লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম:
সৈয়দ হাসান মাহমুদ
মোট লেখা:১৪৪
লেখা সম্পর্কিত
সম্পাদকীয় ডাটা সিকিউরিটি আইনের অভাব : বিনিয়োগে বাধা
সম্পাদকীয়
ডাটা সিকিউরিটি আইনের অভাব : বিনিয়োগে বাধা
গত ৬ অক্টোবর আইসিটি ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, বাংলাদেশ আইসিটি খাতে বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। এর কারণ বাংলাদেশে ডাটা সিকিউরিটি নিশ্চয়তা করার ক্ষেত্রে নীতিমালা, বিধিবিধান তথা আইনের অভাব রয়েছে। এ কারণে বিশেষত বাংলাদেশ ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো থেকে আইসিটি খাতে বিনিয়োগ আকর্ষণ করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে স্বীকার করছি, আমরা ডাটা সিকিউরিটি বিষয়ে একটি নীতিমালা সূত্রায়নে ব্যর্থ হয়েছি। এ কারণে আমরা উন্নত দেশগুলো থেকে বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে ব্যর্থ হচ্ছি।
আইসিটি বিষয়ে একটি গোলটেবিল অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এ কথা বলেন মন্ত্রী। গোলটেবিলে আলোচনার বিষয় ছিল ‘প্রাইভেসি ও ডাটা সিকিউরিটি’। ঢাকার একটি স্থানীয় হোটেলে ‘টেলিকম রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ’ (টিআরএনবি) এই গোলটেবিল আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এ আলোচনা অনুষ্ঠানে আইসিটিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার আরো বলেন, মাইক্রোসফটের মতো কোম্পানি বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে। কিন্তু তারা বিনিয়োগে পিছুটান দেয়, যখন দেখে দেশে সুনির্দিষ্ট কোনো ডাটা নিরাপত্তা বিধান নেই, যেখানে ডিজিটাল ইন্ডাস্ট্রি প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ। ডাটা সৃষ্টি করছে। তিনি বলেন, পার্সোনাল ডাটা একটি বিপুল পরিমাণ সম্পদ। ফেসবুকের মতো সামাজিক গণমাধ্যম ও গুগলের মতো সার্চ ইঞ্জিনগুলো ব্যবহারকারীদের বিনামূল্যে বিপুল পরিমাণ সেবা সরবরাহ করছে তাদের পার্সোনাল ডাটার বিনিময়ে। যেকোনো ধরনের পার্সোনাল ডাটা খুবই মূল্যবান এবং গ্রাহকেরা তা বিনিময় করছে যথাযথ সচেতনতার সাথে। মন্ত্রী বলেন, সরকারি সংস্থাগুলো এবং বেসরকারি খাত বিশ্বের বিভিন্ন অংশ থেকে আক্রমণের শিকারে পরিণত হচ্ছে। পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য।
সম্প্রতি বাংলাদেশের একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান একটি মাত্র দিনে ৪৬০০ আক্রমণ প্রতিহত করে বলে মন্ত্রী জানান। যেহেতু প্রতিদিন দেশে ডিজিটাল সার্ভিসের পরিধি বেড়ে চলেছে, সরকারের উচিত ব্যাংক, হাসপাতাল ও অন্যান্য ডিজিটাল সেবাদাতার সাথে বসা, যাতে করে এগুলো নিয়ন্ত্রণের একটি বিধান সূত্রায়ন করা যায় এই অভিমত বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশনের মহাপরিচালক মো: মোস্তাফা কামালের।
তিনি জানান, সম্প্রতি টেলিকম রেগুলেটর ফেসবুক ও গুগলের ক্যাশ সার্ভার বন্ধ করে দিয়েছিল তাদের ওপর বাংলাদেশে অফিস স্থাপনের ব্যাপারে চাপ সৃষ্টির জন্য।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ল-এর লেকচারার ফারহান উদ্দিন আহমদ বলেন, বাংলাদেশ ভবিষ্যতে কোনো বিদেশী বিনিয়োগ পাচ্ছে না, যদি ডাটা সিকিউরিটি বিষয়ে একটি নীতিমালা তৈরি না করে।
বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইমপোটার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট রুহুল আলম আল-মাহবুব মানিক বলেন বর্তমানে ৩০ শতাংশেরও কম মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীরা স্মার্টফোন ব্যবহার করে। এরা বিপুল পরিমাণ ডাটা সৃষ্টি করছে। আগামী তিন-চার বছরের মধ্যে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ গ্রাহক স্মার্টফোন ব্যবহার করবে। তিনি প্রশ্ন রাখেন তখন দেশে ডাটা জেনারেশন পরিস্থিতিটা কোন পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়াবে? হ্যান্ডসেট ইন্ডাস্ট্রি চেষ্টা করবে প্রতিটি স্মার্টফোনের ডাটা সিকিউরিটি নিশ্চিত করতে।
রবির করপোরেট ও রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্সের প্রধান শাহেদ আলম বলেন, অনেক দেশে ডাটা সিকিউরিটি আইন নেই। তবে এসব দেশ তা নিয়ন্ত্রণ করে যথাযথ নীতিমালার মাধ্যমে। তিনি আরো বলেন, বিশ্বের অনেক কোম্পানি আমাদের সাথে ব্যবসায়ের জন্য কথা বলেছে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা ‘সরি’ বলেছে, কারণ আমাদের দেশে নেই কোনো ডাটা সিকিউরিটি অ্যাক্ট বা পলিসি। আলোচনা অনুষ্ঠানে বেশ কয়েকজন বক্তা বলেছেন, তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী নয়। কারণ, বাংলাদেশে মেধাসম্পদ অধিকার সংরক্ষিত নয়।
আমরা মনে করি, বাংলাদেশের আইসিটি খাতে বিদেশী বিনিয়োগ করতে হলে আমাদেরকে যথাসম্ভব দ্রুত একটি ডাটা সিকিউরিটি আইন বা নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। আশা করি, সরকার বিষয়টি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।