌকা থেকে শুরু করে কৃত্রিম হাত ও আইফেল টাওয়ারের মতো কাঠামো। দুই রঙের এই প্রিন্টারের জাদু দেখিয়েই মেলায় দর্শনার্থীদের নজর কাড়ে একেবারেই নবীন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান টেকনোনিডস। তাইওয়ানের দ্য ভিঞ্চি সিরিজের প্রিন্টারের মাধ্যমে স্টলটিতে ত্রিমাত্রিক প্রিন্টিং প্রক্রিয়াও দেখানো হয়। ওয়ানহাও ব্র্যান্ডের ডি৫এস মিনি মডেলের থ্রিডি প্রিন্টার নিয়ে আসে কমপিউটারসিটি টেকনোলজিস। জানা গেলো, তাদের প্রিন্টারটি বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিয়াল মডেল, প্রটোটাইপ মডেল, আর্কিটেকচারাল মডেল কিংবা শৌখিন যেকোনো মডেল প্রিন্ট করতে পারে। পাশাপাশি বড় প্যাভিলিয়নে তাইওয়ানের তৈরি এমবট ব্র্যান্ডের দুটি মডেলের ত্রিমাত্রিক প্রিন্টার, প্রিন্টারগুলোর কার্ট্রিজ ও অন্য যন্ত্রপাতির পসরা সাজায় ইউনিক বিজনেস সিস্টেম। দর্শনার্থীদেরকে বাংলাদেশের মানচিত্র, ছোটদের খেলনা তৈরি করে দেখানো হয় সেখানে। মেলা প্রাঙ্গণের দ্বিতীয় তলায় ত্রিমাত্রিক প্রিন্টারের ব্যবহার সম্পর্কে দর্শনাথীদের বিভিন্ন তথ্য জানান ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সেখানে থ্রিডি স্ক্যানারে হাত দিয়ে নিজের শরীরের থ্রিডি প্রিন্টের ছবি দেখেছেন আনেকেই। থ্রিডি প্রিন্টারে তৈরি বিভিন্ন পণ্য দেখতে মেলা প্রাঙ্গণে ছিল দর্শনার্থীজট।
উদ্ভাবকের মেলায়
আইটি পণ্যের পসরা ও প্রযুক্তি সেবার আয়োজন ছাপিয়ে দর্শনার্থীদের সবচেয়ে ভিড় ছিল মেলা প্রাঙ্গণের দ্বিতীয় তলায়। চলন্ত সিঁড়ি বেয়ে মিডিয়া বুথ অতিক্রম করে সেলিব্রিটি হলের দরজা পেরুতেই গর্বে বুক ভরে গিয়েছিল দেশে উদ্ভাবিত রোবট, ড্রোন নিয়েও মেলায় অংশ নেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও তরুণ প্রযুক্তি উদ্ভাবকদের নানা উদ্ভাবনায়। দর্শনার্থীরা উপভোগ করেছেন মাথার ওপর দিয়ে কোয়াড কোর কপ্টারের শো শো চক্কর, উড়ন্ত ড্রোনের নৈপুণ্য, কৃত্রিম হাত। রোবটের ফুটবল ম্যাচ। ভূমিকম্প হওয়ার আগেই সতর্কবার্তা পাওয়ার উপায়, রোবটের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের গাড়ি পরিচালনা, দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় রোবট পাঠিয়ে তথ্য সংগ্রহ কিংবা অন্ধদের জন্য ব্রেইল প্রিন্টার অথবা চিন্তাশক্তির মাধ্যমেই হুইল চেয়ার নিয়ন্ত্রণ, হোম অটোমেশন সিস্টেম, মেরিন সিকিউরিটি ডিভাইস, মুঠোফোন থেকেই ট্রেনের সিডিউল জানা- ধরনের ৩৬টি উদ্ভাবনী প্রকল্পে উদ্ভাসিত ছিল বাংলাদেশ আইসিটি এক্সপো ২০১৫। তিন দিনব্যাপী এ প্রদর্শনীতে দর্শনার্থীদের আগ্রহের মূল কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল উদ্ভাবন কেন্দ্রটি। নতুন নতুন উদ্ভাবন নিয়ে মেলায় অংশ নিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা চমকে দিয়েছে দর্শনার্থীদের। প্রমাণ দিয়েছে ‘মেইক বাই বাংলাদেশ’ প্রত্যয় নিছক গাল-গপ্পো নয়। আর তরুণদের এমন বৈচিত্র্যময় উদ্ভাবনাকে উজ্জীবিত রাখতে মেলার শেষ দিন পুরস্কৃত করা হয়। ভূমিকম্পের সতর্কবার্তার পদ্ধতি উদ্ভাবন করায় বেসরকারি আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (এআইইউবি) শিক্ষার্থী রায়হানুল হক, সোয়াইব হাসান, আসাদুলস্নাহিল গালিব ও আক্তার সাদাফকে মেলার সেরা উদ্ভাবনা পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। নিজেদের উদ্ভাবনা বিষয়ে দলনেতা রায়াহানুল হক বলেন, আর্থকোয়াক মনিটরিং অ্যান্ড ওয়ার্নিং প্রজেক্টের মাধ্যমে আমরা দূরবর্তী জায়গায় একটি সেন্সর নোট রেখে দেব। আর ঢাকা শহরের মধ্যে একটি ল্যাপটপসহ মনিটরিং রুম থাকবে। ভূমিকম্প শুরু হওয়ার ২০ থেকে ২৫ সেকেন্ড আগে এসএমএসের মাধ্যমে সবাইকে সতর্ক করে দিতে পারবে তাদের এই প্রযুক্তিটি।
গুগল কারের মতোই চালক ছাড়া প্রতিষ্ঠানের গাড়ি পরিচালনার পদ্ধতি উপস্থাপন করে উদ্ভাবনা জোন থেকে দ্বিতীয় হয়েছে বাংলাদেশ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা। এই দলে ছিলেন আবুল আল আরবি ও খালেদ বিন মুঈন উদ্দিন। ‘স্মার্ট অটোমেটেড গাইডেড ভেহিক্যাল প্রজেক্টে’র মাধ্যমে এরা উদ্ভাবন করেন কীভাবে প্রতিষ্ঠানের সব গাড়ি চালক ছাড়া পরিচালনা করা সম্ভব। আবুল আল আরবি জানান, তাদের প্রজেক্টে দেখানো হয়েছে রোবটের মাধ্যমে শিল্প প্রতিষ্ঠানের গাড়ি পরিচালনার পদ্ধতি। সিসি ক্যামেরা থেকে ভিডিও ফুটেজ দেখে কমপিউটারের মাধ্যমে গাড়ির মধ্য থাকা রোবট পরিচালনা করা হবে। আর দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় রোবট পাঠিয়ে তথ্য সংগ্রহের প্রকল্প উপস্থাপন করে মেলায় তৃতীয় হয়েছে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) শিক্ষার্থীরা। এরা প্রদর্শন করেছিল ‘এসএম ১৮০৫’ নামের একটি রোবট। রোবটটির মূল কারিগর মাইনুল হাসান। তার সাথে এই দলে ছিলেন সহপাঠী আমানুল রিয়াদ ও মো. আবির। মাইনুল বলেন, অনেক বড় বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেখান থেকে তথ্য সংগ্রহ করা ঝুঁকিপূর্ণ, সেখানে কাজ করার কথা মাথায় রেখেই এই রোবটটি উদ্ভাবন করা হয়েছে।
খেলায় মগ্ন
প্রবল আক্রমণ আর পাল্টা আক্রমণে প্রতিপক্ষের জালে বল জড়ানোর লড়াইয়ে সরগরম ছিল বাংলা আইসিটি এক্সপো। ফেরারী নিয়ে আঁকাবাঁকা পথ বেয়ে রেসে প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে প্রথম হওয়ার নেশায় কিবোর্ড আর জয়স্টিক নিয়ে চলেছে ধুন্ধুমার লড়াই। আর এই লড়াই দেখতে জটলা লেগেছিল গেমিং জোনে। সেখানে সবাই ছিল সমবয়সী-তরুণ। কেউ শত্রুপক্ষকে ঘায়েলে মগ্ন ছিল কমপিউটারের সামনে, কারও হাতে ছিল মেসি আর রোনালদোর নিয়ন্ত্রণ। স্মার্ট টেকনোলজিসের সৌজন্যে গিগাবাইট আয়োজন করেছিল এই গেম প্রতিযোগিতার। ফিফা, স্ট্রিট ফাইটার৪, কল অব ডিউটি ২ এবং ডটা ২ খেলতে এখানে ছিল টানটান উত্তেজনা। প্রতিযোগিতার অনুষ্ঠান ব্যবস্থাপনায় ছিল অর্পণ কমিউনিকেশন এবং আমব্রেলা ম্যানেজমেন্ট। আমব্রেলা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম বাসিতুল ইসলাম জানিয়েছেন, খেলার ফাইনালে বিজয়ীদের জন্য ছিল ৭০ হাজার টাকার পুরস্কার।
শিশুর তুলিতে আগামী প্রযুক্তি
মেলায় প্রযুক্তির সাথে শিশুদের সখ্যতা গড়ে তুলতে ছিল অঙ্কন প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতায় জলরঙে মনের মাধুরি মিশিয়ে আগামী প্রযুক্তির ডিভাইসের সাথে ছবি এঁকে তাক লাগিয়ে দেয় শিশুরা। সড়কে চলার পাশাপাশি আকাশেও উড়াল দিতে পারে এমন একটি ‘উড়ুক্কু গাড়ি’ একেছিল যানজটে নাকাল ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ছাত্র মারুফ। অন্যদিকে মানুষের মন বুঝতে পারে এমন একটি গেমিং ডিভাইসের কল্পনা এঁকে দেখায় ভিডিও গেমসের পোকা ফারহান। মেলাপ্রাঙ্গণ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের হল অব ফেমের করিডোরের এই আয়োজনে অংশ নিয়েছিল রাজধানীর বিভিন্ন স্কুলের ১৫০ জনেরও বেশি শিক্ষার্থী। প্রতিযোগিতার বিষয় ছিল তোমার ভবিষ্যৎ স্বপ্নের ডিভাইস। বয়সভিত্তিক দুই বিভাগে প্রতিযোগিতাটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে শিশুশ্রেণীতে পড়ুয়া ফয়সাল এঁকেছিল চারটি কর্মী রোবটের ছবি। এগুলো পুলিশ, সেলসম্যান, কারখানার শ্রমিক হিসেবে কাজ করবে বলে জানায় সে। প্রতিযোগিতা শেষে অংশ নেয়া শিশু-কিশোরদের চকলেট খাইয়ে অ্যাপায়ন করা হয়। এরপর দুই ক্যাটাগরিতে বিজয়ীদের হাতে ট্যাব তুলে দেয়া হয়।
সেমিনারে দেশ ও প্রযুক্তি
ডেল, এইচপি, ইলেকট্রোসেভাল, ওয়েস্টার্ন ডিজিটাল, প্রোলিংক, কোনিকা মিনোলটাসহ বিশ্বসেরা প্রযুক্তিপণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান থেকে তথ্যপ্রযুক্তির পথযাত্রায় নির্দেশনা পেতে ১৯ জনসহ প্রায় অর্ধশতাধিক প্রযুক্তিবিদ অংশ নেন ১০টির বেশি কর্মশালায়। বিষয়ভিত্তিক ৩টি সভায় ছিল তারুণ্য আর দেশপ্রেমের জোয়ার। প্রযুক্তিতে ক্যারিয়ারের জাদুর কাঠি নিয়ে মেলায় ছিল সেলিব্রেটি কনফারেন্স। উদ্বোধনী দিনে অনুষ্ঠিত হয় ডিজিটাল ই-হেল্থ এবং আইসিটি ফর বেটার ম্যানেজমেন্ট বিষয়ক কর্মশালা। অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রকৌশলী নাভিদ রহমানের ‘ব্র্যান্ড ইউরসেলফ’ নান্দনিক আড্ডা। যুক্তরাষ্ট্র, চীন, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, ভারতসহ ১১টির বেশি দেশের বিশেষজ্ঞেরা তারুণ্যের ভাবনা উপস্থাপন ও বিনিয়োগ-জাগরণ সৃষ্টিতে থাকছে ‘ভবিষ্যৎ উদ্যোক্তা ফোরাম’ শীর্ষক বিশেষ সম্মেলন। দ্বিতীয় দিন অনুষ্ঠিত হয় ‘ক্লাউড কমপিউটিং : দি ফিউচার’ বিষয়ক কর্মশালা এবং বাংলাদেশ আইসিটি এক্সপোর মূল সুরে উদ্ভাসিত বিশেষ আয়োজন ‘হার্ডওয়্যার: চ্যালেঞ্জস অ্যান্ড ওয়ে ফরওয়ার্ড’ শীর্ষক সভা। বিসিএস সভাপতি মাহফুজুল আরিফের সঞ্চালনায় ‘হার্ডওয়্যার : চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড ওয়ে ফরওয়ার্ড’ শীর্ষক সেমিনারে আলোচনা হয় প্রযুক্তি ভোক্তা থেকে উৎপাদক দেশ হিসেবে নিজেদের অবস্থান সুসংহত করার কৌশল ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে। দেশীয় হার্ডওয়্যার প্রযুক্তি খাতে সম্ভাবনা ও ঝুঁকি নিয়ে সেমিনারে বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সদস্য (মূসক) ফিরোজ শাহ আলম, বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক আশরাফুল ইসলাম এবং আইসিটি সচিব শ্যাম সুন্দর সিকদার। ফ্লোর আলোচনায় অংশ নেনে বিসিএস সাবেক সভাপতি মোস্তাফা জববার, ফায়জুলস্নাহ খান, কমপিউটার সোর্স পরিচালক এইউ খান জুয়েল, গ্লোবাল ব্র্যান্ড চেয়ারম্যান এএসএম আব্দুল ফাত্তাহ, স্মার্ট টেকনোলজি ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম প্রমুখ। সেমিনারে মূলত স্থানীয় আইটি বাজারে বিদ্যমান সমস্যার ওপর আলোকপাত করা হয়। আলোচনায় প্রতিভাত হয় আমদানির চেয়ে দেশে উৎপাদন ও আইটিতে নিজস্ব ব্র্যান্ডিংয়ে এখানে পদে পদে বাধা। স্থানীয় উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা জানান, একইসাথে একাধিক কাজ করতে সক্ষম একটি সেল্যুলার ফোন আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা থাকলেও মাল্টিফাংশনিং প্রিন্টারের জন্য উচ্চকর দিতে হয়। মেমরি মডিউল-র্যা ম, হার্ডডিস্ক, মেমরি কার্ড, কালি, টোনার, মানিটর ইত্যাদি আইটি পণ্যে রয়েছে একই ধরনের বৈসাদৃশ্য। একই সাথে উঠে আসে উৎপাদিত পণ্য এবং আমদানী করা পণ্যের খরচের বৈষম্য, অনিয়মিত পথে ওয়ারেন্টিবিহীন আমদানিপণ্যের স্থানীয় ‘গ্রে’ মার্কেটের প্রসঙ্গ। আইটি কমপোনেন্ট আমদানিতে সংখ্যা ও পরিমাণগত ধূম্রজাল। আলোচিত হয় বৈশ্বিক বাজারে আইটি হার্ডওয়্যারের উৎপাদন ও বাজারজাত করার পদ্ধতি এবং বাংলাদেশের স্থানীয় বাজারের আকৃতি ও প্রকৃতি বিবেচনায় বাংলাদেশে আইসিটি হার্ডওয়্যার উৎপাদন বা সংযোজনের সম্ভাবনা নিয়ে। এসময় সরকারি এবং বেসরকারি হার্ডওয়্যার শিল্পের কর্মপদ্ধতি পুনঃনির্ধারণের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। আলোচনা প্রসঙ্গে বিসিএস এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ রেগুলেটরি কর্তৃপক্ষের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগের ওপর কর দেন। মেলায় অনুষ্ঠিত হয় আইটি পেশায় নিজেকে ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠার গোপন সূত্র নিয়ে সুলাইমান সুখনের ‘হাউ টু গেট নোটিস’ শীর্ষক প্রযুক্তি আড্ডা। এছাড়া পাওয়ার ব্যাকআপ সলিউশন, ফিউচার টেকেনালজিস, ট্রান্সফরমিং এডুকেশন টু ডিজিটাল বিষয়ক সেমিনার এবং দেশীয় মার্কেট প্লেস বিল্যান্সারের আয়োজনে ফ্রিল্যান্সার লোকাল মার্কেটপ্লেস : পসিবিলিটিজ অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস র্শীষক প্রযুক্তি আড্ডাতে মুখর ছিল প্রথম বাংলাদেশ আইসিটি এক্সপো।
তরুণ প্রজন্ম চিনলো দেশের প্রথম কমপিউটার প্রোগ্রামার
তিন দিনের বাংলাদেশ আইসিটি এক্সপোর সবচেয় বড় চমক ছিল মেলার শেষ দিন। এদিন তরুণ প্রজন্ম চিনলো যার হাত ধরে আজ সুচিত হচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশের পথচালা। তিনি হলেন বাংলাদেশের প্রথম কমপিউটার অপারেটর মো: হানিফ উদ্দীন মিয়া। আইসিটি এক্সপোর সমাপনী অনুষ্ঠানে মরণোত্তর সম্মাননা দেয়া হয় তাকে। মো: হানিফ উদ্দীন মিয়ার পক্ষে পদক গ্রহণ করেন তার স্ত্রী, পুত্র শরীফ হাসান সুজন এবং নাতি ইরফান। এই গুণী ব্যক্তির পরিবারের কাছে সম্মাননা হস্তান্তর করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইমরান আহমদ, বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিলের সভাপতি এএইচএম মাহফুজুল আরিফ, আইসিটি বিভাগের সচিব শ্যাম সুন্দর সিকদার, তথ্য ও প্রযুক্তিবিদ মোস্তাফা জববার প্রমুখ।
মেলার আয়োজন সম্পর্কে বিসিএস সভাপতি এএইচএম মাহফুজুল আরিফ বলেন, প্রস্ফুটিত দেশীয় প্রযুক্তি শিল্পের টেকসই উন্নয়ন ও সম্ভাবনার প্রতিচিত্র তুলে ধরতেই আমরা এবার ভিন্নমাত্রায় আয়োজন করে ‘বাংলাদেশ আইসিটি এক্সপো ২০১৫’। দেশের প্রযুক্তি খাতকে নতুন মাত্রা দিতে এই আয়োজনে আমরা তুলে ধরতে চেয়েছি ভোক্তার কাতার থেকে উৎপাদক হয়ে নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে রফতানির মাধ্যমে জিডিপিতে অবদান রাখতে আমরা প্রতি প্রাণে সঞ্চারিত করার চেষ্টা করেছি ‘মেইক বাই বাংলাদেশ’ আহবান। দেশের হার্ডওয়্যার খাতকে চাঙ্গা করতে আমরা এই মেলার মাধ্যমে সবাইকে এক প্লাটফর্মে সমবেত করার প্রয়াস পেয়েছি। উৎপাদক দেশ হিসেবে প্রস্ত্তত হওয়ার যে স্বপ্ন আমরা দীর্ঘদিন ধরে মনে মনে বুনে চলছিলাম এই মেলা তার একটি রূপ দিয়েছে। আর এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য আমাদের সবাইকে এখন হাতে হাত, কাঁধে কাঁধ রেখে কাজ করতে হবে। সূর্যাসেত্মর আগেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে দৌড় দিতে হবে।
আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমদ পলক বলেন, এই মেলা থেকে আমরা প্রমাণ দিতে পেরেছি- আমরা শ্রমিক নই, প্রযুক্তিনির্ভর জাতি। বাংলাদেশকে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ জনবলের কোনো বিকল্প নেই। আর এই দক্ষ জনবল তৈরিতে এবার আমরা দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে আইসিটি ল্যাব প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছি। ২০২১ সালের মধ্যে জনগণকে ডিজিটাল বাংলাদেশ উপহার দেয়ার পাশাপাশি বিশ্বকেও একটি বড় বার্তা দিতে চায় সরকার। আর এজন্য তথ্যপ্রযুক্তি খাতের এক হাজার পণ্যের তালিকা করা হবে, যেটি কোনো না কোনোভাবে এ দেশের সন্তানেরা তৈরি, সংযোজন বা ডেভেলপ করেছে। পরে এই পণ্যের তালিকা বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরা হবে। আশা করি অল্প দিনের মধ্যেই বাংলাদেশ আমদানিকারক থেকে রফতানিকারকের তালিকায় নিজেদের নাম লেখাতে পারবে। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনে সরকার সব ধরনের সহযোগিতা দেবে। বাংলাদেশ আইসিটি এক্সপো তারই প্রাথমিক উদ্যোগ