আপনি হয়তো পড়াশোনার পাঠ অনেক আগেই শেষ করে ফেলেছেন, এখন ব্যস্ত একটি পছন্দসই চাকরি জুটিয়ে নিয়ে নিজের বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে বা অনেককে দেখা যায়, চাকরি পাওয়ার পর নিজের ক্যারিয়ারের উন্নতি কীভাবে করবেন, সে বিষয়ে সঠিক দিকনির্দেশনার অভাবে দিশেহারা অবস্থায় পড়ে যেতে। কিন্তু শুধু একাডেমিক পড়াশোনা শেষ করেই কি একটি ভালো চাকরি পাওয়া সম্ভব? বর্তমান সময়ের এই প্রতিযোগিতামূলক বাজারে কাঙিক্ষত চাকরির জন্য নিজেকে যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে অন্যদের চেয়ে নিজেকে এগিয়ে রাখতে একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি প্রয়োজন বাড়তি কিছু যোগ্যতা অর্জন। সে ক্ষেত্রে বাড়তি কিছু কোর্স করে, বাড়তি কিছু সার্টিফিকেট অর্জন করার মাধ্যমে আপনি নিজেকে চাকরির বাজারে অনেকটাই এগিয়ে রাখতে পারেন, যা আপনার ক্যারিয়ারের অগ্রগতিতেও যথেষ্ট ভূমিকা রাখবে। ক্যারিয়ার উন্নয়ন কিংবা চাকরি পাওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের কোর্স করার বিকল্প নেই।
কিন্তু বর্তমান সময়ে ব্যস্ত একাডেমিক শিডিউল বা চাকরির সময়ের ফাঁকে সময় বের করে এসব কোর্স করা সত্যিই কষ্টদায়ক হয়ে ওঠে। আর এ ক্ষেত্রে আপনিও নিতে পারেন অনলাইনে বিভিন্ন কোর্স করার সুযোগ। এখন অনলাইনের কল্যাণে ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে ঘরে বসেই বিশ্বের নানা প্রান্তের ভালো ভালো বিভিন্ন কোর্স করতে পারছেন সবাই। বর্তমান বিশ্বে এ ধরনের অনলাইন কোর্সগুলোর চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে। প্রতিযোগিতার এই যুগে নানা ধরনের প্রফেশনাল এই কোর্স করার মাধ্যমে নিজেকে এগিয়ে রাখার চেষ্টা সবার মধ্যেই লক্ষ করা যাচ্ছে। তবে ব্যস্ততার কারণে অনেকেই হয়তো এই কোর্সগুলো সরাসরি ক্লাসরুমে বসে করতে পারেন না। আর তাদের জন্যই ঘরে বসেই সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এই কোর্সগুলো করার সুযোগ রয়েছে বর্তমানে ভার্চু্যয়াল বিশ্বে।
অনলাইনে কোর্স করার জন্য বর্তমানে বিশ্বে অনেকগুলো প্লাটফর্ম বা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যেমন-
www.edx.org
www.udacity.org
www.udemy.org
www.futurelearn.org
www.khanacademy.org
অনলাইনে কোর্স করার জন্য কিছু বাংলাদেশী সাইটও রয়েছে। যেমন-
www.tenminuteschools.com
www.shikkhok.com
www.dimikcomputing.com
তবে বর্তমান সময়ে অনলাইন কোর্সের ক্ষেত্রে সবচেয়ে সুপরিচিত একটি নাম কোর্সেরা (www.coursera.org)। এখানে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর কোর্স করা যায়। কোর্সগুলোর মেয়াদকাল ৪ থেকে ১২ সপ্তাহ। একটি নির্দিষ্ট নম্বর তুলতে পারলে কোর্স শেষে সার্টিফিকেট অর্জন করা যায়। এমনকি কিছু কোর্স আছে, যা সাফল্যের সাথে শেষ করতে পারলে আমেরিকার বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানে চাকরির ইন্টারভিউতে ডাক পাওয়া যায়। সবচেয়ে বড় কথা, প্রতিটি কোর্সেই আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখা হয়।
কোর্সেরাতে বিনামূল্যেই কোর্স করা যায়। তবে সে ক্ষেত্রে আপনি কোনো সার্টিফিকেট পাবেন না।
২০১৫ থেকে কোর্সেরাতে অনেক পরিবর্তন হয়েছে এবং তাদের প্ল্যাটফর্মে এখন সক্রিয় কোর্সের সংখ্যা ৯০ থেকে ২০০০-এ এসে দাঁড়িয়েছে এবং তাদের শিক্ষার্থীর সংখ্যাও দ্বিগুণ হয়েছে। তবে প্রশ্ন হলো আদৌ কি এসব অনলাইন কোর্স ক্যারিয়ার উন্নয়নে কিংবা চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো ভূমিকা রাখছে?
সম্প্রতি ‘কোর্সেরা’ কর্ম ও শিক্ষাগত জীবনে অনলাইন কোর্সের প্রভাববিষয়ক এক জরিপের ফলাফল তাদের নিজস্ব ব্লগে প্রকাশ করেছে। পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষকের সহযোগিতায় করা কোর্সেরার ২০১৭ সালের এই জরিপের ফল অনুসারে কোর্সেরা থেকে অনলাইনে কোর্স করা ৮৪ শতাংশ ক্যারিয়ার সচেতন শিক্ষার্থী বলেছেন, তারা ক্যারিয়ার তৈরিতে এসব কোর্স থেকে উপকৃত হয়েছেন। অন্যদিকে ৯৩ শতাংশ শিক্ষার্থী বলেছেন, এই কোর্সগুলো তাদের শিক্ষাজীবনে অনেক উপকার করেছে। এ ছাড়া ৭২ শতাংশ শিক্ষার্থী বলেছেন, এই কোর্সগুলো তাদের আত্মবিশ্বাস তৈরিতে ভূমিকা রেখেছে। ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থীর মতে, এই কোর্স তাদেরকে প্রায় সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা তাদের সহকর্মীদের সাথে সংযুক্ত থাকার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেছে।
প্রতিষ্ঠানটি দাবি করছে, ‘কোর্সেরা’র এ বছরের জরিপের ফল ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে চালিত জরিপের ফলের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ২০১৫ সালে ‘কোর্সেরা’ সারা বিশ্বের লোকজন অনলাইন লার্নিং থেকে কতটা উপকৃত হচ্ছে, তার ওপর প্রথমবারের মতো একটি জরিপ চালায়, যা ওই সময় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউতে প্রকাশ হয়। সে জরিপের ফলাফলেই উঠে এসেছিল এসব অনলাইন কোর্স থেকে শিক্ষার্থীরা নতুন কর্মজীবন শুরু করা থেকে শুরু করে নতুন নতুন ডিগ্রি অর্জনের ক্রেডিট অর্জনসহ নানাভাবে উপকৃত হচ্ছে।
তথ্যসূত্র : কোর্সেরা ব্লগ, ইন্টারনেট