লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
‘কমপিউটারসহ প্রযুক্তিপণ্যে ভ্যাট প্রত্যাহার যুগান্তকারী পদক্ষেপ’
প্রযুক্তিপণ্য বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান বাইনারি লজিক প্রায় দেড় দশক ধরে দেশের প্রযুক্তি বাজারে ব্যবসায় করে আসছে। প্রতিষ্ঠান শুরুর কথা, বিশেষত্ব, কাস্টমার সার্ভিস, দেশের প্রযুক্তি বাজারের সম্ভাবনা নিয়ে কমপিউটার জগৎ-এর সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে কথা বলেছেন বাইনারি লজিকের সিইও মনসুর আহমেদ চৌধুরী। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সোহেল রানা।
প্রশ্ন : আপনার প্রতিষ্ঠান শুরুর কথা জানতে চাই?
মুক্ত : প্রথম দিকে আমরা ডিজিটাল প্লাস্টিক আইডি কার্ডের কাজ করতাম। এই কাজ করতে গিয়ে এক সময় দেখলাম এর সাথে কমপিউটার পেরিফেরাল বা অনেক ডিভাইস জড়িত। তখন আমরা এসব পণ্য বিক্রির পরিকল্পনা করি এবং ২০০২ সালে আমরা বাইনারি লজিক প্রতিষ্ঠানটি শুরু করি। প্রথম দিকে আমরা ইন্টেলের পণ্য দিয়ে শুরু করেছিলাম। বর্তমানে অনেকগুলো ব্র্যান্ডের পণ্য নিয়ে কাজ করছি।
প্রশ্ন : বর্তমানে কোন কোন ব্র্যান্ডের পণ্য নিয়ে ব্যবসায় করছেন?
মুক্ত : আমরা পিওএস (পয়েন্ট অব সেল), পিসি, লাইসেন্স সফটওয়্যার এবং সার্ভার সলিউশন নিয়ে ব্যবসায় করছি। ২০০৪ সালে আমরা বাংলাদেশ কমপিউটার সমিতির সদস্যপদ লাভ করি। দেশে নেটওয়ার্ক সলিউশন প্রোভাইডার হিসেবে খ্যাতি অর্জন করা আমাদের অন্যতম লক্ষ্য। বাইনারি লজিক বর্তমানে ইন্টেল, মাইক্রোসফট, অ্যাডোবি, ভিএমওয়্যার, জি স্কিল, ডেল, লিডটেক, কালার মাস্টার, ইন-উইন, মটোরোলা, পসিফ্লেক্স এবং হানিওয়েলের পণ্য নিয়ে ব্যবসায় করছে। বাইনারি লজিক ২০০৮ সালে ইন্টেলের প্লাটিনাম প্রোভাইডার হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।
প্রশ্ন : আপনাদের কাস্টমার সার্ভিস নিয়ে কিছু বলুন?
মুক্ত : কাস্টমার সার্ভিস নিয়ে আমাদের আলাদা বিভাগ আছে। ঢাকার তালতলা এবং আইডিবিতে আমাদের সার্ভিস সেন্টার আছে। আমাদের বিক্রি করা পণ্যে কোনো সমস্যা হলে ক্রেতাদের আমরা দ্রুততার সাথে সার্ভিস করিয়ে দিই। বিক্রি-পরবর্তী মানসম্পন্ন সেবা নিয়ে আমরা কোনো আপস করি না। আশা করি, ক্রেতারা আমাদের সার্ভিস নিয়ে সন্তুষ্ট। হার্ডওয়্যারে কোনো ধরনের সমস্যা হলে সার্ভিস করাতে তিন দিনের বেশি সময় লাগে না।
প্রশ্ন : বর্তমানে আপনার প্রতিষ্ঠানের কয়টি শাখা এবং অদূর ভবিষ্যতে শাখা বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে?
মুক্ত : বর্তমানে আমাদের পাঁচটি শাখা আছে। এর সবই ঢাকায়। ভবিষ্যতে দেশের বড় বড় শহরে বাইনারি লজিকের শাখা খোলার ইচ্ছে আছে।
প্রশ্ন : বাইনারি লজিক বর্তমানে কোন ধরনের পণ্য নিয়ে বেশি ব্যবসায় করছে?
মুক্ত : আমরা এখন গেমিংসহ হাই পারফরম্যান্স পিসি নিয়ে বেশি ব্যবসায় করছি। বিশ্বব্যাপী দিন দিন গেমিং, বিগ ডাটা প্রসেস, গ্রাফিক্স ইত্যাদি উঁচুমানের কাজের পরিধি বাড়ছে। হাই পারফরম্যান্স পিসির বাজার সারা দুনিয়াতেই বড় হচ্ছে। তাই এসব দিকে আমাদের নজর বেশি। যেখানে হাই পারফরম্যান্স পিসির প্রয়োজন, সেখানে কাস্টোমাইজেশন প্রয়োজন। ক্রেতাদের পছন্দমতো প্রসেসর, গ্রাফিক্স কার্ড, পাওয়ার সাপ্লাইসহ অন্যান্য পেরিফেরাল সংযোজন করে আমরা উঁচুমানের পিসি কাস্টোমাইজ করিয়ে দিই।
প্রশ্ন : কমপিউটার ও কিছু প্রযুক্তিপণ্যে ভ্যাট প্রত্যাহারকে কীভাবে দেখেন?
মুক্ত : কমপিউটার ও কিছু প্রযুক্তিপণ্যে ভ্যাট প্রত্যাহার সরকারের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এখন থেকে কমপিউটার পণ্যে আমদানি শুল্ক ও মূসক থাকছে না। সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে কমপিউটার পণ্যের ওপর থেকে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট প্রত্যাহারের এই ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এনবিআর চেয়ারম্যান ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব মো: নজিবুর রহমান স্বাক্ষরিত এ প্রজ্ঞাপনে কমপিউটারসংশ্লিষ্ট নির্দিষ্ট পণ্যগুলো উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ‘বর্ণিত পণ্যগুলোর ওপর আরোপনীয় আমদানি শুল্ক যে পরিমাণে মূল্যভিত্তিক ২ শতাংশের অতিরিক্ত হয়, সেই পরিমাণ এবং সমুদয় সম্পূরক শুল্ক (যদি থাকে) ও সমুদয় মূল্য সংযোজন কর হতে অব্যাহতি প্রদান করল।’
ভ্যাটমুক্ত পণ্যগুলো হলো- কমপিউটার প্রিন্টার, কমপিউটার প্রিন্টারের জন্য টোনার/ইঙ্কজেট কার্ট্রিজ ও প্রিন্টারের অন্যান্য যন্ত্রাংশ, কমপিউটার এবং কমপিউটারের আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ, মডেম, ইথারনেট কার্ড, নেটওয়ার্ক সুইচ, হাব ও রাউটার, ডাটাবেজ, অপারেটিং সিস্টেম, ডেভেলপমেন্ট টুলস, অন্যান্য ম্যাগনেটিক মিডিয়া, আনরেকর্ডেড অপটিক্যাল মিডিয়া, অ্যান্টিভাইরাস ও নিরাপত্তা সফটওয়্যার, ফ্ল্যাশ মেমরি কার্ড অথবা একই ধরনের কার্ড, প্রক্সিমিটি কার্ড ও ট্যাগ, ডাটা প্রসেসিং সিস্টেমে ব্যবহার হওয়া কমপিউটার মনিটর, ২২ ইঞ্চি পর্যন্ত কমপিউটার মনিটর এবং কমপিউটার প্রিন্টারের রিবন। দেশের তথ্যপ্রযুক্তির সম্প্রসারণের ১৯৯৮-৯৯ অর্থবছর থেকে কমপিউটার পণ্য আমদানি শুল্কমুক্ত ছিল। কিন্তু খুচরা পর্যায়ে ভ্যাটের বিষয়ে কোনো বিধি না থাকায় ব্যবসায়ীদেরকে ‘প্যাকেজ ভ্যাট’ হিসেবে বছরে ১১ হাজার টাকা করে দিতে হতো।
তবে গত বছরের শেষের দিকে ব্যবসায়ীদের হতাশ করে এনবিআর। হঠাৎ করেই খুচরা পর্যায়ে কমপিউটার বিক্রির ওপর ৪ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়। এরপর থেকে ব্যবসায়ী ও তথ্যপ্রযুক্তি সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে এই ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানানো হচ্ছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ও দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে এগিয়ে নিতে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ভ্যাট প্রত্যাহারের এই প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।