লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
সাইক্লিক নাম্বার
সাইক্লিক নাম্বারের সংজ্ঞায় যাওয়ার আগে বিষয়টি বোঝার জন্য সাইক্লিক নাম্বারের একটি উদাহরণ নিয়ে আলোচনা করাই ভালো। এ উদাহরণে আমরা দেখব সাইক্লিক নাম্বারের মধ্যে লুকিয়ে আছে গণিতের এক মজার সম্পর্ক। প্রথমেই আমরা একটি বিশেষ সাইক্লিক নাম্বার নিয়ে কাজ শুরু করব। এই নাম্বারটি হলো ১৪২৮৫৭। এটি একটি ছয় অঙ্কের সাইক্লিক নাম্বার। কেনো একে বলা হয় একটি সাইক্লিক নাম্বার, তা নিচের আলোচনা থেকেই স্পষ্ট হবে।
এই ১৪২৮৫৭ সংখ্যাটিকে ১৩ দিয়ে গুণ করলে গুণফল পাই ১৪২৮৫৭ *১৩ = ১৮৫৭১৪১। এই গুণফল ১৮৫৭১৪১-এর প্রথম অঙ্কটি নিয়ে তৈরি সংখ্যা ১ এবং শেষ ছয় অঙ্ক নিয়ে তৈরি সংখ্যা ৮৫৭১৪১ এক সাথে যোগ করলে যোগফল হয় ১ + ৮৫৭১৪১ = ৮৫৭১৪২। মজার ব্যাপার হলো, এই যোগফলটি শুরুতেই নেয়া সাইক্লিক নাম্বার ১৪২৮৫৭-এর বাম দিকের তিনটি অঙ্ক তুলে নিয়ে একদম ডান দিকে বসিয়ে দিয়ে তৈরি করা ছয় অঙ্কের একটি নতুন সংখ্যা। এখানে শুরুতেই আমরা ১৪২৮৫৭ সংখ্যাটি নিয়ে কিছু গাণিতিক কাজ সম্পাদন করে সবশেষে পেয়েছি ৮৫৭১৪২ সংখ্যাটি, যেখানে মূল সংখ্যাটির প্রথম তিনটি অঙ্ক চক্রক্রমে বা সাইক্লিক অর্ডারে স্থান বদল করে সৃষ্টি করেছে নতুন সংখ্যা ৮৫৭১৪২। তাই ১৪২৮৫৭ একটি সাইক্লিক নাম্বার বা চক্রক্রমিক সংখ্যা।
শুরুতে নেয়া সাইক্লিক নাম্বার ১৪২৮৫৭-কে ১৮ দিয়ে গুণ করে পাই ১৪২৮৫৭ * ১৮ = ২৫৭১৪২৬। এই গুণফলের প্রথম অঙ্কটি নিয়ে গঠিত সংখ্যা ২ ও শেষ ছয় অঙ্ক নিয়ে গঠিত সংখ্যা ৫৭১৪২৬ এক সাথে যোগ করে পাই ৫৭১৪২৮, যা শুরুতে নেয়া সাইক্লিক সংখ্যা ১৪২৮৫৭-এর একটি চক্র ক্রমিক অঙ্ক পাতনের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে।
আবার ১৪২৮৫৭ সাইক্লিক নাম্বারটিকে ১১২ দিয়ে গুণ করলে আমরা পাই ১৫৯৯৯৯৮৪ (১৪২৮৫৭ * ১১২ = ১৫৯৯৯৯৮৪)। এই গুণফলের প্রথম দুটি অঙ্ক নিয়ে তৈরি সংখ্যা ১৫ ও শেষ ছয়টি অঙ্ক নিয়ে তৈরি সংখ্যা ৯৯৯৯৮৪ এক সাথে যোগ করলে পাই একটি মজার সংখ্যা ৯৯৯৯৯৯। এই সংখ্যাটিতে এক ধরনের একটি বিশেষ চক্রক্রম কাজ করে। কারণ, এর অঙ্কগুলো ধারাবাহিকভাবে যেভাবেই ওলট-পালট করি না কেনো, তাতে কোনো পরিবর্তন নেই।
এবার নিচের গুণফলগুলো লক্ষ করা যাক :
১৪২৮৫৭ * ১ = ১৪২৮৫৭
১৪২৮৫৭ * ২ = ২৮৫৭১৪
১৪২৮৫৭ * ৩ = ৪২৮৫৭১
১৪২৮৫৭ * ৪ = ৫৭১৪২৮
১৪২৮৫৭ * ৫ = ৭১৪২৮৫
১৪২৮৫৭ * ৬ = ৮৫৭১৪২
১৪২৮৫৭ * ৭ = ৯৯৯৯৯৯
এই গুণফলগুলোর অঙ্কগুলোকেও কোনো না ধরনের চক্রক্রমে বা সাইক্লিক অর্ডারে বসিয়ে তৈরি করা হয়েছে। সেজন্যই ১৪২৮৫৭-কে আমরা বলি একটি চক্রক্রমিক সংখ্যা বা সাইক্লিক নাম্বার।
তাহলে সাইক্লিক নাম্বারকে আমরা সংজ্ঞায়িত করতে পারি এভাবে : যে সংখ্যা নিয়ে এর ওপর নানা ধরনের গাণিতিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে এমন একটি নতুন সংখ্যা পাওয়া যায়, যেখানে নতুন সংখ্যাটির অঙ্কগুলো প্রথমে নেয়া সংখ্যার অঙ্কগুলো একটি সুনির্দিষ্ট চক্রক্রমে বা সাইক্লিক অর্ডারে থাকে।
আমরা আরও কয়েকটি সাইক্লিক নাম্বার নিয়ে এখানে আলোচনা করব। এ আলোচনা থেকে সাইক্লিক নাম্বারের বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে। যেমন, ০৫৮৮২৩৫২৯৪১১৭৬৪৭ একটি সাইক্লিক নাম্বার। এ সংখ্যাটিকে সাত দিয়ে গুণ করলে আমরা গুণফল পাই ৪১১৭৬৪৭০৫৮৮২৩৫২৯। লক্ষ করি, এই গুণফলটি আসলে এখানে নেয়া সাইক্লিক নাম্বার ০৫৮৮২৩৫২৯৪১১৭৬৪৭-এর বাম দিকের নয়টি অঙ্ক তুলে নিয়ে ডান দিকে বসিয়ে তৈরি করা হয়েছে। অন্য কথায় বলা যায়, এখানে নেয়া সাইক্লিক নাম্বার ০৫৮৮২৩৫২৯৪১১৭৬৪৭-কে ৭ দিয়ে গুণ করলে যে গুণফল পাওয়া যায় তা ওই সংখ্যার অঙ্কগুলোর একটি চক্রক্রম মেনে চলে। অতএব ০৫৮৮২৩৫৮৪১১৭৬৪৭ একটি সাইক্লিক নাম্বার।
আবার লক্ষ করি, ০৫৮৮২৩৫২৯৪১১৭৬৪৭ * ২৯ = ১৭০৫৮৮২৩৫২৯৪১১৭৬৩।
এবার এই গুণফলের প্রথম অঙ্ক নিয়ে তৈরি সংখ্যা ১ এবং শেষ ষোলটি অঙ্ক নিয়ে তৈরি সংখ্যা ৭০৫৮৮২৩৬২৯৪১১৭৬৩ এক সাথে যোগ করলে পাই ৭০৫৮৮২৩৫২৯৪১১৭৬৪। আর এই যোগফল আসলে এখানে সতের অঙ্কের সাইক্লিক নাম্বারের একদম ডানের অঙ্কটি শুধু তুলে এনে একদম বামে বসিয়ে দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। বাকি অঙ্কগুলোতে কোনো স্থান পরিবর্তন নেই। এই উদাহরণ আমাদের জানিয়ে দেয়, সাইক্লিক নাম্বার কী ধরনের সম্পর্ক উপস্থাপন করে।
এখানেই শেষ নয়। সাইক্লিক নাম্বারের আরও অনেক মজা আছে। আমরা জানি,
১/৭ = ০.১৪২৮৫৭১৪২৮৫৭১৪২৮৫৭১৪২৮৫৭...
অতএব ১০/৭ = ১.৪২৮৫৭১৪২৮৫৭১৪২৮৫৭১৪২৮৫৭...
কিন্তু ১ + ৩/৭ = ১০/৭
অতএব ৩/৭ = ০.৪২৮৫৭১৪২৮৫৭১৪২৮৫৭১৪২৮৫৭...
অতএব ৩০/৭ = ৪.২৮৫৭১৪২৮৫৭১৪২৮৫৭১৪২৮৫৭...
৪ +২/৭ = ৩০/৭
অতএব ২/৭ = ০.২৮৫৭১৪২৮৫৭১৪২৮৫৭১৪২৮৫৭...
এখানে ১/৭, ২/৭, ৩/৭-এর মান দশমিক নাম্বারে প্রকাশ করলে আমরা দেখি, ১/প্রাইম = ০.সাইক্লিক নাম্বার সাইক্লিক নাম্বার সাইক্লিক নাম্বার...
এখন প্রশ্ন হচ্ছে সাইক্লিক নাম্বার আমরা কী করে পাব?
গণিতবিদেরা সাইক্লিক নাম্বার বের করার একটি সরল সূত্র দিয়েছেন। তাদের সূত্র মতে,
সাইক্লিক নাম্বার = (১০c-১-১)/c, যেখানে প হচ্ছে একটি প্রাইম নাম্বার বা মৌলিক সংখ্যা (যে সংখ্যাকে ১ এবং ওই সংখ্যা ছাড়া আর কোনো সংখ্যা দিয়ে নিঃশেষে ভাগ করা যায় না)।
আমরা জানি ৭ একটি প্রাইম নাম্বার। ওপরে উল্লিখিত সাইক্লিক নাম্বার সূত্রে প্রাইম নাম্বার প-এর স্থানে ৭ বসিয়ে আমরা পাই,
সাইক্লিক নাম্বার = (১০৭-১ -১)/৭
= ( ১০৬ - ১)/৭
= (১০০০০০০ -১)/৭
= ৯৯৯৯৯৯/৭
= ১৪২৮৫৭
আর এই সাইক্লিক নাম্বারটি নিয়েই আমারা এ আলোচনা শুরু করেছিলাম।
আবার আমরা এও জানি ৩ একটি প্রাইম নাম্বার। তাহলে সাইক্লিক নাম্বারের সূত্রে c-এর স্থানে ৩ বসিয়ে পাই,
সাইক্লিক নাম্বার = (১০৩-১ -১)/৩
= (১০২ -১)/৩
= (১০০-১)/৩
= ৩৩
সূত্রমতে ৩৩ একটি সাইক্লিক নাম্বার। কিন্তু এই ৩৩ কোনো সাইক্লিক নাম্বার নয়। অতএব ১৪২৮৫৭-ই প্রথম সাইক্লিক নাম্বার, যার রয়েছে ছয়টি অঙ্ক।
আমরা জানি আমাদের রয়েছে অসংখ্য প্রাইম নাম্বার : ৩, ৭, ১৩, ১৯, ২৩, ৪৭, ৫৯, ৬১, ৯৭, ১০৯, ১১৩, ১৩১, ১৪৯, ১৬৭, ১৮১, ১৯৩, ২২৩, ২২৯, ২৩৩,২৫৭, ১৬৩, ...
কিন্তু সবগুলো প্রাইম নাম্বার ওপরের সাইক্লিক নাম্বার বের করার সূত্র মেনে চলে না। মাত্র ৩৭.৩৯৫ শতাংশ প্রাইম নাম্বার ওপরের সূত্র থেকে সাইক্লিক নাম্বার বের করতে সাহায্য করবে।
আমরা জেনেছি, প্রথম সাইক্লিক নাম্বার ১৪২৮৫৭।
আমাদের কয়েকটি সাইক্লিক নাম্বার হচ্ছে :
১৪২৮৫৭ (ছয় অঙ্কের)
০৫৮৮২৩৫২৯৪১১৭৬৪৭ (ষোল অঙ্কের)
০৫২৬৩১৫৭৮৯৪৭৩৬৮৪২১ (আটার অঙ্কের)
০৪৩৪৭৮২৬০৮৬৯৫৬৫২১৭৩৯১৩ (বাইশ অঙ্কের)
০৩৪৪৮২৭৫৮৬২০৬৮৯৬৫৫১৭২৪১৩৭৯৩১ (আটাশ অঙ্কের)
০২১২৭৬৫৯৫৭৫৫৬৮০৮৫১০৬৩৮২৯৭৮৭২৩৪০৪২৫৫৩১৯১৪৮৯৩৬১৭ (ছেচল্লিশ অঙ্কের)
সবশেষে, প্রথম সাইক্লিক নাম্বার ১৪২৮৫৭-এর আরও কিছু মজার সম্পর্ক উল্লেখ করে এ লেখা শেষ করতে চাই। নিচের গাণিতিক প্রক্রিয়া থেকেই মজার বিষয়গুলো সহজে বোঝা যবে।
১৪২৮৫৭ * ১১২ = ১৫৯৯৯৯৮৪
১৫ + ৯৯৯৯৮৪ = ৯৯৯৯৯৯
আবার ১৪২৮৫৭ থেকে পাই ১৪ + ২৮ + ৫৭ = ৯৯
১৪২ + ৮৫৭ = ৯৯৯
এবং (৮৫৭)২ - (১৪২)২ = ৭৪১২৮৫।