• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > গুগল দেখা ও গুগল বাংলাদেশের অবদানের স্বীকৃতি
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: মোহাম্মদ জাবেদ মোর্শেদ চৌধুরী
মোট লেখা:৫১
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৫ - জুলাই
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
গুগল
তথ্যসূত্র:
রির্পোট
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
গুগল দেখা ও গুগল বাংলাদেশের অবদানের স্বীকৃতি
ভুলটা ভাঙল স্যান হোসেতে গিয়ে। ওখানে পৌঁছানোর আগে সবাইকে বলছিলাম, যাচ্ছি গুগলে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রানসিসকোর পাশে ছোট শহর স্যান হোসের মাউন্টেন ভিউতে। স্যান হোসেতে পৌঁছে জানলাম, এ তো বিরাট শহর, সানফ্রানসিসকোর চেয়েও বড়। আর মাউন্টেন ভিউ আলাদা শহর। ছোট কিন্তু এখানে বেড়ে ওঠে দুনিয়া জয় করেছে গুগল, মজিলা, লিঙ্কড-ইন, হোয়াটসঅ্যাপের মতো প্রতিষ্ঠান। ছয় দশক আগে সিলিকন সেমিকন্ডাক্টর তৈরি করে ছোট এই শহর পরিচিত হয়ে ওঠে বড় এক ডাক নামে- সিলিকন ভ্যালি। পৃথিবীর শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগ সানফ্রানসিসকো-স্যান হোসে-মাউন্টেন ভিউ আর আশপাশের ক্যালিফোর্নিয়ার বে-এরিয়া নিয়েই সিলিকন ভ্যালি- তথ্যপ্রযুক্তি দুনিয়ার রাজধানী। পথে বেরোলেই কোনো না কোনো পরিচিত তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের বড় বড় ক্যাম্পাস; পা বাড়ালেই ক্যালিফোর্নিয়া বে-এরিয়ার সিলিকন ভ্যালিতে গুগল, ইন্টেল, ইবে, আইবিএম, সিসকো, অ্যাডোবি, ফেসবুক আর টুইটার।
সবুজে প্রযুক্তির ঝলকানি
সিলিকন ভ্যালিতে আমাদের প্রথম গন্তব্য মাউন্টেন ভিউয়ে গুগলের প্রধান কার্যালয়। যেতে যেতে পরিচিত সব বিশ্বসেরা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের নামফলকে চোখ আটকে যায়। একেকটা ভবন একেকরকম। তখনও অপেক্ষা গুগল দেখার। গুগলের লোগোসহ কাচঘেরা ভবনটি খুঁজছিলাম। এর মধ্যে আমাদের গাইড বললেন, ‘আমরা গুগল ক্যাম্পাসে চলে এসেছি।’ চারপাশে ছোট-বড় অনেক ভবন, কই সেই ভবন তো দেখছি না! কোথাও গুগল লেখাও নেই! খেয়াল করে দেখলাম সড়কের দুই পাশে গুগলের নামফলক, অনেকটা জায়গাজুড়ে। তার মানে এই পুরো এলাকা গুগলের! সেই ভবন পেলাম। এটি গুগলের প্রধান ভবন, গুগলপ্লেক্স। আর পুরো এলাকায় আরও অনেকগুলো ভবন।
হাঁটতে হাঁটতে মিলল চালকহীন গাড়ি ঘুরছে স্ট্রিটভিউয়ের ক্যামেরাসহ। পুরো ক্যাম্পাসে অসংখ্য বাইসাইকেল। লাল-হলুদ-সবুজ-নীলে গুগলের এই বাইসাইকেলগুলো গুগলারদের যাতায়াতের জন্য। অ্যান্ড্রয়িড লনে পার্কের মধ্যে ছড়িয়ে আছে অ্যান্ড্রয়িড আর ফ্রয়ো থেকে ললিপপ পর্যন্ত এর সবগুলো সংস্করণের প্রতীক।
চোখ ধাঁধানো আইও
২৮ ও ২৯ মে প্রযুক্তিবিশ্বের চোখ ছিল সানফ্রানসিসকোর মোসকোনে সম্মেলন কেন্দ্রে। এখানেই গুগলের সবচেয়ে বড় বার্ষিক ডেভেলপার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এখান থেকেই ঘোষণা আসে আগামী দিনে কী প্রযুক্তিসেবা বা পণ্য নিয়ে আসছে প্রযুক্তিবিশ্বের প্রভাবশালী এই প্রতিষ্ঠানটি। প্রযুক্তিগত চমকের ছড়াছড়ি তো ছিলই, মুগ্ধ করেছে অনুষ্ঠান আয়োজনের ব্যাপকতা প্রযুক্তির সহায়তায় একটি অনুষ্ঠানকে কোন জায়গায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব, তারই একটি গোছানো প্রদর্শনীতে চোখ আটকে গেল সম্মেলন কেন্দ্রের ভেতরে ঢুকেই। বিরাট হলের তিন দিকের দেয়ালের পুরোটা জুড়ে এক পর্দায় কী না করেছে ওরা। ৬০০ ফুটের পর্দায় কখনও পিংপং খেলা হচ্ছে, কখনও বা কোনো তথ্যচিত্র। চোখ পর্দার এক মাথা থেকে দৌড়াচ্ছে আরেক পর্দায়। চোখ ধাঁধানো আজব এক রঙ্গমঞ্চ।
এবার এলো ঘোষণা। গুগল তাদের মোবাইল অপারেটিং সিস্টেমের নতুন সংস্করণ অ্যান্ড্রয়িড এম বাজারে আনার ঘোষণা দিয়েছে আইও-এ। সেই সাথে আসছে আলাদা লেনদেন ব্যবস্থা অ্যান্ড্রয়িড ক্যাশ, ছবি ও ভিডিও ব্যবস্থাপনার নতুন সেবা গুগল ফটোস, গৃহস্থালি পণ্যের জন্য আলাদা অপারেটিং সিস্টেম, কার্ডবোর্ডের নতুন সংস্করণ, অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট টুলসহ বেশ কিছু নতুন পণ্য।
সেকাল-একালের যুগলবন্দি
সানফ্রানসিসকো ঐতিহ্যবাহী শহর। এখানে শত বছরের পুরনো কেলস্না কার (কলকাতার ট্রামের মতো) চলছে আগের মতোই। নিজেদের নির্মাণশৈলীর গর্ব নিয়ে মাথা উঁচু করে আছে প্রায় শত বছরের গোল্ডেন গেট ব্রিজ। পুরনো ভবনগুলো এ শহরে যেন আগের মতোই চকচকে। পুরনো ঐতিহ্যকে আগলে রেখেই গত চার দশকে এই শহর রূপ নিয়েছে আধুনিকতম প্রযুক্তির আরেক আবাসস্থলে। নতুন-পুরনোর এক অদ্ভুত সহাবস্থানে যেন পুরো সিলিকন ভ্যালির চিত্রটা একই রকম।
গুগল আই/ও রিক্যাপ
গুগল সম্মেলন হয়ে যাওয়ার পর গুগল কমিউনিটি ম্যানেজারদের দায়িত্ব থাকে গুগল আইওতে দেখে আসা বা গুগল যেসব প্রযুক্তির ঘোষণা দিল তা নিজ নিজ দেশে গিয়ে তাদের কমিউনিটিকে জানানো ও সে সম্পর্কে ট্রেনিং দেয়া। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৩ জুন ঢাকায় কৃষিবিদ অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের গুগল আই/ও রিক্যাপ। এতে প্রায় ১০০০ প্রযুক্তিপ্রেমী অংশ নেন। এছাড়া দেশের আরও ৬টি বিভাগীয় শহরে এই আয়োজন করা হয়
জিডিজি সম্মেলন ও বাংলাদেশের স্বীকৃতি
গুগল ক্যাম্পাসে ২৬ ও ২৭ মে গুগল ডেভেলপারস গ্রুপের (ডিডিজি) বৈশ্বিক সম্মেলনে বাংলাদেশ থেকে অংশ নিয়েছিলাম পাঁচজনের একটি দল। জিডিজি সোনারগাঁওয়ের ব্যবস্থাপক আশ্রাফ আবির, জিডিজি ঢাকা থেকে আরিফ নেজামি, উইমেন টেকমেকারের ফারাহ নাজিফা, জিডিজি বাংলার ব্যবস্থাপক হিসেবে জাবেদ সুলতান ও আমি। জিডিজি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় গুগল ক্যাম্পাসের পাশেই কমপিউটার হিস্ট্রি মিউজিয়ামে। এটা কমপিউটারের ইতিহাসসমৃদ্ধ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সংগ্রহশালা। চার্লস ব্যাবেজের প্রথম যান্ত্রিক কমপিউটার থেকে শুরু করে গুগলের স্ট্রিটভিউ কার- সবই আছে। জিডিজি সম্মেলনের নির্ধারিত প্রথম আলোচনায় বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করা হয়।
গুগল অনুবাদে মাতৃভাষার জন্য সবচেয়ে বেশি অবদান রেখে নজির সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশ। ইন্টারনেটে নিজের ভাষাকে সমৃদ্ধ করতে বাংলাদেশের এই উদাহরণ থেকে সারা পৃথিবীর শেখার আছে বলে জানান গুগল ট্রান্সলেট কমিউনিটির প্রোগ্রাম ম্যানেজার সিভটা কালম্যান। তিনি গুগল অনুবাদে বাংলাদেশের অবদানের স্বীকৃতি জানিয়ে প্রশংসা করেন। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালির মাউন্টেন ভিউয়ে গুগল ক্যাম্পাসের কমপিউটার হিস্ট্রি মিউজিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় দু’দিনের গুগল ডেভেলপারস গ্রুপ বা জিডিজি গ্লোবাল সামিট। এ সম্মেলনের নির্ধারিত প্রথম আলোচনায় বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করা হয়। এতে গুগল অনুবাদে বাংলাভাষাকে সমৃদ্ধ করতে গত ২৬ মার্চ সারাদেশে জিডিজি বাংলার আয়োজনে বাংলার জন্য চার লাখ কর্মসূচির বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়, ওইদিন বাংলার জন্য অনুবাদের সংখ্যা ছিল সাত লাখের বেশি। সেই সাথে ৫ জুনের মধ্যে বাংলাদেশের এ রেকর্ড ভাঙতে পারলে বিশেষ পুরস্কারের ঘোষণা দেয়া হয়। আর এ নজিরবিহীন অবদানের জন্য বিশেষভাবে প্রশংসিত হয় বাংলাদেশ। জিডিজি সম্মেলনে এ বছর ১০০টির বেশি দেশ থেকে প্রায় ৪০০ জিডিজি কমিউনিটি ম্যানেজার অংশ নেন। বাংলাদেশ থেকে জিডিজি বাংলার দুই কমিউনিটি ম্যানেজার জাবেদ সুলতান পিয়াস এবং এই লেখকসহ মোট পাঁচজন অংশ নেন জিডিজির সবচেয়ে বড় এ আয়োজনে। সম্মেলনের প্রথম দিনে গুগল ট্রান্সলেট কমিউনিটি ছাড়াও গুগল ডেভেলপার এক্সপার্ট প্রোগ্রাম, গুগল এডুকেশন প্রোগ্রাম, গিটবুক, কনটেন্ট ডেভেলপমেন্ট, গুগল লঞ্চপ্যাডনসহ গুগলের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ কিছু প্লাটফরম নিয়ে আলোচনা করা হয়। সবার জন্য ছিল পারস্পরিক যোগাযোগের বিশেষ কর্মশালা। সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন গুগলের বিভিন্ন প্রযুক্তি নিয়ে ২৬টি বিষয়ের ওপর আলোচনা হয়।
ফিডব্যাক : jabedmorshed@yahoo.com
লেখক : গুগল ডেভেলপারস গ্রুপ বাংলার কমিউনিটি ম্যানেজার

পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০১৫ - জুলাই সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস