তথ্যপ্রযুক্তির যুগে সবাই কমবেশি কমপিউটার ব্যবহার করে থাকেন। এমন অনেকেই কমপিউটারকে এতটাই কাস্টোমাইজ করে থাকেন যে, কমপিউটার অন করলেই খুব অল্প সময়ে ডেস্কটপ চলে আসে। কম সময়ের মাঝে ডেস্কটপ চলে আসে বলে অনেকেই একে পছন্দ করে থাকেন। কিন্তু এখানে রয়েছে বেশ কিছু সমস্যা। যেকেউ আপনার কমপিউটার অন করলে সহজেই আপনার ডেস্কটপে চলে আসতে পারবেন। আপনি কি আপনার ব্যক্তিগত ফাইলসমূহ অন্যের কাছে এত সহজে হাইলাইট করে দিতে চান? আবার এমনও হতে পারে, কেউ আপনার কমপিউটার হতে দরকারি কোনো ফাইল বা সিস্টেমের কোনো ফাইল ভুলে বা ইচ্ছে করে ডিলিট করে দিতে পারেন, এতে আপনার কমপিউটারের বেশ সমস্যা হয়ে যেতে পারে। এর ফলে আপনার কমপিউটারটি নিরাপদ নয়। কমপিউটারকে কিভাবে নিরাপদ রাখা যায় তাই নিয়ে এবারের সংখ্যায় আলোচনা করা হয়েছে।
ধাপ-১ : আলাদা ইউজার নেম ব্যবহার করা
এক কমপিউটার যদি একাধিক ইউজার ব্যবহার করে থাকেন তাহলে সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি হচ্ছে প্রতিটি ইউজারের জন্য আলাদাভাবে ইউজার নেম খুলে রাখা। আলাদা ইউজার নেম খোলার সুবিধা হচ্ছে, তা আপনার নিজের ফাইলসমূহের প্রাইভেসি রক্ষা করবে। কেউ আপনার ইউজার নেমে প্রবেশ করে আপনার কমপিউটারের ক্ষতি করতে পারবে না।
নতুন ইউজার তৈরি করার জন্য স্টার্ট মেনুতে ক্লিক করে সেটিংসের মাধ্যমে কন্ট্রোল প্যানেলে প্রবেশ করুন। User Accounts নামে একটি আইকন রয়েছে, এখানে ডবল ক্লিক করুন। এতে নিচের চিত্রের মতো একটি উইন্ডো প্রদর্শিত হবে।
চিত্র-১
এখানে দেখুন Create a new account নামে একটি অপশন রয়েছে, তাতে ক্লিক করুন। এতে আপনার কাছে ইউজার নেম চাওয়া হবে। ইউজার নেম টাইপ করে নেক্সট বাটনে প্রেস করুন। Pick an account type থেকে Limited সিলেক্ট করে Create Account-এ ক্লিক করুন। এতে আপনার নতুন ইউজার তৈরি হবে।
ধাপ-২ : লিমিটেড ইউজার নেম তৈরি করুন
উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম ইনস্টল করার পর থেকে যেকোনো কাজ করার জন্য অ্যাডমিনিস্ট্রেটর ইউজার অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে থাকেন। এতে অনেক সময় নিজের অজান্তে বা অন্য কেউ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর হিসেবে কমপিউটার ব্যবহার করে থাকলে ফাইল মিসিং করে ফেলতে পারে বা আপনার অজান্তে বিভিন্ন ধরনের হার্মফুল সফটওয়্যার ইনস্টল করতে পারে, এতে আপনার কমপিউটারের পারফরমেন্স কমে যেতে পারে। তাই প্রতিটি ইউজারের জন্য লিমিটেড ইউজার টাইপ দিয়ে ইউজার নেম তৈরি করুন।
চিত্র-২
লিমিটেড ইউজার নেম দিয়ে অ্যাকাউন্ট খোলার সুবিধা হচ্ছে, কেউ ইচ্ছে করলেই আর আপনার সিস্টেমের দরকারি ফাইল মুছে ফেলতে পারবে না বা হার্মফুল সফটওয়্যার বা টুল ইনস্টল করতে পারবে না। যেকোনো সফটওয়্যার ইনস্টল করতে গেলে অ্যাডমিনিস্ট্রেটর ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড চাইবে। অ্যাডমিনিস্ট্রেটর ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড দিলেই সফটওয়্যার ইনস্টল করতে পারবে, নইলে নয়। এই পদ্ধতি আপনার কমপিউটারের পারফরমেন্সকে কমানোর হাত থেকে রক্ষা করবে। কোনো সফটওয়্যার লিমিটেড ইউজার হিসেবে ইনস্টল করতে গেলে নিচের চিত্রের মতো করে এরর মেসেজ দেবে।
ধাপ-৩ : পাসওয়ার্ড প্রোটেক্টেড করা
প্রতিটি ইউজারের জন্য আলাদাভাবে পাসওয়ার্ড দিয়ে দিন এবং ইউজারকে বলুন নিজ নিজ পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে নিতে। ৮ ক্যারেক্টারের বেশি পাসওয়ার্ড দেয়া হলে এই পাসওয়ার্ড বেশি সিকিউর হয়ে থাকে। বিভিন্ন ক্যারেক্টারের মিশ্রণে তৈরি পাসওয়ার্ড দিন। কখনও এমন কোনো পাসওয়ার্ড ব্যবহার করবেন না, যা আপনার পরিচিত যেকেউ একটু চিন্তা করেই টাইপ করে আপনার অ্যাকাউন্টে ঢুকে যেতে পারে।
ধাপ-৪ : ফোল্ডারসমূহ প্রাইভেট করুন
আপনার প্রয়োজনীয় ফোল্ডারসমূহ প্রাইভেট হিসেবে সেট করুন। একজন লিমিটেড ইউজারের ফাইল অন্য লিমিটেড ইউজারের কাছ থেকে নিরাপদ রাখে। কিন্তু অ্যাডমিনিস্ট্রেটর খুব সহজে তা দেখে ফেলতে পারে। তাই My Documents ফোল্ডারকে প্রাইভেট হিসেবে সেট করুন। My Documents ফোল্ডারকে প্রাইভেট হিসেবে সেট করার জন্য ফোল্ডারের ওপর ডান ক্লিক করে প্রোপার্টিজ সিলেক্ট করুন। প্রোপার্টিজ উইন্ডো থেকে শেয়ারিং ট্যাবে গিয়ে Make this folder private অপশনের বাম পাশের বক্সে টিক মার্ক দিয়ে Apply বাটনে ক্লিক করে ওকে বাটনে প্রেস করুন।
ধাপ-৫ : অ্যান্টিভাইরাস আপডেট রাখুন
অনেকেই অপারেটিং সিস্টেম ইনস্টল করার পরই পুরনো কোনো ভার্সনের অ্যান্টিভাইরাস সেটআপ করে থাকেন। কিন্তু ইন্টারনেটের অভাবে বা না জানার কারণে এসব অ্যান্টিভাইরাসকে ইন্টারনেট হতে আপডেট করা হয় না। এতে সে অ্যান্টিভাইরাস তৈরি হওয়ার পর যেসব ভাইরাস তৈরি হয়েছে তাকে ধরতে পারবে না। তাই আপনার অ্যান্টিভাইরাসের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন এবং সাইট থেকে নতুন আপডেট ফাইল ডাউনলোড করে অ্যান্টিভাইরাসকে ম্যানুয়ালি বা স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপডেট করে নিন। যদি আপনার কমপিউটারে ইন্টারনেটের সংযোগ না থাকে তাহলে সাইবার ক্যাফে থেকে অ্যান্টিভাইরাসের আপডেট ফাইল ডাউনলোড করেও কাজ চালিয়ে যেতে পারেন।
ধাপ-৬ : অপ্রয়োজনীয় শেয়ার বন্ধ করে দিন
যাদের কমপিউটার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে যুক্ত, তাদেরকে দেখা যায় তাদের ফাইলসমূহকে অন্যের সাথে শেয়ার করার জন্য সবসময় শেয়ার অপশন এনাবল করে রাখেন এবং অনেকেই ফোল্ডারকে ফুল অ্যাক্সেস দিয়ে থাকেন। এতে আপনার কমপিউটারের সিকিউরিটি কমে যায় এবং যেকোনো ফাইলের মাধ্যমে খুব সহজেই আপনার কমপিউটারে ভাইরাস প্রবেশ করতে পারে। তাই অপ্রয়োজনীয় শেয়ারসমূহ বা কাজ শেষ হয়ে গেলে শেয়ারসমূহ বন্ধ করে দিতে পারেন।
ধাপ-৭ : কী-জেন বা প্যাচ ফাইল ব্যবহার
অনেকেই আছেন ট্রায়াল ভার্সন সফটওয়্যার ব্যবহার করে থাকেন এবং ট্রায়াল সময় শেষ হয়ে গেলে সফটওয়্যারটিকে আরো বেশিদিন ব্যবহার করার জন্য কী-জেন বা প্যাচ ফাইল ব্যবহার করে থাকেন। এসব প্যাচ ফাইল বুঝেশুনে ব্যবহার করবেন। কারণ বেশিরভাগ প্যাচ ফাইল বা কী-জোনে ভাইরাস থাকে। যখনই ক্লিক করবেন তখনই স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার কমপিউটারের সিস্টেমের ভেতর ভাইরাসগুলো প্রবেশ করবে।
উপরের ধাপগুলো ব্যবহার করে আপনার কমপিউটারকে নিরাপদ রাখতে পারেন বা ভাইরাসের হাত থেকে বা ক্ষতি হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে পারেন। তবে গুগলে সার্চ করলে এরচেয়ে হাজারো রকমের তথ্য পাবেন কমপিউটারকে ভাইরাসমুক্ত বা নিরাপদ রাখার জন্য।
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : rony446@yahoo.com