লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৬ - সেপ্টেম্বর
বাংলাদেশে বিপিও : এক নতুন সম্ভাবনার নাম
বাংলাদেশে আমরা যারা তথ্যপ্রযুক্তিসংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে সচেতন এবং যারা গত ২০-২৫ বছর ধরে কমপিউটার জগৎ পত্রিকা নিয়মিতভাবে পড়ে আসছি, তারা সবাই এক বাক্যে স্বীকার করবেন কমপিউটার জগৎ সবসময় সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে জাতির সামনে নিত্যনতুন সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে প্রতি মাসের প্রচ্ছদ প্রতিবেদন উপস্থাপন করে আসছে। যেমন- সম্ভাবনাময় ডাটা এন্ট্রি শিল্প, সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রি, Y2K সমস্যার সমাধান, ইউরো মানি কনভার্সন, মেডিক্যাল ট্রান্সক্রিপশনসহ বিপিও তথা বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিংয়ের ওপর।
বিপিও হলো একটি সুনির্দিষ্ট বিজনেস প্রসেস পরিচালনার দায়িত্ব তৃতীয় পক্ষের সার্ভিস প্রোভাইডারকে দেয়ার একটি চুক্তি। বিপিওকে চিহ্নিত করা হয় ব্যাক অফিস আউটসোর্সিং হিসেবে, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে অভ্যন্তরীণ ব্যবসায়িক কর্মকা-। যেমন- মানবসম্পদ বা ফিন্যান্স ও অ্যাকাউটিং এবং ফ্রন্ট অফিস আউটসোর্সিং, যার সাথে সংশ্লিষ্ট কাস্টমার-রিলেটেড সার্ভিস, যেমন- কন্ট্রাক্ট সেন্টার সার্ভিস।
সময়ের সাথে সাথে বাংলাদেশে বিপিও ক্রমেই জোরদার হতে শুরু করেছে। বাংলাদেশে বিপিও’র যথাযথ প্রসার ও এর গতি ত্বরান্বিত করার লক্ষে্য গত ২৮-২৯ জুলাই দেশে দ্বিতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হলো দুই দিনব্যাপী ‘বিপিও সামিট-২০১৬’। নিঃসন্দেহে এই সামিট বাংলাদেশে বিপিও প্রসারে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের তরুণেরা বিপিও সম্পর্কে ক্রমেই আগ্রহী হয়ে উঠছে। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, বাংলাদেশে বিপিও একটি নতুন সম্ভাবনার নাম। ২০০৯ সালে বাংলাদেশের বিপিও খাত মাত্র ৩শ’ কর্মী নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে এই খাতে ৩ হাজার কর্মী কাজ করছেন। এই খাত ক্রমেই ব্যবসায়িক খাতে এগিয়ে যাচ্ছে। ২০২১ সালের মধ্যে এই খাতে ১ লাখ তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান হবে এবং ১০০ কোটি ডলার আয়ের পরিকল্পনা করছে সরকার।
বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত থেকে জানা যায়, বর্তমানে বিশ^জুড়ে বিপিও’র বাজার বছরে ৫০ হাজার কোটি ডলার। সেখানে বাংলাদেশ ১০০ কোটি ডলারের বিপিও বাজার দখল করতে পারেনি। জানা যায়, বাংলাদেশ সবে মাত্র ১৮ কোটি ডলারের বিপিও বাজার দখলে আনতে পেরেছে। বাংলাদেশ যদি বিপিও খাতে যথার্থ নজর দেয়, তবে সহজেই শত শত কোটি ডলারের বিপিও বাজার দখল করতে পারে। পোশাক শিল্প খাতের মতো বিপিও খাতও হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশের অন্যতম বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের উৎস।
বিপিও খাতে সমৃদ্ধ দেশের তালিকায় রয়েছে ভারত, ফিলিপাইন ও শ্রীলঙ্কা। ছোট্ট দেশ শ্রীলঙ্কার এ খাতের আয় এরই মধ্যে ছাড়িয়ে গেছে ৩শ’ কোটি ডলারের অঙ্ক। ভারত আর শ্রীলঙ্কা, এ দুটি দেশই আমাদের দেশের মতো একই ধরনের পরিবেশ-প্রতিবেশের দেশ। তাই ভাবতে অবাক লাগে, ভারত ও শ্রীলঙ্কা যদি বিপিও খাতে উল্লেখযোগ্য সাফল্য দেখাতে পারে, তবে বাংলাদেশ কেনো তা পারবে না। নিশ্চিত করে বলা যায়, সঠিক সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ নিয়ে কাজে নামলে বাংলাদেশের পক্ষেও তা সম্ভব। এ জন্য প্রয়োজন এখনই সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে কাজে নেমে পড়া।
এ ক্ষেত্রে আমাদের সবচেয়ে ইতিবাচক দিক হলো, আমাদের দেশে রয়েছে বিপুলসংখ্যক মেধাবী তরুণ। এদের অনেকেই বেকার। আবার এর একটি অংশকে টিউশনি করে চলতে হয়। এদের বিপিও খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে পারলে দেশের বিপিও খাত যেমনি প্রসার লাভ করবে, তেমনি বিপুলসংখ্যক তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব হবে। এ কথা ঠিক, আমাদের দেশের বিপুলসংখ্যক তরুণ-তরুণী কোনো না কোনোভাবে প্রযুক্তির সাথে কম-বেশি জড়িত। এদের সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে বিপিও খাতে নিয়োজিত করতে পারলে নিঃসন্দেহে আমাদের বিপিও খাত উল্লেখযোগ্যভাবে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবে। তাই আমাদের তরুণ সমাজকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়ে বিপিও খাতে কাজে লাগানো যেতে পারে। এর ফলে তরুণ-তরুণীদের বিপথগামী হওয়ার প্রবণতা যেমনি কমবে, তেমনি বিপুলসংখ্যক তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এর ফলে দেশে বেকারত্মের হার যেমন কমবে, তেমনই প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হবে, যা প্রকারান্তরে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও ভূমিকা রাখবে।
আবদুল জাববার
পাঠানটুলি, নারায়ণগঞ্জ
আবাসিক এলাকা থেকে তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি না সরানোর আহবান
সম্প্রতি দেশে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন অনাকাঙিক্ষত ঘটনাসহ শহরে ক্রমবর্ধমান ব্যাপক যানজট নিরসনের জন্য রাজধানীর আবাসিক এলাকা থেকে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো বাণিজ্যিক এলাকায় সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ তথা রাজউক। এ বিষয়ে ভবন মালিকদের চিঠিও দেয়া হয়েছে। আমরা রাজউকের এ সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই। কেননা, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আবাসিক এবং অভিজাত এলাকায় সাধারণত তেমন কোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, ক্লিনিক, সুপার মল ইত্যাদি প্রতিষ্ঠার অনুমতি দেয়া হয় না। উন্নত বিশ্বের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশের রাজধানীর আবাসিক এলাকা থেকেও সব ধরনের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান অনুরূপভাবে বাণিজ্যিক এলাকাতেও সরিয়ে নেয়া উচিত।
কিন্তু বাস্ততা হলো, বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে ঘন জনবহুল দেশ এবং বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা শহরগুলো গড়ে উঠেছে অনেকটাই অপরিকল্পিতভাবে। ফলে রাজধানীসহ জেলা শহরগুলোতে দেখা যায় আবাসিক ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সহাবস্থান অর্থাৎ আবাসিক এলাকাতেই বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে উঠেছে। আবাসিক এলাকা থেকে এসব বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাতারাতি বাণিজ্যিক এলাকাতে সরিয়ে নেয়া সম্ভব নয়, তার অন্যতম প্রধান কারণ দেশে পরিকল্পিত বাণিজ্যিক এলাকার স্বল্পতা।
আরেকটি লক্ষণীয় বিষয়, বাংলাদেশের সফটওয়্যার কোম্পানিগুলোর বেশিরভাগই আবাসিক এলাকায় গড়ে উঠেছে এবং সেখান থেকেই তাদের ব্যবসায়িক কর্মকা- পরিচালিত হয়েছে অনেকটাই নীরবে-নিবৃতে বা বলা যায় অনেকটাই ঘরোয়া পরিবেশের মতো। বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি ও তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সেবার প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই সিদ্ধান্তের আওতায় রাখলে তা দেশের সম্ভাবনাময় এই খাতের জন্য বড় হুমকি হবে। কেননা, এ খাতটি আন্তজার্তিক অঙ্গনে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে শুরু করেছে মাত্র। ফলে এ মুহূর্তে আবাসিক এলাকা থেকে আইসিটিসংশ্লিষ্ট বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে পরিকল্পিত বাণিজ্যিক এলাকায় সরিয়ে নিতে হলে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। এর ফলে আইসিটি খাত থেকে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ৫ বিলিয়ন ডলার আয় করার যে প্রত্যাশা করছে, তা পূরণ করা সম্ভব হবে না।
বাংলাদেশের সফটওয়্যার ও সেবা খাতের শীর্ষ বাণিজ্য সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) মনে করে, তথ্যপ্রযুক্তি ও তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সেবার প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই সিদ্ধান্তের আওতায় রাখলে তা দেশের সম্ভাবনাময় এই খাতের জন্য বড় হুমকি হবে। তাই আবাসিক এলাকা থেকে তথ্যপ্রযুক্তি ও তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সেবার কোম্পানিগুলোকে না সরানোর আহবান জানিয়েছে বেসিস। এ বিষয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী, রাজউক চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়েছে বেসিস।
আমরা প্রত্যাশা করি, রাজউক দেশে সফটওয়্যার শিল্পের বিকাশের স্বার্থে তথ্যপ্রযুক্তি ও তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সেবার প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ মুহূর্তে এই সিদ্ধান্তের আওতার বাইরে রাখবে, অর্থাৎ তথ্যপ্রযুক্তি ও তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সেবার প্রতিষ্ঠানগুলোকে আগের মতোই আবাসিক এলাকায় তাদের ব্যবসায়িক কর্মকা- পরিচালনার সুযোগ দেবে।
আফজাল আহমেদ
আম্বরখানা, সিলেট