লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
সিএলডি বাংলাদেশ-এর বিশ্লেষণে বংলাদেশের খসড়া ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল
সিএলডি বাংলাদেশ-এর বিশ্লেষণে বংলাদেশের খসড়া ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল
সেন্টার ফর ল’ অ্য্ন্ডা ডেমোক্র্যাসি তথা সিএলডি বিশ্বাস করে এমন একটি বিশ্বে, যেখানে বিশ্বের মানুষ ব্যাপকভাবে সম্মান প্রদর্শন করবে সবার মানবাধিকারের প্রতি। একই সাথে সুশাসনের স্থানীয়, জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সব পর্যায়ে মানুষ রচনা করবে অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্রের ভিত;যে সূত্রে মানুষ পাবে ন্যায়বিচার ও সমানাধিকার। এই সেন্টার কাজ করে মাবাধিকারের উন্নয়ন, সংরক্ষণ ও বিকাশের কাজে, যা বাক্স্বাধীনতার অধিকার, ভোটের ও সুশাসনে অংশ নেয়ার অধিকার, তথ্য পাওায়ার অধিকারএবং সম্মিলিত হওয়া বা সংগঠন গড়ে তোলার অধিকারসহ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ভিত্তি হিসেবে। সিএলডি সহযোগিতার মাধ্যমে কাজ করে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এনজিও’র সাথে মিলে কনসালটেন্সি ও ক্ষুদ্রতরপ্রকল্পের ভিত্তিতে মানুষের মুখ্য মানবাধিকারের প্রতি সম্মান বাড়িয়ে তোলার লক্ষ্যে। চলতি বছরের এই মে মাসে সিএলডি বাংলাদেশের বহুল বিতর্কিত খসড়া ডিজিটাল নিরাপত্তা বিলনিয়েএকটি বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে। এই বিশ্লেষণের বিষয়বস্তু তুলে ধরেই বক্ষ্যমাণপ্রতিবেদন। এই বিশ্লেষণে তুলে ধরা হয়েছে, এই খসড়া ডিজিটাল বিলটিকে এই সেন্টার কীভাবে দেখে। স্থানঅভাবে সুদীর্ঘ এই বিশ্লেষণের শুধু চুম্বকাংশই এখানে আলোচনার প্রয়াস পাবো।
শুরুর কথা
২০১৮ সালের ২৯ জানুয়ারি মন্ত্রীসভায় অনুমোদিত হয় ডিজিটাল সিকিউরিটি বিল-২০১৭-এর খসড়া। এরপর এরই মধ্যে এই বিলটি জাতীয় সংসদে উপস্থাপিতহয়েছে। এর পর বিলটিকে পাঠানো হয়েছে পার্লামেন্টের বিবেচনার জন্য। বর্তমানে বিলটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে সংশ্লিষ্ট সংসদীয় কমিটিতে। বিলটিতে রয়েছে বিপুলসংখ্যক এমনসব বিষয়, যা সরকার ব্যবহার করতে পারে বাকস্বাধীনতাও স্বাধীন মতামত প্রকাশের সুযোগকে সীমিত করার উদ্দেশ্যমূলক কাজে। এই বিশ্লেষণে এই বিলটি পর্যালোচনা করে দেখা হয়েছে স্বাধীন মত প্রকাশের ও একটি রাষ্ট্রের উন্নততর শাসনের আন্তর্জাতিক মানের ওপর ভিত্তি করে। এইআলোচনা সাপেক্ষে সিএলডি যে ধরনের সুপারিশ রাখারপ্রয়োজন মনে করেছে, তেমনটি সুপারিশ করেছে বিলটির সংস্কারের জন্য।
এই বিশ্লেষণ শুরু করা হয়েছে এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক কিছু অভিজ্ঞতারবিশ্লেষণ তুলে ধরার মাধ্যমে, বিশেষত বাংলাদেশের আইসিটি আইন ২০০৬-এর ৫৭ ধারার বিশ্লেষণকে সামনে এনে। আইসিটি আইনের এই বহুল আলোচিত ৫৭ ধারা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অসংখ্যবার ব্যবহার করা হয়েছে ডিজিটাল টুল ব্যবহার করে বিষয়বস্তু প্রকাশকে বাধাগ্রস্ত করার কাজে। বিষয়টি উল্লেখ করার পর এই বিশ্লেষণে উল্লেখ করা হয়েছে, ডিজিটাল আচরণসম্পর্কিত সমস্যা সমাধানে এই খসড়া বিলটি কতটুকু পরিবর্তন আনা দরকার, সে বিষয়টি। বিশ্লেষণে বিলটির বিভিন্ন ধারার ত্রæটিবিচ্যুতি তুলে আনা হয় এবং এগুলোর প্রয়োজনীয় সংশোধনীর সুপারিশও রাখা হয়।
ইতিহাস বলে
একই ধরনের আইন প্রণয়নের ইতিহাসেরদিকে আলেকপাত করে এই বিশ্লেষণে বলা হয়Ñ বাংলাদেশে বর্তমানে সরকার পরিচালিত হচ্ছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে। এই সরকার ২০০৮ সালে এর ‘ভিশন ২০২১’-এর মাধ্যমে দেশে ডিজিটাল টেকনোলজির ভূমিকার ওপর জোরালো তাগিদ দেয়। তখন এই দলটি ২০২১ সালের মধ্যে দেশটিকে ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তরের ঘোষণা দেয় নির্বাচনী ইশতেহারের মাধ্যমে। তখন এই সময়সীমা নির্ধারণ করা হয় স্বাধীন বাংলাদেশের ৫০ বছর পূর্তির বছর হিসেবে ২০২১ সালকে বিবেচনায় নিয়ে। তা সত্তে¡ও এই সরকার একই সাথে এমন কিছু আইনি পদক্ষেপ নেয়, যা ডিজিটাল যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বৈধভাবে স্বাধীন মত প্রকাশের বিষয়কে সীমিত করে কিংবা বাধাগ্রস্ত করে। এরই অংশ হিসেব সরকার ২০০৯ ও ২০১৩ সালে আইসিটিআইন-২০০৬-এর দুইবার সংশোধন করে। এই সংশোধনীর মাধ্যমে এধারায় সংযোজিত নতুন বিধান ব্যাপকভাবে সব মহলে বিরক্তির উদ্রেক করে। ২০১৩ সালের সর্বশেষ সংশোধনীর মাধ্যমে ৫৭ ধারা অপরাধের শাস্তির মেয়াদ বাড়িয়ে কমপক্ষে ৭ বছর ও সর্বোচ্চ ১৪ বছরের কারাদÐ করা হয়। পাশাপাশি অর্থের ব্যবস্থাও করা হয়। অর্থের মাত্রা সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকা। এ ছাড়া আইসিটি আইনেরএ ধারাটি জামিনের অযোগ্য করা হয়। শুরুতেই আশঙ্কা করাহয়েছিল, এই ধারার অপব্যবহারের মাধ্যমে সরকার বিরোধী রাজনৈতিক মতবলম্বী, এমনকি নাগরিকসাধারণ ও সাংবাদিক হয়ানির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হতে পারে। তা ছাড়া স্বাধীন মত প্রকাশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পথে এইধারা বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। এ কারণে শুরু থেকেই ৫৭ ধারা বাধার মুখে পড়ে। এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রবল সমালোচনা চলে।এ প্রবণতা এখনো চলছে আন্তর্জতিক মানের সাথে সাংঘর্ষিক
সিএলডি এই বিল বিশ্লেষণ করে আন্তর্জাতিক মানবাধিকারেরমানকে সামনে রেখেÑ বিশেষত মত প্রকাশের স্বাধীনতার বিষয়টি বিচেনায় রেখে। সিএলডি দেখতে পেয়েছে, আলোচ্য বিলটি বেশ কিছু ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক কিছু মুখ্য মান রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে। অন্যান্য বিষয়ের মাঝে আন্তর্জাতিক মানে বলা আছে:that content restrictions and other criminal measures should not be vague, overbroad or unnecessary, that parallel regimes for online activities are warranted only where the activity is either completely or substantially different online, that the penalties should not be greater simply because an activity is carried out online, and that regulatory system should be protected against political interference। সিএলডি বিশ্লেষণ মতে, আলোচ্য ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল এসব আন্তর্জাতিক মান রক্ষায় পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে।
সংজ্ঞায়নের অস্পষ্টতা
এই বিলের প্রাথমিক সমস্যা হচ্ছে- মুখ্য পদবাচ্যগুলোর ব্যাপারে এই বিলে উপস্থাপন করা হয়েছে চরম বিস্তৃত সংজ্ঞা তথা এক্সট্রিমলি ব্রড ডেফিনিশন। ফলে এসব সংজ্ঞায় রয়েছে চরম অস্পষ্টতা। এর মধ্যে আছে মুখ্যধারণা ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি’র সংজ্ঞার বিষয়টিও, যেটি ধারণ করে শুধু বাহ্যিক নিরাপত্তার হুমকিকে নয়, সব ধরনের নিরাপত্তারর ধারণাকেও। এর পর এটি রেগুলেটরকে ডিজিটাল নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অনুমোদন দেয় অতি ব্যাপক ক্ষমতা। অন্যান্য যেসব ধারণা সংজ্ঞায়িত হয়েছে অতি ব্যাপকভাবে তার মধ্যে আছে ‘আনলফুল অ্যাক্সেস’-এর সংজ্ঞায়নের বিষয়টিও। এর সংজ্ঞায়নে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে শুধু ‘আনলফুল অ্যাক্সেস-এর বিষয়টিই নয়, এমনকি এতে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে ‘লফুল অ্যাক্সেস’-এর বিষয়টিকেও, যা সিস্টেমকে ইনফরমেশন পাঠানো থেকে বিরত করে, যা ঘটে প্রতিটা সময় যখন একজন তার কমপিউটার শাট ডাউন করন। একইভাবে ‘ম্যালওয়্যার’ সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে এমন একটি প্রোগ্রাম হিসেবে, যা একটি কমপিউটারের কাজকে পবির্তন করে, সে কাজটি করা হলো কমপিউটারটির কোনো ক্ষতি করার লক্ষ্যনিয়ে কি না তা কোনো বিবেচ্য নয়। এর ফলে তা অন্তর্ভূক্ত করে একজন ব্যবহারকারীর নিজস্ব সেটিং টুইকিংকেও। যদিও আমরা ধরে নিই যে, এগুলো হচ্ছে ভুল, এবং ব্যক্তিবিশেষকে তার কমপিউটারশাটিং করা জন্য অভিযুক্ত করা হবে না, তবুও ধরে নেয়াযায় এর অপপ্রয়োগ খুব সহজেই করা হতে পারে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাকর দিক
এই বিলের আকেটি গুরুপূর্ণ সমস্যাকর দিক হচ্ছেÑ এইআইনের মাধ্যমে সৃষ্ট বিভিন্ন বডির কর্মকান্ড ক্ষমতা এবং এর অনুমোদিত ক্ষমতাপ্রয়োগের প্রক্রিয়া সুস্পষ্টভাবে নির্ধারণের পরিবর্তে, তার বেশিরভাগই রেখে দেয়া হয়েছে এমনভাবে যে, তা পরবর্তী সময়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় নির্ধারণ করবেএসব বিধি বা রুলের আওতা। এর মধ্যে অন্তর্ভূক্ত রয়েছে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাজেন্সির ‘[ঢ়]ড়বিৎ, ফঁঃু ধহফ ধপঃরারঃরবং’-এর বিষয়টি। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাজেন্সি হচ্ছে এই বিলের মাধ্যমে সৃষ্ট একটি মুখ্য অ্যাজেন্সি। এর প্রায় সব কিছুই নির্ধারিত হবে রুল বা বিধির মাধ্যমে। এই অ্যাজেন্সির ক্ষমতা কী হবে, তা জানার সুযোগ দিতে ব্যর্থ হয়েছে এই বিল। বরং তা চলবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপরেই। এর মাধ্যমে অনলাইন যোগাযোগ কী করে চলবে তা মন্ত্রণালয়ই নির্ধারণ করার সুযোগটাই পাবে।এটি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত নিয়মনীতি ও অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশেররীতিনীতিরসাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বাংলাদেশের ওঅন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশ ক্ষমতা নির্ধারিত হয়ে প্রাথমিক আইনের মাধ্যমে।
উপরোল্লিখিত সমস্যাটি আরো বেশি বিরক্তিকরএই জন্য যে, এই অ্যাজেন্সি ও এর ওভারসাইট বডি ‘ন্যাশনাল ডিজিটাল সিকিউরিটি কাউন্সিল’ নিয়ন্ত্রিত হয় সরকারের মাধ্যমে। যেখানে আন্তর্জাতিক আইনের দাবি হচ্ছে, বাক্স্বাধীনতা সম্পর্কিত বিষয়াবলি দেখবে একটি স্বাধীন সংস্থা। তা নিয়ন্ত্রিত হবেনা কোনো সরকারের অধীনে। অথচ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে বাংলাদেশের সেই ক্ষমতা সরকার কুক্ষিগত করতে চাইছে। এ বিলে একথা উল্লেখ করতে ব্যর্থ হয়েছে,কারা থাকবে এই ডিজিটাল সিকিউরিটি কাউন্সিলে। তবে এটি উল্লেখ করতে ভুল করেনি এই ডিজিটাল সিকিউরিটি কাউ্িন্সলের চেয়ারম্যান হবেন প্রধানমন্ত্রী নিজে। সরকারই গঠন করবে এ ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাজেন্সি। সরকার নিয়োগ দেবে এর মহাপরিচালককে এবং নির্ধারণ করবে এর অরগানোগ্রাম বা গঠনকাঠামো। এই আইনের মাধ্যমে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে ক্ষমতা দিচ্ছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে আদেশ দিতে যে, এধরনের কনটেন্ট বন্ধ করে দিতে হবে। অথচ এধরনের ক্ষমতা একটি স্বাধীন সংস্থাকেই দেয়ার কথা।
কনটেন্ট রেস্ট্রিকশনের প্রসঙ্গ
সিএলডি’র বিশ্লেষণে বলা হয়েছেন কনটেন্ট রেস্ট্রিকশনের প্রসঙ্গটি যখন আসে তখন মনে হয়, তিনটি সমস্যার বিষয় সামনে আসে। কোনো কোনো বিধান মনে হয় একাধিক সমস্যা সৃষ্টি করবে। প্রথমত, বেশ কয়েকটি কনটেন্ট রেস্ট্রিকশন আন্তর্জাতিক মান মতে বৈধ নয়, কারণ এগুলো মত প্রকাশের অধিকারকে বাধাগ্রস্ত করে এবং তাআন্তর্র্জাতিক আইনের মাধ্যমে সংরক্ষিত অধিকারকে বাধাগ্রস্ত করে। সহজবোধ্য কারণেইএগুলো আলোচ্য বিল থেকে বাদ দেয়া দরকার। দ্বিতীয়ত, কিছু কিছু কনটেন্ট রেস্ট্রিকশন রেস্ট্র্রিকশনকে ডুপ্লিকেট করে, যেগুলো ইতোমধ্যেই সাধারণ প্রয়োগের বিভিন্ন আইনে অন্তর্ভূক্ত রয়েছেন যেমন অন্তর্ভূক্ত রয়েছে দন্ডবিধিতে। সেগুলোকে আলোচ্য বিলে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে আরো বেশি শাস্তির বিধান রেখে। বিভিন্ আইনে ইতোমধ্যেই বিভিন্ন ধরনের সংশোধন আনা হয়েছে। এরমধ্যেদন্ডবিধিরর সংশোধন করা হয়েছে, যা ডিজিটাল কনটেন্টের বেলায়ও প্রযোজ্য হতে পারে। তৃতীয়ত, বেশ কিছু কনটেন্ট রেস্ট্রিকশনের সংজ্ঞায়ন চলেছে অনেক অস্পষ্ঠভাবে, যার ফলে কর্তৃপক্ষ ইচ্ছামতো সুযোগ পাবে এগুলোর অপপ্রয়োগের।
১৮টি আলাদাআলাদা ধারায় যেসব অপরাধের কথাউল্লিখিত হয়েছে, এর মধ্যে ১৪টির অপরাধকেই কগনিজিবল ও নন-বেইলেবল (আমলযোগ্য ও জামিনের অযোগ্য) করা হয়েছে। কগনিজেবল অপরাধের বেলায় পুলিশ আদালতেরপরোয়ানা ছাড়াই যে কাউকে গ্রেফতার করতে পারবে। এর অর্থ হচ্ছে, এসব বিধান অপব্যবহার করে নাগরিক সাধারণ ও সাংবাদিকদের সহজেইহয়রানিরশিকারে পরিণত করা যাবে। জামিনের অযোগ্য অপরাধের বেলায়, একজনকে আদালত নিজেরইচ্ছায় জামিন না দিলে তাকে কারাগারে আটক রাখা যাবে। আসলেএসব বিধানের সবগুলোই ব্যর্থ হয়েছে আন্তর্জাতিক মান রক্ষা করতে। ফলে এসব বিধানাবলি চরমভাবে সমস্যা সৃষ্টিকর।
সিএলডি’র বিশ্লেষণ মতে, নিচে উল্লিখিত বিধানগুলো অবৈধভাবে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে বাধাগ্রস্ত করে: ধারা ৮(২), ধারা ২(১) (ক), ২৫(১) (গ), ধারা (৩১)। এ ছাড়া নিচে উল্লিখিত ধারার কনটেন্ট রেস্ট্রিকশনের বিষয়গুলো ইতোমধ্যেই বিদ্যমান আইনগুলোতে রয়েছে: ধারা ৮(২), ধারা ২৯ ও ধারা ৩১-এ ।
উপরে বর্ণিত কোনো অপরাধের কিছু কিছূ ক্ষেত্রে অধিকতর কঠোর শাস্তির বিধান করা হয়েছে অনলাইনের স্ঘংটিত অপরাধের বেলায়। এটি সবিশেষ লক্ষ করা যায় ২৯ নম্বর ধারার বেলায়। এ ধারা অপরাধটি ঠিক একইসাথে উল্লিখিত রয়েছে দÐবিধিতে। দন্ডবিধিতে মানহানিরঅপরাধের জন্য শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে সর্বোচ্চ ২ বছর। ডিজিটালনিরাপত্তা আইনে একই অপরাধের জন্য শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে সর্বোচ্চ ৩ বছর, যা আগেরটির তুলনায় ৫০ শতাংশ বেশি।
সিএলডি’র সুপারিশমালা
এভাবে এই বিলের ধারাগুলোর ত্রুটিবিচ্যুতি আলোচনা করে সেন্টার ফর ল অ্যান্ড ডেমোক্র্যাসি এই বিলের ব্যাপারে বেশ কিছু সুপারিশ রেখেছে। এই কেন্দ্রের সুপারিশগুলো নিম্নরুপ:
এক: পুরো বিলটি পর্যালোচনা ও সম্পাদনার প্রয়োজন রয়েছে, যাতে এর সংজ্ঞা ও পদবাচ্যগুলো যথাসম্ভব সুস্পষ্ট, সুসংজ্ঞায়িত ও সুনির্দিষ্ট হয়। বিশেষ করে সেইসব সংজ্ঞা ও পদবাচ্যগুলোর পর্যালোচনা ও সম্পাদনা প্রয়োজন, যেগুলো এই আইনের অপরাধগুলোর ভিত্তি রচনা করে অথবা রেগুলেটরি বডিগুলোর ক্ষমতার অনুমোদন দেয়।
দুই: গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো যেমন প্রশাসনিক সংস্থাগুলোর প্রাথমিক দায়িত্ব ও ক্ষমতা এবং এসব ক্ষমতা কীভাবে প্রয়োগ হবে, সেসব বিষয় বিধি বা রুলের আওতায় রাখার বদলে বরং এগুলোকে মূল লেজিসলেশনেরসাবঅর্ডিনেট বিষয় হিসেবে রিজার্ভ রাখতে হবে।
তিন: ধারা ৮(২) প্রয়োগ করা যাবে না আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার অনুরোধে, বরং এর পরিবর্তে তা প্রয়োগ করতে হবে আদালতের মতো স্বাধীন কোনো ওভারসাইট বডির মাধ্যমে।
চার: একতা, অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ও ধর্মীয় মানসিকতার বিষয়ের উল্লেখ ৮(২) ধারা থেকে বাদ দিতে হবে। অপরদিকে অন্যান্য আদর্শ মান প্রয়োগ করতে হবে জাতীয় নিরাপত্তার মতো সংরক্ষিত স্বার্থগুলোর বিষয়ে।
পাঁচ: ধারা ২১, ২৫, ২৮ও ২৯ ও বাতিল করতে হবে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, প্রস্তাবিতডিজিটাল নিরাপত্তা বিলের খসড়ায় ২৮ ধারায় বলা হয়েছেন যদি কোনো ব্যক্তি ওয়েবসাইট বা অন্যকোনোইলেকট্রনিক বিন্যাসে মানহানিসংক্রান্ত দন্ডবিধির (১৮৬০) সেকশন ৪৯৯-এ বর্ণিত অপরাধ মংঘটন করে, তাহলে তাকে সর্বোচ্চ সবোচ্চ ২ ভচরের কারাদন্ড বা সর্বোচ্চ ৩ লঅখ টাকার অর্থধন্ড বা উভয়দন্ড বোগকরতে হবে। আরওই অপরাধ দ্বিতীয় বা তার বেশিবার করলে অনধিক ৫ বছর কারাদন্ড বাঅনধিক ১০ লাখ টাকার অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হতে হবে। এই ধারা অপরাধ অআমলযোগ্য জামিনের অযোগ্যহবে।
ছয়: ধারা ৩১ হয় বতিল করতে হবে, অথবা এর ভাষা আরো সুনির্দিষ্ট করতে হবে তা দন্ডবিধির সাথে সামঞ্জস্য বিধানের জন্য।
সাত: ধারা ৩৮ সংশোধন করতে হবে, এবিষয়টি নিশ্চিত করতে যে, সার্ভিস প্রোভাইডারেরা কোনো দায় বহন করবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত এরা কন্টেটেন্টর ওপর হস্তক্ষেপ করে অথবা যদি আদালতের মাধ্যমে নির্দেশিত হয়ে তা করে থাকে।
আট: বিলটির ধারা ২২- ২৪ বাদ দিতে হবে। এবং দÐবিধির জালিয়াতি, প্রতারণা ও প্রতারণাপূর্ণ ছদ্মাবেশিতার বিষয়গুলো পর্যালোচনা হওয়া দরকার, যদি এগুলো অনলাইনে করা অপরাধগুলো আওতাভূক্ত করতে ব্যর্থ হয়। শুধু তখন এগুলো সংশোধনেরপ্রয়োজন হবে।
নয়: ধারা ১৭(১)(ক) এবং ১৮(১০)(ক) হয় পুরোপুরি বাতিল করতে হবে, নয়তোস এর কিছুটা সংশোধন কতে হবে।
দশ: ধারার ৩২-এর সুযোগ সীমিত করতে হবে তাদের জন্য, যারা সরকারের গোপীনীয়তা রক্ষায় দায়বদ্ধ (প্রাথমিকভাবে সরকারি কর্মকর্তাবর্গ)এবং তাদের মধ্যে সীমিত করতে হবে, যারা সরাসরি, অবৈধ কিংবাইচ্ছাকৃতভাবে তাতে প্রবেশ করতে পারে।
এগারো: ধারা ৩৩-এর সাথে ইনটেন্ট রিকয়ারমেন্ট সংযোজন করতে হবে এবং এর মধ্যে থাকতে হবে হুইসেলবøয়ারের সুরক্ষা।
বারো: ধারা ৩৪(ক) বাদ দিতে হবে এবং ধারা ৩৪(খ)-এ ইনটেন্ট রিকয়ারমেন্ট সংযোজন করতে হবে।
তেরো: ধারা ১৯ শুধু তাদের বেলায়ই প্রয়োজ্য হবে, যাদের সংশ্লিষ্ট কমপিউটার নেই অথবা যাদেও এ কমপিউটারে বৈধ অ্যাক্সেস রয়েছে। ধারা ১৯(১) (ক) বাতিল করতে হবে।
চৌদ্দ: এই আইনে প্রতিষ্ঠিত সব বডি হতে হবে হয় স্বাধীন সরকারিসত্তা, নয়তো এর ক্ষমতা ও কর্মকান্ড পরিচালিত হতে হবে সীমিত আকাওে, যাতে এর আওতার বাইরে থাকে রেগুলেটরি ফাঙ্কশনগুলো।