লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১১ - ফেব্রুয়ারী
প্রসঙ্গ : বাংলা কমপিউটিং এবং ব্যান্ডউইথের দাম কমানো
বাংলা আমাদের মায়ের ভাষা, প্রাণের ভাষা। আমাদের সবচেয়ে সহজবোধ্য ভাষা। নিজেকে প্রকাশ করার ভাষা। শেখার ভাষা। শেখানোর ভাষা। শিক্ষায় সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ভাষা। বলা যায়, বাংলাভাষা আমাদের এগিয়ে নেয়ার ভাষা। অতএব বাংলাকে বাদ দিয়ে কোনো ক্ষেত্রেই আমরা এগিয়ে চলার কথা ভাবতে পারি না। এ সত্যের বিন্দুমাত্র ব্যতিক্রম নেই আইসিটি-র বেলায়ও। এ সত্যকে ধারণ করেই আমরা পেয়েছি বাংলা কমপিউটিং। ইংরেজি নয়, বাংলাকে বাহন করে সহজে ও সবার জন্য বোধগম্য করে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতেই বাংলা কমপিউটিংয়ের সূচনা।
বাংলা যাদের মায়ের ভাষা, তাদের জন্য বাংলা কমপিউটিং যে সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য হবে, সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। সেই সত্যকে ধারণ করে আমাদের দেশে বিভিন্ন জন ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নানাভাবে বাংলা কমপিউটিংয়ের গবেষণাধর্মী কাজ করে যাচ্ছেন। তাদের প্রয়াসী গবেষণাসূত্রে আমরা এরই মধ্যে হাতে পেয়েছি বেশকিছু বাংলা সফটওয়্যার। এসব সফটওয়্যারের মাধ্যমে ইংরেজি না জানা কিংবা সামান্য ইংরেজি জানা মানুষের জন্য ইংরেজি সফটওয়্যার নিয়ে কাজ করতে যেসব অসুবিধা ছিল, তা এখন কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে, যদিও পুরোমাত্রায় নয়। সামান্য লেখাপড়া জানা মানুষ বাংলাভাষা ব্যবহারের মাধ্যমে এসব বাংলা সফটওয়্যার নানা ধরনের কমপিউটিং কাজ সম্পাদনের সুযোগ পাচ্ছে। প্রতিবন্ধী মানুষের জন্যও সে সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে, অবশ্য বাংলা সফটওয়্যারে এখনো নানা ধরনের সমস্যা রয়ে গেছে। তবে সময়ের সাথে ধীরে ধীরে এসব অসুবিধা দূর হচ্ছে, বাংলা সফটওয়্যারের কার্যকর ক্ষমতা বাড়ছে, সেই সাথে এগুলো ক্রমেই হয়েই উঠছে ব্যবহারবান্ধব। আমরা আশা করছি, একদিন বাংলা সফটওয়্যার সংশ্লিষ্ট গবেষকদের গবেষণার পথ বেয়ে সাধারণ ইংরেজি সফটওয়্যারগুলোর মতো সাবলীল হয়ে উঠবে। তাছাড়া সুখের কথা, সাধারণ মানুষের সাথে সাথে আজ নানা মাত্রার প্রতিবন্ধীরাও তাদের উপযোগী বাংলা সফটওয়্যার হাতের কাছে পাচ্ছে। এরপর আজ অনেক প্রতিবন্ধী মানুষই নিজেদেরকে অভিশপ্ত পরনির্ভর জীবনের গন্ডি থেকে বের করে আনতে সক্ষম হয়েছে। এজন্য এক্ষেত্রে নিয়োজিত গবেষক ও উদ্ভাবকদের আমরা মোবারকবাদ জানাই। সেই সাথে প্রত্যাশা রাখছি, সংশ্লিষ্ট সবার আন্তরিক প্রচেষ্টায় এক্ষেত্রে শিগগির আরো অবাক করা অগ্রগতি দেখতে পাবো। বাংলা কমপিউটিংয়ের নানা দিক তুলে ধরেই তৈরি হয়েছে আমাদের এবারের প্রচ্ছদ প্রতিবেদন।
বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি গত মাসে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে সরবরাহ করা ব্যান্ডউইডথের মাসিক ভাড়া প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কমিয়ে দিয়েছে। লক্ষ্য সাধারণ মানুষের মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহারকে আরো ব্যাপকতর করে তোলা। বিটিআরসি গত ২১ জানুয়ারি, ২০১০-এ এক পরিপত্রে উল্লেখ করে, প্রতিমাসে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে প্রতি এমবিপিএস ব্যান্ডউইডথের জন্য সর্বোচ্চ ভাড়া দিতে হবে ১২ হাজার টাকা। উল্লেখ্য, সারাদেশে ৮০ লাখ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী রয়েছেন। খুব শিগগিরই এদের সংখ্যা ১ কোটির সংখ্যাফলক অতিক্রম করবে। এদিকে আইএসপিগুলো বলছে, ব্যান্ডউইডথের দাম ৩১ শতাংশ কমে যাওয়ার ফলে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের পূর্বের দামে ২০ শতাংশ অতিরিক্ত ব্যান্ডউইডথ ব্যবহারের সুযোগ পাওয়া উচিত। কিন্তু সেই সাথে তাদের সংগঠন আইএসপিএবি কর্মকর্তারা বলছেন, তারা জানেন না প্রান্তিক-ব্যবহারকারীরা সে সুযোগ কতটুকু পাবেন। কারণ, ব্যান্ডউইডথের দাম কমলেও তাদের পরিচালনা ব্যয়সহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য খরচ একই থেকে যাবে। এদিকে সরকারের সিদ্ধান্ত হচ্ছে, ইন্টারনেটের ক্যাবল মাটির নিচ দিয়ে নিতে হবে। সেজন্য প্রত্যেক আইএসপিকে তাদের সার্ভিস অব্যাহত রাখার প্রয়োজনে আন্ডারগ্রাউন্ড নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত থাকতে ১২ লাখ টাকা থেকে ২৫ লাখ টাকা করে দিতে হবে। আইএসপিগুলোর বক্তব্য হচ্ছে এই খরচের টাকা প্রান্তিক ইন্টারনেট ইউজারদের কাছ থেকে নেয়ার ব্যবস্থা করা ছাড়া তাদের আর কোনো গত্যন্তর নেই। ফলে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, ব্যান্ডউইডথের দাম কমিয়ে ইন্টারনেট ব্যবহার সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপকতর করার ব্যাপারে সরকারের লক্ষ্য বাস্তবায়নের কী হবে। বাস্তবতা হচ্ছে, ইন্টারনেটের ব্যান্ডউইডথের দাম কমিয়ে ইন্টারনেট প্রবেশযোগ্যতা আরো বাড়ানো দরকার তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার সম্প্রসারণের জন্য। অতএব সরকার ও আইএসপিগুলোকে উপায় বের করতে হবে যাতে ইন্টারনেট ব্যবহারের খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে নামিয়ে আনা যায়। সরকার ও আইএসপিগুলোর এই উভয়ের প্রতি আমাদের সে তাগিদ রইলো।
কজ ওয়েব