ক্রোম ওয়েব স্টোর গুগলের নতুন একটি সেবা যেখানে ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপাররা তাদের তৈরি করা ওয়েব অ্যাপসগুলো সংরক্ষণ, বিনামূল্যে অন্যকে ব্যবহার করতে দেয়া এবং বিক্রিও করতে পারবেন। গত বছরের শেষের দিকে অর্থাৎ ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এটি বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করা হয় যা ক্রোম অ্যাপস ডেভেলপারদের জন্য এক নতুন দ্বার উন্মুক্ত করে।
গুগল সম্পর্কে আশা করি কাউকে পরিচয় করিয়ে দেয়ার দরকার নেই। তবে এর এমন অনেক নতুন সেবা আছে যা জানার দরকার আছে। গুগলের বেশিরভাগ সেবা সবার জন্য উন্মুক্ত এবং যা বিনামূল্যে ব্যবহার করা যায়। ওয়েব ব্রাউজারের জগতে নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করতে ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে গুগল ক্রোম ব্রাউজার নিয়ে আসে। বিনামূল্যে ব্যবহারযোগ্য এই ওয়েব ব্রাউজারটি মাত্র দুই বছরের মধ্যে জনপ্রিয়তার দিক থেকে বর্তমানে তৃতীয় অবস্থানে উপনীত হয়েছে। এছাড়াও অপারেটিং সিস্টেমের জগতে যথারীতি বিপ্লব সূচিত হয় গুগলের ক্রোম ওএস ঘোষণার মধ্য দিয়ে। যদিও এখন পর্যন্ত এর ইউজার ভার্সন সীমিত কিছু ল্যাপটপে ব্যবহার করা ছাড়াও গুগলের ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করে নিতে পারেন বিনামূল্যে, যা ডেস্কটপ কমপিউটারেও ব্যবহার করা সম্ভব। এছাড়াও গুগলের মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম Android বাজারে আসার পর প্রতিযোগীরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে।
সম্প্রতি গুগলের যে পণ্যটি নিয়ে বিশেষ আলোচনা হচ্ছে তা হলো ক্রোম ওয়েব স্টোর। প্রথমদিকে এই সেবাটি সীমিতভাবে ব্যবহার করা যেত। কিন্তু ৭ ডিসেম্বর ২০১০ থেকে এটি উন্মুক্ত করার পর থেকে ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপাররা ক্রোম স্টোর বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করার সুযোগ পান। একই সাথে তাদের ক্রোমভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশনগুলো স্টোরে সংরক্ষণ করে রাখতেও পারেন। গুগল ক্রোম অপারেটিং সিস্টেম ও ক্রোম ব্রাউজার ব্যহবহারকারীরা এই অ্যাপসগুলো চেক আউটের সাহায্যে কিনে বা বিনামূল্যে ব্যবহার করতে পারবেন http://chrome.google.com/webstore ঠিকানা থেকে ।
একথা নিশ্চিত করে বলা যায়, ক্রোম ওয়েব স্টোর হচ্ছে ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনের জন্য প্রথম ওয়েব সংরক্ষণাগার। Google I/O তথা গুগলের বার্ষিক ইনোভেশন ইন দ্য ওপেন কনফারেন্স ২০১০-এ প্রথম ক্রোম ওয়েব স্টোর কথা উল্লেখ করা হয়। এর পর Cologne-এ অনুষ্ঠিত ইউরোপিয়ান গেম ডেভেলপার ডে-তে গুগলের এক সিনিয়র কর্মকর্তা অনানুষ্ঠানিকভাবে ধারণা দেন এবং বলেন, ক্রোম ওয়েব স্টোর অক্টোবরে উন্মুক্ত করা হতে পারে। এসময় আরো যেসব বিষয়ে তথ্য জানানো হয় তার মধ্যে লেনদেনের পদ্ধতিতে নিরাপত্তা, প্রতিবার লেনদেনের সময়ে কী পরিমাণ কমিশন নেয়া হবে এবং প্রতিবারে কমপক্ষে কত লেনদেন করতে হবে। ডেভেলপারদের কাছে দেয়া তথ্য অনুসারে একথা জানা যায়, প্রতিবার লেনদেনের সময় ৫% কমিশন নেয়া হবে এবং লেনদেনের পরিমাণ হবে কমপক্ষে ১.৯৯ ডলার। অবশেষে ৭ ডিসেম্বর ২০১০-এ ক্রোম ওয়েব স্টোর উন্মুক্ত করা হয় শুধু আমেরিকান ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপারদের জন্য এবং ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১১ থেকে এর চূড়ান্ত সংস্করণ সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়। তবে ১৯ আগস্ট ২০১০ থেকে ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপারদের সীমিতভাবে উন্মূক্ত করা হয়। এর ফলে তারা অ্যাপস সংরক্ষণ করা ও লেনদেনের পদ্ধতিটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সুযোগ পান।
গুগলের এক উর্ধতন কর্মকর্তা Vic Gundotra বলেন, মোবাইলভিত্তিক অ্যাপসের তুলনায় মানসম্মত ওয়েবভিত্তিক অ্যাপস খুঁজে পাওয়া অত্যন্ত কঠিন। আর ক্রোম ওয়েব স্টোর এই সমস্যা সমাধানের দিকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। এটি এমন একটি প্লাটফরম যেখান থেকে ব্যবহারকারীরা বিভিন্ন অ্যাপস সম্পর্কে রিভিউ ও মতামত দেখে মানসম্মত ওয়েব অ্যাপস বেছে নিতে সমর্থ হবেন। গুগলের হিসেব মতে, এর জনপ্রিয় ক্রোম ব্যবহারকারীদের সংখ্যা ৭০ মিলিয়ন। আর অ্যাপস ডেভেলপাররা এই বিপুল সংখ্যক ব্যবহারকারীকে খুব সহজেই তাদের অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহারে অভ্যস্ত করতে সক্ষম হবেন। Android App Market মতো এটিও হবে একটি উন্মূক্ত কেনাকাটার জায়গা, আর যেখানে বিক্রি হবে ওয়েব অ্যাপস। অন্যান্য অ্যাপস মার্কেটের মতো এখানে ডেভেলপাররা অনলাইনের এই ওয়েব স্টোরের সাহায্যে অ্যাপস বিক্রি করতে পারবেন, তবে এক্ষেত্রে ব্যবহার হবে গুগলের সিকিউর পেমেন্ট সিস্টেম। এছাড়াও ডেভেলপার ও পাবলিশাররা যাতে প্রচলিত নিয়মে অর্থ উপার্জন করতে পারেন সেসব সুযোগ রাখা হচ্ছে।
বিভিন্ন মাধ্যম থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে এ বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে, ক্রোম ওয়েব স্টোর গুগলের নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেমসহ মোটামুটিভাবে সবধরনের অপারেটিং যেমন- উইন্ডোজ, ম্যাক ও লিনআক্সে চালানো যাবে। তবে একথা সত্য, ক্রোম ওয়েব স্টোর শুধু গুগল ক্রোম ব্রাউজারই সাপোর্ট করবে। এর আরো গুরুত্বপূর্ণ দিকের মধ্যে রয়েছে ভাষার ব্যবহার। অ্যাপসগুলোর ফ্রি ও পেইড ভার্সন ৪০টি ভাষা সাপোর্ট করবে, যা ৭০টি দেশের মানুষ কোনোরকম সমস্যা ছাড়াই ব্যবহার করতে পারবেন। একই সাথে গুগল একে একটি মানসম্মত অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার কথা বিশেষভাবে চিন্তা করছে। যদিও এটি এখন পর্যন্ত ক্রোম ব্রাউজারই সাপোর্ট করে, কিন্তু ভবিষ্যতে যেনো এটি আধুনিক সব ব্রাউজারেও ব্যবহার করা যায় তার জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
এখন কথা উঠতে পারে, সাধারণ মানুষ কেনো ক্রোম ওয়েব স্টোর ব্যবহার করবেন? এর সহজ উত্তর হতে পারে ভবিষ্যতে সাধারণ ব্যবহারকারীর একটা বড় অংশ ক্রোম অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করবে। আর অপারেটিং সিস্টেমের বেশিরভাগ অ্যাপস থাকবে অনলাইনে। তার কোনোটি পাওয়া যাবে বিনামূল্যে আর বেশিরভাগ পাওয়া যাবে ১ ডলারেরও কম মূল্যে।
গুগল যেমন তার পণ্যের জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে এবং এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়াতে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছে, তেমনি অন্য প্রতিষ্ঠান তাদের অবস্থান শক্ত করার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেবে এটি স্বাভাবিক। একথা শোনা যাচ্ছে, গুগল ক্রোম ব্রাউজারের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী মজিলা তাদের অ্যাপস-ভান্ডার শক্তিশালী করা ও এর জনপ্রিয়তা ধরে রাখার জন্য এখন থেকে চিন্তাভাবনা করছে।
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : animesh@letbd.com