লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০০৯ - ফেব্রুয়ারী
লেখার ধরণ:
ই-গভর্নেন্সডিজিটাল বাংলাদেশ,
সম্পাদকীয়
চাই বাংলা ভাষার জোরালো প্রাযুক্তিক গবেষণা
বাংলা। আমাদের মায়ের ভাষা। প্রাণের ভাষা। গরবের ভাষা। এই বাংলা ভাষা নিয়ে রক্ত দেয়ার গর্বিত ইতিহাস যেমনি আমাদের আছে, তেমনি এ ভাষা নিয়ে আমাদের লজ্জাজনক হীনম্মন্যতাও আছে। আমরা এই বাঙালিরা অনেক সময় বাংলা ভাষার শক্তিমত্তা কিংবা এর সক্ষমতা অনুধাবন করতে পারি না। এই বাংলা ভাষার প্রকাশ-ক্ষমতা যে কত সমৃদ্ধ, সে সম্পর্কে আমরা অনেকেই অবহিত নই। বাংলা ভাষার প্রকাশ-ক্ষমতা যে কোনো কোনো সময় আন্তর্জাতিক ভাষা ইংরেজির চেয়ে শতগুণে সমৃদ্ধ, তা অনেকের উপলব্ধিতে নেই। এমন কোনো ভাব বা বিষয় নেই, যা বাংলা ভাষায় প্রকাশযোগ্য নয়, তাও অনেক বাঙালি স্বীকার করতে চায় না। সে জন্য বাংলাদেশের সূচনাপর্বে কিংবা তারও কিছু আগে একটি মহলকে জোরগলায় বলতে শুনেছি, বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান ও প্রাযুক্তিক জ্ঞান সম্ভব নয়। এদের তখন বলতে শুনেছি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বাংলা ভাষায় প্রকাশ সম্ভব নয়। অফিস আদালতের ভাষা, পার্লামেন্টের ভাষা, রাষ্ট্রভাষা বাংলা হতে পারে না। এর বিরুদ্ধে আমাদের তাই লড়াই করে প্রমাণ করতে হয়েছে বাংলা একটি অসম্ভব ধরনের সমৃদ্ধ ভাষা, যা জ্ঞান-বিজ্ঞানের সর্বক্ষেত্রে প্রয়োগযোগ্য। আজ স্কুল-কলেজে কিংবা উচ্চশিক্ষায় বাংলা ভাষায় সফলভাবে জ্ঞানচর্চার উদাহরণ থেকে আমরা সে হীনম্মন্যতা অনেকটা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছি।
সময়ের সাথে বাংলা নিয়ে এরপর আমাদের সামনে এসে হাজির হলো নতুন চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি-যুগের চ্যালেঞ্জ। এবারো আমরা অনেককে সংশয় প্রকাশ করতে শুনলাম- বাংলা ভাষাকে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তিতে প্রয়োগ করা সম্ভব নয়। তাই আমাদেরকে ইংরেজির ওপর ভর করেই চালিয়ে যেতে হবে প্রযুক্তির চর্চা ও প্রয়োগ। তাই আবারো আমাদের দৃঢ়তা নিয়ে উচ্চারণ করতে হলো- বাংলা যেহেতু পৃথিবীর অন্যতম এক সমৃদ্ধ ভাষা, সেহেতু তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তিতে এ ভাষার প্রয়োগ অবশ্যই সম্ভব। এমনি দৃঢ় প্রত্যয়ে যারা প্রত্যয়ী, তারা কাজে নেমে পড়লেন। লক্ষ্য একটাই, তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার সফল প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। চললো গবেষণা আর নানামাত্রিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা। এসব গবেষণা আর পরীক্ষা-নিরীক্ষাসূত্রে আমরা ইতোমধ্যেই অনেক সফলতা পেয়েছি। প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি, বাংলা ভাষা এর নিজস্ব মহিমায় উজ্জ্বল। বাংলা কোনো ক্ষেত্রেই পেছনে ঠেলে দেয়ার মতো অনগ্রসর পর্যায়ের কোনো ভাষা নয়। বাংলা আজ সফলভাবে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি এবং মুদ্রণশিল্পের প্রায় সব ক্ষেত্রেই প্রয়োগ হচ্ছে। আর এই প্রয়োগক্ষেত্রকে আরো ব্যাপকধর্মী করে তুলতে হলে বাংলা ভাষা নিয়ে এর প্রযুক্তিক্ষেত্রে ব্যবহারসংশ্লিষ্ট গবেষণাকে আরো জোরদার করতে হবে, বিশেষ করে বাংলা ধ্বনি নিয়ে গবেষণাকে আরো গভীর পর্যায়ে নিয়ে যেতে। স্পিচ রিকগনিশন তথা বাংলা ধ্বনির শনাক্ত করার প্রযুক্তির উন্নয়ন আজ অপরিহার্য।
সুখের কথা, স্বল্প পরিসরে হলেও সে কাজটি এদেশে কয় বছর আগে থেকেই শুরু হয়েছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিজস্ব উদ্যোগে কিংবা বিদেশী প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তাসূত্রে এ ধরনের গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি অনেকে ব্যক্তিপর্যায়ে এক্ষেত্রে নানা ধরনের গবেষণা পরিচালনা করছেন। প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বাংলা ভাষার প্রয়োগ-পর্যায়কে আরো উন্নতির দিকে নিয়ে যাওয়ার এসব গবেষণা-উদ্যোগের নানা দিক তুলে ধরে আমরা তৈরি করেছি এবারের প্রচ্ছদ প্রতিবেদনসহ আরো কয়েকটি সহ-প্রতিবেদন। আমাদের আশা, পাঠক এ প্রতিবেদনগুলো পড়ে এ বিষয়ে অনেক কিছু জানার সুযোগ পাবেন। সেই সাথে আগ্রহীরা এসব বিষয় নিয়ে নিজেদের ভাবনার পরিধিকে আরো সম্প্রসারিত করে তোলার সুযোগও পাবেন।
ফেব্রুয়ারি ভাষার মাস। ফেব্রুয়ারি বার বার আসে স্মরণ করিয়ে দিতে আমাদের ভাষা শহীদদের অসমান্তরাল আত্মত্যাগের কথা। সেই সাথে আসে বাংলা ভাষার প্রতি আমাদের যথার্থ মর্যাদা প্রদর্শনের ব্যাপারে তাগিদ দিতে। এ বিষয়টি বিবেচনায় রেখে আমরা কমপিউটার জগৎ-এর প্রতিবছরের ফেব্রুয়ারি সংখ্যায়ই বরাবর বাংলা ভাষার প্রাযুক্তিক উন্নয়নের ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের তাগিদ দিয়ে আসছি। আমাদের সে তাগিদ সব সময় যে সংশ্লিষ্টদের কাছে যথার্থ গুরুত্ব পেয়েছে তা নয়। তবু আমরা বাংলা ভাষার উন্নয়নে আশাবাদী হয়েই সে তাগিদ এবারেও রাখছি। আশা করছি, আমাদের এ তাগিদ এবার কিছুটা হলেও গুরুত্ব পাবে। সেই সূত্রে প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বাংলা ভাষার প্রয়োগের অগ্রগমন ঘটবে।