লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
বাংলা ভাষায় কমপিউটিং এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ
বাংলা ভাষা। আমাদের মায়ের ভাষা। মুখের ভাষা। গৌরবের ভাষা। ভাষার গৌরব আমরা হারাতে চাই না, ভাষার মর্যাদাকে সমুন্নত রাখতে চাই, এর যথার্থ প্রমাণ আমরা অতীতে বারবার দিয়েছি। আমরা রক্তদলিল রচনা করেছি বাংলা ভাষাকে এর যথাযোগ্য মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য। সেই সূত্রে একুশে ফেব্রুয়ারি আজ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সুপ্রতিষ্ঠিত ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে। এর মাধ্যমে সন্দেহ নেই বাংলা ভাষা আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে এর স্থান করে নিয়েছে সুউচ্চ এক আসনে। এখন সময় বাংলা ভাষার সেই সুউচ্চ মর্যাদার আসন ধরে রাখার। সেদিক বিবেচনায় তথ্যপ্রযুক্তির যুগে, আরো সুনির্দিষ্ট করে বলতে গেলে বলতে হয় প্রযুক্তির এই সঙ্কর যুগে প্রযুক্তির মহাজগতেও বাংলা ভাষার জন্য আমাদের প্রতিষ্ঠিত করতে হবে তেমনি এক সুউচ্চ মর্যাদার আসন। সে তাগিদেই আসে বাংলা কমপিউটিংয়ের কাজকে জোরালো করে তোলার বিষয়টি। এ কথা সত্য, বাংলা কমপিউটিংয়ের কাজ যতটুকু জোরালোভাবে চলার কথা ছিল, তেমনটি চলেনি। তারপরও এ দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বাংলা কমপিউটিংয়ে তাদের শ্রমসাধনা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের শ্রমসাধনা সূত্রে আমাদের বাংলা কমপিউটিংয়ের কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। তবে সে এগিয়ে চলার গতি সমেত্মাষজনক নয় নিশ্চয়ই। এ ক্ষেত্রে গতি আনতে হলে এসব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমকে যেমনি আরো জোরালো করে তুলতে হবে, তেমনি আরো নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে সাগ্রহে এগিয়ে আসতে হবে বাংলা কমপিউটিংয়ের কাজে। নইলে কোনো মতেই বাংলা কমপিউটিংয়ের কাঙ্ক্ষিত গতি পাবে না। আমরা আশা করছি, আগামী দিনগুলোতে আরো বেশিসংখ্যক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি বাংলা কমপিউটিংয়ে গবেষণা ও উন্নয়নকর্মে যোগ দিয়ে তথ্যপ্রযুক্তির জগতে বাংলা ভাষার স্থানকে আরো ওপরে নিয়ে পৌঁছাবেন।
কমপিউটার জগৎ-এর পাঠকমাত্র জানেন, বিগত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে আমরা বাংলা কমপিউটিংয়ের বিষয়টির ওপর বরাবর তাগিদ দিয়ে আসছি। বিশেষ করে দুয়েক বছর ছাড়া প্রায় সব বছরেই কমপিউটার জগৎ-এর ফেব্রুয়ারি সংখ্যায় প্রচ্ছদ কাহিনী তৈরি করেছি বাংলা কমপিউটিংকে আলোচ্য বিষয় করে। এসব প্রচ্ছদ প্রতিবেদনে বাংলা কমপিউটিংয়ের বিভিন্ন কর্মকান্ড তুলে ধরার পাশাপাশি, কী হতে পারতো, অথচ হয়নি, ভবিষ্যতে কী হতে পারে, সে সব দিকনির্দেশনা তুলে ধরার প্রয়াস পেয়েছি সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞজনদের অভিজ্ঞতার আলোকে সম্পাদকীয়, প্রচ্ছদ প্রতিবেদন ও নানাধর্মী লেখালেখি প্রকাশের মাধ্যমে। আমরা বারবার এ ক্ষেত্রে বেসরকারি প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি উদ্যোগের পাশাপাশি সরকারি প্রতিষ্ঠনের করণীয় নির্দেশও করেছি। তাগিদ পৌঁছিয়েছি সংশ্লিষ্টদের কাছে। বিশেষ করে এ ক্ষেত্রে বাংলা একাডেমীর বিশেষ ভূমিকা কামনা করে তাগিদ দিয়েছি। কোনো কোনো সময় বাংলা একাডেমীর সমালোচনাও এসেছে আমাদের পক্ষ থেকে। তারপরও বাংলা একাডেমী এক্ষেত্রে সেভাবে এগিয়ে এসেছে বলে মনে হয় না। তাই এবারো আমাদের তাগিদ রইল বাংলা একাডেমী যেন বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নেয়। সে অনুযায়ী ভবিষ্যৎ কর্মসূচি রচনা করে।
সবচেয়ে বড় কথা, সব মহলের এগিয়ে আসার পথ বেয়েই বাংলা কমপিউটিং এর কাঙ্ক্ষিত অগ্রযাত্রা নিশ্চিত করবে। সে উপলব্ধিতে সবাই এ ব্যাপারে সচেতন ভূমিকা পালন করবে সেই আহবানই সবার কাছে রইল এবার। ভুললে চলবে না, প্রযুক্তি সে গতি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, সে গতির সাথে সমান্তরালভাবে না চলতে পারলে, আমরা অন্যদের চেয়ে পিছিয়ে পড়ব। প্রযুক্তি নামের মোক্ষম হাতিয়ারটিকে অগ্রগতির হাতিয়ার করার সুযোগ হারাবো। যেমনটি আমরা হারিয়েছি অতীতে অনেকবার। অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে সে ভুল যেন আমরা আর না করি।
আমরা জানি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি নিয়ে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসীন। সরকার এই ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে নানা উদ্যোগ-আয়োজন চালিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি সে লক্ষ্যে অনেকে ব্যক্তিগতভাবে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। আমরা মনে করি, তাদের উদ্যোগের যথার্থ স্বীকৃতি জানানো দরকার। সে উপলব্ধি থেকে সম্প্রতি মাসিক কমপিউটার জগৎ দেশে তেমনি ক’জন ব্যক্তিকে স্বীকৃতি জানানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এ স্বীকৃতির ফলে তারা তাদের এই অবদানের মাত্রা বাড়াতে অনুপ্রাণিত হবেন বলেই আমাদের বিশ্বাস। তাদের অবদানের ক্ষেত্র তুলে ধরে আমাদের এবারের ইংরেজি বিভাগে রয়েছে একটি লেখা।
আমরা স্বীকার করি, আমাদের জানার বাইরে আরো অনেকেই এক্ষেত্রে নিবেদিতভাবে হয়তো কাজ করছেন। তাদের প্রতিও রইলো আমাদের আন্তরিক শ্রদ্ধা।
কজ ওয়েব