লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম:
মো: সাদ রহমান
মোট লেখা:৪
লেখা সম্পর্কিত
মেশিন লার্নিং ছিন্ন করছে ভাষার বাধা
মেশিন লার্নিং ছিন্ন করছে ভাষার বাধা
মো: সা’দাদ রহমান
আমরা সবাই জানি ‘ইন্টেলিজেন্স’ শব্দের অর্থ কী, আর এও জানি, ‘আর্টিফিসিয়াল’ শব্দের অর্থ কী। কিন্তু এই শব্দ দুটি একসাথে করে তৈরি করা ফ্রেইজ ‘আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স’-এর অর্থ বুঝতে আমরা অনেকেই দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগি। কিংবা বিষয়টি নিয়ে ভীত হয়ে পড়ি। এক ধরনের আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে বলা হয় মেশিন লার্নিং। এই মেশিন লানিং দুনিয়াটাকে এত দ্রুত পাল্টে দিচ্ছে, যা আমরা কখনো ভাবতেও পারিনি। বিশেষ করে এটি পাল্টে দিচ্ছে আমাদের আন্তর্জাতিক ব্যবসায়-বাণিজ্যকে।
কমপিউটার যেভাবে ‘চিন্তা’ করে, তাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে এই মেশিন লার্নিং। মেশিন লার্নিংয়ের আগে আমরা ভাবতাম কমপিউটার কাজ করে কমপিউটার প্রোগ্রাম অনুসারে, কমপিউটার প্রোগ্রামের ব্যাখ্যামতে ধাপে ধাপে কমপিউটার এর করণীয় সম্পন্ন করে। এই বিষয়টি কমপিউটারকে সীমিত করেছে মানুষের চিন্তার অনুকারী বা অনুসরণকারী হিসেবে, শুধু সেইসব ক্ষেত্রে যেখানে আমরা ধাপে ধাপে বুঝি কী করে মানুষ চিন্তা করে। উদাহরণত, আমরা বুঝি কী করে আমরা পাটিগণিত ও বীজগণিতের কাজ করি। কারণ, এটি এক ধরনের সচেতন ভাবনা। বিপরীতক্রমে, আমাদের ধারণা নেই কী করে একজনের মুখমন্ডল চিনতে পারি, অথবা খেলার মাঠে চলার সময় আমরা কী করে ভারসাম্য রক্ষা করি। কারণ, এ কাজটি আমরা করি অবচেতন চিন্তার মাধ্যমে। মেশিন লার্নিংয়ের আগে, কমপিউটার শুধু করতে পারত সচেতন চিন্তার কাজগুলো। কারণ, শুধু এসব কাজের প্রোগ্রাম করতেই আমরা জানতাম। অবচেতন মন নিয়ে করা কাজগুলো কমপিউটারের ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গিয়েছিল, কারণ এগুলো প্রোগ্রাম করা যেত না।
এই ধাপে ধাপে বা স্টেপ-বাই-স্টেপ করা প্রোগ্রামিংয়ে উতরে গিয়ে মেশিন লার্নিং এই ব্যাপারটি পাল্টে দিয়েছে। মেশিন লার্নিংয়ের সাহায্যে কমপিউটার (মেশিন অংশ) একটি বিশেষ কাজ করার সর্বোত্তম বিকল্পটি খুঁজে নিতে ব্যবহার করে প্রচুর পরিমাণ ডাটা (লার্নিং অংশ)। এজন্য ধন্যবাদ জানাতে হয় কমপিউটিংয়ে অতি দ্রুত অগ্রগতি অর্জন অসম্ভব ধরনের প্রচুর ডাটায় প্রবেশের সুযোগকে। কমপিউটার নিয়মিতভাবে প্রশিক্ষণ পাচ্ছে মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে। আর এভাবেই কমপিউটার অবচেতন চিন্তার ক্ষেত্রে মানুষের পর্যায়ের চিন্তাশীল কাজ করার ক্ষমতা অর্জন করছে। যেমন কমপিউটার চিনতে পারছে হাতের লেখা, মানুষের কথা বলা, এক্স-রে ছবিতে ভাঙা হাড় ইত্যাদি। মেশিন লার্নিংয়ের একটি গেম চেঞ্জিং বা অুুলনীয় পরিবর্তন হচ্ছে মেশিন ট্র্যানমেশন।
মেশিন লার্নিং আসলে কী?
মেশিন ট্র্যানমেশন হচ্ছে ভাষায় মেশিন লার্নিংয়ের প্রয়োগ। মেশিন ট্র্যানমেশন সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেশ নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছে। এটি উন্মুক্ত, কাজ করে তাৎক্ষণিকভাবে। এটি দিন দিন উন্নত থেকে উন্নততর হচ্ছে। এই একটি উদ্ভাবন আধুনিক দুনিয়ার কাজকর্ম পাল্টে দেবে। কারণ, এ পর্যন্ত ভাষার বাধাটি সেই স্মরণাতীতকাল থেকে কাজ করে আসছে আন্তর্জাতিক ব্যবসায়-বাণিজ্যেও একটি বড় ধরনের বাধা হিসেবে।
মেশিন লার্নিংয়ের বেটা টেস্টিং তথা পরীক্ষামূলক পর্যায়ে কোনো বিদেশি ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি নয়। এটি এরই মধ্যে রয়েছে আপনার স্মার্টফোনে, ল্যাপটপে কিংবা ট্যাবলেটে। Google Translate Ges iTranslate Voice-এর মতো ফ্রি অ্যাপ এখন ভালো কাজ করে প্রধান প্রধান ভাষার ট্র্যানমেশনের কাজে। মাইক্রোসফট আউটলুক ই-মেইলে চালু করে অটোমেটিক ইনস্ট্যান্ট ট্র্যানমেশনের। টুইটার বেশিরভাগ বিদেশি ভাষার ট্র্যানমেশন টুইট করার অফার দেয়। ইউটিউবের রয়েছে অনেক ভিডিওর বিদেশি ভাষা অনুবাদের জন্য ইনস্ট্যান্ট মেশিন ট্র্যানমেশন শুধু আপনাকে যেতে হবে সেটিং ‘gear’-এ এবং ক্লিক করতে হবে ‘captions’-এ। এরপর বেছে নিতে হবে ‘auto-translate’। ইনস্ট্যান্ট, ফ্রি ও স্পোকেন ট্র্যানমেশন পাওয়া সম্ভব স্কাইপিতেও অ্যাড অন Sïpe Translator আপনাকে সুযোগ দেবে সেই বিদেশি ভাষাভাষীর ভাষা বুঝতে, যার সাথে স্কাইপিতে আপনি কথা বলছেন। এটি ততটা পরিপূর্ণ না হলেও এর সাহায্যে বিদেশিদেও সাথে অবাধে কথা বলা যায়।
ব্যবসায়-বাণিজ্যে ভাষার প্রভাব
অর্থনীতিবিদদের একটি পদক্ষেপ হচ্ছে, অভিন্ন ভাষার মতো বস্তুও বাণিজ্য প্রবাহ ও দূরত্বের প্রভাব পরিমাপ করা, আর এটিকে বলা হয় ‘গ্র্যাভিটি মডেল’। এতে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয় গ্র্যাভিটি ফোর্সের মতো দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য প্রবাহ বিস্ফোরিত হয় ‘ইকোনমিক সেলিং মাস অব ন্যাশন’ এবং ‘ইকোনমিক মাস অব বায়িং ন্যাশন’-এর মাধ্যমে, কিন্তু বাণিজ্য প্রবাহ কমে যায় উভয়ের মধ্যে ভৌগোলিক দূরত্বের কারণে। বিজ্ঞানসম্মত সমীক্ষায় অর্থনীতিবিদেরা জানতে পারেন, ভাষাগত বাধা উল্লেখযোগ্যভাবে অবদমিত করে, অপরদিকে অভিন্ন ভাষার বিনিময় বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়-বাণিজ্য ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে তোলে। কথাটি একটু বাড়িয়ে বলা মনে হতে পারে। তবে অনেক আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী নেতাদের কাছে তা সত্য বলে অনুভূত। তারা প্রতিদিন দেখতে পান, ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে অসংখ্য সমস্যা দেখা দেয়, যখন তারা অভিন্ন ভাষায় সরাসরি কথা বলতে পারেন না। যখন মেশিন লার্নিং ভাষার বাধাটা প্রধান প্রধান ভাষার ক্ষেত্রে ছিন্ন করে তখন এর প্রভাবটা স্পষ্ট। তখন বিশ্ব বাণিজ্য প্রবাহ অবশ্যই বাড়বে, প্রচুর পরিমাণে। কারণ, মেশিন লার্নিং খুব ভালোভাবে ও দ্রুত কাজ করছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এর প্রভাব লক্ষণীয়ভাবে ধরা পড়বে। প্রভাব এরই মধ্যে নথিবদ্ধ হচ্ছে বিশেষ ধরনের ব্যবসায়-বণিজ্যে অনলাইন ইন্টারন্যাশনাল ফ্রিল্যান্সিং অথবা টেলিমাইগ্রেশনে, যার কথা উল্লেখ রয়েছে প্রকাশিতব্য বই ‘দ্য গ্লোবটিকস আপহিভাল’-এ। টেলিমাইগ্রেশন হচ্ছে এক দেশে বসে থেকে আরেক দেশে কাজ করা। এটি হচ্ছে অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং। যা করা হয় বইধু-এর মতো প্ল্যাটফরমগুলোর ম্যাচ মেকিংয়ের মাধ্যমে, কিন্তু তা করা হচ্ছে পণ্যের বদলে বরং সেবার ক্ষেত্রে। যারা কোনো ফ্রিল্যান্সার ভাড়া করতে চায় এবং যারা ফ্রিল্যান্স করতে চায় তারা রেজিস্টার করে এসব সাইটে। প্ল্যাটফরম তাদের মিলিয়ে দিতে সহায়তা করে। এর ফলে পারস্পরিক যোগাযোগ, ব্যবস্থাপনা ও পরিশোধের বিষয় সহজতর হয়। লাখ লাখ ফ্রিল্যান্সার নিবন্ধিত হয়। বেশিরভাগ কাজই চলে ইংরেজি ভাষার মাধ্যমে। সেজন্য ইংরেজিতে সাবলীল কথাবার্তা বলার সক্ষমতাটার দাবিটা যৌক্তিক। নতুন ধরনের এই গ্লোবালাইজেশনে নন-ইংলিশ স্পিকারদের জন্য ইংরেজি একটি বড় বাধা।
বিশ্বে লোকসংখ্যা ৭২০ কোটি। এর মধ্যে ৪০ কোটির প্রথম ভাষা ইংরেজি। এর বাইরে অনেক নন-ন্যাটিভ ইংরেজিতে কথা বলে। সব মিলিয়ে ১০০ কোটির মতো মানুষ ইংরেজিতে কথা বলে। মেশিন লার্নিং ব্যাপকতা পাওয়ার ফলে অ-ইংরেজি ভাষাভাষীরা ব্যাপকভাবে আসবে চাকরির বাজারে। তখন চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা বাড়বে