প্রসেসর বাজারে বিশ্বব্যাপী একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারকারী প্রতিষ্ঠান ইন্টেল প্রতিনিয়ত নিত্যনতুন প্রসেসর তৈরি করে ক্রেতাসাধারণের সব ধরনের চাহিদা পূরণ করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে৷ ইন্টেল পিসি বা সার্ভারভিত্তিক বিভিন্ন প্রসেসর তৈরি করে নিজের শীর্ষ অবস্থানকে অটুট রাখতে সক্ষম হয় মূলত তাদের প্রসেসরের কার্যকারিতা ও কর্মদক্ষতার কারণে৷ ইন্টেল তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে আরো সম্প্রসারিত করে নজর দেয় ক্ষুদ্রতম প্রসেসর নির্মাণের দিকে৷
ফিচার :
৪৫এনএম প্রসেসর
সর্বোচ্চ ১.৮ গি.হা.
০.৬-২.৫ ওয়াট*
৪৭ মিলিয়ন ট্রানজিস্টর
* থারমাল ডিজাইন পাওয়ার
প্রাক কথা
গত ২ মার্চ ২০০৮ এ ইন্টেল ঘোষণা করেছ এর নতুন প্রসেসর লাইনের কথা৷ যার কোড নেম Silverthro| এ ঘোষণার বেশ আগে থেকে বাইরে বিভিন্ন জল্পনা-কল্পনা শুরু হয় যে সিলভারথ্রন হবে এএমডি-র জিয়ড সিস্টেম অন এ চিপ প্রসেসরের প্রতিদ্বন্দ্বী, যা বর্তমানে ওয়ান ল্যাপটপ পার চাইল্ড প্রজেক্টে ব্যবহার হচ্ছে৷ এটি মূল্য x86 আর্কিটেকচার প্রসেসরবিশিষ্ট অল্প দামের পাওয়ার সেনসেটিভ অ্যাপ্লিকেশনের উপযোগী৷ এরপর ইন্টেল ১৫ অক্টোবর ২০০৭ উন্মোচন করে আরেকটি নতুন মোবাইল প্রসেসর এর কোড নেম Diamondville৷ এটি ওএলপিসি ধরনের ডিভাইসের জন্য৷
সিলভারথ্রন বিক্রি করা হবে অ্যাটম ব্র্যান্ড নামে৷ আগের কোড নেম মেনলো প্লাটফরমে, যার ব্র্যান্ড নেম হবে সেন্ট্রিনো অ্যাটম৷ ইন্টেল ঘোষণা করে যে সিলভারথ্রন ও ডায়মন্ডভিলি হবে একই মাইক্রো আর্কিটেকচারভিত্তিক৷ সিলভারথ্রনকে বলা হবে অ্যাটম জেড সিরিজ এবং ডায়মন্ডভিলিকে বলা হবে অ্যাটম এন সিরিজ৷ সিলভারথ্রন হবে তুলামূলকভাবে একটু দামী এবং অপেক্ষাকৃত কম শক্তি ব্যবহারকারী, যা ব্যবহার হবে মোবাইল ইন্টারনেট ডিভাইসে৷ পক্ষান্তরে ডায়মন্ডভিলি ব্যবহার হবে অল্প দামী ডেস্কটপ ও নোটবুকে৷ এ উভয় প্রসেসরকে বর্তমানে অভিহিত করা হয়েছে ইন্টেল অ্যাটম প্রসেসর হিসেবে৷
ইন্টেল অ্যাটম প্রসেসর সম্পর্কে ইন্টেলের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট সিন মেলনি বলেন, এটি আমাদের ক্ষুদ্রতম প্রসেসর এটি তৈরি করা হয়েছে বিশ্বের ক্ষুদ্রতম ট্রানজিস্টর দিয়ে৷ ইন্টেল অ্যাটম প্রসেসরকে সম্পূর্ণরূপে নতুন ডিজাইনে তৈরি করা হয়েছে এতে অল্প বিদ্যুৎ শক্তি ব্যবহার হবে৷ এই ডিজাইনটি মূলত মোবাইল ইন্টারনেট ডিভাইস ও অল্প দামের পিসির উপযোগী করে তৈরি করা ৷ এটি আকৃতিতে ছোট হলেও বড় ধরনের ইন্টারনেট এক্সপেরিয়েন্সে খুবই কার্যকর৷ আমাদের বিশ্বাস এটি প্রযুক্তি শিল্পে নতুন উদ্ভাবন হিসেবে উন্মোচন করবে নতুন এক দিগন্ত৷
হার্ডওয়্যার
ইন্টেল উদ্ভাবিত অ্যাটম প্রসেসর হলো মোবাইল ইন্টারনেট ডিভাইসের উপযোগী, এর কোড নেম সিলভারথ্রন আর নোটবুক ও নেটটপস-এর জন্য ডায়মন্ডভিলি৷ সিলভাথ্রনের প্রথম সিরিজটি হলো অল্প বিদ্যুৎ শক্তিভিত্তিক, যার লক্ষ্য ভিন্ন ভিন্ন মোবাইল ইন্টারনেট ডিভাইস বা এমআইডিএসভিত্তিক৷ ইন্টেল এই চিপের পাঁচটি পৃথক ভার্সন অফার করে, যার রেঞ্জ হলো ৮০০ মে. হা. থেকে শুরু করে ১.৮৬ মে. হা. ক্লক স্পিড পর্যন্ত৷ বিদুৎ খরচ ০.৬ ওয়াট থেকে ২.৪ ওয়াটের মধ্যে৷ ফ্রন্টসাইড বাস ৪০০ থেকে ৫৩৩ এর মধ্যে, যা মাল্টিথ্রেড সাপোর্ট করে৷ এগুলো Poulsbo চিপসেটসমৃদ্ধ, যাকে অফিসিয়ালি বলা হয় সিস্টেম কন্ট্রোলার হাব বা এসসিএইচ৷
ইন্টেলের মতে, অ্যাটম সিপিইউ আপনার পকেটে সেরা ইন্টারনেট এক্সপেরিয়েন্স ৷ ইন্টেলের এ দাবি ৫ ইঞ্চি স্ক্রিনবিশিষ্ট বহনযোগ্য কমিউনিকেশন ডিভাইসভিত্তিক, যেখানে নেভিগেশন ফিচার, ইন্টারনেট কানেক্টিভিটি, ভিডিও প্লেব্যাক এবং হ্যান্ডসেট গেমিং ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে৷ পারফরমেন্সের ক্ষেত্রে এই সেগমেন্টে ইন্টেল হবে পথপ্রদর্শক এবং x 86 কম্প্যাটিবল৷
স্পেসিফকেশন ও হার্ডওয়্যার ফিচার
অ্যাটম প্রসেসরের সাইজ ও ফিচারের কারণে এটি এখন সবচেয়ে আকর্ষণীয় ডিজাইনের সিপিইউ হিসেবে বিবেচিত৷ অ্যাটমকে তৈরি করা হয়েছে ৪৫এনএম প্রোডাকশন প্রসেসে৷ ইন্টেল ২৫এমএম২ ডাইয়ে (প্যাকেজ পরিমাপ করা হয় ১৩এমএম x ১৪এমএম x ১.৬এমএম) ৪৭, ২১২, ২০৭ ট্রানজিস্টর সঙ্কুচিত করেছে৷ প্রতিটি ট্রানজিস্টরের সাইজকে দৃষ্টিগোচর করানোর জন্য আমাদেরকে কল্পনা করতে হবে ওইসব ডিভাইসের সাইজ ব্যাকটেরিয়ার সাইজের চেয়ে ৪৪ গুণ ছোট হিসেবে৷
ইন্টেল অ্যাটম প্রসেসর দুটি ভিন্ন ভার্সন অফার করবে৷ আমাদেরকে এখনো ডুয়াল কোর ও ৬৪বিট ক্যাপাবল ডায়মন্ডভিলির জন্য অপেক্ষা করতে হবে৷ তবে ইতোমধ্যে ৩২ বিটের সিলভারথ্রনের ৫টি ভার্সনের আবির্ভাব ঘটে৷ এগুলো হলো :
অ্যাটম জেড৫০০: ৮০০ মে. হা. ক্লক স্পিড, ৫১২ কে. বি. এল২ ক্যাশ, ফ্রন্ট সাইড বাস ৪০০, ০.৬৫ ওয়াট টিডিপি৷
অ্যাটম জেড৫১০: ১.১ গি. হা., ৫১২ কে.বি ফ্রন্ট সাইড বাস ৪০০, ২ ওয়াট
অ্যাটম জেড৫২০: ১.৩৩ গি. হা., ৫১২ কে. বি., ফ্রন্ট সাইড বাস ৫৩৩ হাইপারথ্রেডিং, ২ ওয়াট
অ্যাটম জেড৫৩০: ১.৬০ গি. হা., ৫১২ কে.বি., ফ্রন্টসাইড বাস ৫৩৩৷ হইপারথ্রেডিং ২ ওয়াট
অ্যাটম জেড৫৪০: ১.৮৬ গি. হা., ৫১২ কে. বি., ফ্রন্ট সাইড বাস, হাইপারথ্রেডি৷ ২.৪ ওয়াট
যেহেতু এই প্রসেসরগুলো কোর টু ডুয়ো কম্প্যাটিবল, তাই সিপিইউগুলোর সাধারণ ফিচার সেট প্রায় একই রকম৷ এতে সম্পৃক্ত করা হয়েছে ভার্চুয়ালাইজেশন সাপোর্ট, এক্সিকিউট৷
বিদুৎ খরচ
সিলভারথ্রনের বিদুৎ খরচ ৮০ মিলিওয়াটের কম৷ সিলভারথ্রন শুধু একটি চিপ নয়, এর লক্ষ্য নতুন পারফরমেন্স রেকর্ড তৈরি করা এবং এটি মোবাইল ইন্টারনেট ডিভাইসে প্রদান করে চমত্কার পারফরমেন্স৷ এর মূল লক্ষ্য হলো পাওয়ার এফিসিয়েন্ট ডিজাইন ডেভেলপ করা৷
ইন্টেল সিলভারথ্রনে এমন টেকনোলজি প্রয়োগ করেছে যা পাওয়ার কনজ্যাম্পশনকে কমিয়ে ২ ওয়াটের কাছাকাছিতে নিয়ে আসবে৷ এতে ব্যবহার করা হয়েছে ডায়নামিক এল২ ক্যাশ সাইজ, পাওয়ার এফিসিয়েন্ট বিশেষ ধরনের এক্সিকিউশন ইউনিট৷ এতে রয়েছে পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন ধরনের পাওয়ার স্টেট যা কোর ভোল্টেজ থেকে শুরু করে কোর ক্লক শাটডাউন করা পর্যন্ত ক্ষেত্রের পাওয়ার কনজ্যাম্পশন যেমন কমাতে পারে তেমনি পারে পিএলএল, এল১ ও এল২ ক্যাশের ক্ষেত্রেও৷
ইন্টেল দাবি করে যে জেড৫০০ পাওয়ার কনজ্যুম করে মাত্র ৮০ মিলিওয়াটস৷ অন্যান্য ভার্সন কনজ্যুম করে ১০০ মিলিওয়াটস যেহেতু কমিউনিকেশন ডিভাইস বেশিরভাগ সময় আইডল অবস্থায় থাকে বিশেষ ধরনের কাজে ব্যবহারের জন্য৷ ইন্টেল আনুমানিক হিসেব করে দেখেছে যে এসব প্রসেসরের গড়পড়তা পাওয়ার কনজ্যাম্পশন সমাপ্তি ঘটে ১৬০ মিলিওয়াটস (জেড৫০০) বা ২২০ মিলিওয়াটে (অন্যান্য মডেলে)৷ বস্তুতপক্ষে এই চিপ কতটুকু পাওয়ার কনজ্যুম করলো এবং মোবাইল ইন্টারনেট ডিভাইসের ব্যাটারি কতক্ষণ ধরে ব্যবহার করা যাবে তা নির্ভর করে আপনি ডিভাইসটিকে কিভাবে ব্যবহার করছেন তার ওপর৷ অবশ্য ইন্টেল ব্যাটারির কার্যকরী ক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷
কজ
ফিডব্যাক : swapan52002@yahoo.com