লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম:
কাজী সাঈদা মমতাজ
মোট লেখা:১৮
লেখা সম্পর্কিত
সওজের ই-জিপি
ই-জিপি সিস্টেমটি সরকারের ক্রয়কারী সংস্থা (পিএ) এবং ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানগুলোর (পিই) ক্রয়কাজ সম্পাদনের জন্য একটি অনলাইন প্লাটফর্ম। এটি একমাত্র ওয়েব পোর্টাল, যেখান থেকে যার মাধ্যমে ক্রয়কারী সংস্থা এবং ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানগুলো নিরাপদ ওয়েব ড্যাশবোর্ডের মাধ্যমে ক্রয় সংক্রান্ত কার্যাবলী সম্পাদন করতে পারে। বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় বাস্তবায়নাধীন ‘পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রিফর্ম প্রজেক্ট-২’-এর আওতায় ই-জিপি সিস্টেম সিপিটিইউতে স্থাপিত ডাটা সেন্টারে হোস্ট করা হয়েছে। ইন্টারনেট ব্যবহার করে সরকারের ক্রয়কারী সংস্থা এবং ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান ই-জিপি ওয়েব পোর্টালে প্রবেশ করতে পারে।
ই-জিপি ধীরে ধীরে সরকারের সব প্রতিষ্ঠানে ব্যবহার হবে। তাই এর মাধ্যমে সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ায় দরদাতাদের অবাধ অংশগ্রহণ ও সমসুযোগ সৃষ্টি হবে এবং ক্রয় প্রক্রিয়ায় দক্ষতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে।
ই-জিপি অর্থাৎ ইলেকট্রনিক গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট বাংলাদেশে চারটি দফতর যেমন- সড়ক ও জনপথ, এলজিইডি, বিআরইবি, বিডবিস্নউডিবিসহ চারটি প্রতিষ্ঠানে ই-জিপি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এর মধ্যে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর ৫০ কোটি টাকা পর্যন্ত সব দরপত্র ই-জিপির মাধ্যমে আহবান করছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরে দেখা যায় মোট ৩০৪৪টি দরপত্র ই-জিপির মাধ্যমে আহবান করা হয়েছে। ই-জিপি পোর্টালে গিয়ে e-tender ক্লিক করে Advanced Search ক্লিক করে কতকগুলো দরপত্র NOA দেয়া হয়েছে এবং কোন কোন টেন্ডার বাতিল হয়েছে এবং কোনটি Re-tender হবে তা জানতে পারি। নিচে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৩০৪৪টি টেন্ডার আহবান করা হয়েছে এবং ২৩৪৬টি পুরস্কৃত, ৫৮টি বাতিল, ২৬৩টি পুনঃদরপত্র, ২৬টি বাতিল হয়েছে গ্রাফ থেকে পাওয়া যায়।
উক্ত সংখ্যাকে যদি এভাবে দেখতে চাই, শতকরা কতগুলো দরপত্র বাতিল হলো বা কতগুলো রি-টেন্ডার হবে তা পাইচার্টের মাধ্যমে নিম্নে দেখা যেতে পারে।
আমরা চিত্র দেখে খুব সহজেই বলতে পারি, শতকরা কত শতাংশ দরপত্র Cancel/Re-tender/Reject হয়েছে। বাতিল হওয়া দরপত্রের সংখ্যা নগণ্য। এখানে বিডারদের তথ্যও আছে। সড়ক ও জনপথ অধিদফতরে ৫০ কোটি টাকা পর্যন্ত সব দরপত্র ই-টেন্ডার করা হয়।
ই-জিপি কেন দরকার
০১. দরপত্র প্রথমেই Annual Procurement Plan (APP) হিসেবে ওয়েব পোর্টালে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অ্যাপ দেখে ঠিকাদার ঠিক করতে পারবে সে এই দরপত্রে অংশ নেবে কি না। যদি করে তবে সে প্রস্ত্ততি নেয়ার সময় পাবে। ০২. দরপত্রগুলো সবার জন্য উন্মুক্ত। যেকেউ অংশ নিতে পারবে। ০৩. স্বচ্ছতা বিদ্যমান। ০৪. রাজনৈতিক হয়রানি থেকে মুক্ত থাকা যায়। ০৫. স্বচ্ছ প্রতিযোগিতা। ০৬. সময় ও অর্থ সাশ্রয়।
ই-জিপি পোর্টালের কারণেই আমরা এক নজরে যেকোনো তথ্য যেকোনোভাবেই পেতে পারি আর এটাই ই-জিপির সুফল। এই তথ্যগুলো কখনই সাধারণ মানুষ জানতে পারত না, যা কি না ই-জিপির কল্যাণে জানতে পারছে।
যেকোনো দরপত্র সম্পর্কে সম্পূর্ণ জানতে Procurement Nature-এর ওপর ক্লিক করলে Details Notice দেখতে পাওয়া যায় এবং সেই অনুযায়ী ঠিকাদার দরপত্রে অংশ নিতে পারবে। আবার যদি জানতে চায়, এ বছর কি কি দরপত্র ই-জিপির মাধ্যমে আহবান করা হবে, তবে Home Page এবং Annual Procurement Plan-এ ক্লিক করলে দেখা যাবে কোন কোন সময় কি কি দরপত্র কোন কোন সংস্থা আহবান করবে এবং সেই অনুযায়ী ঠিকাদার প্রস্ত্ততি নিতে পারবে। আবার ই-জিপি কী এটা জানতে হলে Home Page-G About e-GP-তে ক্লিক করতে হবে। কোন কোন ব্যাংক ই-জিপিতে Enlisted সেটা জানতে হলে Home Page Reports-এ ক্লিক করতে হবে এবং তখন Registered Bank-এর লিস্ট পওয়া যাবে এবং Brach-এর ওপর ক্লিক করলে ওই ব্যাংকের Registered Bank-এর লিস্ট ঠিকানাসহ পাওয়া যাবে এবং পছন্দমতো ব্যাংক ব্যবহার করা যাবে।
আবার কোন কোন সংস্থার কোন কোন অফিস ই-জিপিতে Enlisted জানতে চাইলে Home Page Reports-এ ক্লিক করে Registration Details-এর অধীনে Registered Ministry-তে ক্লিক করলে জানা যাবে।
আবার কেউ e-Contract কতগুলো হয়েছে জানতে চাইলে e-Contracts – Advanch Serch – Then Select office – Serch যেমন- RHD-তে ৩০ জুন ২০১৫ পর্যন্ত ৪৮৯২টি দরপত্র ই-জিপিতে করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৮৫৫টি NOA দেয়া হয়ে গেছে এবং কোন কোন ঠিকাদার পেয়েছে তাও জানা যেতে পারে। কেউ যদি ই-জিপিতে কীভাবে Registration করবে জানতে চায় Home Page-এ Registration Flow Chart ক্লিক করে জানতে পারে এবং কেউ বাংলা/ইংরেজি যে মাধ্যমেই জানতে চাইবে সবই পাওয়া যাবে।
দরপত্রদাতাদের রেজিস্ট্রেশন
ই-জিপি পোর্টালে নতুন সদস্য হিসেবে রেজিস্ট্রেশনের আগে দরপত্রদাতা, পরামর্শক এবং অন্যান্য সম্ভাব্য ব্যবহারকারীরা নিম্নোক্ত বিষয়গুলো লক্ষ করা প্রয়োজন।
০১. বাংলাদেশ সরকারের ই-জিপি পোর্টাল রেজিস্ট্রেশনের আগে একটি বৈধ ই-মেইল আইডি থাকতে হবে।
০২. রেজিস্ট্রেশনের সময় আপলোডের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টগুলোর রেজিস্ট্রেশনের ধরন অনুযায়ী সব স্ক্যান কপি কমপিউটারে সংরক্ষিত থাকতে হবে।
০৩. কমপিউটারে সিপিটিইউ কর্তৃক পরীক্ষিত যেকোনো একটি ব্রাউজার (যেমন- Internet Explorer 8.x, Internet Explorer 9.x and Mozila Firefox 3.6x) ইনস্টল করা থাকতে হবে।
রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ায় জাতীয় দরপত্রদাতা/পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের যেসব ডকুমেন্টস আপলোড করতে হবে :
* কোম্পানি ইনকর্পোরেশন সনদ কোম্পানির ক্ষেত্রে অথবা রেজিস্টেশন ডকুমেন্ট ফটোকিপ ১টি।
* ট্রেড লাইসেন্স ফটোকিপ ১টি; বৈধ করদাতা শনাক্তকরণ নম্বরের (TIN) সনদ ফটোকপি ১টি।
* মূল্য সংযোজন কর সংক্রান্ত (VAT) সনদ ফটোকপি ১টি।
* কোম্পানি অ্যাডমিনের জন্য কোম্পানির মালিক থেকে অনুমতিপত্র (অথরাইজড লেটার) ফটোকপি ১টি।
* অথরাইজড অ্যাডমিনের জাতীয় পরিচয়পত্র ফটোকপি ১টি।
* অথরাইজড অ্যাডমিনের ১ কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি।
* ই-জিপি রেজিস্ট্রেশন ফির জমা রসিদ।
প্রথমবার যখন ঠিকাদার Registration করবে, তখন ব্যাংকে ৫ হাজার টাকা জমা দিতে হবে। এরপর প্রতি বছরের জন্য ২ হাজার টাকা দিয়ে নবায়ন করতে হবে। ঠিকাদার Home Page থেকে Annual Procurement Program থেকে জানতে পারে কোন কোন প্রতিষ্ঠানে কি কি দরপত্র আহবান করবে। সাধারণত একজন ঠিকাদার বা যেকেউ যেকোনো দরপত্র ওয়েবসাইট থেকে দেখতে পারবে, কিন্তু শুধু যেসব ঠিকাদার ব্যাংক টেন্ডার ডকুমেন্ট কেনার টাকা জমা দেবে তারাই শুধু দরপত্রের ডকুমেন্ট ডাউনলোড করতে পারবে। Closing date-এর আগের দিন দরপত্র অনলাইনে জমা দেয়া ভালো, কারণ শেষ দিন Server Problem হতে পারে, বিদ্যুৎ নাও থাকতে পারে, আবার Internet Problem হতে পারে, সেজন্য একদিন আগে দরপত্র জমা দেয়া উচিত। অনলাইনে যেকোনো স্থান থেকে যেকোনো সময় দরপত্র সেন্ড করা যায়।
যেহেতু দরপত্রগুলো অনলাইনে, সেজন্য দরপত্র এক ঘণ্টার মধ্যেই ওপেন করতে হবে। এক ঘণ্টার মধ্যে ওপেন না করলে পুনরায় HOPE-এর অনুমতি নিয়ে Opening time extension করতে হবে। সুতরাং Opening যথাসময়ে করতে হবে। আগেই Opening Member-দের User ID পরীক্ষা করে দেখতে হবে যে, ID/Password ঠিক আছে কি না। অন্যথায় অনেক সময় দেখা যায় ID Lock হয়ে গেছে এবং Password Verification করতে হচ্ছে, তখন Opening Time শেষ হয়ে যেতে পারে। সেজন্য আগেই ID/Password চেক করে রাখতে হবে।
ই-টেন্ডার প্রক্রিয়া একটি অনলাইন টেন্ডার প্রক্রিয়া। এই পদ্ধতির মাধ্যমে টেন্ডার ডকুমেন্ট ক্রয় থেকে শুরু করে কন্ট্রাক্ট অ্যাওয়ার্ড সব কাজ অনলাইনে করা হয়। এখানে কোনো রকম হার্ডকপি ব্যবহার হয় না।
এই পদ্ধতিতে PE একটি কমন শব্দ। PE অর্থাৎ Procuring Entity যে কর্মকর্তা দরপত্র আহবান করেন তাকে PE বলা হয়। প্রতিটি সংস্থার একজন করে Organization Admin থাকে এবং এই Organization Admin-এর কাজ Hierarchi (অর্থাৎ যে Office Tender তৈরি করবে) তৈরি করে দেয়া এবং PE Admin তৈরি করা PE Admin-এর দায়িত্ব হবে PE তৈরি করা এবং TEC/PEC, TOC/POC user, Authorized user etc. তৈরি করা Authorized user PE-কে সাহায্য করবে, কিন্তু তার কোনো দরপত্র আহবান বা পাবলিশের অথরিটি থাকবে না। Organization Admin-এর আরও একটি কাজ হচ্ছে প্রকল্প তৈরি করে দেয়া এবং AO (Approving Authority) Creat করা এবং মনে করি, আমরা একটি দরপত্র আহবান করব, তাহলে প্রথমে আমাদেরকে APP (Annual Procurement Plan) তৈরি করতে হবে। এখন প্রশ্ন অচচ কেন। APP তৈরি করে ওয়েবে পাবলিশ করলে বিডার দেখতে পাবে কখন কোথায় কী দরপত্র আহবান করা হবে। তা দেখে ঠিকাদার প্রস্ত্ততি নিতে পারবে। টেন্ডার তৈরি করতে হলে প্রথমে ঠিক করতে হবে দরপত্রটি Development না Revenue। Development হলে Organization Admin-কে প্রজেক্টটি তৈরি করে দিতে হবে।
মনে রাখতে হবে, ই-জিপিতে Password তিনবার হিট করলে লক হয়ে যায়। সুতরাং যেকোনো আইডিতে পরপর দুইবার Password Mismatch হলে Password Reset করতে হবে। Password Change করার নিয়ম নিম্নাঝপ : প্রথমে Click Forgot Password লিখে ওই বক্সে যে আইডি লক হয়েছে সেটা লিখতে হবে। তখন আমাদেরকে এন্টার কী চাপতে হবে। তখন আমরা Screen-এ দেখতে পাব Verification mail has to be Sent to your mail। আমাদেরকে Parent mail-এ যেতে হবে এবং সেখানের Command অনুযায়ী আইডির লক খুলতে হবে। এজন্য ই-জিপির আইডি একটি Valid e-mail হতে হবে। @-এর আগে এবং পরে কিছু থাকলেই ই-মেইল বলে কমপিউটার ধরে নেয়। সে ক্ষেত্রে লক হয়ে গেলে Valid না হলে লক খোলার প্রশ্ন আসে না।
যেকোনো ব্যক্তি যদি Home Page-এ থেকে নির্দিষ্ট কোনো সংস্থার কতগুলো দরপত্র আহবান করা হয়েছে তা দেখতে চায়, তবে Home Page-এ Tender-এর ওপর ক্লিক করলে সব সংস্থার দরপত্র একসাথে দেখা যাবে, কিন্তু কোনো সংস্থার নির্দিষ্ট তারিখের দরপত্র দেখতে চাইলে Advanced Search-এ ক্লিক করতে হবে। এরপর মন্ত্রণালয় সিলেক্ট করে সংস্থার ওপর ক্লিক করলে ওই সংস্থা দেখাবে। এরপর যে তারিখের দরপত্র দেখতে চান, সেই তারিখ সিলেক্ট করলে দরপত্র দেখাবে। এখানে যেসব দরপত্র ওপেন করা হয়নি, সেগুলো খরাব দেখাবে। আর যেগুলো ওপেন হয়েছে কিন্তু মূল্যায়ন চলছে, সেগুলো Being Process দেখাবে এবং যেগুলো Contract award হয়েছে, সেগুলো awarded দেখাবে এবং award-এর পরে Archive-এ চলে যাবে এবং all command দিলে Live, Being Process, awarded, archive সব দরপত্র একসাথে দেখা যাবে। এভাবে সাধারণ জনগণ Home Page থেকে ই-জিপির দরপত্র সংক্রান্ত সাধারণ তথ্য পেতে পারে। আর Annual Procurement Plan থেকে জানতে পারা যাবে কখন কোন সংস্থা কী ধরনের দরপত্র আহবান করবে এবং সেভাবে একজন ঠিকাদার প্রস্ত্ততি নিতে পারবে। কাজ করার মধ্যে কিছুক্ষণ যদি কীবোর্ডে হাত না থাকে, তাহলে আবার কাজ করতে গেলে Session Expired go to login page দেখবে। তখন আমাদেরকে Go to login page-এ ক্লিক করতে হবে এবং আবার লগঅন হতে হবে। সিকিউরিটির উদ্দেশ্যে এই পদ্ধতি করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, Password Lock হয়ে গেলে লক ওপেন করার পর Password Change Successfully command Show করবে, তখন আমাদেরকে Refresh button অর্থাৎ F5 Key Press করতে হবে। কারণ Cash-এ আগের Password থেকে যায় এবং নতুন Password দিলে আবার লক হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। বিষয়গুলো যথেষ্ট সতর্কতার সাথে কার্যকর করতে হবে। সবই ঘরে বসে ক্লিক করে জানা যাবে। কোথাও যেতে হবে না। আর এটাই ই-জিপির সুফল