লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
লেখার ধরণ:
বছর পূর্তিসম্পাদক,
আঠারো বছর পূর্তির শুভেচ্ছা সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি
সম্মানিত পাঠকবর্গ নিশ্চয়ই অবগত আছেন, এ সংখ্যাটি প্রকাশের মধ্য দিয়ে কমপিউটার জগৎ-এর নিয়মিত প্রকাশনার আঠারো বছর পূর্ণ হলো। বাংলাদেশের মতো ছোট্ট ও দুর্বল অর্থনীতির একটি দেশে বাংলায় প্রযুক্তিবিষয়ক পত্রিকা প্রকাশ করা খুব একটা সহজ বিষয় যে ছিল না, তা এই আঠারো বছরে কমপিউটার জগৎ পরিবারের প্রতিটি সদস্য যথার্থ উপলব্ধি করতে পেরেছি। তবে আমাদের লক্ষ্য ছিল স্থির। লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য আমরা সবাই ছিলাম দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং আন্তরিকতার প্রশ্নে অবিচল। এ দৃঢ়তা ও আস্থায় আমাদের সুদৃঢ় ও আস্থাশীল করার পেছনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন কমপিউটার জগৎ-এর প্রতিষ্ঠাতা ও বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলনের পথিকৃৎ মরহুম অধ্যাপক আবদুল কাদের। তিনি আজ আমাদের মধ্যে সশরীরে হাজির না থাকলেও তার অনুপ্ররেণা ও নীতি-দর্শন আজো আমাদের মাঝে আগের মতোই অস্তিত্বশীল। সেই সাথে এই আঠারো বছরে আমাদের পাঠক, লেখক, পৃষ্ঠপোষক, এজেন্ট, বিজ্ঞাপনদাতা ও সংশ্লিষ্ট অন্যদের কাছ থেকে পেয়েছি অকৃত্রিম সহযোগিতা। আশা করছি, আগামী দিনেও আমরা অব্যাহতভাবে তাদের সহযোগিতা পাবো। সে বিশ্বাস নিয়েই আমরা আজকের এই দিনে প্রত্যাশা করছি, কমপিউটার জগৎ আগামী দিনেও তার অব্যাহত প্রকাশনা নিশ্চিত করতে সফল হবে। এদেশের তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলনকে সামনে এগিয়ে নিতে আমাদের প্রয়াস হবে আন্তরিক ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন।
আমরা এই ১৮ বছরের এ পত্রিকাটি প্রকাশের সময় বরাবর একটি উপলব্ধিকে সযতনে ধারণ করেছি। সে উপলব্ধিটি ছিল : ‘একটি পত্রিকাও হতে পারে একটি আন্দোলন’। সুস্পষ্টভাবেই ‘মাসিক কমপিউটার জগৎ’-এর আন্দোলনের ক্ষেত্রটি ছিল সুনির্দিষ্ট। সুনির্দিষ্ট এ ক্ষেত্রটি হচ্ছে : তথ্যপ্রযুক্তি খাত। তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অগ্রগমন এদেশে নিশ্চিত করার জন্য আমরা ‘কমপিউটার জগৎ’কে ব্যবহার করেছি একটি হাতিয়ার হিসেবে। এক্ষেত্রে আমরা নানাধর্মী তৎপরতার মধ্য দিয়ে সে আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে সচেষ্ট ছিলাম। ‘তথ্য প্রগতির জন্য’, কমপিউটার জগৎ-এর প্রতিটি খবর প্রকাশে এ আপ্তবাক্যটি মাথায় রেখেছি। কোনো নেতিবাচক খবর প্রকাশে আমরা রীতিমতো ছিলাম অনীহ। তাই ইতিবাচক খবরগুলোই স্থান পেয়েছে মাসিক কমপিউটার জগৎ-এর প্রতিটি সংখ্যায়। তেমনি মন্তব্যধর্মী লেখালেখিতে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখতেও আমরা থেকেছি দায়িত্বশীল। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভুলপথে চলার তাগিদ তুলে ধরতে আমরা কুণ্ঠাবোধ করিনি। তুলে ধরতে চেষ্টা করেছি সব মহল ও কর্তৃপক্ষের জন্য ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা। প্রয়োজনে আমাদের তথ্যপ্রযুক্তির আন্দোলনকে বেগবান করার জন্য আমরা প্রকাশনার বাইরে বিভিন্ন প্রতিযোগিতা, সংবাদ সম্মেলন, মেলা, প্রতিভাবানদের জাতির সামনে উপস্থাপন, বর্ষসেরা প্রযুক্তি-ব্যক্তিত্ব ঘোষণা ইত্যাদি ধরনের নানা তৎপরতাও চালিয়েছি সমান্তরাল। আসলে আমাদের সামগ্রিক কর্মসাফল্যসূত্রে মাসিক কমপিউটার জগৎ যেমনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে এদেশের সর্বাধিক বিক্রীত প্রযুক্তি-সাময়িকী হিসেবে, তেমনি এটি দেশব্যাপী বিতর্কাতীতভাবে স্বীকৃত ‘তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলনের পথিকৃৎ’ গণমাধ্যম হিসেবে।
তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলনকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে আমাদের একটা বড় হাতিয়ার ছিল আমাদের প্রতিসংখ্যার সম্পাদকীয়গুলো। এ সম্পাদকীয়গুলোর মাধ্যমে আমরা জাতির সামনে তথ্যপ্রযুক্তির জন্য অনেক করণীয় ও দাবি তুলে ধরেছি, তেমনি সংশ্লিষ্টদের বিবেচনা ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবার তাগিদও উপস্থাপন করেছি। এই সুদীর্ঘ ১৮ বছরে আমরা সর্বমোট ২১৬টি সম্পাদকীয় প্রকাশ করেছি। যে কোনো পাঠক এ সম্পাদকীয়গুলো পাঠে যেমনি আমাদের দেশের প্রযুক্তি খাতের একটা সামগ্রিক চিত্র সম্পর্কে সম্যক উপলব্ধি করতে পারবেন, তেমনি উপলব্ধি করতে পারবেন আমাদের সম্পাদকীয় পরামর্শগুলো কোথায় কোন মাত্রায় গুরুত্ব পেয়েছে, আর কোথায় কিভাবে উপেক্ষিত হয়ে আমরা জাতি হিসেবে ক্ষতির মুখে পড়েছি। আমাদের প্রচ্ছদ কাহিনীগুলো ছিল দিকনির্দেশনাধর্মী আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরাসরি দাবি ধর্মীও। এসব প্রচ্ছদ কাহিনী ছিল জাতিকে দিকনির্দেশনা দেয়ায় অনন্য।
সবশেষে আজকের এই দিনে আঠারো বছর পূর্তির শুভেচ্ছা রইলো সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি।