• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > সার্টিফায়েড সফটওয়্যার টেস্টিং ইঞ্জিনিয়ারিং প্রশিক্ষণ কোর্স
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০০৯-০৭-৩০
তথ্যসূত্র:
অন্যান্য
লেখার ধরণ:
সফটওয়্যার
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
অন্যান্য
সার্টিফায়েড সফটওয়্যার টেস্টিং ইঞ্জিনিয়ারিং প্রশিক্ষণ কোর্স
আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের ক্ষেত্রে পৃথিবীতে সুনাম অর্জন করেছে। প্রতি বছর সফটওয়্যার রফতানি করে ভারতে শত শত কোটি ডলার আয় করছে। বর্তমানে বাংলাদেশেও বিভিন্ন সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান সফটওয়্যার রফতানি করা শুরু করেছে এবং বছরে মিলিয়ন ডলার আয়ও হচ্ছে ওই সফটওয়্যার রফতানি থেকে। আন্তর্জাতিক বাজারে সফটওয়্যার রফতানি করার জন্য আন্তর্জাতিক মানের সফটওয়্যার ডেভেলপ করতে হয়। দেশের সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাই নিজেদের মান উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।

সফটওয়্যার শিল্পের বিকাশ ও রফতানির ক্ষেত্রে ভারতের এই অভাবনীয় সাফল্যের মূলে আছে মানসম্পন্ন বা কোয়ালিটি সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের বিশেষ দক্ষতা। আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন সফটওয়্যার ডেভেলপ করার জন্য তাই স্থানীয় সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিশেষ মনোযোগী হতে হবে।

ভারতসহ পৃথিবীর সব উন্নত দেশেই সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের পর অভিজ্ঞ সফটওয়্যার টেস্টারদের মাধ্যমে টেস্টিংয়ের পর সফটওয়্যারটির মান সম্পর্কে নিশ্চিত হলে তবেই তা বাজারজাত বা রফতানি করা হয়। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাফল্য অর্জনের জন্য বাংলাদেশের সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানগুলোকেও সফটওয়্যার টেস্টিংয়ে গুরুত্ব বাড়াতে হবে।

উন্নত দেশগুলোতে সফটওয়্যার মানের নিশ্চয়তার জন্য সার্টিফায়েড টেস্টারদের সফটওয়্যার টেস্টিংয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়। বর্তমানে ইন্টারন্যাশনাল সফটওয়্যার টেস্টিং কোয়ালিফিকেশন বোর্ড (আইএসটিকিউবি)-এর সফটওয়্যার টেস্টার সার্টিফিকেট প্রাপ্তদের সার্টিফায়েড সফটওয়্যার টেস্টার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে গণ্য করা হয়। বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেল্সভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল সফটওয়্যার টেস্টিং বোর্ড সফটওয়্যার টেস্টিংয়ে ‘আইএসটিকিউবি সার্টিফায়েড ফাউন্ডেশন লেভেল (সিটিএফএল)’ ও ‘আইএসটিকিউবি সার্টিফায়েড টেস্টার অ্যাডভান্সড লেভেল’ এবং ‘সার্টিফায়েড টেস্টার এক্সপার্ট লেভেল’ কোর্স প্রবর্তন করে উত্তীর্ণদের সার্টিফায়েড টেস্টারের সার্টিফিকেট প্রদান করে, যা আন্তর্জাতিক বাজারে অনেক দিন ধরেই স্বীকৃতি পেয়ে আসছে। বর্তমানে পৃথিবীতে এ ধরনের লক্ষাধিক সার্টিফায়েড সফটওয়্যার টেস্টিং প্রফেশনাল কাজ করছেন। ভারতের সার্টিফায়েড সফটওয়্যার প্রফেশনালের সংখ্যা চার হাজার। কিন্তু দুঃখজনক যে, বাংলাদেশের সফটওয়্যার অঙ্গনে একজনও সার্টিফায়েড সফটওয়্যার প্রফেশনাল টেস্টার নেই।

সম্প্রতি আইএসটিকিউবি সফটওয়্যার টেস্টিং সার্টিফিকেশনের ক্ষেত্রে গ্লোবাল স্ট্যান্ডার্ডের মর্যাদা অর্জন করেছে। ইন্ডিয়ান টেস্টিং বোর্ডের প্রধান ভিপুল কোচার জানিয়েছেন, সফটওয়্যার টেস্টার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করার ক্ষেত্রে ভারতে এখন আইএসটিকিউবির সফটওয়্যার টেস্টিং সার্টিফিকেশনেই সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে এবং নিয়োগের ক্ষেত্রে পূর্বশর্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ভারতের যেসব সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক বাজারে সফটওয়্যার কার্যক্রম পরিচালনা করছে সেই সব দেশের সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানগুলোর সুপারিশ থাকে যে তাদের জন্য ভারতে যে সফটওয়্যারগুলো তৈরি হচ্ছে সেগুলোর মান যেন সার্টিফায়েড সফটওয়্যার টেস্টিং প্রফেশনালদের মাধ্যমে যাচাইয়ের পর পাঠানো হয়। এই কারণে ভারতে সার্টিফায়েড টেস্টিং প্রফেশনালদের চাহিদা অত্যন্ত বেশি।

বাংলাদেশের যেসব সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক বাজারে সফটওয়্যার রফতানি করছে, তারা যদি তাদের প্রতিষ্ঠানে সার্টিফায়েড সফটওয়্যার টেস্টিং প্রফেশনাল বা ইঞ্জিনিয়ার অন্তর্ভুক্ত করতে পারে তবে বিদেশে তাদের ডেভেলপ করা সফটওয়্যারের গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেড়ে যাবে। এর ফলে সফটওয়্যার রফতানির পরিমাণও বাড়বে।

২০০৬ সালের জানুয়ারি মাসে জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীনে বাংলাদেশে আসে একটি বিরাট বিজনেস ডেলিগেশন। ওই ডেলিগেশনে উপস্থিত ছিলেন প্রফেসর ড. বার্নড্ হিনডেল। ড. হিনডেল ইন্টারন্যাশনাল সফটওয়্যার টেস্টিং বোর্ডের একজন প্রতিষ্ঠাতা। ওই সময় বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতির প্রতিনিধিদলে ছিলেন দেশের বিশিষ্ট কমপিউটার ব্যক্তিত্ব, বংলাদেশ কমপিউটার সমিতির সাবেক সভাপতি ও ডেফোডিল গ্রুপের চেয়ারম্যান মো: সবুর খান। দুই দেশের প্রতিনিধি দলের সভায় ড. হিনডেল জানান, বাংলাদেশের ডেভেলপ করা সফটওয়্যারের মানের উন্নয়ন ও বিশ্ব স্বীকৃতি অর্জনের জন্য এই দেশে সফটওয়্যার টেস্টিং কার্যক্রম শুরু করতে হবে।

হিনডেল আরো বলেন, এই লক্ষ্যে সফল হতে হলে প্রথমে বাংলাদেশকে ইন্টারন্যাশনাল সফটওয়্যার টেস্টিং কোয়ালিফিকেশন বোর্ডের সদস্য হতে হবে। বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল সফটওয়্যার টেস্টিং কোয়ালিফিকেশনের ২৮তম সদস্যের মর্যাদা লাভ করে। বর্তমানে বিশ্বের ৪২টি দেশ এই বোর্ডের সদস্য। এর পর থেকে বাংলাদেশে এর কার্যক্রম শুরু হয়।

ইন্টারন্যাশনাল সফটওয়্যার কোয়ালিটি ইনস্টিটিউট (আইএসকিউআই) হলো ইন্টারন্যাশনাল সফটওয়্যার টেস্টিং কোয়ালিফিকেশন বোর্ডের উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানটি সফটওয়্যারের মান বা কোয়ালিটির সাথে জড়িত বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে, যেমন সফটওয়্যারের মানের উন্নয়ন এবং এর জন্য কুশলীদের উন্নতমানের ট্রেনিং এবং দক্ষতার স্বীকৃতিস্বরূপ সার্টিফিকেট প্রদান, সেমিনার ও কনফারেন্সের মাধ্যমে সফটওয়্যার শিল্প এবং একাডেমিয়ার মধ্যে সংযোগ তৈরি করা ইত্যাদি। আইএসকিউআই প্রতি বছর সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ওপর একটি কনফারেন্সের আয়োজন করে। ২০০৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত প্রতি বছরের কনফারেন্সে বাংলাদেশ সফটওয়্যার টেস্টিং বোর্ডের সাধারণ সম্পাদক মো: নূরুজ্জামান যোগদান করেন এবং কয়েকটি সেশনের চেয়ারম্যানও ছিলেন। আইএসকিউআই-এর সাথে ডেফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির একটি শিক্ষা কার্যক্রমবিষয়ক চুক্তিও সম্পাদিত হয়েছে।

সম্প্রতি ভারতের রাজধানী দিল্লিতে অনুষ্ঠিত আইএসটিকিউবি-এর সাধারণসভায় যোগদান করেন বাংলাদেশ সফটওয়্যার টেস্টিং বোর্ডের সাধারণ সম্পাদক মো: নূরুজ্জামান। সেখানে তিনি ভারতের সফটওয়্যার টেস্টিং বোর্ডের প্রেসিডেন্ট ভিপুল কোচারের সাথে একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর করেন। চুক্তি অনুযায়ী ভিপুল কোচার আগামী ২৮ জানুয়ারি থেকে ৩১ জানুয়ারি ২০০৯ চারদিনব্যাপী সার্টিফায়েড সফটওয়্যার টেস্টিং ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স পরিচালনা করবেন। এবারই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে এ ধরনের একটি আন্তর্জাতিক মানের কোর্স অনুষ্ঠিত হবে, যোগাযোগ : ০১৭১৩৪৯৩১৬৬। ভিপুল কোচার ভারতের বিখ্যাত আইটি শিক্ষা কেন্দ্র খড়গপুর আইআইটি থেকে কমপিউটার সায়েন্সে মাস্টার্স এবং সফটওয়্যার টেস্টিং ও কোয়ালিটি অ্যানালাইসিসে একজন আন্তর্জাতিকমানের বিশেষজ্ঞ। তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সেমিনারে কী-নোট স্পিকার হিসেবে অংশ নিয়ে থাকেন।

দেশের সফটওয়্যার শিল্পকে ব্যাপকভাবে আন্তর্জাতিক মানে উন্নত করার উদ্দেশ্যেই এই কোর্সের আয়োজন করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানের সফটওয়্যার কুশলীরা বিশেষ করে যারা সফটওয়্যার টেস্টিংয়ের সাথে জড়িত, তারাই এই কোর্সে অংশগ্রহণ করে নিজেদের দক্ষতা বাড়াতে সক্ষম হবেন। সেই সাথে বাংলাদেশের কয়েকজন সফটওয়্যার কুশলী সার্টিফায়েড সফটওয়্যার টেস্টিং ইঞ্জিনিয়ারের মর্যাদা অর্জন করবেন। এর ফলে বিদেশে বাংলাদেশী সফটওয়্যারের গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেড়ে যাবে। কোর্সটিতে ২০/২৫ জন কুশলী অংশ নিতে পারবেন।
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
অনান্য লিঙ্কস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস