• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > ডিজিটাল সহযোগিতায় জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের রোডম্যাপ
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: মোহাম্মাদ আব্দুল হক
মোট লেখা:১৭
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০২১ - মে
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
টেকনোলজি প্রতিষ্ঠান
তথ্যসূত্র:
ডিজিটাল সিস্টেম
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
ডিজিটাল সহযোগিতায় জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের রোডম্যাপ
ডিজিটাল সহযোগিতায় জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের রোডম্যাপ

মোহাম্মদ আব্দুল হক অনু

বিশ্বের মানুষ করোনাভাইরাস 
মোকাবেলা করতে গিয়ে প্রথমবারের 
মতো উপলব্ধি করতে পারেÑ এই মহামারী 
মোকাবেলা করে মানুষে-মানুষে যোগাযোগ 
রক্ষা করে চলতে ডিজিটাল টেকনোলজি 
কতটা সহায়ক ভ‚মিকা পালন করতে 
পারে। সুপার কমপিউটার বিশ্লেষণ করে 
হাজার হাজার ড্রাগ কম্পাউন্ড ি চকিৎসাপ্রার্থী 
চিহ্নিত করা ও চিকিৎসা দেয়া ও প্রতিষেধক 
ব্যবহারের জন্য। ই-কমার্স প্ল্যাটফরমগুলো 
অগ্রাধিকার দেয় নিত্যপণ্য ও ওষুধ সরবরাহের 
বিষয়ে। অপরদিকে ভিডিও কনফারেন্সিং 
প্ল্যাটফরমের মাধ্যমে এই মহামারীর সময়ে 
আমরা শিক্ষা কার্যক্রম ও আর্থনীতিক কর্মকাР
অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছি। একই সাথে 
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির সামনেও 
এই মহামারী ঠেলে দেয় নানা চ্যালেঞ্জের 
মুখে। অপরদিকে এই মহামারী যথাযথভাবে 
মোকাবেলায় জন্য সঠিক ডাটা ও তথ্য পাওয়া 
একটি মৌল প্রয়োজন। কিন্তু সামাজিক 
যোগাযোগমাধ্যমকে অপব্যবহার করা হয়েছে 
বিপজ্জনক তথ্য ছড়িয়ে দিতে। এর মাধ্যমে 
উসকে দেয়া হয় নানা বৈষম্য, জেনোফোবিয়া 
(বিদেশিদের সম্পর্কে অহেতুক ভয়) ও 
রেসিজম (বর্ণবাদ)। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, 
হাসপাতাল ও গবেষণাগারে সাইবার হামলা 
চালিয়ে মানুষের জীবনকে করে তোলা হয় 
অধিকতর বিপন্ন। এর ফলে এই ভাইরাসের 
সংক্রমণের বিস্তার রোধ আরো বিশৃঙ্খল 
পর্যায়ে পৌঁছে। 
এ প্রেক্ষাপটে প্রযুক্তির ব্যবহার ও এই 
ভাইরাস রোধ করার উপায়ের মধ্যে একটা 
সামঞ্জস্য-বিধান জরুরি হয়ে পড়ে। সেই 
সাথে জরুরি হয়ে পড়ে মানুষের গোপনীয়তা 
ও ব্যক্তি অধিকার সুরক্ষা করা। এমনি 
অবস্থায় ডিজিটাল প্রযুক্তি বিভিন্ন দেশের 
মানুষকে সুযোগ করে দেয় বাড়িতে বসে 
পারস্পরিক যোগাযোগ রক্ষা ও কাজকর্ম এবং 
জানা-শোনার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে। 
এই মহামারীর সময়ে এসব সুযোগ কাজে 
লাগিয়েছে সবাই। কিছু লোক আছে, যাদের 
কাজের জন্য শারীরিকভাবে কর্মস্থলে হাজির 
থাকতে জয়। অনেকে এই সময়ে চাকরি 
হারিয়েছে কিংবা তাদের ব্যবহারের সুযোগ 
নেই ইন্টারনেট বা অন্য কোনো প্রাযুক্তিক 
সেবা। বিশেষ করে গ্রামে গরিব ও ভঙ্গুর 
জনগোষ্ঠী এই শ্রেণিতে পড়ে।কিছু লোকের 
ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ থাকলে, তা 
সীমিত পর্যায়ের। নারী ও বালিকারা এ ক্ষেত্রে 
তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে। একটি শূন্যতার 
মাঝে ডিজিটাল প্রযুক্তি অস্তিত্বশীল হতে পারে 
না। এর জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে 
হয়। এবং সে জন্যই উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি 
করা উচিত। কারণ, ডিজিটাল প্রযুক্তির সমূহ 
সম্ভাবনা রয়েছে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার। 
ডিজিটাল প্রযুক্তি অর্থনৈতিক ও অন্যান্য 
বৈষম্য পরিস্থিতি দূর করায় উপকারী প্রমাণিত 
হতে পারে। ২০১৯ সালে উন্নত দেশগুলোর 
৮৭ শতাংশের কাছাকাছি মানুষকে ইন্টারনেট 
ব্যবহার করতে দেখা গেছে। এর বিপরীতে 
দেখা গেছে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মাত্র ১৯ 
শতাংশ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে।
যত বেশি মানুষকে অনলাইনের আওতায় 
আনা হয়, তত বেশি বাড়ে ভঙ্গুরতার হারও। 
একটি প্রাক্কলিত হিসাব মতেÑ ২০২৪ সালে 
বিশ্বব্যাপী ডাটাভঙ্গের কারণে ক্ষতির পরিমাণ 
দাঁড়াবে ৫ ট্রিলিয়ন (১ ট্রিলিয়ন = ১০১২ ডলার)। 
তা সত্তে¡ও করোনা মহামারীর এই সময়ে 
ডিজিটাল টেকনোলজি প্রভ‚ত সম্ভাবনা নিয়ে 
হাজির হয়েছে বিশ্বপরিবেশে ও স্বাস্থ্যসেবা 
জোগানোর ক্ষেত্রে। এই সম্ভাবনাকে 
কাজে লাগিয়ে বিশ্বে এক অভ‚তপূর্ব বিপ্লব 
সাধন করা যেতে পারে। এমনটি মনে
করে জাতিসঙ্ঘ। বিশেষ করে এ উপলব্ধি 
জাতিসঙ্ঘের মহাসচিবের। জাতিসঙ্ঘ মনে 
করে,এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে 
দেশে দেশে সহযোগিতার পদক্ষেপ নিতে 
হবে। আজকের দিনে কোম্পানিগুলোর মধ্যে 
যে ডিজিটাল সহযোগিতা বেড়েছে, তা আরো 
জোরদার করে তুলতে হবে। সে লক্ষ্যেই 
জাসিঙ্ঘের মহাসচিব উদ্যোগী হন একটি 
ডিজিটাল সহযোগিতার রোডম্যাপ তৈরিতে।

ডিজিটাল সহযোগিতার রোডম্যাপ

জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব ২০১৮ সালের 
জুলাইয়ে তৈরি করেন ‘উচ্চ পর্যায়ের ডিজিটাল 
কো-অপারেশন প্যানেল’। ২০১৯ সালেএই 
প্যানেল পেশ করে এর ফাইনাল রিপোর্ট: ‘দ্য 
এইজ অব ডিজিটাল ইন্টারডিপেন্ডেন্স’। 
২০২০ সালের ১১ জানুয়ারি জাতিসঙ্ঘের 
মহাসচিব প্রকাশ করেন: ‘রোডম্যাপ ফর 
ডিজিটাল কো-অপারেশন’ (এ/৭৪/৮২১), 
যাতে সমাধান রয়েছে কীভাবে ডিজিটাল 
টেকনোলজির সম্ভাব্য সুযোগগুলো অধিকতর 
ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারে। সেই 
সাথে মোকাবেলা করতে পারে তাদের 
চ্যালেঞ্জগুলো।
জাতিসঙ্ঘের মহাসচিবের এই 
রোডম্যাপ তৈরি করা হয়েছে ডিজিটাল 
সহযোগিতাবিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের প্যানেলের 
সুপারিশ ও জাতিসঙ্ঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর 
ইনপুট, বেসরকারি খাত, সুশীল সমাজ, 
কারিগরি সমাজ ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডারের 
ইনপুটের ওপর ভিত্তি করে।

কানেক্ট

আমাদেরকে অবশ্যই ২০৩০ সালের 
মধ্যে অর্জন করতে হবেসার্বজনীন, নিরাপদ, 
অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সহজে সবার জন্য 
প্রবেশযোগ্য ইন্টারনেট। ডিজিটাল বিভাজন 
থেকে উত্তরণ হচ্ছে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা 
তথা এসডিজি অর্জনের মুখ্য বিবেচ্য। 

রেসপেক্ট

অফলাইনের মতো অনলাইনেও বিদ্যমান 
থাকবে মানবাধিকার। আর তা হবে ডিজিটাল 
প্রযুক্তির কেন্দ্রীয় বিবেচ্য। ডিজিটাল স্পেসে 
মানবাধিকার ও মানব এজেন্সিকে সবকিছুর 
কেন্দ্রে রাখা হবে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য।

প্রটেক্ট

আমাদেরকে অবশ্যই অবসান ঘটাতে 
হবে অনলাইন অপরাধ ও ক্রমবর্ধমান 
ডিজিটাল নিরাপত্তার হুমকিগুলোর। বিশেষ 
করে আমাদের মধ্যকার যারা এসব হুমকির 
ক্ষেত্রে ভঙ্গুর পর্যায়ে রয়েছে তাদেরনিরাপত্তা 
নিশ্চিত করতে হবে।

রোডম্যাপের মুখ্য করণীয়

অনলাইন দুনিয়াসম্পর্কিত ওপরে বর্ণিত 
কানেক্ট, রেসপেক্ট ও প্রটেক্টের তাগিদ মেটাতে 
অ্যাকশন-ওরিয়েন্টেড এই রোডম্যাপে 
উপস্থাপন করা হয়েছে মহাসচিবের বিভিন্ন 
স্টেকহোল্ডারের বিভিন্নমুখী গুরুত্বপূর্ণ করণীয় 
সুপারিশের ওপর ভিত্তি করে। আর তা নিচে 
উল্লিখিত ক্ষেত্রগুলোতে বৈশ্বিক ডিজিটাল 
সহযোগিতা জোরদার করে তুলবেÑ
এক: ২০৩০ সালের মধ্যে সার্বজনীন, 
সহজলভ্য সংযুক্তি অর্জন, যেখানে সবার 
প্রবেশ থাকবে ইন্টারনেটে।
দুই: আরো বেশি বৈষম্যহীন দুনিয়ার 
সৃষ্টির জন্য ডিজিটাল পাবলিক গুডসের 
উন্নয়ন। ইন্টারনেটের ওপেন সোর্স ও পাবলিক 
অরিজিন গ্রহণে সহায়তা জোগাতে হবে।
তিন: ভঙ্গুর জনগোষ্ঠীসহ সবার জন্য 
ডিজিটাল ইনক্লুশন তথা অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে 
হবে। উন্নয়ন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার জন্য 
সেবাবঞ্চিত কিংবা স্বল্প সেবাভোগীদের সমান 
প্রবেশাধিকার থাকতে হবে ডিজিটাল টুলে। 
চার: ডিজিটাল সক্ষমতা জোরদার করে 
তুলতে হবে। বিশ্বব্যাপী দক্ষতার উন্নয়ন ও 
প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
পাঁচ: ডিজিটাল যুগে মানবাধিকার সুরক্ষা 
করতে হবে। মানবাধিকার প্রয়োগ করতে 
হবে অফলাইন ও অনলাইন উভয় ক্ষেত্রে। 
ছয়: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রেও বৈশ্বিক 
সহায়তা দরকার। এ ক্ষেত্রে আস্থাশীল, 
মানবাধিকারভিত্তিক, নিরাপদ ও টেকসই 
শান্তিপূর্ণ বৈশ্বিক সহযোহিতা প্রয়োজন।
সাত: ডিজিটাল আস্থা ও নিরাপত্তার 
উন্নয়ন ঘটাতে হবে। বৈশ্বিক সংলাপ 
আহŸানের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা 
অর্জন করার উপায় বের করতে হবে। 
আট: ডিজিটাল সহযোগিতার জন্য 
অধিকতর কার্যকর আর্কিটেকচার গড়ে তুলতে হবে
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০২১ - মে সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস