লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
তথ্যসূত্র:
প্রচ্ছদ প্রতিবেদন
ইন্টারনেট ইজ ব্রোকেন
মনোপলি, সাইবারক্রাইম, ফেইক নিউজ। এমনকি ইন্টারনেটের প্রতিষ্ঠাতারাও স্বীকার করেন, তাদের ইউটোপিয়ান ভিশন ব্যর্থ হয়েছে। কী হতো,যদি আমরা নতুন করে আবার শুরম্ন করতে পারতাম? আসলেই আমরা কি আজকের দিনের ইন্টারনেট নতুন করে আবার সৃষ্টি করতে পারি?অথবা আমরা কি তার চেয়েও ভালোতর কিছু সৃষ্টি করতে পারি?এসব প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে আমাদের চারপাশে। কারণ এরই মধ্যে ‘ইন্টারনেট ইজ ব্রোকেন’।
সবকিছু বাদ দিয়ে নতুন করে শুরম্ন
আমরা ইন্টারনেটকে চিত্রিত করতে চাই একগুচ্ছ পাইপ হিসেবে, যে পাইপগুলোবরাবর তথ্য প্রবাহিত করে। কিন্তু এর অধিকতর ভালো মেটাফর বা রূপক হতে পারে, যদি আমরা এটিকে দেখি একটি অপরিমেয় জটিল কতগুলো সড়কের সমাহার হিসেবে, যেগুলোর ওপর দিয়ে ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন যানবাহন চলাচল করছে, ছিটকে পড়ছে বিভিন্ন দিকে এবং আবার ফিরে আসছে এর গমত্মব্যের দিকে। এগুলো হচ্ছে প্যাকেট, শূন্য (০) ও এক (১)-এর মালাবিশেষ। অনুমিত হিসাব মতে, ৬০ হাজার জিবি ডাটা ইন্টারনেটে শেয়ার করা হয় প্রতি সেকেন্ড। এগুলো কনভার্ট করা হয় শেষ প্রামেত্মর কমপিউটারে, ফোনে, ল্যাপটপে পৌঁছার আগে- যেখানে রয়েছে আপনার অবস্থান।
বলতে হয়, নেটওয়ার্কের নিজেরও ধারণা নেই, এটি কী ধারণ করছে। নিউট্রালিটি হচ্ছে রিজন, যেটি জন্ম দিয়েছে মানুষের অভূতপূর্ব উদ্ভাবন-কুশলতার ইঞ্জিন। এটি ফেসবুক ফটো, স্কাইপিতে প্রিয়জনের কল, গেমস অব ডেসটিনি, ফিশিং ই-মেইল, সাইবার অ্যাটাক (যা অচল করে দিতে পারে একটি দেশের বিদ্যুৎ গ্রিড) ইত্যাদি সবকিছুকে এক পালস্নায় মাপে। এর সবচেয়ে বড় বিজয় হচ্ছে এর অবিরাম প্রবাহ।
ইন্টারনেটের মূল অগ্রদূতেরা, যেমন ‘ইলেকট্রনিক ফ্রন্টিয়ার ফাউন্ডেশনে’র জন পেরি বার্লো (A Declaration of the Independence of Cyberspace-এর লেখক) অনলাইন জগৎটাকে দেখেন একটি ‘কমনস’ হিসেবে। কমনস বলতে তিনি বুঝিয়েছেন একটি লেভেল পেস্নয়িং ফিল্ড হিসেবে, যেখানে সবার কণ্ঠ শোনা যাবে, যেখানে থাকবে না কোনো জাতিবিশেষের বা দেশবিশেষের আইনের শাসন, থাকবেনা অর্থ কামানোর কোনো প্রয়োজন। এই দৃষ্টিভঙ্গিটি তুলনা করম্নন আমাদের আজকের ইন্টারনেটের সাথে, যাতে প্রাধান্য বিসত্মার করে আছে অভূতপূর্ব মূলধন আর ÿমতার অধিকারী তিন-চারটে বিশাল কোম্পানি। বিগডাটা হচ্ছে প্রতিটি টেক বিজনেসের ফান্ডামেন্টাল কমোডিটি। এই বিগডাটার উল্টোপিঠে রয়েছে অভূতপূর্ব ÿমতাধর এক সার্ভিল্যান্স টুল; আমাদের নিজস্ব কিছু তৈরির এক সম্পূর্ণ চিত্র। নাম-পরিচিতি প্রকাশ না করার প্রথম দিককার ধারণাগুলো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে ট্রলিং অপব্যবহার ও ঝুঁকিপূর্ণ লোকের হ্যাকের। সৃজনশীল আউটপুটের ফ্রি শেয়ারিং সম্প্রসারিত করছে আমাদের মন ও ইন্টারনেট মিমিকে (সঞ্চালিত সাংস্কৃতিক প্রতীক ও সামাজিক ধারণা), কিন্তু হুমকির মুখে ফেলেছে সৃজনশীল শিল্পের অসিত্মত্বকে ও শৈল্পিক কর্মের মূল্যকে। অনলাইন পস্ন্যাটফরম আমাদেরঐক্যবদ্ধ করে। অভিযোগ হচ্ছে, এই অনলাইন পস্ন্যাটফরম সজ্জিত করা হচ্ছে, ব্যবহার হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে, যেমনটি করছে নব্য-নাৎসি ও জাতিরাষ্ট্রগুলো। অধিকন্তু, ইন্টারনেট গড়ে উঠেছিল কয়েক দশকের পুরনো প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করে। আজ ইন্টারনেটের সাথে সংশিস্নষ্ট রয়েছে শত শত কোটি ডিভাইস। প্রতিটি ডিভাইস হচ্ছে সেসব ডিভাইসের চেয়ে শক্তিশালী, যেগুলোর ওপর ভিত্তি করে ইন্টারনেট ও ওয়েব গড়ে তোলা হয়েছিল। স্টোরেজ এখন উলেস্নখযোগ্য মাত্রায় সসত্মাতর। আর ওয়্যারলেস টেকনোলজির অর্থ হচ্ছে, বিভিন্ন দেশ এখন যেসব ওয়েভ অবকাঠামো গড়ে তুলছে, সেগুলো আর সমুদ্রতলের ক্যাবলের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠছে না। আমাদের ফোনগুলো স্ক্যান করতে পারে আমাদের মুখম-ল ও আঙুলের ছাপ। এর মাধ্যমে লেনদেনকে করে তোলা হচ্ছে নিরাপদ। বিকাশমান প্রযুক্তি, যেমন বস্নকচেইন ফাইল শেয়ারিং ও ভ্যালু এক্সচেঞ্জের নতুন মডেলে পরীÿা-নিরীÿার অভিজ্ঞতার সুযোগ করে দিয়েছে।
অতত্রব বিবেচনা করা যাক, একটি চিমত্মাভাবনা নিয়েপরীÿা-নিরীÿারবিষয়- আমাদেরকে যদি ইন্টারনেট পুনর্গঠন করতে হয়, তবে সবকিছু বন্ধ করে দিয়ে আবার নতুন করে শুরম্ন করতে হবে বিগত ৩০ বছরের মতো সময়ের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে। তখন কি তা আজকের মতোই হবে? অথবা আমরা কি ডিজাইন করব আরও ভালোনতুন কিছুর।
ভিন্ট চার্ফ ও রবার্ট কাহন
ইন্টারনেটের বিদ্যমান ডিজাইনের জন্য যে মানুষটি অনেক অনেক ধন্যবাদ পাওয়ার দাবি রাখেন, তিনি হচ্ছেন Vint Cerf।তিনি Robert Kahn সহযোগে ১৯৭০-এর দশকে উদ্ভাবন করেছিলেন ইন্টারনেট কমিউনিকেশনের মুখ্য উপায়, TCP/IP প্রটোকল। ভিন্ট চার্ফ বলেন, ‘এই ব্যবস্থা উত্তরণ ঘটিয়েছে উলেস্নখযোগ্যভাবে এবং এটিই এর ‘ইনকমপিস্নটনেস’ বা অসম্পূর্ণতা। আমরা যখন এই নেটওয়ার্ক ডিজাইন করি, তখন আমাদের সুনির্দিষ্ট কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। আমরা ভাবিনি, কী হবে এর প্রয়োগ। আমরা শুধুপ্যাকেট পেতে চেয়েছিলাম এক পয়েন্ট থেকে অন্য পয়েন্টে।’
চার্ফ এখন মাইক্রোসফটে একজন এল্ডার স্টেটসম্যান। তিনি বলেন,‘যখন সিস্টেমটি বেড়ে ওঠে, আমাদের ডাটা রেট সাপোর্টও আমরা বাড়িয়ে নিতে পেরেছিলাম। আমরা সহজেই পরিচালনা করতে সÿম হই ভয়েস ও ভিডিও।’ চার্ফ ও কাহন যে নেটওয়ার্ক ডিজাইন করেছিলেন, তা বহন করতে পারত প্রায় সবকিছুই। চার্ফ নাছোড়বান্দার মতো পরিবর্তন আনতে চান ইন্টারনেটে। আনতে চান নতুনএক ইন্টারনেট। ‘সুবিধা উতরে যায় অসুবিধাকে’- বলেন চার্ফ। এবং সবাই একমত হবেন- TCP/IP মূলত ইন্টারনেটে কাজ করে। কিন্তু আমাদের হাইপথেটিক্যাল (উপপ্রমেয়মূলক) নতুন ইন্টারনেটে রয়েছে চার্ফ ও কাহনের নেটওয়ার্কের দ্বিতীয় আরেকটি মুখ্য ফিচার। আর তা হলো আমরা চাইলে রিভিজিট করতে পারি এর ক্লায়েন্ট-সার্ভার স্ট্রাকচার। এটি এমন ধারণা যে, ইনফরমেশন বসবাস করে কোথাও (একটি সার্ভার) এবং আমরা (ক্লায়েন্টবর্গ) সেই স্থানে যাই সেটিতে প্রবেশ করতে।
ইনফরমেশন-সেন্ট্রিক নেটওয়ার্ক
তিনি বলেন, ‘অতএব ইন্টারনেটের অনেক কিছুই সঠিকভাবে এগিয়েছে। কখনো কখনো আপনি তা লÿ করেন না। আপনার জন্য সবার ওপরে রয়েছে অবাক করা উদ্ভাবন। এমনকি যদিও আপনার রয়েছে গুগল ও ফেসবুকের মতো বড় মাত্রার প্রোভাইডার। এ ছাড়াও রয়েছেমম-অ্যান্ড-পপ শপ, যা সেটআপ করতে পারে একটি ওয়েবসাইট। আর এরপরই এটি কাজ করবে। আরো আছে কানেকটিভিটি- স্কাইপি, দ্য হ্যাংআউটস, কম ব্যয় আর এসব আমরা বিবেচনায় রাখি। ইন্টারনেট অনেক ভালো করেছে এ ÿÿত্রে।
Trossen বলেন,‘আপনি যদি এক সত্মর নিচে যান, তবে তা সমস্যাকর। যখন ইন্টারনেট শুরম্ন হয়েছিল, তখন ক্লায়েন্ট সার্ভার প্যারাডিম তৈরি করে প্রচুর সেন্স। কারণ, তখনকার দিনে ইনফরমেশনের অভাব ছিল। এটি সাধারণত কোথাও লকড হয়ে থাকত। এটি বসবাস করত একটি পোর্টালের পেছনে। যেখানে দরজায় আপনি নক করেন প্রবেশ করার জন্য এবং এর পেছনে রয়েছে এক বিশাল লাইব্রেরি। কিন্তু এখন ইনফরমেশন আসে প্রায় সবখান থেকে। অতএব এখন আর এই ধারণা নেই যে, আমাকে ইনফরমেশন পাওয়ার জন্য কোথাও যেতে হবে।’ তিনি আরো বলেন,আমাদের ফোনের ও কমপিউটারের এজের স্টোরেজআগেকার মুখ্য স্টোরেজকে অনেকটাছাড়িয়ে গেছে।’
ট্রোসেনের প্রসত্মাব তিনি প্রটোটাইপিং করছেন InterDigital-এ বিশ্বব্যাপী এক উদ্যোগের অংশ হিসেবে। এই প্রসত্মাব হচ্ছে একটি ‘ইনফরমেশন-সেন্ট্রিক নেটওয়ার্ক’ (আইসিএন)-এর জন্য। এটি একটি ইন্টারনেট, যাতে কার্যত ভূগোল কোনো বিবেচ্য নয়। ইউনিফর্ম রিসোর্স লকেটরের (ইউআরএল) পরিবর্তে আমরা যে ওয়েব অ্যাড্রেসগুলো ব্যবহার করি ইনফরমেশনে প্রবেশের জন্য। একটি ‘ইনফরমেশন-সেন্ট্রিক নেটওয়ার্ক’ তথা আইসিএন-বেজড ইন্টারনেটে থাকবে ইউনিফর্ম রিসোর্স আইডেন্টিফায়ার (ইউআরআই), অ্যাটাচড লেভেলস বাকি সবাইকে বলবে ইফরমেশনটা কী। এরপর আমরা যদি একটি ভিডিও স্ট্রিমিং করতে চাই অথবা একটি ছবি ডাউনলোড করতে চাই, তবে তা নেটওয়ার্কে ছেড়ে দিই।
এ ধরনের নেটওয়ার্ক কাঠামোর তাৎÿণিক সুবিধাটি হচ্ছে, ল্যাটেন্সি বা সুপ্তাবস্থা কমানো। এই ল্যাটেন্সি বা সুপ্তাবস্থা হচ্ছে একটি নেটওয়ার্কে ডাটা রিকুয়েস্ট করা ও তা পাওয়ার মধ্যকার সময়ের দেরি। কখনো কখনো এটি চলে বিদ্যুতের মতো দ্রম্নত গতিতে। কিন্তু ভিডিও ও গেমিংয়ের বিস্ফোরণের ফলে ল্যাটেন্সি এক বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেউই Game of Thrones-এর বদলে একটি বাফারিং হুইল দেখতে চান না।
আইসিএন পদÿÿপ নেয় কোনো একটা কিছু ব্যবহার করে ল্যাটেন্সি প্রবলেম সমাধানের, যা হবে সবার কাছে সুপরিচিত, যারা BitTorrent-এর মাধ্যমে ডাউনলোড করেছেন (অথবা চুরি করেছন) একটি মুভি। বিট টরেন্ট ক্লায়েন্টরা জানেন, ফাইলগুলোর কপি একই সাথে রয়েছে ইন্টারনেটের হাজারো জায়গায় (এ ÿÿত্রে অন্যদের হার্ডড্রাইভে, যারা ডাউনলোড করেছেন একই ফাইল)। আর এরা কাজ করেন যথাসম্ভব বেশি সোর্স থেকে ফাইলের অংশবিশেষ সোর্সিং করে। ট্রোসেনের ÿÿত্রে এ উপায়ে ইন্টারনেটে সব ইনফরমেশন ট্রিট করতে এটি তৈরি করে আরো বেশি সেন্স। ট্রোসেন এরই মধ্যে প্রদর্শন করেছেন- কী করে উলেস্নখযোগ্যভাবে খরচ কমিয়ে একটি আইসিএন নেটওয়ার্ক ফিড করতে পারে একটি একক Netflix স্ট্রিম। তিনি আস্থাশীল, তার আইসিএন নেটওয়ার্ক বিদ্যমান আইপি ইনফ্রাস্ট্রাকচারের শীর্ষে থাকবে। ২০১৮ সালে এর সরাসরি পরীÿা চালু হবে।
ট্রোসেন বলেন, ইউআরআইগুলো ইন্টারনেটের একটি সমসাময়িক সমস্যাও সমাধান করতে পারবে। সেই সমস্যাটি হচ্ছে- ট্রাস্ট, আস্থার সমস্যা। ইন্টারনেটে থাকে প্রচুর ভুল তথ্য, ফিশিং ই-মেইল থেকে শুরম্ন করে ফেইক নিউজ। আস্থা রাখুন আইপি স্পুফিংয়ের ওপর, যা একজনকে প্ররোচিত করে কারো সার্ভারের ইনফরমেশনে অ্যাক্সেস করতে- এমন ভেবে যে, এরা অ্যাক্সেস করছে অন্য সার্ভারে। একটি আইসিএন নেটওয়ার্কে সার্ভার অপ্রাসঙ্গিক; এটি থাকতে পারে দূরের কোনো শহরে কিংবা বন্ধুর ফোনে। এর বদলে ইনফরমেশনকে দেয়া যাবে একটি অথেন্টিকেশন কোড। এটি হবে এক ধরনের ফেইক নিউজ পাঠানোর একটি পদ্ধতি, ই-মেইলের স্প্যামের মতো। গোপনীয়তা পুরোপুরি বন্ধ করা কঠিন হতে পারে, অরিজিনের ফিঙ্গারপ্রিন্ট সাথে বহন করে সবকিছুই পরিভ্রমণ করবে ইন্টারনেটে। ট্রোসেন আশা করেন,এটি সাইবার-বুলিইং ও সাইবার অ্যাটাক নিরম্নৎসাহিত করবে।
ইনসেট
‘আমরা যখন নেটওয়ার্ক ডিজাইন করেছিলাম,তখন আমাদের মাথায় সুনির্দিষ্ট কোনো উদ্দেশ্য ছিল না।এর প্রয়োগ কী হবে তা-ও আমাদের ভাবনায় ছিল না।আমরা শুধু চেয়েছিলাম প্যাকেটগুলোএক পয়েন্ট থেকে আরেক পয়েন্টে পেতে’
ভিন্ট চার্ফ
ইন্টারনেটের লÿ্য ও উদ্দেশ্য
ইন্টারনেটের অন্ধত্ব চিহ্নিত করা যাবে এর সেই সামরিক উৎস থেকে, যেখানে নেটওয়ার্কের প্রামেত্মর নোডগুলোর প্রয়োজন হয়েছিল সেন্ট্রালাইজড ডাটা সেন্টারগুলো থেকে ইনফরমেশন পুল ডাউন করার। ওইসব উৎসের পথ ধরে আসে কয়েক দফা বেঞ্চমার্ক, যেগুলো আজও প্রয়োগ হয়।
১৯৮৮ সালেThe Design Philosophy of the DARPA Internet Protocols-শীর্ষক লেখায় ড্যাভিড সি ক্লার্ক (এমআইটি কমপিউটারসায়েন্স অ্যান্ড আর্টিফিসিয়্যাল ল্যাবরেটরি তৎকালীন ও বর্তমান ইন্টারনেট গবেষক) লিখেন- ইন্টারনেটের প্রাথমিক লÿ্য ছিল নেটওয়ার্কগুলোর মধ্যে লিঙ্ক সৃষ্টি করা, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরÿা বিভাগের ARPANET এবং এর আরপা রেডিও নেটওয়ার্কের মধ্যে লিঙ্ক গড়ে তোলা। সে লেখায় তিনি আরো উলেস্নখ করেন এর সাতটি মাধ্যমিক বা সেকেন্ডারি গোল-
ইন্টারনেট যোগাযোগ অবশ্যই অব্যাহত রাখেতে হবে, নেটওয়ার্ক ও গেটওয়েগুলো হারিয়ে গেলেও।
ইন্টারনেটকে সহায়তা দিতে হবে নানা ধরনের কমিউনিকেশন সার্ভিসে।
ইন্টারনেট আর্কিটেকচারে থাকতে হবে নানা ধরনের নেটওয়ার্ক।
ইন্টারনেট আর্কিটেচার অবশ্যই অনুমোদন দেবে এর রিসোর্সগুলোর ডিস্ট্রিবিউটেড ম্যানেজমেন্ট।
ইন্টারনেট আর্কিটেকচার অবশ্যই হতে হবে ব্যয়ের দিক থেকে কার্যকর।
ইন্টারনেট আর্কিটেকচার অবশ্যই অনুমোদন দেবে নিমণমাত্রার প্রয়াসসহ হোস্ট অ্যাটাচমেন্ট।
ইন্টারনেট আর্কিটেকচারে ব্যবহৃত রিসোর্সগুলো অবশ্যই থাকবে জবাবদিহিতার আওতায়।
ওপরে উলিস্নখিত সাতটি লÿ্য সাজানো হয়েছে গুরম্নত্বের ক্রমানুসারে। এই ধারাক্রম বদল করলে আমরা পাব আলাদা ধরনের ইন্টারনেট।
সেন্ট্র্যালাইজড ও ডিসেন্ট্র্যালাইজড কমপিউটিং
ফেসবুক পরিচিত ইন্টারনেটের সুপারনোড নামে। ২০১৭ সালের জুনে ফেসবুক ঘোষণা দেয়, এর মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২০০ কোটির ওপর চলে গেছে। এই সংখ্যা অনলাইনে থাকা লোকসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ। ফেসবুকের বিপুল পরিমাণ ডাটার অর্থ হচ্ছে, ফেসবুক বিপুল পরিমাণে রাজস্ব আয় করছে। বর্তানে প্রতি তিনমাসে এর রাজস্ব আয়েরপরিমাণ ৯০০ কোটি ডলার। পাউন্ডের হিসেবে ৬৮০ কোটি পাউন্ড।
সুইডেনের মালমোর একটি কফি শপ থেকে স্কাইপির সাহয্যে অ্যারাল বলকান কথা বলছেন এ ধরনের সুপারনোডের প্রাধান্যের বিরম্নদ্ধে একটি তৃণমূল বিপস্নবের পÿÿ। ind.ie নামের একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা অ্যারাল বলকান ফিউচার ইন্টারনেটকে দেখেন এমন একটা কিছু হিসেবে, যেখানে ব্যক্তিবর্গ তাদের ডাটার ওপর নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখবে এবং তিনি দেখেছেন এরা কীভাবে তা থেকে উপকৃত হবে।
বলকানের অভিযোগ নেটওয়ার্কের ক্লায়েন্ট-সার্ভার আর্কিটেকচারের কারণে ইন্টারনেট পেন্ডুলাম ইফেক্টের কবলে পড়েছে। তিনি বলেন, ‘আপনি যদি কমপিউটিংয়ের ইতিহাসের দিকে ফিরে থাকান, তবে দেখবেন কমপিউটিং সেন্ট্র্যালাইজড ও ডিসেন্ট্র্যালাইজড কমপিউটিংয়ের মধ্যে কেন্দ্রীভূত থেকে পেন্ডুলামের মতো সামনে-পেছনে বারবার যাওয়া-আসা করেছে। আমরা শুরম্ন করেছিলাম মেইনফ্রেম দিয়ে। এরপর পেলাম পার্সোন্যালাইজড কমপিউটিংয়ের যুগ, যা ছিল আমাদের সর্বশেষবারের মতো প্রযুক্তির বিকেন্দ্রীকরণ, যার মালিক আমরা হয়েছিলাম এবং নিয়ন্ত্রণ করেছিলাম। এরপর আমরা গেলাম ওয়েবের যুগে, যেখানে আমরা ক্লায়েন্ট-অ্যান্ড-সার্ভার টেকনোলজিকে নিলাম একটি এনজাইমেটিক পুল অব ক্যাপিটেলিজমে, যা এসব সার্ভারকে প্রণোদিত করেছে ভার্টিক্যালি স্কেল করতে। অতএব, আমরা আছি মেইনফ্রেম ২.০-এর মধ্যে এবং এসব সার্ভার বিকশিত হয়েছিল, মিলিত হয়েছিল এবং হয়ে উঠল গুগল ও ফেসবুক। আমরা সেইসব কমপিউটারে সংযুক্ত, যেগুলোর মালিক আমরা নই। আমাদের কর্মকা- তাদের দিয়েছে অনন্যসাধারণ ÿমতা।’
তিনি আরো বলেন, ‘অধিকন্তু এটি সার্ভিল্যান্স বা নজরদারিসম্পর্কিত আমাদের অনুভূতিতে তৈরি করেছে ব্যাপক ব্যবধান। ফেসবুক ও গুগল জোগান দিচ্ছে মূল্যবান সেবা- আমাদের পছন্দের আলোকে এরা ওয়েবে ফিল্টার করে কমিয়ে আনে প্রায়-অসীম বিষয়বস্ত্ত (নিয়ার-ইনফাইট কনটেন্ট)। ‘ফিল্টার বাবল’ বিস্ময়করভাবে সুবিধাজনক। কিন্তু চোখ বন্ধ করে রেখেছি ডাটার পরিমাণের প্রতি। আমরা সন্তুষ্ট সেইসব কোম্পানির ওপর যেগুলো ডাটা স্টোর ও ব্যবহার করে।’
ইন্টারনেট অব পিপল
বলকান বলেন, ‘পার্সোনাল কমপিউটারের যুগে যদি আপনি আপনার কমপিউটারে ইনস্টল করে থাকেন একটি অ্যাপিস্নকেশন এবং এটি যদি আপনি বিগ কোম্পানির মডেমের মাধ্যমে কী করছেন তার ওপর আপনি ওয়াচ ও শেয়ার করা শুরম্ন করে থাকেন, তবে এটিকে আমরা বলব স্পাইওয়্যার। আজ আমরা বলব- নেক্সটসিলিকন-ভ্যালি ইউনিকর্ন।’ বলকানের প্রতিক্রিয়া প্রাযুক্তিক ও রাজনৈতিক উভয়ই।তিনি বলেন, ‘ইন্টারনেট শুধু প্রযুক্তির বিষয়ই নয়।’ Ind.ie চালু করেছে Better।এটি হচ্ছে একটি প্রাইভেসি টুল, যা ওয়েবে থামিয়ে দেয় সাফারি ইউজারদের ট্র্যাক হওয়াকে এবং তিনি তৈরি করেছেন ডিসেন্ট্র্যালাইজড ইন্টারনেটের একটি প্রটোটাইপ, এটি মানুষকে কোনো মাধ্যম ছাড়াইবন্ধুদের সাথে ডাটা শেয়ার, কানেক্ট ও কমিউনিকেট করার সুযোগ দেয়।
বলকান বলেন, ‘এমন একটি জগতের কথা ভাবুন, যেখানে প্রতিটি নাগরিক ইন্টারনেটে তাদের স্থানের মালিক ও নিয়ন্ত্রণেরও মালিক। এটি হচ্ছে সেই স্থান, যেখানে আপনার পাবলিক ওপ্রাইভেট ইনফরমেশন রাখা হয়। প্রাইভেট স্টাফ (stuff, উপাদান) হচ্ছে এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপটেড। অতএব একমাত্র আপনার অ্যাক্সেস রয়েছে এতে এবং সেখানে পাবলিক স্টাফও রয়েছে, যাতে আপনি আপনার চিমত্মাভাবনা ও মতামত শেয়ার বা বিনিময় করতে পারেন। এতে মানুষ আপনার কাছে পৌঁছুতে পারবে এই ‘অলওয়েজ-অন নোডে’ পরস্পরকে পাওয়ার জন্য। এরপর আমি যদি মেসেজটি অথবা একটি ছবি আপনার কাছে পাঠাতে চাই, এটি সরাসরি আমার মোবাইল থেকে আপনারটিতে চলে যাবে, কারণ এরই মধ্যে আমরা একে অপরকে পেয়ে গেছি। অতএব এটি হচ্ছে সেই টপোলজি, যাকে আমি দেখব আমাদেরআজকেরটির ঠিক উল্টোটি হিসেবে।আমাদের আজকের টপোলজি হচ্ছে একটি ‘মিডল-ওয়েব টপোলজি অব এভরিথিং’, যেখানে যেতে হয় ফেসবুক বা গুগলের মাধ্যমে।’
একটি ডিসেন্ট্র্যালাইজড ইন্টারনেটের ভাবনা-চিমত্মা বা ভিশন শুধু একা বলকানেরই নয়। Tim Berners-Leeএবং এমআইটির ‘সলিড গ্রম্নপ’ উদঘাটন করেছে একই ধরনের নীতি। জ্যাকব কুকের arkOSপ্রজেক্ট ব্যক্তিবিশেষকে সুযোগ করে দিয়েছেRaspberry Pi-এ পার্সোনাল ক্লাউড সৃষ্টির। এই প্রজেক্টের লÿ্যও একই। সোর্স আউট হয়ে যাওয়ার পর arkOS আর অব্যাহত থাকেনি। বলকান তার প্রটোটাইপ নির্মাণ করেছেন ১ লাখ ডলারের ক্রাউডফান্ডিংয়ের মাধ্যমে।
Maidsafeহচ্ছে স্কটিশ টাইন ট্রুনভিত্তিক। এই মেইডসেইফ এক দশকের গবেষণা ও উন্নয়নকর্মের পর সম্প্রতি চালু করেছে এটি ডিসেন্ট্র্যালাইজড ইন্টারনেট প্রজেক্ট। প্রতিশ্রম্নতিশীল ধারণার জন্য মজিলা ফাউন্ডেশন চালু করেছে ২০ লাখ ডলারের একটি পুরস্কার। ‘নেইমকয়েন’-এর মতো অন্যান্য গ্রম্নপ গড়ে তুলছে বস্নকচেইনের ওপর ডিসেন্ট্র্যালাইজড এবং পিয়ার-টু-পিয়ার এক্সপেরিমেন্টস।
বলকানের মডেল এসেছে এক ডোজ পলিটিক্যাল অ্যাক্টিভিজম নিয়ে। তিনি বামপন্থী প্যান-ইউরোপিয়ান রাজনৈতিক গোষ্ঠী DIEM25-এর সদস্যও বটে। তিনি নিউ ইন্টারনেট গড়ে তোলায় যথাসম্ভব বিধিনিষেধ চান। তিনি বলেন, ‘DIEM25-এর সাথে আমরা চেষ্টা করছি একটি নীতিমালা তৈরি করতে। এ ধরনের প্রযুক্তি ও অবকাঠামো গড়ে তোলাকে উৎসাহিত করতে এই নীতিমালা মেনে নেবে ইউরোপের রাজনৈতিক দলগুলো। ইউরোপে আমাদেররয়েছে ভিন্ন ইতিহাস (যুক্তরাষ্ট্রের কাছে)। আমাদের রয়েছে উপলব্ধি করার মতো অতি সাম্প্রতিক ইতিহাস, যখন ব্যাপক মাত্রায় প্রাইভেসি পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছিল। তাই আমি সত্যিকার অর্থে অনুভব করি, এই ‘ইন্টারনেট অব পিপল’ ক্রিয়েট করতে আমাদের একটি সুযোগ রয়েছে ইউরোপকে পেতে। করপোরেশনের মালিকানাধীন ‘ইন্টারনেট অব থিংস’-এর পরিবর্তে এটিকে আমি নাম দিয়েছি ‘ইন্টারনেট অব পিপল’।
তথ্য ব্যবহারকারীর কাছে ফিরিয়ে আনা
বলকান ইন্টারনেট সম্পর্কিত বিশেষভাবে তুলে ধরেছেন একটি গুরম্নত্বপূর্ণ সত্য।এই সত্যটি হচ্ছে- হয় আমরা ভুলে গেছি অথবা প্রলুব্ধ হয়েছি এ কথায় যে-‘নেটওয়ার্ক ইজ নট পলিটিক্যাল’। নেটওয়ার্ক হতে পারে ‘বোবা’, কিন্তু এটি সুযোগ করে দিয়েছে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন রাজনৈতিক ধারণা ছড়িয়ে দেয়ারও, যা প্রথমিকভাবে আসে সিলিকন ভ্যালি থেকে।
সিলিকন ভ্যালিতে এমন মূল্যবোধ রয়েছে যে- তথ্য অবাধ হতে চায়, বাধাটা আসে সব সময় সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা থেকে এবং প্রশ্নাতীতভাবে মুক্তবাজারের কার্যকারিতায় বিশ্বাস থেকে- এই সিলিকন ভ্যালিতে তাদের মূল্যবোধ পূতপবিত্র। একটি রাইড শেয়ারিং অ্যাপ কি জাহির করে লোকাল রেগুলেশনস? যদি প্রচুর গ্রাহক কোনোকিছু পছন্দ করে, এটি অবশ্যই হতে হবে আইন, তা যত ভ্রামিত্মমূলকই হোক। অনেকের অভিমত- ছদ্মনাম ব্যবহারহচ্ছে সব সময়ই একটি স্বীকৃত অধিকার এবং অনলাইনের অপব্যবহারের ফলে কিছু মূল্য দিত হয়। (লÿ করম্নন, এই ধারণার প্রাথমিক ধারকেরা প্রায়ই হচ্ছেন সুবিধাভোগী শ্বেতাঙ্গরা)। এই ধারণাটি বেশ শক্তভাবেই হয়ে উঠেছে সিলিকন ভ্যালির গ্রম্নপথিঙ্ক। এটি তাদেরকে দ্বন্দ্বে অবতীর্ণ করেছে রাজনীতিবিদদের সাথে, বিশেষত ইউরোপে। নেটওয়ার্ক নিজে একটি বড় ভূমিকা পালন করেছে এই অসম ÿমতা বণ্টন নিয়ে আসার ব্যাপারে। এ কারণেই বলা হয় নেটওয়ার্ক ইফেক্টের কথা। একবার যদি একটি নেটওয়ার্কে একটি নোড বড় হতে শুরম্ন করে- বিশেষত যখন এর কাজ হয় মানুষকে সংযুক্ত করা- সবাই এতে দল বেঁধে এটিকে আরো বড় করে তোলে। এর অর্থ হচ্ছে, সুপারনোডসের উদ্ভব ঘটে দ্রম্নত, সাধারণত প্রতিটি খাতে একটি করে। তখন এরা ভেতরে ঢুকে পড়ে, প্রতিযোগিতাকে হত্যা করে ও আমাদের সার্ভিসের পছন্দকে কমিয়ে দিয়ে। এটি দুর্ঘটনা নয় যে, গুগল ও ফেসবুকই রয়েছে প্রায় পুরো অনলাইন অ্যাডভার্টাইজিং গ্রোথের পেছনে।
আর ইনোভেশনের ব্যাপারটি কী। এর জন্য মায়াকান্না আছে সিলিকন ভ্যালির। কিন্তু সবচেয়ে বড় বড় কোম্পানির ইনোভেশন আসে ছোট ছোট স্টার্টআপগুলোয়, যেমন- DeepMind, DoubleClick, PrimeSense ইত্যাদি কিনে নেয়ার মাধ্যমে।
পস্ন্যাটফরমের উত্থান সৃষ্টি করেছে এক ধরনের অলিপোগলি বা সীমিত প্রতিয়োগিতার, যেখানে বাজার অবদান রাখে সামান্যসংখ্যক উৎপাদক ও বিক্রেতা। পুরো ওয়েব দিয়ে যে প্রবাহ চলে এরা তার ফিল্টার, শতকোটিরও বেশি আইবলের গেটকিপার। পস্ন্যাটফরমগুলো এখন আর শুধু ওয়েবসাইট নয়, বরং ইন্টারনেট স্টেকের একটি সত্মর। পস্ন্যাটফরমগুলোর স্থান আমাদের ও ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের পুরনো ধারণার মাঝখানে।
এই নতুন দুনিয়ায় সেরাপণ্য হয়ে ওঠে একটি রানওয়ে হিট, অথচ একটি অতি ভালো পণ্যকে টিকে থাকার জন্য লড়াই করে চলতে হয়। এই ধরনের ঘটনা ঘটে ইনফরমেশনের বেলায়- গুগলে সার্চ করা ২০ শতাংশ লোক ক্লিক করে নাম্বার ওয়ান রেজাল্টের ওপর। সেকেন্ড রেজাল্টের জন্য এই পরিমাণটা ১২ শতাংশ। ক্লিকবেইট ও ফেইক নিউজ উঠে আসে একই সোর্স থেকে, অনলাইন অ্যাডভার্টাইজিং মানির জন্য এটি একটি উন্মত্ত প্রতিযোগিতা। এরা ভাবিত নয় আপনার চাহিদা নিয়ে, যতÿণ এটি চলে পস্ন্যাটফরমের মাধ্যমে।
এগুলোই হচ্ছে অর্থনীতি ও মানবপ্রকৃতির সমস্যা। এসব সমস্যাও চলে রূপরেখা অবলম্বন করে। ইন্টারনেটের অর্থনীতি সৃষ্টি করেছে দুটি নতুন কারেন্সি- ডাটা ও অ্যাটেনশন। একটি ডিসেন্ট্র্যালাইজড মডেল চাইবে ডাটাকে ওয়েব জায়ান্টদের হাতে ফিরিয়ে দেয়ার বদলে ফিরিয়ে আনতে ইউজারের হাতে।এটি জটিল, তবে ইচ্ছাটা সরল- to try and level the playing field before it's too late। অর্থাৎ দেরি হয়ে যাওয়ারআগেই একটি লেভেল পেস্নয়িং ফিল্ড সৃষ্টির চেষ্টা করা।
‘ভাবুন এমন এক জগতের কথা, যেখানে প্রত্যেক নাগরিক ইন্টারনেটে
তাদের নিজের স্থানটির মালিক ও নিয়ন্ত্রক।এটি সেই স্থান, যেখানে আপনার
পাবলিক ও প্রাইভেট ইনফরমেশন রাখা হয়।’
.....................................................
অ্যারাল বলকান, সক্রিয়বাদী
আনতে হবে স্ট্রিমলাইনে, করতে হবে রেগুলেট
ইন্টারনেটের ডিজাইন ছিলএকটি মাস্টারস্ট্রোক। এটি ডিজাইন করা হয়েছিল কয়েকশ’ ডিভাইস থেকে কয়েক ডজন ডিভাইসের উদ্ভব ঘটাতে ও মাত্রা নির্ধারণ করতে। এটি আমাদের অনেক দূরে নিয়ে এসেছে। ইন্টারনেটকে স্ট্রিমলাইনে আনতে হবে, উন্নততর করতে হবে নিরাপত্তা। কিন্তু আমরা আমাদের ইউটোপিয়ান ইন্টারনেট সৃষ্টি করতে সÿম হব না,শুধু প্রকৌশলের মাধ্যমে। আমাদেরকে তা রেগুলেট করতে হবে।
এটি ইন্টারনেট পিওরিস্টদের এলোমেলো করে দেবে এবং প্রশ্ন তুলবে কে এই রেগুলেশনের বিষয়ে সিদ্ধামত্ম নেবে এবং বাসত্মবায়ন করবে এসব রেগুলেশন। কিন্তু আমাদের অনলাইন জগৎ পরিবর্তন হয়ে গেছে। এখন অনলাইন লাইফ ও রিয়েল লাইফের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। মানব সম্পর্কিত বিষয় চালু রাখার জন্য উত্তম উপায় হিসেবে আমরা যা পেয়েছি, তা করতে হবে রাজনীতির মাধ্যমে। তখন ব্যালটবক্সের মাধ্যমে কমপÿÿ আমাদের বলার কিছু থাকবে; আমরা রেগুলেশনের ব্যাপারে প্রশ্ন তুলতে পারব। উবারের বোর্ডরম্নমের সিদ্ধামেত্মর ওপর আমাদের কোনো প্রভাব নেই।
বিষয়টি থিঙ্কট্যাঙ্ক ছাথাম হাউসের অ্যাসোসিয়েট ফেলো এমিলি টেলরের মতো চিমত্মাবিদদের এমন অভিমত দিতে বাধ্য করছে- আমাদেরকে আমাদের ভবিষ্যৎ ইন্টারনেটকে ওয়াশিংটনে ও ব্রাসেলসে যথাসম্ভব শার্প করে তুলতে হবে ঠিক সিলিকন ভ্যালি হ্যাঙআউটের মতো। এমিলি টেলর বলেন- ‘যখন খারাপ কিছু ঘটে, তখন এর টেকনিক্যাল সমাধান টানাই স্বাভাবিক। কিন্তু সামাজিক সমস্যার টেকনিক্যাল সমাধান সাধারণত শেষ হয় প্রাইভেট কোম্পানির হাতে প্রচুর ÿমতা ছেড়ে দিয়ে। রেগুলেশনের স্থানে ঢোকার জন্য প্রযুক্তি পাওয়া খুবই বিপজ্জনক।’
এই রেগুলেশন অপরিহার্য। ইইউ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে গুগল, অ্যামাজন ও ফেসবুকের বিরম্নদ্ধে। অপরদিকে ইউএস কংগ্রেস তদমত্ম করছে ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফেসবুকের ভূমিকার বিষয়টি। ব্রিটিশ রাজনীতিতে এনক্রিপশন বিষয়ে আলোচনা প্রাধান্য বিসত্মার করেছে।
সম্ভবত, আমাদের প্রয়োজন হচ্ছে প্রযুক্তিবিদ, বিজ্ঞানী ও রাজনীতিবিদদের একটি কোয়ালিশন। এই কোয়ালিশন নতুন করে সংজ্ঞায়ন করবে ইন্টারনেটের আদর্শ। প্রতিটি ভিত্তি-দলিল (ফাউন্ডিং ডকুমেন্ট) সংশোধন প্রয়োজন হবে। এটি হবে একটি কঠোর অংশীদারিত্ব। ইন্টারনেট আসলেকী? এটি একটি নেটওয়ার্ক, যেটি নিজের ব্যাপারে চোখ বন্ধ করে রাখে এবং গুণিতক হারে বাড়িয়ে চলছে জটিলতা। দ্রম্নত একে শক্ত হাতে ধরতে হবে; এটি একটি বিশালাকার শামুক, যা পিছলে চলেছে আমাদের আঙুলের ফাঁক দিয়ে। ওয়েব কি তেল, বিদ্যুৎ ও রেল নেটওয়ার্কের মতো? এটি কীনা, এটি হচ্ছে ইউটোপিয়ান স্বপ্ন, যে স্বপ্ন এক সময় আমরা দেখতাম। মোটের ওপর আমরা যা শিখেছি, শুধু এর একটি নির্দিষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে- ‘ফিউচার অব ইন্টারনেট ইজ চেঞ্জ উই কান’ট ফোর সি’- ইন্টারনেট হচ্ছে পরিবর্তন, যা আমরা আগে দেখতে পারি না।