লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
সাইবার হামলার ঝুঁকি ও আমাদের করণীয়
সাইবার হামলার ঝুঁকি ও আমাদের করণীয়
বাংলাদেশে যখন থেকে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহারের কথা বলা হতে থাকে, তখন এ দেশের সাধারণ জনগণের মাঝে তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কে এক ধরনের নেতিবাচক ধারণা ছিল। আর সেটি হলো তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক বিস্তার হলে দেশের বেকারত্বের হার বেড়ে যাবে কয়েকগুণ এবং অনেকেই চাকরিচ্যুত হবেন। অবশ্য এ ধারণা যে অমূলক ছিল তা ইতোমধ্যেই প্রমাণ হয়ে গেছে। তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে আমাদের জীবনযাত্রা যেমন সহজ হয়েছে, তেমনি বেড়েছে জীবনের গতি ও উৎপাদনশীলতা।
এ কথা সত্য, কিছু অতি মেধাবী ও বিকৃত মনমানসিকতাসম্পন্ন প্রোগ্রামারের কারণে তথ্যপ্রযুক্তির অঙ্গন কিছুটা হলেও কলুষিত হয়েছে। ফলে প্রযুক্তির ইতিবাচক দিকের সাথে সাথে যুক্ত হয়েছে বেশ কিছু নেতিবাচক দিক। সারা বিশ্ববাসীর কাছে সাইবার হামলা তেমনি তথ্যপ্রযুক্তির একটি নেতিবাচক দিক। সম্ভবত সাইবার হামলার ঝুঁকি থেকে শতভাগ মুক্ত এমন দেশ একটিও নেই। বরং বেশি উন্নত দেশগুলোতে সাইবার হামলার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।
সময়ের সাথে সাথে সারা বিশ্বে সাইবার হামলার সংখ্যা ও ধরন বাড়ছে। এর সরল অর্থ সারা বিশ্বে সাইবার হামলার ঝুঁকি বাড়ছে। তথ্য-পরিসংখ্যান তেমনটিই বলে। বাংলাদেশও সাইবার হামলার ঝুঁকি থেকে মুক্ত নয়। দেশের ২১টি সরকারি প্রতিষ্ঠান সাইবার হামলার বড় ঝুঁকিতে রয়েছে। দেশি-বিদেশি একাধিক সংস্থার রিপোর্টে এই হামলার বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। দেশে গত এক বছরে সাইবার হামলা ৪৪ শতাংশ বেড়েছে।
বিশ্বের সব প্রান্ত থেকে বর্তমানে সাইবার হামলার কথাই উচ্চারিত হতে দেখা যাচ্ছে। নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত একটি দেশি পর্যবেক্ষণ প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, বাংলাদেশকে লক্ষ করে বেশি হামলা হচ্ছে পাকিস্তান, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনামসহ পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো থেকে। লক্ষণীয়, ২০১৬ সালে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পাকিস্তানি হ্যাকারদের হামলার পরিমাণ আগের বছরগুলোর তুলনায় অনেক বেড়ে যায়। বিশেষ করে বছরের শেষ দিকে বিটিসিএলের ডোমেইন সার্ভারে একাধিক হামলা চালায় পাকিস্তানি হ্যাকারেরা। সূত্র মতে, গত ফেব্রম্নয়ারি ও মার্চে বাংলাদেশের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট লক্ষ করে শতাধিক হামলা চালানো হয়। তবে দৃঢ় নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকার কারণে প্রতিটি হামলাই ছিল অসফল। এখনও হ্যাকারদের টার্গেট বাংলাদেশের আর্থিক খাত। কৌশলগত হামলার পরিসংখ্যানে বাংলাদেশ ব্যাংক লক্ষ করেই হামলা হচ্ছে বেশি। বর্তমানে দেশের তিনটি অপারেটরের নেটওয়ার্কে ব্যবহৃত অ্যান্ড্রয়িড স্মার্টফোন লক্ষ করে হামলার সংখ্যা ব্যাপকভাবে বাড়ছে।
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণেও বাংলাদেশের সাইবার হামলার ঝুঁকির কথা উচ্চারিত হচ্ছে। অঞ্চলভেদে এশিয়া ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলোতে সাইবার হামলা বাড়ছে। এ অঞ্চলের দেশগুলোতে বিগত বছরের তুলনায় সাইবার হামলা ৫৪ শতাংশ বেড়েছে। অন্যদিকে সাইবার নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতনতা বেড়েছে ৫৭ শতাংশ। স্মার্টফোন হামলার ঝুঁকি ও বৈচিত্র্য আগের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে।
স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে অ্যান্ড্রয়িড প্ল্যাটফর্মে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির কারণ হচ্ছে গ্রাহকদের অসচেতনতা। বেশিরভাগ ব্যবহারকারী নিরাপত্তা অ্যাপ ব্যবহার করেন না। আবার যেসব স্মার্টফোনে ইনবিল্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকে, সেগুলোর দাম বেশি হওয়ায় অনেকেই ব্যবহার করেন না। ফলে স্মার্টফোন ব্যবহার করে আর্থিক লেনদেন ও অনলাইন ব্যাংকিং এখন সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। স্পষ্টতই এ ব্যাপারে ব্যবহারকারীদের সচেতনতা বাড়ানোর বিষয়টি জোরালোভাবে প্রচার চালানোর তাগিদটা এসে যায়। কারণ, সাধারণ স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা এখনও এ ব্যাপারে পুরোপুরি অন্ধকারে রয়েছেন।
সার্বিকভাবেই সাইবার হামলার ব্যাপারে আমাদের সচেতনতা বাড়ানো এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। আর এ ক্ষেত্রে সাধারণ ব্যবহারকারীদের সচেতনতা বাড়িয়ে তুলতে হবে। সাইবার হামলা রোধে সবচেয়ে কার্যকর উপায় হচ্ছে প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষতা অর্জন এবং অপরাধ মোকাবেলায় যথেষ্ট প্রযুক্তিগত সক্ষমতা গড়ে তোলা। হামলাকারীরা যেনো সফল হতে না পারে, সে জন্য সুদৃঢ় প্রযুক্তিগত প্রতিরক্ষা ব্যূহ গড়ে তোলাটা জরুরি। সাইবার হামলা মোকাবেলায় নিজস্ব প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ ও দক্ষতা অর্জনের কোনো বিকল্প নেই। সাইবার হামলা মোকাবেলায় বাংলাদেশকে সে দক্ষতা অর্জনের লক্ষ্য নিয়েই কাজ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে অবহেলা প্রদর্শনের কোনো অবকাশ নেই। তবে অস্বীকার করার উপায় নেই, সাইবার হামলার বিরুদ্ধে শক্তিশালী নিরাপত্তা ব্যূহ গড়ে তোলার গুরুদায়িত্বটা কিন্তু পড়ে সরকারের ঘাড়েই।
সালমা ফেরদৌস বীথি
পলস্নবী, ঢাকা
বাঁশের তৈরি মোবাইল টাওয়ার ও প্রাসঙ্গিক কিছু কথা
আধুনিক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যাপক বিস্তারের ক্ষেত্রে অবদান রেখে আসছে মোবাইল নেটওয়ার্ক। নিরবচ্ছিন্ন মোবাইল নেটওয়ার্কের আওতা সম্প্রসারণের জন্য বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যত্রতত্রভাবে যেখানে-সেখানে গড়ে তুলেছে মোবাইল টাওয়ার। এসব মোবাইল টাওয়ার তৈরি করার সময় মানা হয়নি পরিবেশগত কোনো নিয়ম-নীতি। বিবেচনা করা হয়নি মোবাইল টাওয়ার সেটআপ করার জায়গার পারিপার্শ্বিক অবস্থার কথা। বিবেচনায় কখনই আনা হয় না মোবাইল টাওয়ার কত উচ্চতায় হবে, কেমন ধাতুর তৈরি হবে এবং এর তেজস্ক্রিয় মাত্রা বা কেমন হবে ইত্যাদি।
তবে সম্প্রতি ঢাকার উত্তরা এলাকার একটি বাড়ির ছাদে পরীক্ষামূলকভাবে বাঁশের কাঠামো দিয়ে মোবাইল ফোনের জন্য টেলিযোগাযোগ টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে। বাঁশের কাঠামো দিয়ে মোবাইল ফোনের জন্য টেলিযোগাযোগ টাওয়ার তৈরি করেছে ইডটকো গ্রুপ (ইডটকো)। ‘পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি’ হিসেবে ইডটকো গ্রুপ নামে একটি প্রতিষ্ঠান এটি তৈরি করেছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বে একটি দল ইস্পাতের বিকল্প হিসেবে অবকাঠামো নির্মাণের উপাদান হিসেবে বাঁশের ব্যবহারের ওপর গবেষণা করে।
গবেষণায় দেখা গেছে, কাঁচা বাঁশকে প্রক্রিয়াজাত করে এরকম টাওয়ার তৈরি করা সম্ভব এবং তা ২১০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাতাসের গতি সহ্য করতে পারে। সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ করলে বাঁশের টাওয়ার ১০ বছর পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে।
একজন প্রযুক্তিপ্রেমী হিসেবে আমি মনে করি, দেশের বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত মোবাইল টাওয়ারগুলো একটি নির্দিষ্ট নীতিমালা মেনে স্থাপন করা হবে, যেখানে অবশ্যই পরিবেশবান্ধবের কথা বিবেচনায় আনতে হবে। বাঁশের কাঠামো দিয়ে মোবাইল ফোনের জন্য টেলিযোগাযোগ টাওয়ার তৈরি করার কথা বিবেচনায় রাখতে হবে, এতে যেমন অর্থের সাশ্রয় হবে, তেমনি পরিবেশবান্ধবও হবে।
আবদুল মতিন
আদিতমারী, লালমনিরহাট