• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > ইন্টেলের সপ্তম প্রজন্মের চিপ কাবিলেক
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: তাজুল ইসলাম
মোট লেখা:২২
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৭ - এপ্রিল
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
হার্ডওয়্যার
তথ্যসূত্র:
হার্ডওয়্যার
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
ইন্টেলের সপ্তম প্রজন্মের চিপ কাবিলেক
ইন্টেলের কোর প্রসেসরের ষষ্ঠ প্রজন্ম স্কাইলেক বাজারে এসেছিল ২০১৫ সালের আগস্টে। এটি নির্মিত হয়েছিল ১৪ ন্যানোমিটার ফেব্রিকেশন প্রসেস প্রযুক্তির মাধ্যমে। ২০০৭ সালে ‘টিক-টক’ মডেল হিসেবে খ্যাত প্রসেস প্রযুক্তির নির্মাণ এবং ডিজাইন মডেলের যে যাত্রা শুরু হয়েছিল, এর অবসান ঘটিয়ে গত বছর নতুন এক মডেল উপস্থাপন করেছে। বর্তমানে যে মডেলটি অনুসরণ করছে, তার নাম দেয়া হয়েছে ‘প্রসেস আর্কিটেকচার অপটিমাইজেশন’ মডেল। দুই স্তরবিশিষ্ট টিক-টক মডেলে প্রথমে মাইক্রো আর্কিটেকচারে এবং দ্বিতীয়ত ডাই সঙ্কোচনে পরিবর্তন আনা হয়। স্কাইলেক প্রসেসর পর্যন্ত এ ধারা অব্যাহত ছিল। কিন্তু গত বছরের আগস্টে কাবিলেক যে প্রসেসরের ঘোষণা দেয়, তাতে তিন স্তরবিশিষ্ট মডেলকে অনুসরণ করা হয়। ধারণা করা হয়েছিল, স্কাইলেকের ১৪ ন্যানোমিটারের পরিবর্তে ১০ ন্যানোমিটারে উত্তরণ ঘটানো হবে পরবর্তী প্রসেসরে অর্থাৎ কাবিলেকে। কিন্তু তা হয়নি বরং স্কাইলেককে অপটিমাইজ তথা পরিশীলিত করে বাজারে ছাড়া হয়েছে। গত বছর মূলত মূল নির্মাতারা (ওইএম) ‘কাবিলেক’ প্রসেসর পেয়েছিল ইন্টেলের কাছ থেকে, তবে ডেস্কটপ ও ল্যাপটপ ভার্সনের চিপ বাজারে ছাড়া হয় এ বছরের জানুয়ারির ৩ তারিখে। ফলে আনুষ্ঠানিকভাবে কাবিলেকের যাত্রা এ বছরের জানুয়ারিতে হয়েছিল বলে ধরে নেয়া যায়। কাবিলেকের সবচেয়ে দৃষ্টিকাড়া বিষয় হচ্ছে, এটি ‘উইন্ডোজ ১০’-এর পূর্ববর্তী কোনো অফিসিয়াল ড্রাইভার সমর্থন করবে না; ফলে পূর্ববর্তী উইন্ডোজ ভোক্তাদের কাবিলেকে উত্তরণের পথ বন্ধ করা হলো। এদিকে ইন্টেল ১০ ন্যানোমিটারে পরবর্তী প্রজন্ম ‘ক্যাননলেক’ এ বছরের শেষের দিকে অবমুক্ত করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে।
কাবিলেকে মূলত স্কাইলেকের তুলনায় সামান্য পারফরম্যান্স বা দক্ষতা বাড়ানো হয়েছে, তবে গ্রাফিক্সের ক্ষেত্রে বেশ উন্নয়ন সাধন করা হয়েছে। এতে ৪-কে ভিডিও প্লেব্যাকের পাশাপাশি ত্রিমাসিক গ্রাফিক্সকে উন্নত করা হয়েছে। কোর স্থাপনে কাবিলেক হচ্ছে প্রথম যার পেন্টিয়াম ব্র্যান্ডে ‘হাইপার থ্রেডিং’ প্রযুক্তি সন্নিবেশিত করা হয়েছে। এ ছাড়া আই-থ্রিতে ওভারক্লকিং ফিচার রাখা হয়েছে। এ প্রসেসরটি বায়োস আপডেট সাপেক্ষে পূর্ববর্তী সকেট-১১৫১বিশিষ্ট মাদারবোর্ডে সংস্থাপন করা যাবে। ইন্টেলের নতুন প্রজন্মের মেমরি ‘অপটেন’-এর সমর্থন থাকছে এতে।
সপ্তম প্রজন্মের কাবিলেক পরিবারে ৪২টি চিপ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। আল্ট্রা ল্যাপটপের জন্য ১৭টি, ল্যাপটপের জন্য ৭টি, ডেস্কটপের জন্য ১৬টি ও সার্ভারের জন্য ২টি চিপ। এ চিপগুলোতে টার্বো ফিচারকে বেশ উন্নত করা হয়েছে।
কাবিলেকের জন্য নতুন চিপসেট জেড২৭০ বাজারে ছাড়া হয়েছে। তবে এ চিপসেটে ইউএসবি ৩.১ বা থান্ডারবোল্ট-৩ না থাকায় অনেকেই হতাশ হয়েছেন।
কাবিলেক যে ফিচারগুলো পিসিতে আনবে
০১. পাতলা বা আল্ট্রা বহনযোগ্য ল্যাপটপে বা ট্যাবলেটে এটি ব্যাটারির স্থায়িত্ব বাড়িয়ে দেবে উল্লেখযোগ্যভাবে। ইন্টেল দাবি করেছে, ১০ ঘণ্টা স্থায়িত্ব পাওয়া যাবে অনায়াসে।
০২. ৪-কে ভিডিও ডিসপ্লে পাওয়া যাবে (এইচডি৬৩০) ল্যাপটপ বা এক্সটারনাল ডিসপ্লেতে, যাতে মুভি দেখা যাবে বাড়তি রেজ্যুলেশনের মাধ্যমে। স্ট্রিমিং দৈত্য ‘নেটফ্লিক্স’ ইতোমধ্যে ৪-কে মুভি প্রচার করছে।
০৩. ভার্চুয়াল জগতের হাতছানি পাওয়া যাবে ভিআর হেডসেট সংযুক্ত করে। ফলে ছবি দেখা, গেম খেলা বা ভার্চুয়াল জগতে বিচরণ করা সহজসাধ্য হবে।
০৪. বায়োমেট্রিক লগইনকে অধিকতর নিরাপত্তা দেবে। উইন্ডোজের ‘হেলো’র বিকল্প হিসেবে ‘অথেনটিকেট’কে হাজির করেছে ইন্টেল। এতে করে দুই স্তর অথেনটিকেশন প্রয়োজন হতে পারে। তবে কাবিলেকের সব ভার্সনে এটি থাকছে না। ইন্টেল ও মাইক্রোসফট ‘হেলো’ এবং ‘অথেনটিকেট’কে সমন্বয় করার জন্য ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে।
০৫. ডায়নামিক র্যাোম ও সলিড স্টেট ড্রাইভকে প্রতিস্থাপনযোগ্য ‘অপটেন’ মেমরি প্রযুক্তি পুরো পিসি ডিজাইনকে পরিবর্তন করে দেবে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। তবে সূচনালগ্নের ‘অপটেন’ পিসিতে ওএস, অ্যাপ্লিকেশন ও গেমকে দ্রুততর করতে পারবে; বৃহদাকার স্টোরেজ সম্ভব হবে না। এতে করে প্রাথমিক পর্যায়ে পুরোপুরিভাবে এসএসডি-কে প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হয়তো হবে না।
০৬. দ্রুতগতির সিপিইউ ও জিপিইউ হওয়ার ফলে অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যারের দক্ষতা বেড়ে যাবে অনেক। ধারণা করা হচ্ছে, ১৫ শতাংশ বেশি দক্ষতা হবে স্কাইলেকের তুলনায়।
০৭. ল্যাপটপে সেল মডেম যুক্ত করা যাবে স্মার্টফোনের মতো; ফলে ওয়াইফাই সংযোগ না থাকলে ৪জি অথবা ভবিষ্যতের ৫জি নেটওয়ার্কে অন্তর্ভুক্ত হওয়া সম্ভব হবে সিমের মাধ্যমে।
০৮. ওভারক্লকিংকে বেশ সহজলভ্য করা হয়েছে এ চিপগুলোয়। উদাহরণস্বরূপ- কোরআই৭ ৭৮২০এইচকে চিপের সাহায্যে বেজ স্পিড ২.৯ গিগাহার্টজকে উন্নীত করে ৪.৪ গিগাহার্টজে নেয়া যাবে।
০৯. ইন্টেলের উইগিগ (WiGig) তারবিহীন প্রযুক্তির কথা শোনা যাচ্ছে বেশ কিছুদিন ধরে। ল্যাপটপে ওয়্যারলেস চার্জিং আনার ক্ষেত্রে কাবিলেক ভূমিকা রাখবে বলে ইন্টেল আশাবাদী। তার ও কানেক্টর থেকে বাঁচার জন্য ওয়্যারলেস প্রযুক্তিকে এগিয়ে নেয়ার জন্য বহু নির্মাতার পাশাপাশি ইন্টেলও এগিয়ে যাচ্ছে। কাবিলেক এ ক্ষেত্রে ওয়্যারলেসবান্ধব হবে বলে সবার প্রত্যাশা।
১০. ইনপুট দেয়ার ক্ষেত্রে বর্তমানে প্রচলিত স্পর্শ, টাইপিং, কণ্ঠস্বর বা পেন/স্টাইলাস আরও প্রকৃতির কাছাকাছি নিয়ে যেতে সক্ষম হবে কাবিলেকসমৃদ্ধ পিসি। ইন্টেল ও মাইক্রোসফট এমন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের প্রয়াস চালাচ্ছে, যাতে করে কর্টানাকে দূরবর্তী অবস্থান থেকে কমান্ড বা নির্দেশ দেয়া যেতে পারে। এতে উইন্ডোজ পিসি নোট নেয়ার জন্য স্টাইলাসের সংযুক্তির কথাও ভাবা হচ্ছে।
১১. সর্বোপরি কাবিলেকসমৃদ্ধ ল্যাপটপ হবে বেশ পাতলা ও হাল্কা। ফলে ১ কিলোগ্রামের নিচে ল্যাপটপ বা টুইনওয়ান পাওয়া যাবে অনায়াসে।
১২. সীমান্তবিহীন ডিসপ্লের ফলে পুরো প্যানেলে ডিসপ্লে পাওয়া যাবে। এতে করে ১৩.৩ ইঞ্চির ল্যাপটপ ১১.৬ ইঞ্চিতে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে।
কাবিলেকে গত ৩ জানুয়ারির অবমুক্তিতে জিয়ন চিপ ব্যতিরেকে প্রত্যেক সিরিজে (এইচ/এস) ডুয়াল (২) ও কোয়াড (৪) কোর থাকছে। ৪৫ ওয়াটবিশিষ্ট এইচ সিরিজে ক্লকস্পিড পালস্না থাকছে ২.৫ থেকে ৩.১ গিগাহার্টজ। অন্যদিকে এস সিরিজে (৩৫/৬৫/৯৫ ওয়াট) ক্লকস্পিড পালস্না থাকছে ২.৪ থেকে ৪.২ গিগাহার্টজ। জিয়নে থাকছে ৩ থেকে ৩.১ গিগাহার্টজ।
চিপসেট
মোট ৮টি চিপসেট বাজারে ছাড়া হয়েছে। এর মধ্যে ডেস্কটপের জন্য পাঁচটি। এগুলো হচ্ছে- কিউ২৭০, কিউ২৫০, জেড২৭০, এইচ২৭০ ও বি২৫০ এবং মোবাইল পিসির জন্য সিএম২৩৮, এইচএম১৭৫ ও কিউএম১৭৫ ২০০ সিরিজের চিপসেটে অপটেন মেমরি প্রযুক্তি থাকছে; এর সাথে বাড়তি চারটি পিসিআই এক্সপ্রেস লেন থাকছে।
কিছু সিরিজের ব্যাখ্যা
০১. কে সিরিজ : উচ্চ ক্ষমতার ডেস্কটপ পিসির জন্য।
০২. টি সিরিজ : নিমণ ক্ষমতার ডেস্কটপ পিসির জন্য।
০৩. এইচ সিরিজ : উচ্চ ক্ষমতার মোবাইল পিসির জন্য।
০৪. ইউ সিরিজ : মধ্যম ক্ষমতার মোবাইল পিসির জন্য।
০৫. ওয়াই সিরিজ : নিমণ ক্ষমতার মোবাইল পিসির জন্য।
০৬. এস সিরিজ : মেইন স্ট্রিম পিসির জন্য।
উল্লেখ্য, কাবিলেক তার পূর্বসূরি স্কাইলেকের মতো সকেট এলজি এ-১১৫১ সমর্থন করবে। এখানে স্মরণ করা যেতে পারে তাদের কথা, যারা উইন্ডোজ ১০-এ উত্তরণ ঘটাবেন না, তাদেরকে বঞ্চিত থাকতে হবে কাবিলেক থেকে। তবে ভবিষ্যতে সব ব্যবহারকারীই উইন১০-এ উত্তরণ ঘটাতে বাধ্য হবেন বলে মনে হয়। কারণ, পরবর্তী প্রজন্মের প্রসেসরগুলো আর পুরনো উইন্ডোজকে সমর্থন করবে না বলেই মনে হচ্ছে
সূত্র : ইন্টারনেট
ফিডব্যাক : itajul@hotmail.com

পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০১৭ - এপ্রিল সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস