• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > দেশে সাইবার ফোর্স গঠনের তাগিদ দিলেন পান্নাহ
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: ইমদাদুল হক
মোট লেখা:৬২
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৬ - অক্টোবর
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
প্রতিবেদন
তথ্যসূত্র:
রির্পোট
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
দেশে সাইবার ফোর্স গঠনের তাগিদ দিলেন পান্নাহ
অকুতোভয় জীবনের ৬৫ বসন্ত পেরিয়ে গেলেও তার ধমণীতে বইছে মুক্তিযুদ্ধের বহ্নিশিখা। জীবনের টানে প্রবাসে পাড়ি জমালেও দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার ডাক তিনি এখনও সমানভাবে শুনতে পান। মুক্তিযুদ্ধে ১১ নম্বর সেক্টরের অধীনে পান্নাহ কমান্ডো প্রধান হিসেবে কমলপুর, বাহাদুরাবাদ ঘাট, বকশিগঞ্জ, দেওয়ানগঞ্জ ও এর আশপাশের এলাকায় সম্মুখ সমরে লড়েছেন হানাদারদের বিরুদ্ধে। স্বাধীনতার পর দেশ বিনির্মাণে মনোনিবেশ করেন। বকশিগঞ্জ কেইউ কলেজে বায়োলজি বিভাগের প্রধান হিসেবে যোগ দেন। শিক্ষকতার পর কর্মজীবনে বর্তমান শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কমপিটার বিভাগের প্রধান হন। ১৯৮৫ সালে আইসিডিডিআরবিতে সিনিয়র ডাটা ম্যানেজার হিসেবে যোগ দেন। ছয় মাসের মাথায় পদোন্নতি পেয়ে ন্যাশনাল আর্কাইভ ম্যানেজার হন। এ সময় তিনি আমেরিকার জন হকিন্স ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ডেভিড স্যাক ও প্রফেসর ব্যাট কে’র তত্ত্বাবধানে কাজ করতেন। কাজে সন্তুষ্ট হয়ে দেশে ফিরে যাওয়ার সময় প্রফেসর ডেভিড স্যাক তাকে আমেরিকা নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেন। তিনিও রাজি হয়ে যান। অবশেষে বিশেষজ্ঞ বিনিময়ের জে ওয়ান ভিসায় (এক্সচেঞ্জ ভিজিটর) মার্কিন মুলুকে পাড়ি জমান। যাওয়ার সময় বাংলাদেশ সরকারের ওয়েভার নিয়ে যান। সেখানে ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ডের সাইবার নিরাপত্তা বিভাগে যোগ দেন। পাশাপাশি একই বিশ্ববিদ্যালয়ে ডক্টরেট ডিগ্রি শুরু করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচেষ্টায় তিন বছর পর গ্রিন কার্ড পান। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা সংস্থা হোমল্যান্ড সিকিউরিটি, ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অথরিটি ছাড়াও সবশেষ মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের অধুনালপ্ত তাজমহল ক্যাসিনো অ্যান্ড হোটেলে চাকরি করেছেন। এরই মধ্যে মেরিল্যান্ডে একটি গ্রম্নপের অধীনে আমেরিকান টেক নামে একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের রাজকোষ হ্যাকিং দুর্ঘটনা দেশের সাইবার আকাশে নিরাপত্তায় একটি ‘সাইবার ফোর্স’ গড়ে তোলার লক্ষক্ষ্য সম্প্রতি ফের দেশে ফিরে আসেন ড. ইমারত হোসেন পান্নাহ। স্বপ্ন দেখছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মতো বাংলাদেশ থেকেও সাইবার নিরাপত্তা রক্ষক আহবান করবে জাতিসংঘের মতো বিশ্ব সংস্থাগুলো।
তথ্য নিরাপত্তা, জটিল অবকাঠামো সুরক্ষা, ডিজিটাল গোপনীয়তা, পরিচয় চুরি, নিরাপত্তা পরীক্ষণসহ সাইবার নিরাপত্তার বিভিন্ন শাখায় প্রায় ৪৫ বছরের অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি শুরু করেছেন শিক্ষণ কর্মসূচি ও পেশাদার প্রশিক্ষণ কর্মশালা। ইতোমধ্যেই ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে এ বিষয়ে একটি কারিকুলামও জমা দিয়েছেন। এর বাইরে নিজের প্রতিষ্ঠান আমেরিকান টেকের মাধ্যমে রাজধানীতে শুরু করতে যাচ্ছেন শিক্ষানবিস ও বৃত্তিমূলক প্রকল্প। প্রকল্পের অধীনে আন্তর্জাতিক মানের ইনফোটেক, ইনফোসেক, সিআইএসএসপি, সিএপি, সিসিএফপি, সিইএইচ ইত্যাদি বিষয়ে ১০০ ঘণ্টার মতো কর্পোরেট ট্রেনিং করানো হবে। তবে এই কোর্সগুলো মোটেই ব্যয়বহুল হবে না বলে জানালেন পান্নাহ।
গৃহীত উদ্যোগ ও পরিকল্পনার ফাঁকে বাংলাদেশের বর্তমান সাইবার নিরাপত্তা অবস্থা বিশ্লেষণ করে তিনি দেখেছেন উন্নত দেশগুলো থেকে সাইবার নিরাপত্তার দিক দিয়ে বাংলাদেশ এখনও অনেক পিছিয়ে আছে। তিনি বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতও এ ক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে গেছে। সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে সেখানে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কোর্সও চালু হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে এ বিষয়টি নিয়ে এখনও তেমন কিছুই চোখে পড়েনি। তাই বছর তিনেক আগে শিক্ষকতার ১৬ বছরের অভিজ্ঞতা নিয়ে আমি বাংলাদেশের চারটি বিশ্ববিদ্যালয়কে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে এ বিষয়ে পড়ানোর আগ্রহ প্রকাশ করে মেইল করেছিলাম। কিন্তু বাংলাদেশে সাইবার সিকিউরিটির মার্কেট এখনও গড়ে না ওঠায় তা হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের দুর্ঘটনার পর মানুষের মধ্যে কিছুটা সচেতনতা তৈরি হয়েছে। আশা করি, এই যুদ্ধেও জয়ী হব। বাংলাদেশ থেকেই একদিন সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ রফতানি করতে সক্ষম হব।
তিনি আরও বলেন, দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, আমাদের নিজস্ব কোনো সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ নেই। উচ্চ বেতন পরিশোধ করে কতদিন আর আমরা বিদেশি সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ দিয়ে কাজ করাব। আমাদের নিজস্ব নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ থাকলে দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও তাদের কাজে লাগাতে পারত এবং দেশের অর্থ সাশ্রয় হতো।
এক প্রশ্নের জবাবে সরকারকে এখনই সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে শিক্ষা ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলোকে লক্ষ্য করে দীর্ঘমেয়াদী পদক্ষক্ষপ নেয়ার আহবান জানান ড. ইমারত হোসেন। সরকারকে পরামর্শ দিয়ে বলেন- পুলিশ, র্যা ব, বিজিবির পাশাপাশি বাংলাদেশে একটি স্বতন্ত্র সাইবার বাহিনী গড়ে তোলা উচিত। আর সাইবার নীতিমালা ও আইন তৈরির ক্ষক্ষত্রে দুরদর্শিতার পরিচয় দেয়া উচিত। নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তায় ডিজিটাল আইডির পাশাপাশি সিস্টেম ও রেকর্ড নোটিফিকেশন বা সোর্স ব্যবস্থা চালু করা দরকার। অর্থাৎ কেউ যেন বিনা অনুমতিতে কারও ব্যক্তিগত তথ্য (পিআইআই) ব্যবহার করতে না পারে, তা গেজেট আকারে প্রকাশ করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। কেননা, আপনি যখন চাকরির আবেদন করছেন, তখন কিন্তু আপনার ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করেন। প্রয়োজন শেষে এগুলো নষ্ট করা উচিত।
সাইবার নিরাপত্তায় বিশেষ বাহিনী গড়ে তোলার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, শুধু ব্যাংক-বীমা বা আর্থিক খাত নয়, প্রতিটি ক্ষক্ষত্রেই প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে। ডিভাইসগুলোর মাধ্যমে অনেক গোপনীয় তথ্য বিনিময় হচ্ছে। আসলে বর্তমান সময়ে শুধু তথ্য দিয়েই একটি দেশকে অচল করে দেয়া যায়। তাই তথ্য নিরাপত্তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং স্পর্শকাতর একটি বিষয়। কেননা, দেশের নির্দিষ্ট সীমানা থাকলেও সাইবার আকাশের কিন্তু কোনো সীমানা নেই। তাই এখানে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত।
একজন শিক্ষার্থী শুধু ইংরেজি পড়তে ও বুঝতে পারলেই আগামীর সাইবার বিশেষজ্ঞ হতে পারেন- মন্তব্য করে তিনি বলেন, আসলে এ জন্য ম্যাথ বা ফিজিক্স জানার দরকার নেই। দীর্ঘ গবেষণার মাধ্যমে আমি একটি মডিউল তৈরি করেছি। এটি তাদের হাতে-কলমে সাইবার সিকিউরিটি বিষয়ে সম্যক জ্ঞান দিতে সক্ষম। এ ছাড়া শিক্ষার্থী নিজেকে যাচাই করতে অনলাইনে পরীক্ষা দিয়ে সার্টিফিকেশন অর্জন করতে পারবেন। এর ফলে বিশ্বে বর্তমানে এই পেশায় ব্যাপক চাহিদাটায় আমরা সহজেই অনুপ্রবেশ করতে পারি। এই পেশায় রিফ্রেশারদের বেতনও ভালো। মাসে দুই-আড়াই লাখ টাকার কম নয়।
কীভাবে সাইবার জগতে নিরাপদ থাকা যায়- প্রশ্নের জবাবে ইমারত হোসেন বলেন, নিরাপত্তা হচ্ছে একটি মানসিক অবস্থা। মূল সাইবার হুকমিটি থাকে দৃষ্টির অন্তরালে। তাই আগাম রক্ষাকবচ গ্রহণের মাধ্যমে সাইবার জগতে নিরাপদ থাকা যায়। এ জন্য প্রয়োজন সাইবার হুমকি বিষয়ে মৌলিক জ্ঞান। ব্যক্তির সচেতনতাই তাকে সাইবার জগতে নিরাপদ রাখবে। এ জন্য অনলাইনে ব্যক্তির ব্যক্তিগত ও গোপনীয় তথ্য প্রকাশ না করা প্রধান রক্ষাকবচ। ব্যক্তিগত তথ্যের মধ্যে তার জন্ম সাল, বাবা-মায়ের নাম, পারিবারিক সম্পর্ক, ঠিকানা সোশ্যাল মিডিয়া বা অনলাইন মাধ্যমে শেয়ার করা উচিত নয়। অ্যাকাউন্টগুলোর পাসওয়ার্ডের নিরাপত্তায় সম্ভব জটিল ক্যারেক্টার-অ্যালফাবেট ব্যবহার করা উচিত। ব্যক্তিগত তথ্য আছে এমন কাগজ কাউকে দেয়া হলে তা কাজ শেষে নিজ দায়িত্বে নষ্ট করে ফেলা উচিত। মূলত নিয়ত পরিবর্তিত সাইবার জগতে সচেতনতা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিরাপদ থাকা যায়


পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০১৬ - অক্টোবর সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস