লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম:
আহমেদ ওয়াহিদ মাসুদ
মোট লেখা:৯৮
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৫ - সেপ্টেম্বর
ইলাস্ট্র্যাটরের নতুন ফিচার সিসি-২০১৫
অ্যাডোবি ইলাস্ট্র্যাটর দিয়ে মূলত ড্রয়িংয়ের কাজ করা হয়। এছাড়া এখানে কিছু ফটো এডিটের কাজও করা যায়, তবে সাধারণ এডিটের জন্য আসলে ইলাস্ট্র্যাটর এখন ব্যবহার করা হয় না। সত্যি বলতে এখানে এডিটিং ফিচার রাখা হয়েছে, কারণ ড্রয়িংয়ের জন্য কখনও কখনও এডিটিংয়ের প্রয়োজন হয়। এ লেখায় ইলাস্ট্র্যাটরের সবশেষ সিসি ভার্সনের নতুন সুবিধা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
ক্রিয়েটিভ ক্লাউডের লিঙ্কড অ্যাসেট : অ্যাডোবির পণ্যের নতুন ভার্সনের নাম সিসি, যার পুরো নাম ক্রিয়েটিভ ক্লাউড। এর অনেকগুলো সুবিধার মধ্যে একটি হলো ক্রিয়েটিভ ক্লাউডের লাইব্রেরির গ্রাফিক্স এখন লিঙ্ক করা হয়েছে। অর্থাৎ এই লাইব্রেরিতে কোনো পরিবর্তন হলে ইউজার এবং তার টিম মেম্বার সবার ইলাস্ট্র্যাটরে তা আপডেট করার সুবিধা থাকবে। এটি শুধু ইলাস্ট্র্যাটরের জন্যই নয়, বরং যেকোনো সিসি পণ্যের (যেখানে এই লাইব্রেরি ব্যবহার হয়, যেমন ফটোশপ অথবা ইনডিজাইন) জন্য প্রযোজ্য। সুতরাং যেকোনো পণ্য সবসময় আপডেটেড অবস্থায় থাকবে।
অ্যাডোবি স্টক : অ্যাডোবি স্টকের মাধ্যমে ইউজার সরাসরি ইলাস্ট্র্যাটরের ভেতর থেকে অসংখ্য হাই কোয়ালিটি ছবি কিনতে অথবা দেখতে পারবেন। চাইলে সরাসরি ক্রিয়েটিভ ক্লাউড লাইব্রেরিতে তা সরাসরি সেভ করা যাবে। ইচ্ছে করলে যেকোনো ছবি লাইসেন্সও করা যাবে। এছাড়া ছবি শেয়ার করার সুবিধাও রাখা হয়েছে।
দ্রুত জুম, প্যান, স্ক্রল করা : এখন আগের থেকে ১০ গুণ দ্রুততর গতিতে জুম, প্যান অথবা স্ক্রল করা যাবে। কারণ এখানে সরাসরি কমপিউটারের গ্রাফিক্স কার্ডের এক্সেলারেশন ব্যবহার করা হয়। এছাড়া জুম এখন এনিমেটেড। ইউজার চাইলে জুম টুল সিলেক্ট করে কোথাও ক্লিক করলে ডায়নামিক জুম হবে। কথা হলো আগের চেয়ে আরও ১০ গুণ বেশি জুম করা যাবে। এখন সর্বোচ্চ ৬৪০০ শতাংশ পর্যন্ত।
সেফ মোড : নতুন ভার্সনে সেফ মোড নামে একটি মোড দেয়া হয়েছে, যার কাজ প্রোগ্রামে যদি কোনো ফেটাল এরর থাকে অথবা প্রোগ্রাম যদি কোনোভাবে ক্র্যাশ করার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে ইউজার এই সেফ মোডের মাধ্যমে প্রোগ্রাম চালাতে সক্ষম হবেন (চিত্র-১)। এছাড়া ইউজার এই মোডে চাইলে ডায়াগোনাস করতে পারেন প্রোগ্রামের কোথায় কী সমস্যা হয়েছে সেটি বের করার জন্য।
সেগমেন্ট এডিটিং আপডেট : পাথ এডিটিংয়ের ক্ষেত্রে আরও একটি আপডেট আনা হয়েছে। আগের ভার্সনগুলোতে পাথ এডিট করা নিতান্তই কষ্টসাধ্য একটি ব্যাপার ছিল। যদিও কিবোর্ড শর্টকাট ব্যবহার করে তা কিছুটা সহজে করা যেত। তবে এবারের নতুন ভার্সনে বিভিন্ন টুলে ভিন্ন ভিন্নভাবে এডিটিংয়ের সুযোগ রাখা হয়েছে।
প্রথমে পেন টুল দিয়ে শুরু করা যাক। পেন টুল দিয়ে অাঁকার সময় মডিফায়ার কী প্রেস করে এবং আগে ব্যবহার করা সিলেকশন টুলে সিলেক্ট করার মাধ্যমে আগের অাঁকা কোনো সেগমেন্টকে রিশেপ করা যায়। এখন পেন টুল সিলেক্ট করা অবস্থায় পয়েন্টারটিকে কোনো সিলেক্টেড পাথ সেগমেন্টের ওপর রেখে Alt বাটন চাপলে রিশেপ সেগমেন্ট কার্সর আসবে (চিত্র-২)। এ সময় ড্র্যাগ করার মাধ্যমে সহজেই সেগমেন্ট রিশেপ করা যাবে এবং Shift বাটন চাপলে হ্যান্ডেলগুলো পারপেন্ডিকুলার ডিরেকশনে চলে যাবে।
এই নতুন পদ্ধতিগুলো অ্যাঙ্কর পয়েন্ট টুলের জন্যও প্রযোজ্য। যারা পুরনো ইলাস্ট্র্যাটর ইউজার তাদের কাছে অ্যাঙ্কর পয়েন্ট টুলটি নতুন লাগতে পারে। আসলে আগের ‘কনভার্ট অ্যাঙ্কর পয়েন্ট’ টুলটিই এখন অ্যাঙ্কর পয়েন্ট টুল।
কোনো পাথ অাঁকার পর এখন তা ডিরেক্ট সিলেকশন টুলের মাধ্যমে এডিট করা যাবে। এখন পয়েন্টারকে কোনো সিলেক্টেড পাথ সেগমেন্টের ওপর পয়েন্ট করলে রিশেপ সেগমেন্ট কার্সর চলে আসবে, যদি না পাথটি স্ট্রেট সেগমেন্ট না হয় (চিত্র-৩)। এভাবে সেগমেন্টটি ফ্রি ফর্ম হিসেবে ড্র্যাগ করা যাবে, অর্থাৎ কোনো নির্দিষ্ট অ্যাঙ্গেলে সীমাবদ্ধ থাকবে না। তবে ড্র্যাগ শুরু করার পর ইউজার যদি তা পারপেন্ডিকুলার করতে চায় অর্থাৎ ৯০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে সীমাবদ্ধ করতে চায়, তাহলে Shift বাটন চাপলেই হবে। আর রিশেপ পাথ সেগমেন্টের কাজ এখন টাচ ডিভাইসেও করা যাবে।
ক্রিয়েটিভ ক্লাউড চার্ট : ক্রিয়েটিভ ক্লাউড এবারে বেশ কিছু চার্ট টেমপ্লেটের ব্যবস্থা করেছে। চিত্র-৪-এ কিছু উদাহরণ দেয়া হলো। ডিফল্ট চার্ট এলিমেন্টকে রিপ্লেস করে ইলাস্ট্র্যাটরের কাস্টম ইনফোগ্রাফিক্স, চার্টস, গ্রাফ ইত্যাদি ব্যবহার করা যাবে। ব্রাউজারভিত্তিক ইন্টারফেসের মাধ্যমে বিভিন্ন ফাইল যেমন .csv, .xls, .xlsx ইত্যাদি থেকে সহজেই চার্টের তথ্য ইম্পোর্ট করা যাবে।
শেপ কর্নার এডিটিং আপডেট : নতুন ইলাস্ট্র্যাটরের উল্লেখযোগ্য আপডেটের মাঝে একটি হলো কর্নার অ্যাডিশন, যার মাধ্যমে কোনো পাথের কর্নার অ্যাঙ্কর পয়েন্টকে তিনভাবে রিশেপ করা যায়। যেমন- রাউন্ডেড, ইনভার্টেড রাউন্ডেড এবং চ্যামফার। ফলে কোনো রেক্ট্যাঙ্গেলের কর্নারে আর আলাদাভাবে রাউন্ড ইফেক্ট দেয়ার প্রয়োজন পড়ে না। যেকোনো শেপ অাঁকার পর তা সিলেক্ট করা অবস্থায় ডিরেক্ট সিলেকশন টুল সিলেক্ট করে পয়েন্টারটিকে শেপটির উপরে রাখতে হবে। যেকোনো একটি উইজেটকে ড্র্যাগ করে শেপের কেন্দ্রের দিকে টেনে আনতে হবে। এভাবে কর্নারকে টেনে আনলে নতুন শেপ লাল কালারের একটি পাথ দিয়ে দেখানো হবে এবং একটি কর্নারকে টেনে আনলে বাকি কর্নারগুলোও নিজে থেকে সরে আসবে। যেকোনো কর্নার উইজেটের ওপর ডাবল ক্লিক করলে কর্নার অপশনের ডায়ালগ বক্স ওপেন হবে, যেখান থেকে ইউজার বিভিন্ন অপশন সিলেক্ট করার মাধ্যমে কর্নারে বিভিন্ন ইফেক্ট অ্যাপ্লাই করতে পারবে। কর্নার উইজেটের ওপর Alt বাটন চেপে ক্লিক করলে বিভিন্ন ইফেক্ট একের পর এক সাইকেল করবে। এক বা একাধিক পাথের ওপর ইফেক্ট দেয়া সম্ভব। এছাড়া কন্ট্রোল প্যানেলে কর্নার লিঙ্কে ক্লিক করে কর্নার রেডিয়াস পরিবর্তন করা যাবে। কোনো ইফেক্ট রিমুভ করার জন্য হয় কর্নার রেডিয়াস শূন্যতে (০) সেট করতে হবে অথবা সেটিকে ড্র্যাগ কওে আগের অবস্থানে নিয়ে যেতে হবে।
জিপিউ পারফরম্যান্স আপগ্রেড : ২০১৫ সালের সিসি রিলিজের মাধ্যমে এখন গ্রাফিক্স কার্ডের ক্ষমতাকে আরও ভালোভাবে ব্যবহার করা যাবে। গ্রাফিক্স কার্ড বা জিপিউ সরাসরি হার্ডওয়্যার অ্যাক্সেলারেশনের মাধ্যমে বিভিন্ন ইফেক্টের অ্যানিমেশন সরাসরি হার্ডওয়্যার নিয়ন্ত্রণ করবে। এজন্য অ্যাডোবি থেকে হার্ডওয়্যার সাপোর্টের জন্য আপডেটও রিলিজ করা হবে। এছাড়া ম্যাক কমপিউটারের জন্যও এখন থেকে এই সাপোর্ট দেয়া হবে।
যতই দিন যাচ্ছে, সফটওয়্যারগুলো ততই আধুনিক হচ্ছে। অ্যাডোবির নতুন সিসি ভার্সনে তাই এবার উল্লেখযোগ্য সব ফিচার যোগ করা হয়েছে। এখানে হার্ডওয়্যার ইন্টিগ্রেশন অবশ্যই উল্লেখযোগ্য। এতে করে ইউজারের জন্য সফটওয়্যারটি যেমন ব্যবহার করা সহজ হয়েছে, তেমনি সফটওয়্যারের স্পিডও আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে
ফিডব্যাক : wahid_cseaust@yahoo.com