• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > বিপিও সম্মেলন ২০১৬: লক্ষ্য শতকোটি ডলার আয়ের বাজার
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: ইমদাদুল হক
মোট লেখা:৬২
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৬ - আগস্ট
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
প্রতিবেদন
তথ্যসূত্র:
রির্পোট
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
বিপিও সম্মেলন ২০১৬: লক্ষ্য শতকোটি ডলার আয়ের বাজার
যে পণ্য একদিন উৎপাদিত হতো যুক্তরাষ্ট্রে, এখন তা হচ্ছে চীনে। ইলেকট্রনিকসের বেলায় যেটা হতো জাপানে, সেটা চলে গেছে কোরিয়ায়। তৈরি পোশাক শিল্প ছিল চীন ও ভারতে, আর সেটাই এখন বাংলাদেশ করে দিচ্ছে আস্থার সাথে। একই অবস্থা বিপিও-আইটিওর ক্ষেত্রে। প্রযুক্তি আর তারুণ্যের মেলবন্ধনে বিশ্ববাজারের পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরেও মূলধারার ব্যবসায় বা সেবার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা হিসেবে পরিপুষ্ট হয়ে উঠছে বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং বা বিপিও খাত। ইতোমধ্যেই দেশে গড়ে উঠেছে দেড় শতাধিক বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠান। আর এসব প্রতিষ্ঠানকে দিন দিনই ঋদ্ধ করছে ৩০ হাজারের বেশি ব্যক্তি। বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম ও কিছু প্রতিষ্ঠান সাধ্যমতো বাংলাদেশে বসেই উন্নত দেশের ক্রেতাদের কাজ বিপিও বা আইটিওর মাধ্যমে করে দিচ্ছে। ঘরে আনছে বৈদেশিক মুদ্রা। সেটা হতে পারে কোনো ওয়েব ডেভেলপমেন্ট বা কনটেন্ট ব্যবস্থাপনার কাজ। এদের কেউ কেউ আবার ওয়ালমার্টের মতো প্রতিষ্ঠানের পে-রোল তৈরি করে দিচ্ছে। আবার মানবসম্পদ বা ফিন্যান্সিয়াল ব্যাক অফিসের কাজ করেও আয় করছে বিশ্বকর্মী হিসেবে। একই ধরনের কাজের সুযোগ রয়েছে দেশের অভ্যন্তরেও। এখানে অবস্থিত বিদেশী কোম্পানি, টেলিকম প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে এনজিও এমনকি ব্যাংক, বীমা ও সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের নিরবচ্ছিন্ন সেবা দেয়ার ক্ষেত্রেও এই মুহূর্তে আউটসোর্সিং বিকল্প মাধ্যম হয়ে উঠছে। তাই বিপিওর মাধ্যমে কাজের ক্ষেত্রে নিষ্ঠা আর দক্ষতা দিয়েই দেশের পাশাপাশি বহির্বিশ্বে নিজেদের অবস্থান সুসংহত করা এখন ‘চুটকি কা খেল’ বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা। আর বিপিও সম্প্রসারণশীল সরকারি নীতি ও পেশাদারিত্বের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বদলে দিতে পারে দেশের অর্থনীতির ভিত। ঘুচে দিতে পারে বেকারত্বের অভিশাপ। অন্য মর্যাদায় নিয়ে যেতে সক্ষম হবে বাংলাদেশের শ্রমবাজারকে।
এমনই আশা-জাগানিয়া সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলে দিয়ে গত ২৯ জুলাই ঢাকার একটি অভিজাত হোটেলে অনুষ্ঠিত হলো দ্বিতীয় বিপিও সম্মেলন। তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ, তথ্যপ্রযুক্তি অধিদফতর ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কল সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্য) যৌথভাবে এই সম্মেলনের আয়োজন করে। সম্মেলনের গোল্ড স্পন্সর ছিল সামিট কমিউনিকেশনস লিমিটেড ও ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। সিলভার স্পন্সর অগমেডিক্স, আভায়া, ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, মাইক্রোসফট। আইটি পার্টনার এডিএন টেলিকিম। নেটওয়ার্ক পার্টনার ফাইবার অ্যাট হোম। আয়োজনের সহযোগী ছিল প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের অ্যাক্সেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রাম, আইসিটি বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা (বিটিআরসি), এক্সপোর্ট প্রমোশন ব্যুরো (ইপিবি)। ক্যারিয়ার পার্টনার ছিল বিক্রয় ডটকম। অ্যাসোসিয়েট পার্টনার সার্ক চেম্বার অব কমার্স, এফবিসিসিআই, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়া্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস), বাংলাদেশ কমপিউটার সমিতি (বিসিএস), বাংলাদেশ উইমেন ইন টেকনোলজি (বিডাব্লিউআইটি), সিটিও ফোরাম বাংলাদেশ, ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব), ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) এবং বাংলাদেশে আইসিটি জার্নালিস্টস ফোরাম (বিআইজেএফ)।
সম্মেলনের যত আয়োজন
‘স্থানীয় অভিজ্ঞতা ও বৈশ্বিক ব্যবসা’ সেস্নাগানে সম্মেলনে মোট ১২টি সভা আর কর্মশালার মধ্য দিয়ে দেশের বিপিও খাতের অবস্থান এবং বিশ্ববাজারে নিজেদের অবস্থান সুসংহত করার স্বপ্ন বুনেন সংশ্লিষ্টরা। আর এই স্বপ্নের মালা গলায় দিয়ে সম্মেলনের বিভিন্ন আয়োজনে অংশ নেন প্রায় ২৫ হাজার দর্শনার্থী। আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে কীভাবে দক্ষতার সাথে ব্যবসায় কার্যক্রমকে গতিশীল রাখার পাশাপাশি ব্যক্তিক ও জাতীয় উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা যায়- অংশ নেয়াদের সামনে সেই ‘টোটকা’ তুলে ধরেন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, চীন, মালয়েশিয়া ও ভারতসহ ১২টি দেশ থেকে অংশ নেয়া ২১ বিশেষজ্ঞ বক্তা। স্থানীয় সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন দেশের বিপিও খাতে অনুসরণীয় ৫৬ বিশিষ্ট ব্যক্তি। সম্মেলনের প্রথম দিন ‘গভর্নমেন্ট প্রসেস আউটসোর্সিং : গ্লোবাল বেস্ট প্র্যাকটিসেস’, ‘প্রোটেকটিং ডাটা অ্যান্ড প্রাইভেসি ইন দ্য কানেক্টেড নেটওয়ার্ক ওয়ার্ল্ড’, ‘অপরচুনিটিজ ইন লোকাল অ্যান্ড গ্লোবাল বিপিও ফর ইউথ’, ‘বিগ ডাটা অ্যানালাইসিস ফর নিউ হরাইজন ইন বিজনেস ইন্টেলিজেন্স’, ‘ট্রেনিং ওয়ার্কশপ ফর কল সেন্টার এজেন্টস’ এবং ‘চ্যালেঞ্জ অ্যান্ড সলিউশনস ফর ওভারকামিং হার্ডেলস ইন আউটসোর্সিং অব গভর্নমেন্ট সার্ভিসেস’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সমাপনী দিনে অনুষ্ঠিত হয় দি ফিউচার অব টেকনোলজি অ্যান্ড বিজনেস অপরচুনিটিজ অব ইয়ুথ, মেইনস্ট্রিমিং ভোকেশনাল এডুকেশন : এ পাথ ওয়ে টু ক্রিয়েট এমপ্লয়মেন্ট অপরচুনিটি ফর ইয়ুথ, Infrastructural and Educational Readiness for BPO in Bangladesh, Outsourcing Financial Services : Winwin Situation for BPO and Financial Sector, The New Paradigm of Success : Creating a Purpose-driven and Fulfilling Life শীর্ষক সমাবেশ ও Hands on Activities on Big Data : Technique বিষয়ক কর্মশালা। সেমিনার, সমাবেশ ও কর্মশালাগুলোতে সিএনসি ডাটার ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজমোহন ভিরামুদু, ডাটাসফট সিস্টেমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব জামান, অ্যাসোসিওর সাবেক চেয়ারম্যান আবদুলস্নাহ এইচ কাফী, বেসিসের প্রেসিডেন্ট মোস্তাফা জববার, ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর একেএম শিরীন, আইসিটি এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ভিগনে শরণ রাজশেকরণ, টেকনাফ এলএলসির প্রেসিডেন্ট ফয়সাল কাদের, বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিলের জ্যেষ্ঠ সিস্টেম অ্যানালিস্ট তারেক বরকতুলস্নাহ, কমার্শিয়াল ব্যাংক শিলনের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের প্রধান ড. ইজাজুল হক, এলআইসিটি প্রকল্প লিডার তৌহিদুর রহমান, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক, আমরা স্মার্ট সলিউশনের হেড অব বিজনেস সোলাইমান সুখন, অগমেডিক্স হেড অব অপারেশনরে লেন ফেনার, ফিফোটেকের সিইও তৌহিদ হোসাইন, ক্লার্ক সাকসেস সিস্টেমের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান নির্বাহী ড্যান ক্লার্ক, উইনর সার্কেলের চেয়ারম্যান ও প্রতিষ্ঠাতা ওয়াজেদ সালাম, ইমপেল সার্ভিস অ্যান্ড সলিউশনের পরিচালক মুশফেক ইউ সালেহীন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য প্রফেসর আক্তার হোসাইন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জেবা ইসলাম সিরাজ, লিঙ্কডইন মেশিন লার্নিংয়ের সাইনটিস্ট ড. বদরুল মুনির সারওয়ার, বিটিআরসির প্রকৌশল ও পরিচালন বিভাগের পরিচালক জিয়ান শাহ কবির, পিডব্লিউসির প্রধান নির্বাহী অরিজিত চক্রবর্তী, কণ্ঠশীলনের নির্বাহী সদস্য জাহিদ রেজা নূর, সিটি ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের এভিপি মোহাম্মদ মাসুদ রায়হান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, এনএসডিসির সিইও এবিএম খোরশেদ আলম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, ঢাকা দক্ষেণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন, এমসিসির প্রধান নির্বাহী নাভীদ মাহমুদ, মাই আউটসোর্সিংয়ের পরিচালক তানজিরুল বাসার, আইকন বিল্ডার মিডিয়ার সিইও ডেভিড ফরগান, ডিফরেন্স মেকারস ইন্টারন্যাশনালের প্রতিষ্ঠাতা ডেভিড ব্রিজ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
বক্তাদের বক্তব্যে উঠে এসেছে- একটি প্রতিষ্ঠানে কাজের ক্ষেত্র ছোট করে ফেলা বা কর্মী ছাঁটাই কখনও ভালো দৃষ্টান্ত হতে পারে না। কিন্তু আজকের বিশ্বে ডাকসাইটে অনেক প্রতিষ্ঠানেরই ব্যবসায়ের উন্নয়ন ও ব্যয় সঙ্কোচনের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিতে দেখা গেছে। এর পাশাপাশি নতুন করে বাড়ছে ব্যবসায় একীভূত করার প্রক্রিয়া। এর ফলে হালে বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং ও আইটি অফশোরিং বা আউটসোর্সিং বিনিয়োগকারীদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মতো দেশগুলো রয়েছে বিশ্ববাজারে পছন্দের শীর্ষে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে- কোনো প্রতিষ্ঠানের মানবসম্পদ বা অর্থ বিভাগের একজন কর্মীকে তার কাজের জন্য যে পারিশ্রমিক দিতে হয়, সে পরিমাণ বা তার চেয়েও কম পারিশ্রমিকে প্রযুক্তির সমন্বয়ে চারজন মিলে আরও বেশি কাজ করে দেয়া যায় বাংলাদেশে বসে। বিপিওর অনেক প্রতিষ্ঠান আছে, যেখানে সব বিষয়ে শিক্ষার্থীরাই কাজ করতে পারে। কল সেন্টারগুলোতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কে কোন বিষয়ে পড়েছে সেটা মুখ্য নয়। এখানে আগ্রহ থাকলে যেকোনো বিষয়ের যেকেউ ভালো করতে পারে। তবে বিশেষায়িত কিছু কাজ এখনও হচ্ছে। এসব জায়গায় প্রয়োজনীয় ব্যাকগ্রাউন্ডের শিক্ষার্থী হলে ভালো হয়। বিপিওর কাজের পরিসর বড় হওয়ায় বর্তমানে প্রায় সব বিষয়ের শিক্ষার্থীদেরই কাজের সুযোগ আছে। এই খাতে এক বছর কাজ করলেই আপনার যোগাযোগের দক্ষতা অনেক বেড়ে যাবে। বিপিওতে কাজ করার জন্য শুদ্ধভাবে কথা বলার অভ্যাস থাকাটা খুব জরুরি। ইংরেজিতে দক্ষ হলে খুবই ভালো। তবে ইংরেজিতে দক্ষ না হলে অন্তত বাংলায় ভালো দক্ষতা থাকতে হবে। পরিষ্কার করে স্পষ্টভাবে সহজে কোনো কিছু বোঝানোর দক্ষতা থাকলে খুবই ভালো করতে পারবে বিপিও খাতে।
সম্মেলনের রাশভারি আলোচনার ফাঁকে জীবনের বাঁক ঘোরানোর চ্যালেঞ্জে শামিল হতে নিজেদের বায়োডাটা জমা দেন চাকরি প্রত্যাশীদের প্রায় ২১ হাজার তরুণ। এদের মধ্যে সম্মেলনের শেষ দিন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পান ৩০০ আবেদনকারী। আরও ২০০ প্রার্থী অল্প কয়দিনের মধ্যেই নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন বাক্যর এক্সিকিউটিভ কো-অর্ডিনেটর আবদুর রহমান শাওন। তিনি জানান, এর বাইরে বিপিও খাতে বিশেষ অবদান রাখায় পুরস্কৃত করা হয় একটি বিদেশি ও সাতটি দেশি প্রতিষ্ঠানকে।
বর্ষসেরা ৮ বিপিও
সম্মেলনের সমাপনী রাতে দেশের বিপিও খাতে অনবদ্য অবদান রাখায় বর্ষসেরা নির্বাচিত হয় অগমেডিক্স বিডি লিমিটেড, ডিজিকন টেকনোলজিস লিমিটেড, ফিফোটেক, হ্যালো ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ, ইমপেল সার্ভিস অ্যান্ড সলিউশন, মাই আউটসোর্সিং, সার্ভিস সলিউশনস ও ইউনটেল লিমিটেড। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে গুগল গস্নাস ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবা দেয় অগমেটিক্স। ওয়ালমার্টের মতো প্রতিষ্ঠানের পে-রোল সেবা দেয় সার্ভিস সলিউশনস।
শতকোটি ডলার আয় ও লক্ষ্য কর্মসংস্থান
দুই দিনের বিপিও সম্মেলন উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। এতে ‘গেস্ট অব অনার’ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন সংস্থার (আইটিইউ) মহাপরিচালক হাওলিন ঝাও। তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ইমরান আহমেদ, বিটিআরসির চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ ও তথ্যপ্রযুক্তি সচিব শ্যাম সুন্দর সিকদার। সম্মেলনের মাধ্যমে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার অভিপ্রায়ে বিপিও খাত থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ১ বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। অনুষ্ঠানে সজীব ওয়াজেদ জানান, বিপিও ক্ষেত্রে ভালো করার সব সম্ভাবনা বাংলাদেশে রয়েছে। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু দেশকে ‘সোনার বাংলা’ হিসেবে গড়ে তোলার কাজে হাত দিয়েছিলেন। বর্তমান সরকার শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার কাজ করে যাচ্ছেন। বিপিও খাতে ২০১৮ সালের মধ্যে ১ বিলিয়ন ডলার আয় করবে বাংলাদেশ। প্রতিবছর ৩০ হাজার শিক্ষার্থী কমপিউটার সায়েন্সে পাস করে বের হচ্ছে। তাদের বিভিন্ন খাতে কাজের ক্ষেত্র তৈরি করছে সরকার। তিনি আরও বলেন, তথ্যপ্রযুক্তিসহ সব ক্ষেত্রে দেশের উন্নয়ন সূচক উপরের দিকে। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে। এজন্য ইতোমধ্যেই আমরা প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ই-লার্নিং ল্যাব তৈরি করেছি। আগামীতে এই সংখ্যা আরও বাড়বে। শিক্ষার্থীদের জন্য সরকার ইতোমধ্যে ই-বুক তৈরি করেছে। কিছু দিনের মধ্যেই আমরা ইলেকট্রনিকস ভার্সন বই তৈরি করব।
সরকারের নানা উদ্যোগের ফলে প্রতিবছর দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দুই হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে উল্লেখ করে জয় বলেন, ‘ভিশন ২০২১’ বাস্তবায়ন করে আইটি খাতকে আমরা গার্মেন্টস খাতের চেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের খাতে পরিণত করব। তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকার সারাদেশে শতভাগ মোবাইল নেটওয়ার্ক নিশ্চিত করেছে। আইসিটি খাতে এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। শিক্ষা ক্ষেত্রকেও আমরা আধুনিক করেছি। পাঠ্যবইয়ে পিডিএফ ফরম্যাটসহ বইয়ের ইলেকট্রনিক ভার্সন করা হচ্ছে। গত সাত বছরে আইসিটি খাত দেশের অভ্যন্তর ও আন্তর্জাতিক বাজারে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে।
সম্মেলনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে বার্ষিক আইসিটি খাতে ৫ বিলিয়ন ডলার আয় হবে। এর মধ্যে বিপিও ক্ষেত্রে আয় হবে ১ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশকে তথ্যপ্রযুক্তিতে এগিয়ে নেয়ার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। এর ফলে বাংলাদেশে বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং বা বিপিও ব্যবসায়ের অগ্রগতি সমেত্মাষজনক এবং এর বর্তমান বাজারমূল্য ১৮০ মিলিয়ন ডলার। প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের পাশের দেশ ভারত, শ্রীলঙ্কা ও ফিলিপাইন বিপিও খাতে সবচেয়ে ভালো করেছে। বিপিও খাতে সারা বিশে^র ৬০০ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে ভারত প্রায় ১০০ বিলিয়ন, ফিলিপাইন ১৬ বিলিয়ন ও শ্রীলঙ্কা ৩ বিলিয়ন ডলার আয় করছে। আমাদের লক্ষ্য ২০২১ সালের মধ্যে এই খাতে ১ বিলিয়ন ডলার আয় করা। তিনি আরও বলেন, বিপিও খাতে আয় যত বাড়বে, দেশ অর্থনৈতিকভাবে ততই এগিয়ে যাবে। তরুণদের উচ্চতর প্রশিক্ষণ দিয়ে তথ্যপ্রযুক্তির বিভিন্ন খাতে কাজে লাগাতে হবে। তরুণদের তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে ক্যারিয়ার গড়ে তোলার আহবান জানান তিনি। তিনি বলেন, বিশে^র যেসব দেশ বিপিও খাতে ভালো করেছে, সেসব দেশ নিজেদের অভ্যন্তরীণ খাতের বিপিও শিল্পকে শক্তিশালী করেছে। যেমন ভারতের এ বছরের লক্ষ্যমাত্রা ১২০ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে ২০ বিলিয়ন ডলারই আসবে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে।
ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সংসদ সদস্য ইমরান আহমেদ বলেন, বিপিও খাতে বহু লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে। এই খাতকে আরও এগিয়ে নেয়ার জন্য দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে হবে। পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের এই খাতে এগিয়ে নেয়ার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হবে।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থার (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেন, ২০০০ সালে যে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথের দাম ৭৫ হাজার টাকা ছিল, সে ব্যান্ডউইডথের দাম এখন ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সহজলভ্য হওয়ায় বর্তমানে বিপিও খাতে ৩৫ হাজার লোক কাজ করছে। বিপিও খাতকে এগিয়ে নেয়ার জন্য বিটিআরসি সর্বোচ্চ সহযোগিতা করছে। বিপিও খাত ও বিটিআরসি যৌথভাবে কাজ করছে।
বর্তমানে বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং বা বিপিও খাত থেকে ১৮০ মিলিয়ন ডলার আয় হয় জানিয়ে সম্মেলনের সমাপনী ভাষণে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ২০১৫ সালে বিপিও খাতে বাংলাদেশের ছিল ১৩০ মিলিয়ন ডলার। ২০২১ সালে এই আয় ১০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। তিনি বলেন, আমাদের তরুণদের স্বপ্ন দেখতে হবে। স্বপ্নহীন বা গন্তব্যহীন জাতি কোনো দিন ভালো করতে পারে না। বর্তমান সরকার আইসিটি খাতে বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। পরিকল্পনাগুলো বাস্তবে রূপ দেয়াই সরকারের লক্ষ্য। সরকার আইসিটি খাতে
তরুণদের প্রশিক্ষণ দিয়ে যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলছে। অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, আমি স্বপ্ন দেখি অল্প দিনের মধ্যে আমরা বাংলাদেশ থেকে মাইক্রোসফট, অ্যাপল, গুগলের মতো তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে পারবে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে বিপিও খাত থেকে আমরা ১ বিলিয়ন ডলার আয়ের আশা করছি। তিনি বলেন, সম্মেলনে অংশ নেয়া বিদেশীরা আমাদের বলেছেন, বাংলাদেশের সবকিছু ঠিক আছে। এ দেশের তরুণেরা প্রস্ত্তত। এটাই আমাদের জন্য বড় স্বীকৃতি। আমরা যখন ডিজিটাল বাংলাদেশের ঘোষণা দেই, তখন আমরা কোনো রূপরেখা ঠিক করে দিইনি। আমরা জানতাম, তরুণেরাই এসব ঠিক করে নেবে। আমাদের ভাবনা সত্যি হয়েছে। তরুণেরাই তাদের গন্তব্য ঠিক করে নিয়েছে। সেই গতিপথ কুসুমাসত্মীর্ণ করতে ২০২১ সালের মধ্যে এই খাতে ১ লাখ তরুণের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার কথাও ব্যক্ত করেন অর্থমন্ত্রী। অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে সুনির্দিষ্ট পথরেখা অনুযায়ী এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন সম্মেলনের বিভিন্ন সেশনসহ সিএক্স নাইটে অংশ নেয়া বেসিস সভাপতি মোস্তাফা জববার, আইসিটি অধিদফতরের মহাপরিচালক বনমালী ভৌমিক ও বাক্যর সভাপতি আহমাদুল হক।
পথনকশায় এগিয়ে চলা
এবারের সম্মেলনের বিভিন্ন সেশনে অংশ থেকে একটি বার্তা খুব স্পষ্ট হয়েছে। আর তা হলো- কিছুই অসম্ভব নয় যদি থাকে প্রচেষ্টা, ধারাবাহিক যোগাযোগ ও সততা। এ ছাড়া আলোচনায় উঠে এসেছে উন্নত দেশের সরকারি ব্যবস্থা ও ব্যক্তিমালিকানার প্রতিষ্ঠানগুলো তথ্যপ্রযুক্তি ও সাইবার জগতের ওপর খুবই নির্ভরশীল। এসব প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায় পরিচালনা ও গ্রাহকসেবা দেয়ার বড় চ্যালেঞ্জই হচ্ছে তাদের কমপিউটার অ্যাপ্লিকেশন ও ডাটা আর্কিটেকচারকে নির্ভুলভাবে সাজানো। আর এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য নীতি-নির্ধারকেরা ব্যয় করে যাচ্ছেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা, মাসের পর মাস- কীভাবে একটি আধুনিক, সাশ্রয়ী উপায় বের করা যায়। সে জন্য নিজ দেশের গ-- পেরিয়ে অন্য একটি দেশে ব্যবসায়িক স্থাপনা তৈরিতেও তাদের কার্পণ্য নেই। আর এই সুযোগটিই আমাদের কাজে লাগাতে হবে দক্ষতা ও যোগাযোগ প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে। স্থানীয় অভিজ্ঞতার নিরিখে বৈশ্বিক ব্যবসায় দেশের সম্ভাবনায়ম তরুণ প্রজন্মকে বিপিও খাতে আর্কষণ করতে দুই দিনের সম্মেলন শেষে প্রতিভাত হয়েছে আগামীর পথনকশা। অভ্যন্তরীণ প্রয়োজনের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রভাব বাড়াতে পেশাদারিত্বের মানোন্নয়ের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। কল সেন্টার সেবার সীমানা পেরিয়ে বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিংয়ের অমিত সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে একটি টেকসই নীতিমালা ও প্রয়োজনী-সহায়ক উদ্যোগ দ্রুত বাস্তবায়ন করতে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের মেলবন্ধ গড়ে তোলার পরামর্শকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ঘুরে-ফিরে উচ্চারিত হয়েছে মন্ত্রণালয়গুলোর নিরবচ্ছিন্ন সেবা প্রদান, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাক অফিস, টেলিকম প্রতিষ্ঠানগুলোর ভ্যাস সেবায় আউটসোর্সিংকে প্রাধান্য দিয়ে নীতিমালা তৈরির কথা


পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০১৬ - আগস্ট সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস