লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
ফাইভার কাজের সাক্ষাৎকারভিত্তিক আলোচনা
জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেস ফাইভারের আলোচনার গত দুই পর্বে আমরা দেখিয়েছিলাম ফাইভার পরিচিতি, ফাইভারে অ্যাকাউন্ট তৈরি করা, গিগ তৈরি করাসহ ফাইভারের অ্যাকাউন্ট ম্যানেজমেন্ট। আমরা এ পর্বে ফাইভারে কাজ করেন এমন একজনের সাক্ষাৎকার নিয়েছি, যিনি ফাইভারে তার কাজের অভিজ্ঞতা ও নতুনদের ফাইভারে কাজ করার গাইডলাইন তুলে ধরেছেন।
আপনার নিজের সম্পর্কে বলুন?
আমি পূজন দাশ, পড়াশোনা করছি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। পড়াশোনার পাশাপাশি মূলত ওয়েব ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট নিয়ে ফাইভারে কাজ করছি।
আপনি কতদিন ধরে ফাইভারে আউটসোর্সিংয়ের কাজ করছেন?
আমি ফাইভার মার্কেটপ্লেসে ২০১৪-এর নভেম্বরে অ্যাকাউন্ট ওপেন করি, কিন্তু প্রথমত কিছুদিন কাজ পাইনি। বলা যায়, ২০১৫-এর প্রথম দিক থেকেই ফাইভারে কাজ করছি।
আপনি সাধারণত কোন ধরনের কাজ করে থাকেন?
আমি সাধারণত ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট নিয়ে কাজ করতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।
আপনার আউটসোর্সিংয়ে আসার কথা যদি বলেন?
২০১৪ সালের প্রথম দিকের কথা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা পাঠদানেরও প্রায় এক বছর আগে শেষ হয়েছিল। যেকোনো কিছু শুরু করার আগে মনে দ্বিধা কাজ করে। প্রথম দিকে, সত্যি বলতে আমি বাংলা পিডিএফ, বাংলা ওয়েবসাইটে ওয়েব ডিজাইন, গ্রাফিক্স ডিজাইন, এসইও ইত্যাদি বিষয় নিয়ে অনেক এলোপাতাড়ি পড়ালেখা করেছি। কয়েক দিন কয়েকটি বিষয় নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করার পর মন আটকে পড়ল ওয়েব ডিজাইনে। তারপর সিলেট আইটি অ্যাকাডেমিতে খোঁজ নিয়ে ভর্তিও হলাম। সিলেট আইটি অ্যাকাডেমির পথনির্দেশনা ও শেখানোর কৌশল ঠিকমতো অনুসরণ করি। সর্বোপরি, কাজ শিখে এখন আমি কাজ করছি এবং প্রতিনিয়ত নতুন নতুন কাজ শিখছি।
ফাইভারে কাজ করার একটি ছোটখাটো গাইডলাইন কী হতে পারে?
ফাইভার অনেকের চোখে কিছুই নয়, আবার অনেকে ফাইভার থেকেই আয় করে সংসার চালান, গাড়ি-বাড়ি কিনে ভালোই আছেন। গাইডলাইন অনেক বড় কিছু, কথাটা আমি অনেক সময় মানতে পারি না, সম্ভবও নয়। তারপরও কিছু গাইডলাইন মানতে হবে আপনাকে ফাইভারে কাজ করতে হলে। প্রথমত, ফাইভারের জন্ম ইসরায়েলে। তার অর্থ আগেই সতর্ক হতে হবে। কারণ, ইহুদিরা নিয়মকানুনের প্রতি একটু বেশিই সতর্ক। যে কাজই করতে চান, তা অবশ্যই ভালোভাবে শিখতে হবে। বস্নগ, ফোরাম, একাডেমি, পডকাস্ট সব কিছুই রয়েছে আপনি যাতে সঠিকভাবে কাজ করতে পারেন তাদের সব নিয়ম মেনে। ফাইভার কখনও চায় না সেলার বায়ারের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করুক। তাই কখনই ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করবেন না। যেমন- ই-মেইল, স্কাইপ, মোবাইল ইত্যাদি। যদি শেয়ার করেন তাহলে ওয়ার্নিং পাবেন। কয়েকবার দেয়ার চেষ্টা করলে নিষিদ্ধ করে দেবে আপনাকে। সুতরাং এই বাজে কাজগুলো করবেন না।
কাজ করতে গিয়ে আপনার মজার কোনো অভিজ্ঞতা কি হয়েছে?
মজার অভিজ্ঞতা অনেক হয়েছে কাজ করতে গিয়ে। দেখবেন, এখন ফাইভারে টিপসও আপনি পেতে পারেন বায়ার যদি আপনার কাজে সন্তুষ্ট হয়। প্রথমে আমি জানতাম না, হঠাৎ একদিন দেখি কাজের শেষে এক্সট্রা কিছু ডলার। ভাবলাম ভুলে হয়তো। কিন্তু না, বায়ার কাজে খুশি হয়েই দিয়েছে। একদিন একটা মেয়ে বায়ার ডেট করার জন্য প্রস্তাব দিল। আমি বললাম, ডেট কী? আমি চিনি না, কীভাবে করে তাও জানি না। এরকম অনেক কিছু মেসেজ আসতে পারে মজার, কিন্তু আবার আপনার ১২টাও বাজিয়ে দিতে পারে। সুতরাং এইগুলারে রিপোর্ট করবেন সাথে সাথে আর কন্টাক্ট ইনফরমেশন ভুলেও দেবেন না। মজার ছলে একটা সতর্কবাণীও বলে দিলাম।
আউটসোর্সিং কাজ করতে গিয়ে কোনো ধরনের অসুবিধার সম্মুখীন কি কখনও হয়েছেন?
ফ্রিল্যান্সিং করতে অনেক সময় হতাশা আসবে। দেখবেন কাজ পাচ্ছেন না। শুরুর দিকে আরও কত কিছু। তাই বলে কি আপনি বসে থাকবেন, কখনই না। আমি অনেক সমস্যার মুখোমুখি হয়েছি। এই ধরেন বায়ারের কাজ করছি, ডলার পাচ্ছি না, তবে ফাইভারে নয়। একটি কাজ করতে গিয়ে হঠাৎ আটকে গিয়েছিলাম, তখন গুগলে ঘাঁটাঘাঁটি করে বের করতে হয়েছিল। স্বাভাবিকভাবেই সবাই সমস্যায় পড়বে প্রতিনিয়ত। কিন্তু এর উত্তরও আপনি পাবেন। বরং এইসব চিন্তা না করে কাজ করলেই দেখবেন ধীরে ধীরে অনেক কিছুই আপনার আয়ত্তে আসছে।
নতুনদের জন্য আপনার পরামর্শ-
আমিও নতুন। আর নতুনদের জন্যই বা কি পরামর্শ দেব ভেবে পাচ্ছি না। তারপরও আপনারা যারা কাজ করতে চান, নিজের একান্ত আগ্রহে আসেন। প্রচুর কাজ আছে। আপনাকেই ঠিক করতে হবে আপনি কি কাজ করবেন? যে কাজটি করতে ইচ্ছুক, সেই কাজটিতেই সময় দিন, দক্ষ হন।
আর ফাইভারে নতুনদের বর্তমানে একটু বেশি কষ্ট করতে হবে। কেননা, দিন দিন সেলার বাড়ছে, কাজও বাড়ছে। দেখবেন অনেকে অ্যাকাউন্ট ওপেন করে, গিগ বানিয়ে বসে বসে ভাবছেন আর ই-মেইল চেক করছেন কখন অর্ডার আসবে। এই সুদিন আর নেই। সুতরাং আপনাকে কষ্ট করতে হবে। সুন্দর করে গিগ বানাতে হবে, বর্ণনা দিতে হবে, এসইও অপটিমাইজড হতে হবে। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপনার গিগের লিঙ্ক শেয়ার করতে হবে। আমি প্রেফার করি google plus, twitter, reddit, etc.
ফাইভার সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত কিছু কথাবার্তা-
ফাইভারে কাজ করতে হলে প্রথমত তাদের রুলস অনুসরণ করতে হবে। তা না হলে আপনাকে নিষিদ্ধ করে দেবে। এখানে সেলারদের ক্ষেত্রে তিনটি লেভেল রয়েছে। লেভেল ১, লেভেল ২, টপ লেভেল সেলার। লেভেল ২ হলেই আপনি অনেক কাজ পাবেন। গিগ বানানোর ক্ষেত্রে অবশ্যই রিসার্চ করে গিগ টাইটেল, ডেসক্রিপশন, ট্যাগ দিতে হবে। ভেকেশন মোড কখনই অন করবেন না। কারণ, এটি আপনার গিগকে পেছনে নিয়ে যাবে। ফলে কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে। জবের জন্য বিড করতে হবে না, বায়ার রিকোয়েস্ট পাঠালেই হয়। আর যদি কখনও কোনো কিছু নিয়ে সমস্যায় পড়েন, তাহলে সাথে সাথে ফাইভার সাপোর্টে কথা বলবেন।
আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাগুলো কী?
ওয়েব ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট নিয়ে অনেক পরিকল্পনা রয়েছে ভবিষ্যতে। বড় ফার্ম নির্মাণেরও চিন্তা রয়েছে। তবে আমার-আপনার মতো অনেক ছেলেমেয়ে রয়েছে, যারা কাজ শিখতে চায় তাদেরকে সব সুযোগ-সুবিধা দিতে চাই