লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
বাজারে ইন্টেলের চতুর্থ প্রজন্মের প্রসেসর
কমপিউটিংয়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় হার্ডওয়্যারের মধ্যে প্রথমেই আসে প্রসেসরের নাম। ডেস্কটপ, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট বা আধুনিক স্মার্টফোনগুলোতে প্রসেসরের বিকল্প নেই। প্রসেসরের ওপরই নির্ভর করে কমপিউটিং গতি থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজ সম্পাদনা। এককথায় কমপিউটিংয়ে যে যন্ত্রটি সব কাজ সম্পাদন করে সেটিই প্রসেসর। আর এ প্রসেসর নির্মাণে বিশ্বব্যাপী শীর্ষস্থান দখল করে রেখেছে প্রযুক্তি জায়ান্ট ইন্টেল। শুরু থেকেই এ চিপ নির্মাতা নতুন নতুন চমক নিয়ে হাজির হয়েছে প্রযুক্তিবিশ্বের সামনে। তবে গত কয়েক বছর ধরে এ ধারায় যেনো লেগেছে নতুন গতি। এর মধ্যেই তাদের দ্বিতীয় এবং তৃতীয় প্রজন্মের প্রসেসর বাজার দখল করে নিয়েছে ভালোভাবেই। সম্প্রতি ইন্টেল বাজারে নিয়ে এসেছে তাদের চতুর্থ প্রজন্মের প্রসেসর। এর কোড নাম হচ্ছে- হ্যাসওয়েল। গত ৬ জুলাই বাংলাদেশে ইন্টেল প্রসেসরের উন্মোচন করা হয়।
গত ৪ জুন তাইওয়ানের তাইপেতে অনুষ্ঠিত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং এশিয়ার সবচেয়ে বড় প্রযুক্তিপণ্য প্রদর্শনী কমপিউটেক্স তাইপে ২০১৩-তে হ্যাসওয়েল প্রসেসর প্রদর্শন করে ইন্টেল। এরপর থেকেই প্রযুক্তিবিশ্বে প্রসেসরটির নানা ফিচার নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। এসব আলোচনার অবসান ঘটছে ইন্টেলের আনুষ্ঠানিক ঘোষণায়। নতুন প্রজন্মের এ প্রসেসরের মূল আকর্ষণ হিসেবে থাকছে কম শক্তি খরচ এবং উন্নত গ্রাফিক্স। ফলে ট্যাবলেট পিসি এবং ল্যাপটপের সমন্বয়ে তৈরি হাইব্রিড ডিভাইসগুলো এ প্রসেসর ব্যবহার করে নতুন গতি পাবে বলে জানিয়েছে ইন্টেল। তারা জানিয়েছে, এ প্রসেসর এত কম শক্তি খরচ করবে, যাতে করে এগুলো ফ্যানলেস ডিজাইনের ডিভাইসেও ব্যবহার করা যাবে।
আগে হ্যাসওয়েলভিত্তিক ল্যাপটপ ১০ ঘণ্টা চলবে উল্লেখ করলেও বর্তমানে কোরআই ৭ প্রসেসরভিত্তিক আলট্রাবুকগুলো এইচডি ভিডিও চালানো হলে সর্বোচ্চ ৯.১ ঘণ্টা চলবে বলে উল্লেখ করেছে ইন্টেল। ভিডিও প্লে-ব্যাক প্রসেসর ইনটেনসিভ কাজ না হলেও বেঞ্চমার্ক লক্ষ করলে আইভি ব্রিজ সাথে থাকা পার্থক্য বোঝার জন্য যথেষ্ট।
নতুন এ প্রসেসরগুলো বর্তমান প্রসেসরগুলোর তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি গতিতে পারফরম্যান্স দিতে সক্ষম। তবে তার জন্য এতে শক্তি খরচ হবে এখনকার তুলনায় প্রায় অর্ধেক। ফলে আইভি ব্রিজ প্রসেসরের তুলনায় এটি ব্যবহার করে তৈরি করা ডিভাইসের ব্যাটারি লাইফ যেমন বাড়বে, তেমনি স্ট্যান্ডবাই টাইম বাড়বে তিনগুণ পর্যন্ত। ইন্টেল জানিয়েছে, এ প্রসেসর বিদ্যুৎ খরচ ১৭ ওয়াট থেকে ১০ ওয়াটে নামিয়ে আনছে, যা বর্তমান আইভি ব্রিজ ডিজাইনের তুলনায় অর্ধেক। আইভি ব্রিজের জন্য যেখানে প্রয়োজন ছিল ২০ ওয়াট (১৭ ওয়াট প্রসেসর + ৩ ওয়াট চিপসেট), সেখানে হ্যাসওয়েলে লাগছে মাত্র ১৫ ওয়াট (দুটি যন্ত্রাংশকে সমন্বিত করা হয়েছে)। এছাড়া হ্যাসওয়েলের অন্য একটি সংস্করণ ১০ ওয়াটে চলবে। হ্যাসওয়েলভিত্তিক আলট্রাবুক ভিডিও চালানোর সময় মাত্র ৬ ওয়াট বিদ্যুৎ ব্যবহার করবে, যা আইভি ব্রিজ সিস্টেম অপেক্ষা দুই-তৃতীয়াংশ। এছাড়া অতি অল্প স্ট্যান্ডবাই সিস্টেমটি ১৩ দিন পর্যন্ত নতুন তথ্য ধারণ করে রাখতে পারে হ্যাসওয়েল, যা আইভি ব্রিজ থেকে তিনগুণ বেশি। সিলপ মোডে থেকে পূর্ণ শক্তি অর্জন করতে সময় লাগে ৩ সেকেন্ড। হ্যাসওয়েল চিপ ব্যবহার করে তৈরি ডিভাইসগুলো হবে আরও পাতলা, হালকা, দ্রুতগতির। এ প্রসেসরে চালিত ল্যাপটপের ব্যাটারির চার্জও থাকবে অন্যান্য ল্যাপটপের থেকে লম্বা সময় ধরে। ভয়েস রিকগনিশন, ফেসিয়াল অ্যানালাইসিস এবং ডেপথ ট্র্যাকিংয়ের কথাও মাথায় রেখে ডিজাইন করা হয়েছে হ্যাসওয়েল।
আগের প্রজন্মের আইভি ব্রিজ প্রসেসরগুলোর কিছু বৈশিষ্ট্য এ প্রসেসরে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ২২ ন্যানোমিটারের প্রসেসর নির্মাণশৈলী। এর পাশাপাশি ১৪ ধাপ সম্পন্ন পাইপলাইন, মেইনস্ট্রিম কোয়াড কোর এবং ত্রিমাত্রিক ট্রাই গেট ট্রানজিস্টর। এসব বৈশিষ্ট্য আগের প্রসেসরের মতোই অপরিবর্তিত আছে। এগুলো ছাড়াও হ্যাসওয়েল আইভি ব্রিজের মতোই দুই চ্যানেলবিশিষ্ট ডিডিআর ৩, নতুন প্রযুক্তির ডিডিআর ৪ সমর্থন করে এবং এতে আছে ৬৪ কিলোবাইটের এল১ ক্যাশ ও ২৫৬ কিলোবাইট এল২ ক্যাশ।
অপরিবর্তিত বৈশিষ্ট্যের পাশাপাশি চতুর্থ প্রজন্মের এ প্রসেসরে থাকছে কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর নতুন ইনস্ট্রাকশন সেট। এর ইনস্ট্রাকশন সেট হচ্ছে অ্যাডভান্সড ভেক্টর এক্সটেনশন ২, যা হ্যাসওয়েল নিউ ইনস্ট্রাকশন নামেও পরিচিত। হ্যাসওয়েলের জন্য ব্যবহার হচ্ছে নতুন ধরনের সকেট এলজিএ ১১৫০। তৃতীয় প্রজন্মের আইভি ব্রিজ প্রসেসরে ব্যবহার হয় এলজিএ ১১৫৫ সকেট, যা দ্বিতীয় প্রজন্মের স্যান্ডি ব্রিজ প্রসেসরের পর পরিবর্তন হয়নি।
মাল্টি থ্রেডেড সফটওয়্যারের গতি বাড়ানোর জন্য হ্যাসওয়েল প্রসেসরে রয়েছে ট্রানজেকশনাল সিনক্রোনাইজেশন এক্সটেনশন। অন্যতম আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, চতুর্থ প্রজন্মের এ হ্যাসওয়েল প্রসেসরে রয়েছে ইন্টেলের নতুন দুটি বিল্ট ইন গ্রাফিক্স, যার আর্কিটেকচারও হচ্ছে হ্যাসওয়েল। এ দুটি হচ্ছে ইন্টেল এইচডি ৪৬০০, যা প্রায় এটিআই রেডিয়ন এইচডি ২৯০০ প্রো কিংবা এনভিডিয়া কোয়াড্রো এফএক্স ৪৬০০ এবং ইন্টেল এইচডি ৫২০০, যা প্রায় এনভিডিয়া জিফোর্স জিটি ৫৪০ অথবা এটিআই রেডিয়ন এইচডি ৬৬৮০-এর সমতুল্য। উন্নতমানের বিল্টইন এই গ্রাফিক্স দুটিতে রয়েছে ডিরেক্টএক্স ১১.১-এর সমর্থন। এছাড়া গ্রাফিক্স দুটি ওপেন জিএল ৪.০ সমর্থিত। এতে সংযুক্ত শক্তিশালী গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিটের (জিপিইউ) ব্যবহারের ফলে ত্রিমাত্রিক গ্রাফিক্স ও এইচডি ভিডিওতে পারফরম্যান্স পাওয়া যাবে দ্বিগুণ। এইচডি ৫০০০ জিপিইউ কারণে আলট্রাবুক শ্রেণীর ল্যাপটপগুলোর গ্রাফিক্স ক্ষমতা ৪০ শতাংশ বেড়েছে এবং টম্ব রাইডারের মতো গেম ১৩৬৬ বাই ৭৬৮ রেজ্যুলেশন এবং মধ্যমানের সেটিংস ব্যবহার করে খেলা সম্ভব হবে। এছাড়া আইরিস ব্র্যান্ডের গ্রাফিক্সসমৃদ্ধ ২৮ ওয়াটের হ্যাসওয়েল চিপগুলো গত প্রজন্ম অপেক্ষা দ্বিগুণ দক্ষতা প্রদান করবে। এখন পর্যন্ত প্রসেসরের রাজ্যে একে অনন্য এক সংযোজন হিসেবেই অভিহিত করেছে ইন্টেল।
প্রযুক্তি বিশেস্নষকেরা জানান, বর্তমানে কমপিউটারের চাহিদা দিন দিন কমে যাচ্ছে। তবে নতুন প্রজন্মের ইন্টেলের নতুন এ প্রসেসর কমপিউটার বাজারকে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করতে পারে। ইন্টেল কর্তৃপক্ষ জানায়, উইন্ডোজনির্ভর ল্যাপটপ, আলট্রাবুক ও ট্যাবলেটের কথা মাথায় রেখে নতুন প্রসেসরের নকশা করা হয়েছে। এ প্রসেসরে গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিট (জিপিইউ) উন্নত করা হয়েছে। এ ছাড়া সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট (সিপিইউ) ও প্লাটফর্ম কন্ট্রোলার হাব (পিসিএইচ) একসাথে যুক্ত করা হয়েছে। ফলে কমপিউটারে দ্রুতগতির তথ্য প্রসেস করার পাশাপাশি ইউএসবি, অডিও ও তথ্য সংরক্ষণ ব্যবস্থাও উন্নত হবে। হ্যাসওয়েল প্রসেসরনির্ভর কমপিউটার কণ্ঠস্বর শনাক্তকারী প্রযুক্তি, জেশ্চার বা অঙ্গভঙ্গি শনাক্তকরণ প্রযুক্তির মতো নতুন প্রযুক্তিও সমর্থন করবে।
ফিডব্যাক : bmtuhin@gmail.com