লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
জাদুকরী স্মার্টপেন
যদি এমন হয়- আপনি কলম দিয়ে লিখবেন খাতায়, কিন্তু এর প্রতিলিপি পাবেন কমপিউটারে। শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও আজ তা বাস্তব। ওটিএম টেকনোলজিস উদ্ভাবিত একটি স্মার্টফোন আপনাকে দেবে এই অবাক করা সুযোগ। এর নাম ফ্রি (Phree) স্মার্টপেন। এটি এক ধরনের ডিজিটাল পেন। এই ফ্রি স্মার্টপেন হচ্ছে বিশ্বের প্রথম ‘আনরেস্ট্রিকটেড-হাই রেজ্যুলেশন-রাইট-ভার্চু্যয়ালি-অ্যানিহয়ার’ মোবাইল ডিভাইস। শুধু হাতে লেখা নয়, স্কেচও ডিজিটাইজড করতে পারে এই স্মার্টপেন। আরও মজার ব্যাপার হলো- শুধু খাতায় লেখা নয়, লিখতে পারবেন নিজের খুশিমতো যেকোনো স্থানে, যেখানে-সেখানে- টেবিল, চেয়ার, ফ্লোর, কাঁচ, এমনকি হাতের চামড়ার ওপরেও কিংবা যেকোনো সমতলের ওপর। এসব লেখার ডিজিটাইজড ভার্সন পাওয়া যাবে আপনার কমপিউটার যন্ত্রে। এই স্মার্টপেনের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো- এতে রয়েছে আরেকটি দুর্দান্ত ফিচার। এই স্মার্টফোনের একদিকে রয়েছে ছোট্ট একটি স্ক্রিন। এটি আপনার ফোনের সাথে কম্প্যাটিবল। ফলে চটজলদি টেক্সটের রিপ্লাই করা, কোনো নাম্বার ডায়াল করা, এমনকি এর সাহায্যে কথা বলাও সম্ভব। নিশ্চয়ই এটি একটি জাদুকরী কলম। হাতের খাতা-কলম ছুড়ে ফেলে কিবোর্ডে বসে লেখালেখি করে আসলে কলমকে চিরদিনের জন্য বিদায় জানাতে আমরা যখন উন্মুখ, ঠিক তখনই আমরা হাতে পেতে যাচ্ছি এই জাদুকরী ডিজিটাল স্মার্টপেন।
নিশ্চয় জানতে ইচ্ছা করছে, কীভাবে কাজ করে ওএমটি টেকনোলজিস উদ্ভাবিত এই স্মার্টপেন। এই ফ্রি স্মার্টপেনকে প্রথমে বস্নুটুথের মাধ্যমে স্মার্টফোন বা ট্যাবলেটের সাথে সংযুক্ত করতে হয়। টার্গেট ডিভাইস থেকে কয়েক মিটার দূর পর্যন্ত এর বস্নুটুথ কানেকশন কাজ করে। এটি অপটিক্যাল ট্রান্সমিশন টেকনোলজির সাহায্যে থ্রিডি লেজার ইন্টারফেরোমিটার সেন্সর ব্যবহার করে। অর্থাৎ এই পেনের নিব বা টিপ থেকে থ্রিডি লেজার রশ্মি বের হয়, যা মোশন ট্র্যাক করতে পারে। ফলে এই পেন দিয়ে আপনার হতের লেখা বা ড্রয়িং নিমিষেই ডিজিটাইজড করে ফেলে। এই স্মার্টপেন দিয়ে লেখার পর তা ডিজিটাইজড হয়ে ওয়ার্ড ফন্টে ট্রানসেস্নটেড হয়। এভাবেই আসলে এই পেন দিয়ে লেখালেখির কাজটি চলে। এর নিবের ডগায় লাগানো আছে একটি সেন্সর। আপনি পেনটি দিয়ে খাতায় বা কোনো কিছুর উপরিতলে কী লিখলেন শুধু তা-ই ধরতে পারে না, একই সাথে এটি আপনার লেখার ধরনটাও চিনতে পারে। এর ফলে এই কলমটি ব্যবহার করা যাবে বায়োমেট্রিক আইডেন্টিফিকেশন টুল হিসেবেও।
ওটিএম টেকনোলজির একটি ইসরায়েলি টিম রয়েছে এর প্রকৌশল ও নকশাকর্মের পেছনে। প্রতিটি ফ্রি স্মার্টপেনের রয়েছে একটি প্রটেক্টেড ক্যাপ। এই ক্যাপটি আবার কাজ করে একটি টাচস্ক্রিন স্টাইলাস হিসেবেও। এই স্মার্টপেন কেনা যাবে একটি কেসসহ। কেসটি কাজ করে মোবাইল ফোনের স্ট্যান্ড বা ধারক হিসেবেও। এই কেসটির মাধ্যমে স্মার্টপেনটি তারবিহীনভাবে চার্জ করা যায়। আপনার শুধু প্রয়োজন হবে একটি এই স্মার্টপেনের জন্য কেসসহ একটি এক্সটারনাল ওয়্যারলেস চার্জিং প্যাড। এর ব্যবহারের ওপর নির্ভর করে এর ব্যাটারি দুই থেকে সাত দিন পর্যন্ত চলে। কলমটি নিবের ডগা প্রেসার সেন্সিটিভ। অর্থাৎ চাপের ওপর নির্ভর করে লেখার দাগ কত মোটা হবে।
আমরা কেউ ডান হাতে, আবার কেউ বাম হাতে লিখি। প্রশ্ন হচ্ছে ডানহাতি আর বামহাতি লিখিয়েরা কি সমান সুযোগ নিয়ে সহজেই এই স্মার্টপেন ব্যবহার করতে পারবেন? এর উত্তর, হ্যাঁ। লেখালেখির বিবেচনায় এর ডিজাইন সাইমেট্রিক। তাই ডিভাইসটি স্ক্রিনে ব্যবহারের সময় ডানহাতি ও বাম হাতের লিখিয়েরা তা ব্যবহার করতে পারবেন সমান সুযোগ নিয়ে- ঠিক যেমনটি ব্যবহার হয় মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপে।
এটি সাপোর্ট করে প্রধান প্রধান ফোন, ট্যাবলেট ও পিসি অপারেটিং সিস্টেম- অ্যান্ড্রয়িড, আইওএস, উইন্ডোজ, ওএসএক্স (ম্যাক), লিনআক্স। এটি অ্যান্ড্রয়িড, আইওএসএক্স ও উইন্ডোজ অফিস, ওয়াননোট, এভারনোট, ফটোশপ, স্কেচবুক, স্কিচ, অ্যাক্রোবেট, গুগল হ্যান্ডরাইটিং কিবোর্ড এবং ভাইবারের মতো প্রধান প্রধান প্রোডাক্টিভিটি অ্যাপের সাথে কম্প্যাটিবল।
ফ্রি স্মার্টপেন বিক্রি করে এক লাখ ডলার তহবিল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। নির্দিষ্ট সময়ের ৩৯ দিন আগেই এই লক্ষ্য অর্জিত হয়। এখন অগ্রিম কেনার সুযোগ নেই। এটি বিক্রি করা হয়েছে প্রতিটি কেসসহ ১৮৯ ডলারে। এটি বাজারজাত করা হয় চারটি রংয়ে- কালো, গ্রাফাইট, রুপালি ও সোনালি। প্রতিটির রয়েছে একই ওএলইডি টাচ ডিসপ্লে।
ওটিএম টেকনোলজিসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা গিলাড লেডারার বলেন- ‘আমরা ওটিএম টেকনোলজি উদ্ভাবন করেছি কয়েক বছর আগে। এরপর আমরা কয়েক বছর কাটিয়েছি ও অনেক অর্থ খরচ করেছি একে একটি পরিপক্ব প্রযুক্তি করে তুলতে। একটি ভালো ইনপুট ডিভাইসের যেসব স্পেসিফিকেশন প্রয়োজন ছিল, তা আমরা অতিক্রম করেছি। কিন্তু আমরা উপলব্ধি করেছিলাম ১০ বছর আগে ফ্রি স্মার্টপেনের জন্য বাজার অস্থিতিশীল ছিল না। কয়েক বছর আগেই এই পেন ছিল একটি সুন্দর পিসি অ্যাক্সেসরিজ, কিন্তু তা অপরিহার্য ইনপুট ডিভাইস ছিল না। স্মার্টফোন ও ইন্টারেকটিভ টিভির ছড়াছড়ি এবং স্মার্টওয়াচ, ওয়্যারেবল যন্ত্রপাতি, ইন্টারনেট অব থিংসের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ার ফলে আমরা উপলব্ধি করলাম আমাদের ইনপুট ডিভাইসে এমনসব সমাধান রয়েছে, যা এ ক্ষেত্রে এসব ডিভাইসে ঘাটতি রয়েছে।
একটি স্টাইলাস ছাড়াও এই স্মার্টপেনের রয়েছে কিছু ফিজিক্যাল বাটন ও একটি ওএলইডি ডিসপ্লে। এর রয়েছে একটি বিল্টইন হ্যান্ডসেট কল নেয়ার জন্য। আর একটি ছোট পর্দা রয়েছে ট্যাক্সট মেসেজ পড়ার জন্য। আসলে নানা তেলেসমাতি কাজ-কারবার নিয়েই হাজির হতে যাচ্ছে ওই স্মার্টপেন