দেশে অনলাইন ব্যবহারকারীর সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি জ্যামিতিক হারে বাড়ছে সাইবার অপরাধ। তাই এই সাইবারঅপরাধপ্রতিরোধ ও দমনএকটিচ্যালেঞ্জহয়ে দাঁড়িয়েছে। কোনো থানারঅধীনস্থ এলাকায়যদি খুনেরমতোঅপরাধসংঘটিতহয়, তাহলেপুলিশপ্রয়োজনীয়ব্যবস্থা গ্রহণকরেঅপরাধেরআলামতসংগ্রহের। তেমনিসাইবারঅপরাধের ক্ষেত্রেও কিছুঅত্যাবশ্যকব্যবস্থা নিতেহয়। সেসবব্যাপারেআমাদের আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারীবাহিনীএখনওশতভাগসক্ষম ও সচেতননয়। উন্নতবিশ্ব সাইবারঅপরাধনিয়েযথেষ্টসতর্ক ও সচেতন। এ ব্যাপারেআমাদের কিছুটাঘাটতিরয়েছে। সম্প্রতি দেশে যেসবসাইবারঅপরাধসংঘটিতহয়েছে, তার ভেতরেপ্রধানহচ্ছে ব্যক্তিগত হয়রানি। কারওসম্পর্কে মানহানিকরবাআপত্তিকরকথা ও ছবি পোস্ট করা। সামাজিকমাধ্যমেরব্যাপকপ্রসারেরফলে এই অপরাধেরমাত্রাঅনেক বেড়েছে। বিশেষকরেনারীসংক্রান্তবিষয়েসাইবারঅপরাধেরমাত্রা বেশি। অনেকেক্ষতিগ্রস্তহওয়ার পর আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারীবাহিনীরকাছেযাচ্ছে। অনেকে লজ্জা বা সঙ্কোচের জন্য সেটাওকরছেনা।
বাস্তবতাহলোইন্টারনেটখুলে দিয়েছে সব বন্ধ দরজা। এখনবিশ্ব চলেএসেছেহাতেরমুঠোয়। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমেই দেশে উন্নয়নঘটবে। বাংলাদেশেরআউটসোর্সিংকর্মীদের দক্ষতাঅন্য যেকোনো দেশের সাথেতুলনাকরাযায়। গত বছরইন্টারনেটব্যবহারেরদিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বে ৫৪তম অবস্থানেছিল। দেশে আউটসোর্সিংয়েব্যাপকভাবেতরুণেরাএগিয়েআসার পেছনেবড়কারণবর্তমানসরকার তথ্যপ্রযুক্তিবান্ধব বলে। আউটসোর্সিংয়েপাঁচবছরেকর্মসংস্থানেরটার্গেট দুইলাখকরার পদক্ষেপ গ্রহণেপ্রমাণিতহয়েছেবিপুলসংখ্যকচাকরিপ্রত্যাশীউচ্চশিক্ষিততরুণ-তরুণী। তবেবাংলাদেশেরশতকরা ৭০ ভাগমানুষগ্রামেবাসকরে। তাদের ইন্টারনেটসুবিধা দেয়ারজন্য সরকারকাজকরছে। সাড়েচারহাজারের বেশিইউনিয়নে তথ্যকেন্দ্র খোলাহয়েছে। বেশকিছুএলাকায়ওয়াইফাইচালুকরাহয়েছে। বর্তমানসরকার গোটা দেশকেশতভাগ নেটওয়ার্কেরআওতায়আনারজন্য কাজকরেযাচ্ছে। ৬৪টি জেলা ও ১৯৭টি উপজেলাফাইবারঅপটিক্যাল নেটওয়ার্কেরআওতায়রয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব উপজেলাকেএরআওতায়আনাহবে। দেশেরতরুণেরাবর্তমানে এই সেক্টর থেকে প্রতিবছর ২০০ মিলিয়নমার্কিনডলারআয়করছেন।
এমনপরিস্থিতিতেসাইবারনিরাপত্তানিশ্চিতকরতে এ সংক্রান্তঅপরাধ দমনেসর্বোচ্চ ১৪ বছরেরশাসিত্মরবিধান রেখে‘ডিজিটালনিরাপত্তাআইন’করারসিদ্ধান্তনিয়েছেসরকার।আইনটিরঅধীনে‘সাইবারইমার্জেন্সি রেসপন্সটিম’গঠনকরাহচ্ছে। এছাড়াঅপরাধেরধরনঅনুযায়ীসর্বনিম্নশাসিত্মওনির্ধারণকরে দেয়া হবে। রাষ্ট্রীয়পর্যায়েসাইবারনিরাপত্তা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি ব্যক্তিগত পর্যায়েসচেতনতাবাড়নোওখুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি প্রত্যেকে এব্যাপারেসচেতনহয়,তবেঅনেক ক্ষেত্রেই অনেকধরনেরসাইবারঅপরাধএড়ানো সম্ভব। বিশেষকরেনারীদের প্রতিঅনলাইনঅপরাধের বেশিরভাগইসাইবারনিরাপত্তাসম্পর্কে তাদের অজ্ঞতারকারণে ঘটে থাকে। সরকারওইদানিংএর গুরুত্ব অনুধাবনকরেসারাদেশে ১০ হাজার মেয়েদের স্কুলেসাইবারনিরাপত্তাসম্পর্কে সচেতনতামূলকপ্রশিক্ষণ দিয়েছে। এখানেব্যক্তিগত পর্যায়েসাইবারনিরপত্তায়করণীয়সম্পর্কে আলোচনাকরাহলো।
ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তায়সতর্কতা
প্রয়োজনে হোকআরঅপ্রয়োজনে, প্রতিদিনআমরা ই-মেইল, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও নানাওয়েবসাইটব্যবহারকরছি। তবে তথ্য বিনিময়ের এ মাধ্যমগুলোব্যবহারেসামান্য অসাবধানতায়আপনার ব্যক্তিগত তথ্য সাইবারঅপরাধীদের কাছেপাচারহয়ে যেতেপারে। সাধারণততরুণেরা এ ধরনেরঝুঁকিতে বেশি থাকে। নতুনইন্টারনেটব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রেও একই কথাপ্রযোজ্য। ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষায়মুঠোফোনবাট্যাবেরপর্যাপ্তনিরাপত্তানিশ্চিত তোকরবেনই, এই ছয়টিকাজ থেকেও বিরত থাকবেন-
০১. বিনামূল্যেরওয়াইফাইব্যবহার
সর্বসাধারণেরজন্য বিনামূল্যে ব্যবহারেরওয়াইফাইসাধারণতনিরাপদ হয়না। হ্যাকারচাইলে এই নেটওয়ার্কেডাটাবিনিময়েরসময়আপনার তথ্য হাতিয়েনিতেপারে । ধরুন, কোনোপাবলিকওয়াইফাইব্যবহারকরেব্রাউজকরা কোনোওয়েবসাইটে দেয়া ই-মেইল, পাসওয়ার্ড কিংবাঅন্য কোনো তথ্যে প্রবেশকরলেন। একই নেটওয়ার্ক ব্যবহারকরছেএমন তৃতীয় কোনোব্যবহারকারীরকাছেডাটাচলে যেতেপারে। এ জন্য খুব প্রয়োজননাহলে উন্মুক্ত ওয়াইফাইব্যবহারকরা থেকে বিরত থাকুনএবংব্যবহারেরআগেনিশ্চিতহয়েনিন নেটওয়ার্কটিনিরাপদ কিনা।
০২. ই-মেইলেঅতি ব্যক্তিগত তথ্য প্রদানকরা
যোগাযোগেরমাধ্যমগুলোরমধ্যে এখনও ই-মেইলজনপ্রিয়তারশীর্ষে। ই-মেইলপাঠানোরআগেনিশ্চিতহয়েনিনঠিকানাঠিকআছেকিনা। ব্যক্তিগত তথ্য পাঠানোকিংবা সংযুক্তি যোগকরারআগেতাইসচেতনতাঅবলম্বন করাউচিত।
০৩. সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোরঅবাধব্যবহার
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতেআপনিআপনারজীবনেরঅনেক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত ভাগাভাগিকরে থাকেন। আপনার গোপনীয়তারক্ষার সেটিংস ও নেটওয়ার্কেরনিরাপত্তা জোরদারহওয়ারপরওআপনার শেয়ারকরা ব্যক্তিগত তথ্য অন্য কারওহাতেচলে যেতেপারে। ফলেসাইবারঅপরাধীরাআপনারঅনাকাঙিক্ষত তথ্য অনলাইনেছড়িয়েদিতেপারে, যাআপনারভার্চু্যয়ালপরিচিতিকিংবা ব্যক্তিগত জীবনবিপদের মুখে ফেলে দেবে।
০৪. নাবুঝেঅনলাইন ফরম পূরণকরা
আজকালঅনেকওয়েবসাইটেপ্রবেশকরতেহলেকিছু ব্যক্তিগত তথ্যে প্রবেশকরতেহয়। বেশিরভাগ তথ্য ওয়েবসাইটেব্যবহারেরপ্রয়োজনহলেও তথ্য দেয়ারব্যাপারেসাবধানতাঅবলম্বন করাইভালো। ওয়েবসাইটে তথ্য দেয়ারআগেতাদের গোপনীয়তারনীতিপড়েনিশ্চিতহয়েনিনআপনার দেয়া তথ্যগুলোকীকীকাজেব্যবহারকরাহবে।
০৫. দুর্বল ও সহজপাসওয়ার্ড ব্যবহারকরা
জটিলপাসওয়ার্ড মনেরাখাকিছুটাকঠিনবলেঅনেকেইসহজেঅনুমানকরাযায়এমনপাসওয়ার্ড ব্যবহারকরেন। এতে আপনার তথ্য ঝুঁকিরমধ্যে পড়ে। তাইবড় ও ছোটহাতেরঅক্ষর, সংখ্যা ও চিহ্নেরসমন্বয়ে তৈরিপাসওয়ার্ড ব্যবহারকরুন। প্রতিটিওয়েবসাইটেরজন্য ভিন্নপাসওয়ার্ড ব্যবহারকরুন। সম্ভব হলেকিছুদিনপরপরপুরনোপাসওয়ার্ড বদলে ফেলুন।
০৬. স্মার্ট ওয়াচ
হাতে স্টাইলিশ স্মার্ট ওয়াচ। দর্শনে ‘হিরোহিরো’ফিলহলেওআপনার ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে তাএকেবারেইজিরো। স্মার্ট ওয়াচ থেকে আপনারব্যবহৃত তথ্য খুব সহজেইহ্যাককরতেপারেহ্যাকারেরা, এমনটাই দাবিকরাহয়েছেএকটিগবেষণায়। ওই গবেষণায় দাবিকরাহয়েছে, স্মার্ট ওয়াচের মোশন সেন্সরদিয়েএকজনহ্যাকার খুব সহজেই স্মার্ট ওয়াচব্যবহারকারীর তথ্য ব্যবহারকরতেপারবে।
গবেষণায় দেখা গেছে, একটি রেগুলারকিবোর্ড (ল্যাপটপঅথবা ডেস্কটপ) থেকে খুব সহজেই স্মার্ট ওয়াচেব্যবহৃত তথ্যাদিরযাবতীয়নথি পাওয়া সম্ভব। অ্যাক্সিলোমিটার ও গ্যারিস্কোপসিগন্যালহাতে থাকা স্মার্ট ওয়াচেরমাইক্রো মোশনগুলোকেঅ্যাক্সেস করতেপারেএবং সেগুলো থেকে ইংরেজিহরফে সব নথি একজনহ্যাকারেরকাছে পৌঁছেযায়। তাই স্মার্ট ওয়াচব্যবহারেসতর্ক থাকতেহবে।
ফিডব্যাক :jabedmorshed@yahoo.com