• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > ইসরাইল যখন নয়া সিলিকন ভ্যালি
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: গোলাপ মুনীর
মোট লেখা:২৩৩
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৬ - জুলাই
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
আইসিটি
তথ্যসূত্র:
প্রচ্ছদ প্রতিবেদন ২
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
ইসরাইল যখন নয়া সিলিকন ভ্যালি
বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো পরিচালনা করছে ইসরাইলি গবেষণাকেন্দ্রগুলো। এসব কোম্পানির মধ্যে আছে সিসকো, মাইক্রোসফট, গুগল, অ্যাপল, আইবিএম,
ওরাকল, এসএপি, ইএমসি, মটোরোলা, এইচপি, ফেসবুক এবং ই-বে।
চারদিকে গুঞ্জন- ইসরাইল কি হতে যাচ্ছে পরবর্তী সিলিকন ভ্যালি।
সে কথা জানিয়েই এ প্রতিবেদনটি লিখেছেন গোলাপ মুনীর
আপনি যদি আগামী দিনের পরবর্তী সিলিকন ভ্যালির উত্থানের স্থানটির খুঁজে থাকেন, তবে সেই স্থানটি হবে ইসরাইলের নেগেভ মরু অঞ্চল। এখানেই চলছে সাইবার সিকিউরিটির নানা ধরনের নতুন নতুন আবিষ্কার-উদ্ভাবন সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের মাধ্যমে। বিরক্তিকর হ্যাকারেরা ইন্টারনেটে যা করছে, ইসরাইলের সাইবার নিরাপত্তার সংশ্লিষ্টতা সম্ভবত এর চেয়েও বেশি। ‘ইসরাইলি ডিফেন্স ফোর্স’ তথা আইডিএফ এর কর্মসক্ষমতা ও সম্পদশালীতার জন্য সুপরিচিত। ইসরাইলের পালমাকিম বিমানঘাঁটি হচ্ছে বিশ্বমানের সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন একটি সামরিক ঘাঁটি। মহাসড়ক ছাড়িয়ে একটি পথ চলে গেছে এই ঘাঁটিতে। এর চারপাশে ভৌত বেড়াহীন উন্মুক্ত ঘাসময় এলাকা। তবে নিরাপত্তার জন্য ঠিকই রয়েছে ভার্চু্যয়াল ফেঞ্চ। এটি দেখতে অনেকটা শিল্পযুগোত্তর পেনসিলভানিয়া বা ওহাইও শহরের মতো। মনেই হবে না এটি বিশ্বসেরা হাইটেক ফাইটিং ফোর্সের একটি বিমানঘাঁটি।
সম্প্রতি সাংবাদিকদের ছোট্ট একটি প্রতিনিধি দল সফর করে এই বিমানঘাঁটি। ‘টেকরিপাবলিক’ নামে নিউজলেটারের পক্ষ থেকে সাংবাদিক জেসন হাইনার এই দলে থেকে এই ঘাঁটি পরিদর্শন করেন। তিনি ‘টেকরিপাবলিক’ নিউজলেটারে লেখেন- ‘আমরা মূল ভবনটির পাশ দিয়ে গাড়ি চালিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলাম সাক্ষাতের স্থানটির দিকে। ইসরাইলি ডিফেন্স ফোর্সের দু’জন হ্যান্ডলার (চলাচল নিয়ন্ত্রণকারী) আমাদের দিকে ফিরে মৃদু হেসে আমাদের স্মরণ করিয়ে দেন- আমরা যে ব্যক্তির সাথে দেখা করতে গিয়েছি, নিরাপত্তার খাতিরে তার নাম শুধু ‘মেজর এস’ উল্লেখ করা যাবে। হ্যান্ডলার দু’জনই তরুণী। উভয়ের পরনেই সবুজ মিলিটারি ইউনিফরম। এরা জানালেন, কালার জানিয়ে দেয় এরা আইডিএফের কোনো ডিভিশনে কাজ করছেন। ইসরাইলে দু’জন কনস্ক্রিপ্ট (বাধ্যতামূলকভাবে সেনাবাহিনীতে নিযুক্ত ব্যক্তি) নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাংবাদিকদের এই ছোট্ট দলটিকে, যারা দেখা করবেন সামরিক কর্মকর্তার সাথে। আর এই সামরিক কর্মকর্তা পরিচালনা করেন এমন একটি অপারেশন, যা লাখ লাখ নাগরিককে প্রতিরক্ষার দায়িত্ব পালন করে।
মেজর এস হচ্ছেন ফার্স্ট ইউএভি (আনম্যানড অ্যায়ারিয়াল ভেহিকল) স্কোয়াড্রনের ডেপুটি কমান্ডার। এটি হচ্ছে ইসরাইলি বিমানবাহিনীর একটি ডিভিশন। তার মুখে শিশুসুলভ হাসি থাকলেও তার বয়স আসলে ৩০। সামরিক বাহিনীতে চাকরি ১০ বছরের। ইউএভি নজর রাখে ইসরাইলি আকাশসীমার ওপর। একই সাথে নজর রাখে তাদের ভাষায় পার্শ্ববর্তী ‘আগ্রাসী প্রতিবেশী অঞ্চলে’র ওপরও। তাদের ভাষায়, এর প্রতিবেশীরা চায় আধুনিক ইসরাইলকে সাগরে নিয়ে ঠেলে দিয়ে অস্তিত্বহীন করে দিতে।
মেজর এসের দেয়া তথ্যমতে, ইসরাইল প্রতিদিন কমপক্ষে ৫০ ঘণ্টার অপারেশন চালায় এই ইউএভি’র ওপর নির্ভর করে। সহজেই অনুমেয়, এর অর্থ হচ্ছে- এরা সব সময় মাল্টিপল লোকেশনে মাল্টিপল অপারেশন পরিচালনা করে। এর মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয় প্রচুর তথ্য-উপাত্ত। মেজর এস বলেন- ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে বছরের প্রতিটি দিনেই তথ্য সংগ্রহ করা। একটি ইউএভি চলে ১০ হাজার ফুট ওপর দিয়ে। আপনি এর শব্দ শুনতে পাবেন না, ভূপৃষ্ঠ থেকে তা দেখতেও পাবেন না।’ অবশ্য ইসরাইলবিরোধীদের অভিমত হচ্ছে- ইসরাইল এই ইউএভি ব্যবহার করে প্রতিবেশী দেশগুলোর ওপর গোয়েন্দা নজরদারির কাজে। এগুলো প্রতিবেশী দেশগুলোর আকাশসীমায় অনুপ্রবেশ করে।
তিনি সাংবাদিকদের হেঁটে হ্যাঙ্গারের দিকে নিয়ে যান, যেখানে ইউএভিগুলো রাখা হয়। পাশেই কমান্ড স্টেশন, যেখানে ইউএভি অপারেটরেরা এগুলো পরিচালনা করেন। মেজর এস বলেন, ‘ইউএভিগুলো হচ্ছে আমাদের ভবিষ্যৎ। ইসরাইলি বিমানবাহিনী প্রচলিত স্কোয়াড্রনগুলো ধীরে ধীরে বন্ধ করে দিচ্ছে। অপরদিকে খুলছে নতুন নতুন ইউএভি স্কোয়াড্রন। তিনি উল্লেখ করেন, ‘এফ-৩৫ হচ্ছে সর্বশেষ মানুষবাহী ফাইটার জেট, যা আমেরিকা তৈরি করতে যাচ্ছে। এটি একটি অপরিহার্য প্রবণতা। আজ আমরা যে যুদ্ধ করছি, ২০ বছর আগে এ যুদ্ধ ছিল না। আজ চলছে এমন এক প্রতিযোগিতা, যেখানে সবাই চায় উন্নততর প্রযুক্তি ও সক্ষমতা।’ তার লক্ষ্য নবতর ড্রোন। সবাই যদি ড্রোন ব্যবহার করে, তবে সেই জিতবে, যার কাছে থাকবে উন্নততর প্রযুক্তি।
উদ্ভাবক ইসরাইল
পার্সোনাল কমপিউটার উত্থানের পর থেকে ইসরাইল নীরবে বড় মাপের অবদান রেখে চলেছে প্রযুক্তির ক্ষেত্রে। এই প্রযুক্তি মানবজাতিকে নিয়ে যাচ্ছে পরিবর্তিত এক বলয়ে। আর তা মানুষের হাতে তুলে দিচ্ছে যুগ যুগ ধরে ঝুলে থাকা নানা সমস্যা সমাধানের অবাক করা সব উপায়। আর গ্লোবাল টেকনোলজি ইকোসিস্টেমে এসব অবদান গত দুই দশকে ত্বরান্বিত হয়েছে সবচেয়ে বেশি।
ইসরাইল হচ্ছে ১৯৮০-র দশকের পিসি বিপ্লবের প্রজেনিটর তথা আদিজনক দেশগুলোর একটি। তখন ইসরাইলের হাইফায় অবস্থিত ইন্টেল ল্যাব ডিজাইন করে ৮০৮৮ চিপ, যা দিয়ে চলে আইবিএম পিসি। ইন্টেলের ইসরাইলি টিম পরবর্তী সময়ে সৃষ্টি করে পেন্টিয়াম চিপ। এই চিপ পিসি কমপিউটিংকে সাধারণ মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। গত দশকের মাঝামাঝি সময়ে ইসরাইলে ইন্টেলের উদ্ভাবকেরা তাদের মার্কিন প্রতিদ্বন্দ্বীদের পেছনে ঠেলে দিয়ে স্পিডের বদলে নজর দেন বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের ওপর। এই সূত্রে এরা নিয়ে আসেন সেন্ট্রিনো চিপ, যা ল্যাপটপের প্রবৃদ্ধি বাড়িয়ে তোলে। এরপর ইন্টেল অগ্রনায়কের ভূমিকা পালন করে মাল্টিকোর প্রসেসরের ক্ষেত্রে, যার ফলে ইন্টেল নিয়ে আসতে সক্ষম হয় এর সয়া কোর প্রোডাক্ট লাইন বা পণ্যসারি। এখন ইন্টেলের ইসরাইলি টিম কোম্পানির মোবাইল প্রসেসর নিয়ে কাজ করছে।
বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো পরিচালনা করছে ইসরাইলি গবেষণাকেন্দ্রগুলো। এসব কোম্পানির মধ্যে আছে সিসকো, মাইক্রোসফট, গুগল, অ্যাপল, আইবিএম, ওরাকল, এসএপি, ইএমসি, মটোরোলা, এইচপি, ফেসবুক, এবং ই-বে। মাইক্রোসফটের সিইও স্টিভ ব্যালমারের সেই বিখ্যাত বক্তব্য- মাইক্রোসফট আমেরিকান কোম্পানির চেয়েও বেশি কিছু এর ইসরাইলি কোম্পানি। কারণ, মাইক্রোসফটের প্রচুর কর্মী রয়েছেন ইসরাইলে। আর এরা যা করছেন, তা কোম্পানির ভবিষ্যতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ইন্টেল ও আইবিএম ইসরাইলে গবেষণাকেন্দ্র চালু করে ১৯৭০-এর দশকে। এরা ভাড়া করে প্রচুরসংখ্যক ইসরাইলি প্রকৌশলী। মাঝেমধ্যেই বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো কিছু নতুন বিকশিত হওয়া কোম্পানি (স্টার্টআপ) কিনে নিতে ইসরাইলে যায় সদর্পে। সিসকো একাই কিনে নিয়েছে কমপক্ষে ১০টি ইসরাইলি স্টার্টআপ। এর মধ্যে সিসকো ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে সাড়ে ৪৭ কোটি ডলার দিয়ে কিনে নেয় ‘ইন্টুসেল’। ২০১৩ সালের জুলাইয়ে গুগল ১০০ কোটি ডলার দিয়ে কেনে জনপ্রিয় ‘ওয়েজ’ ম্যাপিং সফটওয়্যার।
ইসরাইলকে এখন আখ্যায়িত করা হচ্ছে ‘দ্য স্টার্টআপ ন্যাশন’ নামে। কারণ, বিশ্বের মধ্যে মাথাপিছু স্টার্টআপের সংখ্যা এখন ইসরাইলেই সবচেয়ে বেশি। প্রতি ১৮৪৪ জন ইসরাইলি নাগরিকপিছু রয়েছে একটি স্টার্টআপ। এই হার যুক্তরাষ্ট্রের হারের তুলনায় আড়াই গুণ। বেশি সংখ্যায় ইসরাইলি কোম্পানি তালিকাভুক্ত হচ্ছে ঘঅঝউঅছ-এ। এসব ইসরাইলি কোম্পানির সংখ্যা ইউরোপীয় দেশগুলোর মোট কোম্পানির সংখ্যার চেয়ে বেশি। ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রাপ্যতার দিক থেকে ইসরাইলের অবস্থান তৃতীয়। কোয়ালিফাইড সায়েন্টিস্ট ও ইঞ্জিনিয়ার প্রাপ্যতার দিক থেকে বিশ্বে দ্বিতীয়। যদিও এটি একটি ছোট্ট দেশ, এর আয়তন মোটামুটিভাবে নিউজার্সি রাজ্যের আয়তনের সমান। লোকসংখ্যা ৭৫ লাখ। নিউইয়র্ক শহরেও এর চেয়ে বেশি লোক বসবাস করে। এই দেশটির জনগণ অব্যাহত নিরাপত্তা হুমকিতে ভোগে। জটিল প্রশ্ন হচ্ছে- কী করে ছোট্ট এই দেশটি প্রযুক্তিবিশ্বের প্রধান খেলোয়াড় হয়ে উঠল? বিশ্বের প্রচুরসংখ্যক সাংবাদিক, গবেষক ও সরকারি কর্মকর্তা এই বিষয়টি খতিয়ে দেখেছেন। এরা একে অপরের সাথে মতবিনিময় করেছেন ইসরাইলের প্রাযুক্তিক সাফল্যের জেনেসিস বা সূচনাবিন্দু সম্পর্কে জানার ব্যাপারে।
১৯৯০-এর দশকে প্রচুরসংখ্যক রুশ প্রত্যাবাসী ইসরাইলে যায়। এরা ইসরাইলের প্রাযুক্তিক উন্নয়নে বড় ধরনের ভূমিকা পালন করে। ইসরাইলি নিরাপত্তা বাহিনীর উদ্যোক্তা শ্রেণীতে বাধ্যতামূলক ভর্তি করায় এ ক্ষেত্রে বড় ধরনের অগ্রগতি আসে। ভূরাজনৈতিক অব্যাহত দ্বন্দ্বের মুখে তাদের মধ্যে এমন উপলব্ধি জন্মে যে, নিজেদের সমস্যা তাদের নিজেদেরকেই সমাধান করতে হবে, যা অন্যদের দিয়ে সম্ভব নয়। আরেকটি বিষয় হলো, ইসরাইলের প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন বিজ্ঞানী ও বুদ্ধিজীবী, যারা নিশ্চিতভাবে প্রযুক্তির উচ্চ সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ সৃষ্টির প্রাথমিক কাজটি করে গেছেন। কিন্তু সর্বোপরি সীমিত সম্পদের এত ছোট একটি দেশ ও একই সাথে নানাধর্মী নিরাপত্তা হুমকি তাদেরকে এই উপলব্ধি দেয় যে, অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে তাদের থাকা চাই উন্নততর হাতিয়ার, স্বয়ংক্রিয়তা এবং উদ্ভাবনকুশলতা। অনেকের ধারণা, তাদের নিরাপত্তা হুমকিই তাদেরকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর করে তুলেছে। সেই সূত্রেই ইসরাইলে গড়ে উঠেছে সাইবার সিকিউরিটি সম্পর্কিত বেশ কিছু ‘সেন্টার অব এক্সেলেন্স’। সাইবার সিকিউরিটি দেশটির একটি গুরুত্বপূর্ণ রফতানি খাত। ২০১৩ সালে আইবিএম, সিসকো ও জিই ইসরাইলি সাইবার সিকিউরিটি কোম্পানিতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বিনিয়োগ করে। আর যেহেতু ক্লাউড কমপিউটিংয়ের বিকাশের কারণে নয়া সিকিউরিটি ও প্রাইভেসির প্রশ্ন উঠেছে, তাই এই প্রবণতা ত্বরান্বিত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
৩ সেপ্টেম্বর ২০১৩। এই দিনটিতে সূচিত হয় ইসরাইলের টেক ইন্ডাস্ট্রি ও সাইবার সিকিউরিটির ইতিহাসের এক অধ্যায়। প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ইসরাইলে বি’র শেভায় বেন গুরিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে উদ্বোধন করেন ‘অ্যাডভান্সড টেকনোলজি পার্ক’ তথা এটিপি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নেতানিয়াহু বলেন- ‘আজ আমরা চালু করছি ইকোনমিক অ্যাঙ্কর, যা বি’র শেভাকে পরিণত করবে সাইবারমেটিকস ও সাইবার সিকিউরিটির একটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কেন্দ্রে। আজকের দিনটি ইসরাইল রাষ্ট্রের ইতিহাস পাল্টে দেবে আর আমরা আজ এ কাজটি করছি এই বি’র শেভায়।’
সাংস্কৃতিক, ভৌগোলিক ও প্রাযুক্তিক দিক থেকে কিছু বীজ বপন করা হয়েছিল তখন, যখন দেশটির প্রথম প্রধানমন্ত্রী বেন গুরিয়ান জন্ম দিয়েছিলেন আধুনিক ইসরাইল রাষ্ট্রের। তবু এটি একটি ঐতিহাসিক টার্নিং পয়েন্ট। এটিপি সৃষ্টি করেছে অ্যাকাডেমিয়া, টেক কোম্পানি ও ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) মধ্যে এক প্রতীকী সম্পর্ক। এই তিনের সহাবস্থান একটি লাগোয়া ক্যাম্পাসে। ফলে এর যেকোনো প্রকল্প নিয়ে সহজেই পরস্পরকে সহযোগিতা করতে পারে। এদের মধ্যে চলে ডাটা শেয়ার, মেধা-ভাবনাচিমত্মা ও অন্যান্য সম্পদ বিনিময়। গত বছর সেপ্টেম্বরে উদ্বোধন করা হয় এটিপি’র এক নম্বর ভবন। এখানে একটি কমার্শিয়াল পার্কে টেক ইন্ডাস্ট্রির বসবাস। ২৩ একর জায়গাজুড়ে থাকা এই পার্কে অফিস স্পেস, ল্যাব, একটি হোটেল ও একটি সম্মেলনকেন্দ্রসহ ১৬টি ভবন। নয়া ওয়াকিং ব্রিজের মাধ্যমে এটিপি সংযুক্ত রয়েছে বিজিইউ তথা বেন গুরিয়ান ইউনিভার্সিটির মেইন ক্যাম্পাসের সাথে। গড়ে তোলা হয়েছে একটি নতুন ট্রেনলাইন, যাতে প--তবর্গ ও পেশাজীবীদের দ্রুত বি’র শেভা থেকে তেলআবিবে নেয়া যায়। তেলআবিবকে বিবেচনা করা হয় ইসরাইলের বর্তমান টেকনোলজি ক্যাপিটাল।
এক নম্বর ভবনে যেসব বড় বড় টেক ইন্ডাস্ট্রি ভাড়ায় জায়গা নিয়ে ব্যবসায় শুরু করেছে, এগুলোর মধ্যে আছে- ডয়েচে টেলিকম, ইএমসি, আরএসএ এবং ওরাকল। একই সাথে এসেছে তিনটি ইনকিউবেটর- জেরুজালেম ভেঞ্চার পার্টনার’স সাইবার ল্যাবস, এলবিট ইনকিউবিট এবং বিজিএন টেকনোলজিস। উল্লেখ্য, বিজিএন হচ্ছে বিজিইউর একটি প্রতিষ্ঠান, যা বিজিইউর বাণিজ্যিক গবেষণা বাজারজাত করে। ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রতিষ্ঠানগুলো আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে তাদের যেসব ব্যবসায় ২০২৫ সালে চালু হবে, সেগুলোর জন্য দুই নম্বর ভবনে স্থান নেয়ার জন্য। অ্যাকাডেমিয়া ও ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে সেতুবন্ধের একটি ক্যাটালিস্ট বা অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে বিজিএন টেকনোলজিস। এটি ‘টেকনোলজি ট্র্যান্সফার’ নামে একটি অনন্য মডেল ব্যবহার করে। এই উপায়ে একটি বিশ্ববিদ্যালয় যেসব মূল্যবান অগ্রগতি সাধন করে, তা একটি কোম্পানির সাথে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে অথবা একটি কোম্পানির কাছে প্যাটেন্ট বিক্রি করে দিয়ে বাজারে নিয়ে আসে। বিজিএন টেকনোলজিস চুক্তি স্বাক্ষর করেছে দেড়শ’রও বেশি কোম্পানির সাথে। এসব কোম্পানির মধ্যে আছে- এক্সন মোবিল, জনসন অ্যান্ড জনসন, সিমেন্স এবং জেনারেল মোটরস। বিজিএন টেকনোলজিস এর নানা উদ্যোগে এতটাই সফলতা পেয়েছে যে, এখন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় এই উদ্যোগ পরীক্ষা-নিরীক্ষার ওপর সমীক্ষা চালাচ্ছে।
বিজিএন টেকনোলজিস পুরোপুরি বিজিইউর মালিকানাধীন। কিন্তু চলে একটি স্বাধীন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান হিসেবে। বিজিএন টেকনোলজিসের সিইও নেটা কোহেন বলেন- ‘অ্যাকাডেমিয়া ও ইন্ডাস্ট্রির রয়েছে আলাদা লক্ষ্য, আলাদা ভাষা ও সংস্কৃতি। বিজিএন টেনোলজিস ব্যবসায় ও সঞ্চালন একসাথে মিলিয়ে দেয়। কিছু কোম্পানি চায় শুধু প্রযুক্তি উন্নয়নের স্বত্ব কিনে নিতে। অন্যরা চায় জয়েন্ট ভেঞ্চারে নতুন একটি করপোরেশন চালু করতে। আবার কেউ কেউ চায় বিজিএন তাদের আরঅ্যান্ডডি’র কাজ করুক। আর পণ্য নিয়ে বাজারে নিয়ে যাবে কোম্পানি। এখন বিজিইউর গবেষণা-আয় আসে ইন্ডাস্ট্রির সাথে বিজিএন টেকনোলজির সমঝোতার মাধ্যমে। যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ইন্ডাস্ট্রির সাথে সমঝোতা করে আয় করে গড়ে মোট গবেষণা আয়ের মাত্র ৭ শতাংশ। বিজিইউ আশা করছে, বিজিএন টেকনোলজির মাধ্যমে এর আয়ের অঙ্ক বাড়িয়ে তুলতে পারবে।
একটি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ইসরাইলি টেকনোলজির এপিসেন্টার বিবেচনায় বিজিইউ দীর্ঘ সময় পেছনে ছিল জেরুজালেমের হিব্রম্ন ইউনিভার্সিটি, তেলআবিবের কাছের ওয়েজম্যান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স, হাইফায় অবস্থিত টেকনিয়নের (ইসরাইল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি)। এর কারণ- টেকনিয়ন (১৯১২), হিব্রম্ন ইউনভার্সিটি (১৯১৮) ও ওয়েজম্যান (১৯৩৪) বিজিইউর কয়েক দশক আগে প্রতিষ্ঠিত। বিজিইউ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৯ সালে। এর আংশিক কারণ ভৌগোলিক। ওয়েজম্যান, হিব্রম্ন ও টেকনিয়নের অবস্থান সবচেয়ে বড় ও বহুল জনঅধ্যুষিত তিনটি নগরীতে- যথাক্রমে তেলআবিব, জেরুজালেম ও হাইফায়।
তেলআবিব এখন ইসরাইলের সর্বজনস্বীকৃত টেক ক্যাপিটাল। আসলে ওয়ার্ল্ড স্ট্রিট একে অভিহিত করেছে ‘ইউরোপের মূল টেকনোলজি হাব’ নামে। তেলআবিবের লোকসংখ্যা মাত্র ৪ লাখ। এর আয়তন বি’র শেভার আয়তনের দ্বিগুণ। তেলআবিবে রয়েছে ১২০০ হাইটেক কোম্পানি ও ৭০০ প্রথমদিকের স্টার্টআপ। ইসরাইলের সিড-স্টেজের স্টার্টআপের দুই-তৃতীয়াংশই রয়েছে তেলআবিব মেট্রোপলিটন এলাকায়। তা সত্ত্বেও এটিপি এখন হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে ইসরাইলের অনেক কিছুই পাল্টে দেয়ায়। এটি ইসরাইলি টেক কমিউনিটির নেক্সাস তথা বন্ধন আরও ৭০ মাইল উত্তর-পূর্বের বি’র শেভায় সরিয়ে নিচ্ছে। তেলআবিব ও বি’র শেভা এখন ইসরাইলের টেক হটস্পট।
নয়া আইডিএফ টেকনোলজি ক্যাম্পাস হবে এটিপির কমার্শিয়াল বিল্ডিংয়ের ঠিক পরপরই। এর ক্যাপাসে থাকবে নিজস্ব কানেক্টিং ওয়াকওয়ে। এটি হবে আইডিএফের এলাইট টেকনোলজি ইউনিটের ‘নিউ হোম’, যা রিলকেট ও সেন্ট্রালাইজ হবে বি’র শেভায়। এতে থাকবে আইডিএফের ‘সেন্টার অব কমপিউটিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম’-এর ৫ হাজার পেশাজীবী স্টাফ ও সাইবার সোলজার। এসব কাজে বিপুল অংশই প্রত্যাবাসিত হবে তেলআবিব থেকে। কারমি’র মতে- ‘এসব আইডিএফ ইউনিট নজর দেবে প্রচলিত সাইবার সিকিউরিটিকে একীভূত করাসহ ইসরাইলি সীমান্ত ও সেন্সর থেকে পাওয়া ডাটা অ্যানালাইজ করার প্রতি। এসব সেন্সর ভৌত ও ডিজিটাল সিকিউরিটি সম্পর্কিত তথ্য। আইডিএফ পরিকল্পনার একটি বড় উপাদান হচ্ছে এমন একটি ফ্যাসিলিটি গড়ে তোলা, যা অ্যাকাডেমিয়া ও ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে সহযোগিতার পথ প্রশস্ত করে দেবে। এটি দেখতে আর্মি ব্যারাকের মতো দেখাবে না। এমনকি এর চারপাশে কোনো বেড়া পর্যন্ত থাকবে না। এর থাকবে একটি ভর্চু্যয়াল বেড়া।
সাইবার সিকিউরিটি দক্ষতা-ক্ষমতা
বেন গুরিয়ান বিশ্ববিদ্যালয় গত এক দশক ধরে নীরবে-নিভৃতে বাড়িয়ে তুলছে এর সাইবার সিকিউরিটির ক্ষমতা ও দক্ষতা। এটি ক্ষেত্র তৈরি করেছে এক ধরনের সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের। আর এটিই হচ্ছে এটিপি’র ভিত। ডয়েচে টেলিকম বেন গুরিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিল টেক গবেষণার ক্ষেত্রে একটি মিত্রের খুঁজে। বিজিইউ এই ডয়েচে টেলিকমের সাথে পার্টনারশিপ গড়ে তোলে। ২০০৪ সালে জার্মানির বিখ্যাত টেলিযোগাযোগ কোম্পানি গড়ে তোলে ‘টেলিকম ইনোভেশন ল্যাবরেটরিজ’ সংক্ষেপে টি-ল্যাবস। টি-ল্যাবস একটি অ্যাফিলিয়েটেড প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিজিইউ-কে বেছে নেয় সিকিউরিটির ওপর কাজ করার জন্য। টি-ল্যাবস তিনটি ল্যাব খোলে জার্মানিতে, আর একটি সিলিকন ভ্যালি ইনোভেশন সেন্টার খোলে ক্যালিফোর্নিয়ার মাউন্টেন ভিউতে।
বিজিইউর ২০ জন ছাত্র (১৮ জন আন্ডার গ্র্যাজুয়েট ও ২ জন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট) কাজ করছে এর টেলিকম ইনোভেশন ল্যাবরেটরিজে। এখন বিজিইউ সাইবার সিকিউরিটির ওপর মাস্টার ডিগ্রি কোর্স পড়াচ্ছে (কারিগরি দিক থেকে সাইবার সিকিউরিটির ওপর বিশেষ জোর দিয়ে ইনফরমেশন সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারিং)। এই গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রির সাথে টেলিকম ইনোভেশন ল্যাবরেটরিজের কাজের আমত্মঃসম্পর্ক রয়েছে। বিজিইউ যেসব গবেষণা করছে, এর বেশিরভাগই টি-ল্যাবসের গুরুত্বপূর্ণ সিকিউরিটি ইস্যুগুলোর সাথে সম্পৃক্ত। বিশেষ করে এরা কাজ করছে সোশ্যাল মিডিয়া ও মোবাইল কমপিউটিংয়ের সিকিউরিটির ওপর। কিন্তু ডয়েচে টেলিকম বিজিইউর কাছে আসে সুনির্দিষ্ট কিছু সমস্যা নিয়ে।
বিজিইউর ডয়েচে টেলিকম ল্যাবরেটরিজের ডিরেক্টর ও বিজিইউর ইনফরমেশন সিস্টেমস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক উভাল এলোভিচি বলেন- ‘ডয়েচে টেলিকম আমাদের বলেছে অ্যান্ড্রয়িড বিশ্লেষণ করে জানাতে, এটি নিরাপদ কি না।’ ড. এলোভিচির গ্র্যাজুয়েট ছাত্রদের টিম সিদ্ধান্ত জানায়- ‘অ্যান্ড্রয়িড তুলনামূলকভাবে নিরাপদ।’ এরা এর বড় একটি দুর্বলতার কথা চিহ্নিত করেন। তা হচ্ছে- অ্যান্ড্রয়িড আপডেটগুলো ব্যবহার করা যাবে একটি ডিভাইস হাইজ্যাক করার কিংবা কোড ইনজেক্ট করার কাজে। তার টিম প্রধানত আবিষ্কার করে- ‘আজকের যেকোনো মোবাইল হামলাও কম্প্রোমাইজের শিকার হতে পারে। এর কম্প্রোমাইজের জন্য রয়েছে অনেক অনেক উপায়।’ তা সত্ত্বেও তাদের গবেষণায় উদঘাটিত হয়- মোবাইল ডিভাইস থেকে ক্রাউডসোর্সিং ইনফরমেশন ব্যবহার করা যাবে জনগণের কল্যাণে। যেমন- আইফোনের জাইরোস্কোপ (ঘূর্ণমান বস্ত্তগুলোর গতিতত্ত্ব বিশ্লেষণ যন্ত্র) মোশন ডিটেক্টর সঠিকভাবে ভূমিকম্প ডিটেক্ট করার জন্য যথেষ্ট সংবেদনশীল। যদি ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায় প্রচুরসংখ্যক আইফোন ব্যবহারকারী এই সার্ভিস পেতে আগ্রহী হয়, তবে এর মাধ্যমে দ্রুত একটি কম খরচের ভূমিকম্প পূর্বাভাস ব্যবস্থা গড়ে তোলা যাবে। এলোভিচির টিম বড় অবদান রেখেছে চারপাশের সামাজিক গণমাধ্যমের সিকিউরিটি ও প্রাইভেসি সমস্যা সমাধানে। ‘আমরা প্রাইভেসি সমস্যা নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন’- বলেন এলোভিচি।
এলোভিচি’র বিজিইউ গ্র্যাজুয়েট ছাত্রেরা ফেসবুক, টুইটার ও লিঙ্কডইন ততটা সর্বব্যাপী হওয়ার আগে থেকেই বেশ কয়েক বছর ধরে সামাজিক নেটওয়ার্কের প্রাইভেসি সমস্যা নিয়ে গভীর অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে। অবশ্য তাদের গবেষণা এখন আগের চেয়ে আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। এদের একটি বড় আবিষ্কারের মধ্যে রয়েছে- ওয়েবে থাকা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত কিংবা আদৌ কোনো সোশ্যাল নেটওয়ার্কে অংশ না নেয়া একজন ব্যক্তি সম্পর্কিত কী পরিমাণ ডাটা আবিষ্কার করা যাবে। বয়স, শিক্ষা, মূল আগ্রহ ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বন্ধুর ফেসবুকের মাধ্যমে বের করে আনা সম্ভব। এর জন্য শুধু জানা দরকার, আপনার ঘনিষ্ঠ বন্ধু কারা। আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থাকাটা জরুরি নয়। এলোভিচি বলেন- আপনার প্রোফাইল এখন আমাদের হাতে, আপনার হাতে নয়। এটি আমাদের বন্ধুদের হাতে। এ বিষয়ের গবেষণাকর্মটি প্রকাশ করা হয়েছিল। কিন্তু পরে বিতর্কিত হওয়ার কারণে ওয়েব থেকে তুলে নেয়া হয়। ভয় ছিল, ইনফরমেশন গড়পড়তা ব্যবহারকারীর চেয়ে বেশি উপকারী হবে মন্দ লোকদের জন্য। এখন এরা এমন একটি ব্যবস্থা উদঘাটন করছে, জনগণ যাতে এর সাথে সংযুক্ত হতে পারে। আর এত সহজে প্রোফাইলড হওয়া যাবে না।
বিজিইউর গবেষণায় দেখা গেছে- ফেসবুক অ্যাকাউন্টের ৫-১০ শতাংশই ভুয়া। আর এসব ভুয়া অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করা হয় অনিষ্টকর কাজে। বিশেষ করে তা ব্যবহার হয় পেডোফাইলের মাধ্যমে। আর মাঝেমধ্যে ব্যবহার হয় ইন্ডাস্ট্রিয়াল গোয়েন্দাদের এজেন্টের মাধ্যমে। এই প্রকল্পটির নেতৃত্ব দিচ্ছে প্রোগ্রামের স্টার গ্র্যাজুয়েট ছাত্র মাইকেল ফায়ার। তার সাথে আছে আরও দুইজন আন্ডার গ্র্যাজুয়েট ছাত্র। ছাত্রেরা শুধু সমস্যাটি চিহ্নিতই করেনি, এর সমাধানও কোড করেছে। ২০১২ সালে এরা সৃষ্টি করে ‘সোশ্যাল প্রাইভেসি প্রটেক্টর’। এটি কাজ করে একটি ফায়ারফক্স অ্যাড-অন অথবা যেকোনো ব্রাউজারের জন্য একটি ফেসবুক অ্যাপ হিসেবে। এটি স্ক্যান করে ফেসবুকে আপনার ফ্রেন্ডলিস্ট। আর কানেকটেডনেস অ্যালগরিদমের ওপর ভিত্তি করে এটি তৈরি করার পর ফ্ল্যাগ করে ‘পটেনশিয়ালি-সাসপেনসিয়াস’ অ্যাকাউন্টগুলো, যেগুলো আপনি ফ্রেন্ডেড করেছেন। এরপর আপনি হয় তাদের দেখতে পাওয়া ইনফরমেশন রেস্ট্রিক্ট করতে পারেন, অথবা তাদেরকে ডিফেন্ডেড করতে পারেন।
মাইকেল ফায়ার ইনফরমেশন সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ের একজন পিএইচডি ছাত্র। তিনি বলেন, ফেসবুক উৎসাহিত করে- যত বেশি সংখ্যায় পার অন্যদের কানেক্ট কর। কিন্তু আমরা বলি, ব্যবহারকারীর সংখ্যা সীমিত কর। আমরা এই প্রথমবারের মতো একটি অ্যালগরিদম দিয়েছি, যাতে বৈজ্ঞানিকভাবে নির্ণয় করা যায় কাকে ফ্রেন্ডলিস্ট থেকে বাদ দিতে হবে। আমাদের অ্যাপের একটি গুরুত্বপূর্ণ ফিচার হচ্ছে, এর মাধ্যমে বাবা-মায়েরা আগের চেয়ে আরও ভালোভাবে তার সমত্মানদের প্রাইভেসি রক্ষা করতে পারবেন একটিমাত্র ক্লিকের মাধ্যমে। এখন আর তাদের অধিকতর জটিল ফেসবুক প্রাইভেসি সেটিংস নেভিগেট করতে হবে না।
মোবাইল ডিভাইস ও সোশ্যাল নেটওয়ার্কের বাইরে বিজিইউ গবেষকেরা জড়িত রয়েছেন টেলিকম ইনোভেশন ল্যাবরেটরিজের সাথে। এরা মোকাবেলা করছেন ‘অ্যাডভান্সড পারসিসটেন্ট থ্রেটস’ (এপিটি), হানিটোকেন এবং আরও অনেক কিছু। আপনি যদি ডয়েচে টেলিকমের সাথে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে মাধ্যমে বিজিইউর ইতোমধ্যে সম্পন্ন কাজের দিকে নজর দেন, তখন বুঝতে পারবেন এরা কেনো এতটা পাগলপারা গোটা টেক ইন্ডাস্ট্রিকে একটি মাত্র সড়কের পাশে নিয়ে আসার ব্যাপারে। এরপরই থাকছে ইসরাইলের নিরাপত্তা বাহিনীর সব টেক ট্যালেন্টেরা, যারা অসম্ভব ধরনের সব সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে সহযোগিতা করতে প্রস্ত্তত, যাতে ইসরাইলের প্রাযুক্তিক অগ্রগতি দ্রুত আরও সামনে নিয়ে যাওয়া যায়।
নেগেভের উত্থান
বাইবেলে ভবিষ্যদ্বাণী আছে- ÔThe wilderness and the solitary place shall be glad for them; and the desert shall rejoice, and blossom as the rose. It shall blossom abundantly, and rejoice even with joy and singing.ÕÑ Isaiah 35:1-2
ইসরাইলের ফাউন্ডিং ফাদার ও প্রথম প্রধানমন্ত্রী ডেভিড বেন গুরিয়ান তার কাজের টেবিলে বাইবেলের এই উদ্ধৃতি গেঁথে রাখতেন। তিনি নেগেভ মরুভূমি সম্পর্কে তার বিশ্বাস ছিল- বিজ্ঞান এনে দেবে নেগেভের ঐশ্চর্য। নেগেভে রয়েছে বেন গুরিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়। স্থানীয়রা সংক্ষেপে একে বিজিইউ নামেই সমধিক চেনে-জানে। নেগেভ মরুভূমির উত্তর কিনারার বি’র শেভায় রয়েছে এই বিজিইউ। এটি কাজ করে ইসরাইলের সাংস্কৃতিক ও প্রশাসনিক রাজধানী হিসেবে, কখনও কখনও যা অভিহিত হয় বি’র শেভা নামে। বর্তমানে বি’র শেভায় বাস করে ২ লাখ মানুষ। ইসরাইলের দ্রুত বেড়ে ওঠা নগরীগুলোর মধ্যে বি’র শেভা একটি। নেগেভ মরুভূমিতে বিচরণ করে ১ লাখ ৭০ হাজার আধা-অস্থায়ী আরব বেদুইন। দ্রুত বেড়ে ওঠা আধুনিক সভ্যতার এই সময়ে এবং ইসরাইলের মতো জ্ঞান-বিজ্ঞানে অগ্রসর একটি দেশে আরবদের এই আধা-বেদুইন হয়ে থাকাটা অবিশ্বাস্য বলেই মনে হয়। যাই হোক, বিজিইউয়ে স্বল্পসংখ্যক আরব বেদুইনকেও পড়াশোনা করতে দেখা যায়।
ইসরাইলের ৬০ শতাংশ ভূমিজুড়ে এই নেগেভ। কিন্তু নেগেভে বসবাস করে ইসরাইলের মাত্র ৯ শতাংশ মানুষ। তবে ইসরাইল এই নেগেভ মরুভূমিকে পাল্টে দিয়েছে। এটি বিশ্বের এমন এক মরুভূমি, যার মরুভূমির পরিমাণ শুধুই কমে আসছে। হাইটেক ও ভৌগোলিক গবেষণার মাধ্যমে ইসরাইল এর মরুভূমি হওয়ার সুবিধাকে যথেষ্ট কাজে লাগাচ্ছে। এটি এখন একটি উৎপাদনশীল ও বসবাস উপযোগী স্থান। ইসরাইল পশুচারণের ধরন পাল্টে দিয়েছে। অবলম্বন করছে প্রাচীন নাবাতাইয়ান চাষ কৌশল। এখান নেগেভ বিশ্বের সেরা সৌরবিদ্যুৎ গবেষণার স্থান। ইসরাইল দেশের ৭০ শতাংশ বর্জ্যপানি ব্যবহার করে। এই পানির পুনঃব্যবহার হয় অনুর্বর জমির চাষে।
ডেভিড বেন গুরিয়ান ও ইসরাইলের অন্য রাজনীতিকেরা গত ৬ দশক ধরে বলে আসছেন নেগেভ হচ্ছে ‘ফিউচার অব দ্য কান্ট্রি’। তবে বাস্তবে ইসরাইলিরা খুব ধীরগতিতে নেগেভ অঞ্চলে গিয়ে বসবাস করছে। এই কিছু দিন আগেও বি’র শেভাকে ভাবা হতো দূরবর্তী প্রদেশ। অনেক নাগরিক ভাবত, এটি খুবই প্রত্যন্ত অঞ্চল। তবে বিগত দশকে বি’র শেভায় এসেছে এক ধরনের সাংস্কৃতিক গতি। সেখানে গড়ে উঠেছে শিল্পকলা প্রতিষ্ঠান, থিয়েটার ও লাইব্রেরি। এখন ইসরাইলের জাতীয় সরকার, আইডিএফ ও টেক ইন্ডাস্ট্রি নেগেভে ঘটিয়েছে অর্থনৈতিক ও জনসাংখ্যিক প্রবৃদ্ধি। প্রাক্কলিত হিসেবে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালে নেগেভের লোকসংখ্যা আজকের তুলনায় দ্বিগুণ হয়ে ১২ লাখে পৌঁছবে।
এর পেছনে ইতিবাচক ভূমিকা রয়েছে এটিপি’র। কারমি বলেন- ‘এটিপির মৌল ধারণা হচ্ছে, এই পার্ক আমাদের গ্র্যাজুয়েট, কমপিউটার প্রকৌশল, কমপিউটার বিজ্ঞান, ডাটা সিস্টেম ও সব ধরনের হাইটেক বিভাগের ছাত্রদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করা, যাতে এরা তেলআবিবে ফিরে না গিয়ে নেগেভেই স্থায়ীভাবে থেকে যায়।’ তা সত্ত্বেও নাগরিক সাধারণকে বি’র শেভায় আনার পথে একটি বাধা হচ্ছে, এটি গাজা থেকে মিসাইল রেঞ্জের মধ্যে অবস্থিত। নিয়মিত এখানে মিসাইল হামলা হয়। এখানে নিয়মিত সাইরেন বাজিয়ে মিসাইল হামলার ব্যাপারে নাগরিকদের সতর্ক করা হয়। ইসরাইলের নতুন ‘আয়রন ডোম’ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এই হামলার সম্ভাবনা কিছুটা কমিয়ে দিয়েছে। এরপরও বিজিইউ গবেষক, আইডিএফ সাইবার সোলজার কিংবা বাণিজ্যিক পেশাজীবীরা তাদের কাজ পুরোদমে চালিয়ে যাচ্ছেন। আর তা ইসরাইলের টেক ইনোভেটর হিসেবে সাফল্যের পেছনে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে। বি’র শেভায় এটিপি’র প্রতিষ্ঠাকে বিবেচনা করা হবে নেগেভের উন্নয়নের জন্য একটি টার্নিং পয়েন্ট। এটিপি, বিজিইউ ও রাষ্ট্র ইসরাইল সাইবার সিকিউরিটিকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে গেছে অ্যাকাডেমিয়া, ইন্ডাস্ট্রি ও আইডিএফের সহয়োগিতা নিয়ে। ইসরাইল এখন একুশ শতকের সাইবার সিকিউরিটি মোকাবেলায় পুরোপুরি সক্ষম। এর ইনকিউবেটরগুলো বিশ্ব সাইবার সিকিউরিটি বাণিজ্য পরিচালনা করছে বেশ ভালোভাবেই।
আগামীর সিলিকন ভ্যালি
বিজিইউর অ্যাডভান্সড টেকনোলজি পার্ক রূপকল্প এসেছিল অভিশে ব্র্যাভারমেনের কাছ থেকে। তিনি বিজিইউ পরিচালনা করেন ১৯৯০ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সময়ে। এর আগে তিনি ছিলেন বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র ইকোনমিস্ট। সাবেক অর্থনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ ও প্রশাসক ব্র্যাভারমেন এখন ইসরাইলের বিধানসভা নেসেটের সদস্য।
প্রথমত, এখানে বড় অঙ্কের ভেঞ্চার ক্যাপিটাল বিনিয়োগ প্রয়োজন। বিশ্বের মধ্যে মাথাপিছু ভেঞ্চার ক্যাপিটাল সংগ্রহে ইসরাইল সেরা দেশ। ইসরাইলিরাও সম্পদশালী। সিলিকন ভ্যালির লিগে বিগ গেম খেলতে হলে নেগেভকে তেমন একটা ইকোসিস্টেমও গড়ে তুলতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র বছরে তিন হাজার কোটি ডলারের ভেঞ্চার ক্যাপিটাল বিনিয়োগ সৃষ্টি করে। ইসরাইল সৃষ্টি করে মাত্র ২০০ কোটি ডলার।
দ্বিতীয়ত, সাধারণত ইসরাইল এবং বিশেষত নেগেভের প্রয়োজন ফ্ল্যাগশিপ টেকনোলজি ব্র্যান্ড। এ ছাড়া আমেরিকার কাছে বিক্রির পরিবর্তে ইসরাইলকে এর নিজস্ব শক্তিতে হয়ে উঠতে হবে ইকোনমিক অ্যাঙ্কর। এর প্রয়োজন এর নিজস্ব গুগল, অ্যাপল, মাইক্রোসফট, ইন্টেল কিংবা অ্যামাজন সৃষ্টি করতে। কিংবা কমপক্ষে এমন কয়েকটি এর থাকা চাই, যার সদর দফতর থাকবে নেগেভে, এটিপি’র উৎসঙ্গ হিসেবে।
এরপরও যদি আপনি এটুকু জানতে চান, বিশ্বের কোন স্থানটি হবে পরবর্তী সিলিকন ভ্যালি, তবে নেগেভের বেন গুরিয়ান বিশ্ববিদ্যালয় হবে এর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান

পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০১৬ - জুলাই সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস