লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
বিপিও খাতের অবকাঠামো উন্নয়নে চাই সরকারের আন্তরিকতা
বিপিও খাতের অবকাঠামো উন্নয়নে চাই সরকারের আন্তরিকতা
গার্টনারের এক রিপোর্টে বাংলাদেশকে বিশ্বের ৩০টি শীর্ষ আউটসোর্সিং ডেস্টিনেশনের অন্যতম হিসেবে ধরা হয়েছে। এই রিপোর্টে যে বিষয়টিতে জোর দেয়া হয়েছে, তা হলো পর্যাপ্ত জনশক্তি। বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৬৫ ভাগের বয়স ২৫ বছরের নিচে। অর্থাৎ এরা তরুণ। এরাই তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো এবং কার্যকর কর্মীবাহিনী। সুতরাং, এই তরুণদের সঠিক প্রশিক্ষণ আর যথাযথ দিকনির্দেশনা দিয়ে কাজে লাগানো গেলে আউটসোর্সিং শিল্পে বাংলাদেশের সাফল্য ঠেকানো কঠিন হবে।
বলা হচ্ছে, বিশ্বের বিপিও (বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং) কাজের পরবর্তী গন্তব্য হবে বাংলাদেশ। বিপিও বাংলাদেশের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ ও সম্ভাবনাময় একটি খাত। কোনো একটি প্রতিষ্ঠানের বিশেষ কোনো কাজ ওই প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত কর্মীকে দিয়ে না করিয়ে বাইরের কোনো প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে করানোই হলো বিপিও। এ ক্ষেত্রে সাধারণত বাইরের প্রতিষ্ঠানটির ওই বিশেষ কাজের দক্ষতা কাজে লাগানো হয়। ব্যয় কমানোর কৌশল হিসেবেও পদ্ধতিটি কার্যকর। যেমন- যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান কলসেন্টারের মাধ্যমে গ্রাহকসেবা দিতে সাধারণত বাইরের প্রতিষ্ঠানের সাহায্য নেয়। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বা ভারতের মতো দেশগুলোতে তাদের চুক্তি করা কলসেন্টারের সেবা নিলে অপেক্ষাকৃত খরচ পড়ে কম। এতে দুই পক্ষই লাভবান হয়।
দেশের বিপিও ব্যবসায়ের প্রবৃদ্ধি বছরে শতকরা ১০০ ভাগের বেশি, যার বর্তমান বাজারমূল্য ১৩০ মিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশের লক্ষ্য ২০২১ সালের মধ্যে বিপিও খাত থেকে ১ বিলিয়ন ডলার আয় করা। বর্তমানে দেশে মাত্র ২৫ হাজার লোক এই খাতে যুক্ত আছে। আশা করা হচ্ছে, ২০২১ সালের মধ্যে খাতটিতে দুই লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। এ খাতে কর্মসংস্থানের মাধ্যমে আয় যত বাড়বে, দেশ অর্থনৈতিকভাবে ততই এগিয়ে যাবে। ভারত, শ্রীলঙ্কা ও ফিলিপাইন বিপিও খাতে সবচেয়ে ভালো করেছে। বিপিও খাতে সারা বিশ্বের ৫০০ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে ভারত ৮০ বিলিয়ন, ফিলিপাইন ১৬ বিলিয়ন এবং শ্রীলঙ্কা ২ বিলিয়ন ডলার আয় করছে। এই বাজারে আমাদের অংশীদারি মাত্র ০.০৪ শতাংশ। যেখানে ভারত আমাদের চেয়ে ১৮৫ আর ফিলিপাইন ১৬৫ গুণ এগিয়ে। শ্রীলঙ্কাও এগিয়ে আছে আমাদের থেকে। তাদের বার্ষিক টার্নওভার ২০০ কোটি ডলার। আমাদের আপাতত লক্ষ্য ২০২১ সালের মধ্যে ১০০ কোটির শিল্প খাত হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা।
বর্তমানে বাংলাদেশও দিন দিন এই খাতে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের তরুণ প্রজন্মের কাছে এই খাত এখন অন্যতম একটি কর্মক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ২০০৯ সালে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের আয় ছিল মাত্র ২৬ মিলিয়ন ডলার। ছয় বছরের মধ্যে এ খাতে আয় ৩০০ মিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে ১ বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামীতে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের রফতানি দেশের মোট রফতানিকে ছাড়িয়ে যাওয়ারও সুযোগ রয়েছে।
বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, এজন্য তরুণদের উচ্চতর প্রশিক্ষণ দিয়ে তথ্যপ্রযুক্তির বিভিন্ন খাতে কাজে লাগাতে হবে। ২০০০ সালে মেক্সিকো আউটসোর্সিং খাত থেকে আয় করেছিল ৫০ মিলিয়ন ডলার। আর বর্তমানে এ আয় দাঁড়িয়েছে ৬ বিলিয়ন ডলারে। এটি বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও সম্ভব। বাংলাদেশ তথ্যপ্রযুক্তি খাতে এরই মধ্যে অনেকটা এগিয়েছে। আইসিটি ব্যবসায় এখন খুবই গতিশীল। সরকারও এ খাত নিয়ে উৎসাহী। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বাংলাদেশ তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে নেতৃস্থানীয় জায়গায় যাবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
বিশেষজ্ঞদের পূর্বাভাস, আগামী দশ বছরে বাংলাদেশের বিপিও খাতের চেহারা বদলে যাবে। বদলে যাবে এর বৈশিষ্ট্যও। বর্তমানে বেশিরভাগ কাজ হচ্ছে দেশীয় বাজারে। যার পরিমাণ ৭০-৮০ শতাংশ। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে পাওয়া কাজের পরিমাণ ২০-৩০ শতাংশ। এই চিত্র পুরোপুরি পাল্টে যাবে।
শিল্পসংশ্লিষ্ট রিপোর্ট বলছে, ৭৩ শতাংশ মাঝারি আকারের প্রতিষ্ঠান তাদের অফশোর (বিদেশে পরিচালিত) কেন্দ্রগুলোকে আরও সম্প্রসারিত করবে আগামী দেড় থেকে তিন বছরের মধ্যে। বড় প্রতিষ্ঠানগুলো চাইছে এক দেশ থেকে আরেক দেশে তাদের কার্যক্রম সরিয়ে নিতে। এই কার্যক্রমকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করা হচ্ছে ‘রি-শোরিং’ নামে। এসব বাজার ধরার সুযোগ বাংলাদেশের সামনে থেকে যাচ্ছে। তবে এই খাতের পূর্ণাঙ্গ বিকাশে প্রথমেই আসে অবকাঠামোর কথা। এটা গুছিয়ে দেয়ার দায়িত্ব সরকারের। বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের অবকাঠামো, বিনিয়োগবান্ধব নীতিমালাকে ভালো বলার আগেই তা নিশ্চিত করে রাখতে পারলে অর্ধেক কাজ হাসিল হয়ে যাবে। এ কাজটা করছে ভারত, ফিলিপাইন ও শ্রীলঙ্কা।
আমরা প্রত্যাশা করি- ভারত, ফিলিপাইন ও শ্রীলঙ্কা যেভাবে বিপিও খাতে নিজেদের অবস্থান তৈরি করে নিয়ে নিজ দেশের জন্য প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে, বাংলাদেশও একইভাবে বিপিও খাতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারবে। প্রয়োজন শুধু সরকারের পক্ষ থেকে অবকাঠামোগত অবস্থার উন্নয়ন, বিনিয়োগবান্ধব নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন- যেখানে থাকবে না কোনো আমলাতান্ত্রিক জটিলতা।
আবুল কালাম আজাদ
লালবাগ, ঢাকা
অভিনন্দন কমপিউটার জগৎকে
সময় প্রবাহমান, কখনও কারও জন্য থেমে থাকে না। দেখতে দেখতে কীভাবে যে সময় কেটে যায়, তা আমরা সচরাচর খুব একটা উপলব্ধি করতে পারি না। বিশেষ কোনো মুহূর্ত বা উপলক্ষে আমরা বিস্মিত হয়ে যায় সুদীর্ঘ সময় অতিবাহিত হয়ে যাওয়ায়। স্মৃতির মণিকোঠায় ভাসতে থাকে আর মনে হতে থাকে- এই তো সেদিন এই ঘটনাটি ঘটল। কমপিউটার জগৎ-এর ক্ষেত্রেও তেমনই এক হোঁচট খেলাম, যখন আমার প্রিয় পত্রিকাটির ২৫তম বর্ষপূর্তি সংখ্যাটি পেলাম।
নিজেই বিস্মিত হলাম, দেখতে দেখতে কীভাবে কেটে গেল এই পত্রিকার সাথে ২৫ বছরের সম্পর্ক। এই ভেবে যে, আমি দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে কমপিউটার জগৎ পত্রিকার একজন ভক্ত, পাঠক এবং গ্রাহক। কমপিউটার জগৎ-এর ২৫তম বর্ষসংখ্যার প্রতিটি পাতা উল্টাচ্ছি আর মনে হচ্ছে, এই তো সেদিন কমপিউটার জগৎ আয়োজন করল এ দেশের প্রথম কমপিউটার প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা, দেশে ডাটা এন্ট্রির সম্ভাবনার কথা জাতির সামনে তুলে ধরতে জাতীয় প্রেসক্লাবে কমপিউটার জগৎ-এর প্রতিষ্ঠাতা ও দেশের তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলনের পথিকৃৎ অধ্যাপক আবদুল কাদের আয়োজন করলেন এক সংবাদ সম্মেলন। মনে হচ্ছে, এই তো সেদিন অধ্যাপক আবদুল কাদের ফাইবার অপটিক সংযোগের সুফল সম্পর্কে এ দেশের জনগণকে অবহিত করতে জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজন করলেন এক সংবাদ সম্মেলন যখন বাংলাদেশের খুব কাছ দিয়ে ফাইবার অপটিক লাইনটি যাচ্ছিল এবং এ ফাইবার অপটিক লাইনের জন্য অফার ছিল প্রায় বিনামূল্য। অথচ এ সময় তৎকালীন সরকার দেশের গোপন তথ্য পাচার হয়ে যাওয়ার ভয়ে প্রায় বিনামূল্যের সংযোগের অফারকে ফিরিয়ে দিল। এসব ঘটনার প্রতিটিই ঘটেছিল ২০ থেকে ২৫ বছর আগে। এ ধরনের আরও অসংখ্য ঘটনাই আমার মনে পড়ছে, যেমন- দেশের প্রথম ইন্টারনেট সপ্তাহ পালনের কথা, এ দেশের নিজস্ব স্যাটেলাইটের দাবি বা হাইটেক পার্কের দাবির কথা ইত্যাদি।
যাই হোক, কমপিউটার জগৎ-এর উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি। পরিশেষে আবারও ধন্যবাদ জানাই কমপিউটার জগৎ ২৫তম বর্ষপূর্তি সংখ্যাটির জন্য, যেখানে আইসিটি খাতের প্রায় সব ক্ষেত্রে সুধীজনদের লেখার সন্নিবেশ ঘটেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক