লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
জাপান নিয়ে আসছে বিশ্বের দ্রুততম সুপারকমপিউটার
প্রযুক্তির দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি অগ্রসর দেশগুলোর মধ্যে জাপান একটি অন্যতম দেশ। রবোটিক হোটেল ও টাইফুন-পাওয়ার্ড উইন্ড টারবাইন চালু করতে পারা জাপানের প্রাযুক্তিক উৎকর্ষের পরিচায়ক। এখন প্রযুক্তি বিশ্বে ডিজিটাল ইনোভেশনের ক্ষক্ষত্রে জাপান নিজেকে সামনের সারিতে নিয়ে এসে এর অবস্থান আরো সুদৃৃঢ় করার পরিকল্পনা নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে জাপান শিগগিরই বিশ্ববাসীকে উপহার দিতে যাচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত গতির নয়া সুপারকমপিউটার। বলা হচ্ছে, ২০১৭ সালেই সম্পন্ন হতে যাচ্ছে জাপানের এই আরদ্ধ কাজটি। নতুন এই সুপারকমপিউটার তৈরির পরিকল্পনার মাধ্যমে সে দেশের নির্মাতারা গবেষণার জন্য একটি প্ল্যাটফরম পাবে।
সংবাদ সংস্থার খবরে প্রকাশ, এই দ্রুততম সুপারকমপিউটার তৈরির লক্ষ্য হচ্ছে, এমন একটি মেশিন তৈরি, যা সে দেশের বিজ্ঞানীদের চালকবিহীন গাড়ি, রোবট ও চিকিৎসা ক্ষক্ষত্রে প্রযুক্তির উদ্ভাবন বা সৃষ্টিতে সহায়তা করতে পারে। তা ছাড়া দক্ষক্ষণ কোরিয়া ও চীনের সাথে তীব্রতর প্রতিযোগিতার মুখে ইলেকট্রনিকস শিল্পে জাপান তার অবস্থান হারিয়েছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের মতে, জাপানকে সুপারকমপিউটারের ক্ষক্ষত্রে আগামী বছরের মধ্যে শীর্ষে নেয়ার মাধ্যমে সেই হারানো অবস্থানের ক্ষক্ষত্রে জাপানকে কিছুটা পুষিয়ে নেয়ার জন্যও এই পদক্ষক্ষপ। অন্য কথায় এশীয় টেকনোলজি সুপার পাওয়ার চীন ও দক্ষক্ষণ কোরিয়া থেকে নিজেকে লক্ষণীয়ভাবে এগিয়ে রাখতে চায় জাপান। তাই জাপানের আলোচ্য এ সুপারকমপিউটার প্রকল্পটি জাপানের জন্য একটি বড় ধরনের চালেঞ্জও বটে। এই উচ্চাকাঙক্ষী চালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য জাপানকে খরচও করতে হচ্ছে বিরাট অঙ্ক। এ জন্য জাপানের অর্থনীতি, বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় বিনিয়োগ করবে ১৭ কোটি ৩০ লাখ ডলার। জাপানি মুদ্রায় ১ হাজার ৯৫০ কোটি ইয়েন।
প্রসেসিং পাওয়ার
স্বাভাবিকভাবেই জানতে ইচ্ছে করে, বিশ্বের নতুন এই দ্রুততম সুপারকমপিউটার কতটুকু দ্রুতগতির হবে। প্রত্যাশা করা হচ্ছে, প্রতি সেকেন্ডে এই কমপিউটার ১৩০ কোয়াড্রিলিয়ন ক্যালকুলেশন, প্রযুক্তি ভাষায় ১৩০ পেটাফ্লপস (peteflops)। এটাকেই বলা হয় কমপিউটারের প্রসেসিং পাওয়ার। এটি চীনের Sunway Taihulight সুপারকমপিউটার থেকে নি্শ্চিতভাবেই অনেক বেশি দ্রুতগতিসম্পন্ন, যার প্রসেসিং ক্ষমতা ৯৩ পেটাফ্লপস। বর্তমানে চীনের এই সুপার কমপিউটারটি বিশ্বের দ্রুততম বলে দাবি করা হয়। জাপানের এই সুপারকমপিউটার যেমনি সবচেয়ে বেশি দ্রুতগতির হবে, তেমনি আমরা তা পেতেও যাচ্ছি দ্রুত সময়ে। জাপানের ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যাডভান্সড ইন্ডাস্ট্রিয়াল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’ (এআইএসটি) আসন্নপ্রায় ২০১৭ সালেই তা বিশ্ববাসীর কাছে তা নিয়ে আসছে।
ডিপ লার্নিং
সুপারকমপিউটিংয়ে অতি দ্রুত গণনা ব্যবহার করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় ডিপ লার্নিং প্রযুক্তির যে অ্যালগরিদম মানুষের মস্তিষ্কের নিউরাল পথ অনুকরণে কাজ করে, জাপান তার উন্নয়ন সাধন করবে। এই সুপারকমপিউটার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষক্ষত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নিয়ে আসতে পারে। যেহেতু এই সুপারকমপিউটার আরো দ্রুততর উপায়ে কালকুলেশন সম্পন্ন করবে, তাই বিজ্ঞনীরা আশা করছেন, এটি আমাদের মস্তিষ্কের ‘নিউরাল পাথওয়ে’-গুলোর আয়নাসদৃশচিত্র আরো যথার্থভাবে জানা সম্ভব হবে। সেই সূত্রে তা সহায়ক হবে লার্নিং প্রযুক্তির অগ্রগতি অর্জনে। এরই ফলে উন্নতি ঘটবে চালকবিহীন গাড়ি তৈরির প্রযুক্তি, ব্যাটারি কারখানার স্বয়ংক্রিয় করা ও চিকিৎসা প্রযুক্তির উন্নয়ন। চালকবিহীন গাড়ির প্রযুক্তি উনয়নের ক্ষক্ষত্রে গুগলের সেলফ ডাইভিং কারের অটোনোমাস ভেহিকল টেকনোলজি মাথায় রেখে জাপান কাজ করছে। গত সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত জাপানি পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, জাপান সেলফ-ড্রাইভিং ম্যাপ টেকনোলজিতে নেতৃত্বের আসনে থাকতে চায়। মোট কথা এতদসংশ্লিষ্ট প্রাযুক্তিক উদ্ভাবনের জগতে জাপান সেরা স্থানটিই দখল করতে প্রয়াসী। এর ম্যাপ প্রজেক্টের লক্ষ্য অটোনোমাস ভেহিকল রোডম্যাপে একটি বিশ্বমান অর্জন। সেলফ-ড্রাইভিংয়ের জন্য প্রয়োজন যথাযথ সেন্সর ইনপুট বোঝার মতো একটি থ্রিডি ম্যাপ। এবং এই ম্যাপকে বুঝতে হবে এর চলতি সময়ের অবস্থানও।
এ ক্ষক্ষত্রে সাম্প্রতিক অর্জন হচ্ছে, গুগলের GOOGL 0.16% DeepMind AI program, AlphaGo, যা গত মার্চে দক্ষক্ষণ কোরিয়ার প্রফেশনাল লি সিডোলকে প্রাচীন গো বোর্ডগেমে পরাজিত করতে সক্ষম হয়েছে।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজু অ্যাবে সে দেশের কোম্পানি, আমলা ও রাজনৈতিক শ্রেণীর প্রতি আহবান জানিয়েছেন ঘনিষ্ঠভাবে একসাথে কাজর করার জন্য, যাতে রোবটিকস, ব্যাটারি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের ও অন্যান্য নতুন ও বিকাশমান বাজারে জাপান বিজয়ীর আসনে থাকতে পারে।
এআইএসটি মহাপরিচালক সাতোশি সেকিগুচি বলেন, ‘আমরা যতটুকু জানি, আমরা লিকুইড কুলিং টেকনোলজি টেকনিক ব্যবহার করে যে সুপারকমপিউটারটি তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছি, আজ পর্যন্ত তেমন দ্রুতগতির সুপারকমপিউটার আর নেই। তাই এটিই হতে যাচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতির সুপারকমপিউটার।’
বিদ্যুৎ সাশ্রয়
জাপান লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে, এই সুপার কমপিউটারের বিদ্যুৎ খরচ ৩ মেগাওয়াটের নিচে রাখতে হবে। এই বিদ্যুৎ খরচ বিশ্বের সেরা সুপারকমপিউটারগুলোর বিদ্যুৎ খরচের তুলনায় অনেক কম। জাপানের বর্তমান হাইয়েস্ট পারফরম্যান্স কমপিউটার Oakforest-PACS আলোচ্য নতুন সুপারকমপিউটারের তুলনায় এক-দশমাংশ কর্মক্ষম হলেও তাতে বিদ্যুৎ খরচ এরই সমান। অপারদিকে চীনের সানওয়ে হাইহোলাইট ব্যবহার করে ১৫ মেগাওয়াটেরও বেশি বিদ্যুৎ।
যে কাজে ব্যবহার হবে
তাইহোলাইট তৈরি হয়েছে যেসব ক্ষক্ষত্রে ব্যবহারের জন্য, সেগুলোর মধ্যে আছে: প্রকৌশলকর্ম, পরিবেশ ও ভূ-ব্যবস্থার মডেল বিষয়ক গবেষণা, অগ্রসর বৃহদাকার উৎপাদন, জীববিজ্ঞান, আবহাওয়া ও ডাটা অ্যানালাইটিক সম্পর্কিত গবেষণাকর্ম।
সেকিগুচি জানিয়েছেন, জাপানের নতুন এই সুপার কমপিউটারের নাম দেয়া হয়েছে AI Bridging Cloud Infrastructure, সংক্ষক্ষপে এবিসিআই। এটি সহায়তা করবে নতুন নতুন আপ্লিকেশন ও সার্ভিস সৃষ্টির জন্য মেডিক্যাল রেকর্ড ধারণ। জাপানের করপোরেশনগুলো অর্থের বিনিময়ে এই মেশিন ব্যবহার করতে পারবে। এসব করপোরেশনগুলো বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোকে ডাটা আউটসোর্স করে। যেমন মাইক্রোসফট ও গুগলের কাছে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, নতুন এই দ্রুতগতির সুপার কমপিউটার প্রযুক্তি জগতে আরো গততীশলতা এনে দেবে