লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম:
তাসনীম মাহ্মুদ
মোট লেখা:১২৭
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৮ - সেপ্টেম্বর
যে বদভ্যাসগুলো পিসিকে নষ্ট করতে পারে
যে বদভ্যাসগুলো পিসিকে নষ্ট করতে পারে
তাসনীম মাহমুদ
প্রত্যেক ব্যবহারকারীই চান তার কমপিউটার আজীবন ব্যবহারোপযোগী থাকবে, কিন্তু তা কখনোই সম্ভব হয়ে ওঠে না। অনেক সময় দেখা যায়, ওয়ারেন্টি পিরিয়ড শেষ হওয়ার আগেই আপনার কমপিউটার অকেজো হয়ে পড়েছে। এই অনাকাক্সিক্ষত সমস্যার জন্য ব্যবহারকারীরা সাধারণত কমপিউটারের হার্ডওয়্যার কম্পোনেন্ট, অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রাম বা ভাইরাস, ম্যালওয়্যারকে দোষারোপ করে থাকেন- যা বহুলাংশে সত্য হয়ে থাকলেও পিসি ল্যাপটপের সমস্যার জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হলো ব্যবহারকারীর আচরণ। ব্যবহারকারীর কিছু কিছু ব্যবহারিক আচরণও অর্থাৎ বদভ্যাস সমস্যা উদ্ভবের কারণ হতে পারে। এ লেখায় কমপিউটার ব্যবহারকারীদের কিছু কিছু ব্যবহারিক বদভ্যাসের কথা তুলে ধরা হয়েছে, যেগুলো সমস্যা উদ্ভবের কারণ হতে পারে, যা সাধারণত আমরা সবাই এড়িয়ে গিয়ে থাকি।
লক্ষণীয়, কোনো কিছুই চিরজীবনের জন্য স্থায়ী হয় না, বিশেষ করে প্রযুক্তি বিশ্বে। তবে আপনার কমপিউটার আরো কিছু বেশিদিন স্থায়ী হতে পারবে যদি কমপিউটারের পরিচর্যা নিয়মিতভাবে করে থাকেন। যদি আপনার ল্যাপটপ প্রত্যাশিত সময়ের অনেক আগেই নষ্ট হয়ে গিয়ে থাকে, তাহলে এর জন্য দায়ী হতে পারে আপনার কিছু বদভ্যাস। কোনো কিছু না বুঝে এমন কিছু কাজ আপনি নিয়মিত করে থাকেন, যেগুলো পিসির মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে, সেগুলো ব্যবহারকারীদের উদ্দেশে এ লেখায় উপস্থাপন করা হয়েছে।
ল্যাপটপকে কখনোই প্লাস সারফেসের তথা ভেলবেট বা মোটা কাপড় জাতীয় বস্তুর ওপর রাখবেন না
তাপ হলো কমপিউটারের জন্য এক সাংঘাতিক প্রাণঘাতী। যদি আপনার কমপিউটার খুব গরম হয়ে যায়, তাহলে অভ্যন্তরীণ হার্ডওয়্যারের যেমন প্রসেসর, ফ্যান এবং ব্যাটারির আয়ু কমে যেতে পারে এবং কমপিউটারে উচ্চস্বরে শোঁ শোঁ শব্দ সৃষ্টি হতে পারে।
ডেস্কটপ কমপিউটারের জন্য : এমন সমস্যার সমাধান খুব সহজ-সরল। কম্প্রেস এয়ার ব্যবহার করে কমপিউটারের অভ্যন্তরের ধুলা পরিষ্কার করুন। কমপিউটারকে আঁটসাঁট পরিবেশে রাখা থেকে বিরত থাকুন। আপনার কমপিউটারের ভেতরে যাতে খুব সহজে বায়ু প্রবাহিত হতে পারে, সেদিকে খেয়াল রাখুন। আপনি কমপিউটারকে ভ‚মি থেকে দূরে সরিয়ে রেখে এবং ইনটেক ফ্যানে একটি ফিল্টার স্থাপন করে ধুলাবালিকে প্রতিহত করতে পারেন।
ল্যাপটপের জন্য : ল্যাপটপের জন্য এক্ষেত্রে একটু বেশি যত্নশীল হওয়া দরকার। ল্যাপটপ ব্যবহারকারীদের অনেক ধরনের বদঅভ্যাস থাকতে পারে, যেমন ল্যাপটপকে কম্বলের ওপর অথবা অন্য কোনো প্লাস সারফেসের ওপর রেখে কাজ করা। এর ফলে ল্যাপটপের নিচে বাতাস প্রবাহ বন্ধ হয়ে যেতে পারে যদি কম্বল ফ্যান ভেন্ট আবৃত করে ফেলে। এমন অবস্থায় যদি সম্ভব হয় ল্যাপটপকে ফ্ল্যাট সারফেসে ব্যবহার করার চেষ্টা করুন অথবা ন্যূনতম নিশ্চিত করুন ল্যাপটপের স্থানটি কম্বল অথবা এ জাতীয় অন্যান্য উপাদানমুক্ত যেগুলো এয়ার ফ্লো তথা বায়ুপ্রবাহ বøক করে। ল্যাপটপের অভ্যন্তরীণ জিনিস শীতল রাখার ব্যাপারে নিশ্চিত থাকতে চাইলে ল্যাপ-ডেস্ক ব্যবহার করা যেতে পারে।
এগুলো ছাড়া একই নিয়ম ল্যাপটপে অ্যাপ্লাই করা যায়, যেমন ডেস্কটপে ব্যবহার করা যায়। এটিকে গরম জায়গায় রাখা উচিত নয়। মাঝেমধ্যে কম্প্রেস এয়ার ব্যবহার করে ল্যাপটপ বা কমপিউটারকে পরিষ্কার করুন। যদি এটিকে ধুলাবালি মুক্ত রাখতে পারেন, তাহলে কম্পোনেন্টগুলোও ভালোভাবে রান করবে দীর্ঘদিন ধরে।
অসতর্কভাবে ল্যাপটপ ব্যবহার করা
অফিসে আরামদায়কভাবে কাজ করার জন্য ডেস্কটপ কমপিউটারে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে সমৃদ্ধ সেটিং। কিন্তু ল্যাপটপ ব্যবহারকারীকে প্রচুর যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়। অনেক সময় দেখা যায় ব্যবহারকারীরা খুব অসতর্কভাবে ল্যাপটপের ডিসপ্লে ধরে তুলে নিয়ে ব্যবহার করতে শুরু করেন। কোনো কোনো ব্যবহারকারী বেশ শক্তি প্রয়োগ করে একপ্রান্ত ধরে ল্যাপটপ ওপেন করেন। কেউ কেউ ল্যাপটপকে কক্ষের একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুড়ে দেন (এতে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে এবং ল্যাপটপের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে)। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, কখনো কখনো কোনো কোনো ব্যবহারকারীকে বন্ধ ল্যাপটপকে পানীয় রাখার ট্রে হিসেবে ব্যবহার করতেও দেখা গেছে, যা যেকোনো সচেতন ব্যবহারকারীকে ক্রোধান্বিত করতে পারে।
ল্যাপটপ সহজে বহনযোগ্য এবং টেকসই হলেও যত বেশি হেলাফেলাভাবে ব্যবহার করবেন, ড্যামেজ হওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি বেড়ে যাবে। যদি আপনার ল্যাপটপের হার্ডডিস্কটি এসএসডির পরিবর্তে পুরনো স্পিনিং হার্ডড্রাইভ হয়ে থাকে, তখন সক্রিয় অবস্থায় কমপিউটার ঝাঁকুনি খাবে বা কম্পিত হবে এবং ডিস্ক ডিসলোকেট বা সারফেস স্পর্শের কারণ গয়ে দাঁড়াতে পারে। সচরাচর এমন কিছু না ঘটলেও মাঝেমধ্যে ঘটতে পারে। সুতরাং এমন বিপর্যয় থেকে পরিত্রাণ পেতে চাইলে আপনাকে ডাটা ব্যাকআপ করতে হবে।
অপ্রয়োজনীয় মেইনটেন্যান্সে সময় নষ্ট করা
উইন্ডোজ এক্সপির যুগে হার্ডওয়্যার যেমন ছিল সীমিত, তেমনই কমপিউটারের গতিও ছিল ধীর। স্বাভাবিকভাবে পিসির মেইনটেন্যান্সও কিছুটা ভিন্ন ছিল। এ সময়ের অব্যবহƒত এবং টেম্পোরারি ফাইল ডিলিট করলে সম্ভাবনাহীনভাবে পিসির গতি বাড়বে উল্লেখযোগ্যভাবে। কিছু কিছু ‘পিসি ক্লিনিং’ ইউটিলিটি হলো স্ক্যাম। এগুলো আপনাকে তাদের সফটওয়্যার পণ্য কেনার জন্য প্ররোচিত করে। লক্ষণীয়, বেশিরভাগ ফ্রি, কম স্ক্যামি টুল বেশিরভাগ সময় অপ্রয়োজনীয় টুল হিসেবে বিবেচিত।
লক্ষণীয়, নির্দিষ্ট কিছু টাইপের মেইনটেন্যান্স কখনো ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। রেজিস্ট্রি ক্লিনার টুল কার্যত কোনো সুবিধা দিতে পারে না। তবে রেজিস্ট্রি ক্লিনার যদি কোনো রেজিস্ট্রি এন্ট্রি ডিলিট করে ফেলে যেগুলো সত্যি সত্যি আপনার জন্য দরকারি, তাহলে সমস্যা সৃষ্টি হবে। একইভাবে নতুন ঢ়ৎরাধপু অ্যাপ দাবি করে যে উইন্ডোজ ১০-কে আপনার ওপর ংঢ়ুরহম করাকে থামিয়ে দেয় এবং আপনার অজান্তে নির্দিষ্ট কিছু ফিচারকে ব্যাহত করে। কোনো কোনো কাজ হঠাৎ থেমে যায়- ইন্টারনেটে অনুসন্ধান করলে দেখা যায় যে টুলের ত্রæটির জন্যই এমন সমস্যার উদ্ভব। এমন অবস্থায় ভালো হয় উইন্ডোজ ১০-এর সেটিং জুড়ে পরখ করে দেখুন, জেনে নিন এগুলো কী করে এবং নিজে নিজেই টোয়েক করে নিন।
যদি আপনার হার্ডড্রাইভ পরিষ্কার করতে চান, তাহলে উইন্ডোজের বিল্টইন ডিস্ক ক্লিনআপ ইউটিলিটি ব্যবহার করুন এবং আপনি ব্যবহার করেন না এমন মুভি, মিউজিকসহ অন্যান্য ফাইল ডিলিট করুন। যদি আপনার কমপিউটার অস্বাভাবিক ধীরগতিতে রান করতে থাকে, তাহলে স্টার্টআপ প্রোগ্রাম অপসারণ করার চেষ্টা করুন অথবা পিসিকে রিসেট করুন। যদি এরপরও কাজ না করে, তাহলে ধরে নিতে পারেন যে আপনার হার্ডওয়্যার আপগ্রেড করার সময় হয়েছে।
আনপ্রেটেক্টেড ওয়েব ব্রাউজ করা
কমপিউটিং বিশ্বে বহুল জনপ্রিয় এক বিশ্বাস পড়সসড়হ ংবহংব-এর বিপরীত কথা হলো ডাটার নিরাপত্তার জন্য শুধু ম্যালওয়্যার প্রটেকশনই যথেষ্ট নয়। এমনকি বৈধ সাইটও ম্যালওয়্যার আক্রান্ত হতে পারে, যা আপনার কাছে পাস হতে পারে। এর ফলে সতর্কভাবে ব্রাউজ করলেও আপনি রক্ষা পাবেন না। এজন্য দরকার আপনার কমপিউটারে ভালো মানের অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করা।
গত কয়েক বছরের সাব-রেটিংয়ে দেখা গেছে, মাইক্রোসফটের বিল্টইন উইন্ডোজ ডিফেন্ডার ফিচার ভাইরাস প্রতিরোধে বেশ ভালোভাবে কাজ করতে পারে। এই টুলকে তার স্বাভাবিক কাজ করতে দিন। যদি বাড়তি প্রটেকশন চান, ম্যাল-ওয়্যারবাইটস অ্যান্টি-ম্যালওয়্যার টুল প্রটেকশনের ব্যাপারে বেশ কিছুটা আগ্রাসিই বলা যায়। বিভিন্ন পরীক্ষায় দেখা গেছে ম্যালওয়্যারবাইটস অ্যান্টি-ম্যালওয়্যার টুলটি প্রচুর পরিমাণে উপাদান শনাক্ত করতে পারে, যা ক্রোম এবং উইন্ডোজ ডিফেন্ডার শনাক্ত করতে পারে না। ম্যালওয়্যারবাইটস অ্যান্টি-ম্যালওয়্যার টুলের ফ্রি ভার্সন যথেষ্ট ভালো কাজ করতে পারবে যদি মাঝেমধ্যে স্ক্যান রান করতে পারেন। তবে পেইড ভার্সনে সম্পৃক্ত করা হয় সব সময়ের জন্য রানিং অ্যান্টি-এক্সপ্লয়িট ফিচার, যা সম্ভাব্য ক্ষতিকর সাইড বøক করতে পারে স্ক্রিনে আবিভর্‚ত হওয়ার আগে। গতানুগতিক অ্যান্টিভাইরাস যেমন উইন্ডোজ ডিফেন্ডারের সাথে মিলিত হয়ে এটি প্রটেকশনের জন্য চমৎকারভাবে কাজ করতে পারবে