লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
৩য় মত
দেশী গেম ডেভেলপমেন্ট শিল্প বিকাশে সরকারি উদ্যোগ চাই
মোবাইল ফোন বা স্মার্টফোনের ব্যাপক বিস্তারের সাথে সাথে সারাবিশ্বে এ ডিভাইসগুলোর জন্য অ্যাপ্লিকেশন বিশেষ করে মোবাইল গেম ডেভেলপমেন্টের চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে এবং তা অব্যাহতভাবে বেড়েই চলেছে। অনেকের মতে, স্মার্টফোনের প্রসারের কারনে গেমিং সেক্টরটি অনেকাংশে এগিয়ে গেছে। আবার কেউ কেউ মনে করেন, স্মার্টফোনের জন্য অব্যাহতভাবে নিত্যনতুন গেম ডেভেলপ হওয়ায় এর ব্যাপক বিস্তারের পেছনে অন্যতম প্রধান নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে। তবে যাই হোক, একথা সত্য স্মার্টফোনের ব্যাপক বিসত্মারের সাথে সাথে আন্তর্জাতিকভাবে তৈরি হয়েছে বিলিয়ন ডলারের মোবাইল গেম ডেভেলপমেন্টের বাজার। এ বাজারে বাংলাদেশী বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান সফলভাবে গেম ডেভেলপ করে আসছে।
আমরা জানি, এক সময় বাংলাদেশের গার্মেন্ট শিল্প হাতেগোনা দুয়েকটি প্রতিষ্ঠানের হাত ধরে যাত্রা শুরু করে সম্পূর্ণরূপে ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায়, যেখানে সরকারের কোনো পৃষ্ঠপোষকতা ছিল না। ছিল না কোনো সহায়ক পরিবেশ। এমন অনেক প্রতিকূলতা কাটিয়ে সেই গার্মেন্ট শিল্প এখন বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল ভিত। শুধু তাই নয়, বিশ্বের অনেক দেশকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশের গার্মেন্ট শিল্প এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অবস্থানে রয়েছে। মোবাইল ফোন বা স্মার্টফোনের জন্য অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্টের বর্তমান এ ধারা যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে মোবাইল গেম ডেভেলপমেন্টের ক্ষেত্রে বাংলাদেশী গেম ডেভেলপারেরা একটি সুদৃঢ় অবস্থানে পৌঁছে যাবে।
বাংলাদেশে গেম তৈরির কাজ শুরু হয় ২০০৫ সাল থেকে। শুরু থেকেই বাংলাদেশী গেম ডেভেলপমেন্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে সফলতা পেতে বেশ বেগ পেতে হয় গার্মেন্ট শিল্পের মতোই। এখন অবশ্য সেই দুর্দিন কিছুটা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে। এখন কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে অর্ধশতাধিক নির্মাতা কাজ করছে। বাংলাদেশে মোবাইল গেমের পাশাপাশি ব্রাউজার ও ওয়েবভিত্তিক গেম তৈরি হচ্ছে, যেগুলো আমত্মর্জাতিক মানের। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান আইফোন অ্যাপ্লিকেশন, অ্যান্ড্রয়িডের জন্য বিভিন্ন গেম ও অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করছে। বাংলাদেশের অনেক প্রতিষ্ঠানই এখন জনপ্রিয় বেশ কিছু গেম তৈরি করছে। অনেক গেমের বিক্রি ছাড়িয়ে গেছে প্রত্যাশার সীমা। এসব গেমের মধ্যে ট্যাপ টু আনলাক থ্রিডি গেমটি এখন ট্যাপিং গেমের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে। টিপ ট্যাপ অ্যান্ট গেমটির গ্রাফিক্সের মান এত উন্নত যে একে সিলিকন ভ্যালির তৈরি গেম মনে হবে। টন্টি আর মন্টি ফ্রুট ব্যান্ডিট গেমটি খেলা যাবে গুগল অ্যান্ড্রয়িড ও অ্যাপল আইওএস ডিভাইসে। এখানে উল্লেখ করা দরকার যে বাংলাদেশী গেম ডেভেলপারদের তৈরি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন থেকে বছরে আয় হওয়া প্রায় ২৩ কোটি মার্কিন ডলারের বেশিরভাগই এসব গেম বিক্রি থেকে আসা।
বাংলাদেশের সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস তথা বেসিস সূত্রে জানা গেছে, শুধু মোবাইল গেম নিয়ে কাজ করছে বেসিসের তালিকাভুক্ত ১৩ প্রতিষ্ঠান। এর বাইরে রয়েছে প্রায় শতাধিক প্রতিষ্ঠান, যেগুলো মোবাইল গেম অ্যাপ্লিকেশন নিয়ে কাজ করছে।
বাইরের দেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে মোবাইল গেম ডেভেলপমেন্টের ওপর চার বছরের গ্র্যাজুয়েশন/ডিপেস্নামা প্রশিক্ষণ রয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে সরকারি বা বেসরকারিভাবে এ ধরনের কোনো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান যদি এ ধরনের প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেয়, তাহলে বাংলাদেশে গেম ডেভেলপমেন্ট খাতটি অনেকাংশে এগিয়ে যাবে এবং বিশ্বের কয়েক বিলিয়ন ডলারের গেমিংয়ের বাজারে প্রতিযোগিতায় শুধু শামিল হতে পারবে তা নয়, বরং আমি মনে করি, এ ক্ষেত্রে বেশ দৃঢ় অবস্থান তৈরি করে নিতে সক্ষম হবে।
দৈনন্দিন চাহিদানির্ভর অ্যাপস ডেভেলপমেন্ট করতে পারলে বিলিয়ন ডলারের বাজারে বাংলাদেশের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এ বিষয়টি অনুধাবন করে আইসিটি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বাংলাদেশে অ্যাপস ডেভেলপ বাড়াতে সম্প্রতি ধারাবাহিক কয়েকটি সেমিনার আয়োজন করা হয়েছে। এসব সেমিনার থেকে বিভিন্ন গাইডলাইনও দেয়া হচ্ছে। এজন্য আইসিটি মন্ত্রণালয়কে সাধুবাদ জানাই।
আমরা আশা করব, বাংলাদেশের গেম ডেভেলপমেন্ট খাতটি অনেকদূর এগিয়ে যাবে, যেমনভাবে গার্মেন্ট খাতটি এগিয়ে গেছে। সব ধরনের প্রতিকূলতা কাটিয়ে গার্মেন্ট শিল্পের মতো বাংলাদেশের গেম ডেভেলপমেন্ট খাতটি এগিয়ে যাবে তা আমাদের প্রত্যাশা।
বাংলাদেশে গেম ডেভেলপমেন্টে সরকারি উদ্যোগ শুধু সভা-সেমিনারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না তা আমাদের যেমন প্রত্যাশা, তেমনি আরও প্রত্যাশা সরকার এ খাতটি গড়ে ওঠার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে ও সব ধরনের সহায়তা দেবে এ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে।
আজাদ
আম্বরখানা, সিলেট
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------
বিস্ময়ের বিস্ময় মাইক্রোসফটের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ
অপারেটিং সিস্টেমের জগতে একচ্ছত্র আধিপত্য বিসত্মারকারী মাইক্রোসফট বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সেবামূলক বিভিন্ন কর্মকা-- আর্থিক সহায়তা দেয়ার পাশাপাশি আয়োজন করে আসছে তথ্যপ্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট ছাত্রদের জন্য ইমাজিন কাপ শীর্ষক সবচেয়ে বড় আইটি অলিম্পিক। এ প্রতিযোগিতাটি আমত্মর্জাতিকভাবে প্রতিবছরই ভিন্ন ভিন্ন দেশে অনুষ্ঠিত হয়।
২০০৩ সাল থেকে এ প্রতিযোগিতাটি অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে পাঁচটি ক্যাটাগরিতে। যেমন সফটওয়্যার ডিজাইন, অ্যাবেডেট ডেভেলপমেন্ট, গেম ডিজাইন, ডিজিটাল মিডিয়া এবং উইন্ডোজ ফোন ৭। ২০০৩ সালে ইমাজিন কাপ প্রতিযোগিতাটি অনুষ্ঠিত হয় স্পেনে। পরবর্তী প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় ব্রাজিলে। এভাবে পর্যায়ক্রমে ইমাজিন কাপ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় জাপান, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, ফ্রান্স, মিসর পর্তুগাল, যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ায়। এ বছর ইমাজিন কাপ ২০১৩ অনুষ্ঠিত হবে রাশিয়ায়।
ইমাজিন কাপ ২০১৩-এর বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের প্রাইমারি সিলেকশন প্রসেস সম্পন্ন করে মাইক্রোসফট বাংলাদেশ অফিস। পুরো প্রক্রিয়া শুরু হয় গত বছরের আগস্টে। ইমাজিন কাপ ২০১৩-এর বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের চাম্পিয়ন হয়ে বুয়েট দল এ আমত্মর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য যোগ্যতা অর্জন করে।
ইমাজিন কাপ ২০১৩ চূড়ামত্ম পর্বে বাংলাদেশী দলের অংশগ্রহণের অফিসিয়াল স্পন্সর হলো মাইক্রোসফট, যারা রাশিয়ায় যাওয়া-আসাসহ যাবতীয় খরচ বহন করবে। কিন্তু এখন বাংলাদেশীদেরকে এই ট্যুরের জন্য স্পন্সর খুঁজতে বলা হচ্ছে, যা রীতিমতো বিস্ময়করই নয় বরং দুঃখজনকও বটে।
মাইক্রোসফটের মতো প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এমন আচরণ অপ্রত্যাশিত, কেননা মাইক্রোসফট এ ধরনের কর্মসূচির জন্য প্রচুর অর্থ সহায়তা দিয়ে থাকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। অনেকের কাছে বিষয়টি অবিশ্বাস্য ও দুঃখজনক মনে হচ্ছে, কেননা মাইক্রোসফট বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তথ্যপ্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট তরুণ মেধাবীদেরকে পৃষ্ঠপোষকতার জন্য প্রচুর অর্থ সহায়তাসহ অন্যান্য সহায়তা দিয়ে থাকে। সেখানে ইমাজিন কাপ ২০১৩-এর চূড়ামত্ম পর্বে বাংলাদেশী দলের অংশগ্রহণের অফিসিয়াল স্পন্সর হয়ে এমন আচরণ করছে তা অবিশ্বাস্য ও অকল্পনীয়। আমার দৃঢ় বিশ্বাস এখানে হয়তো অনাকাঙ্খিত অন্য কিছু ঘটেছে। এ বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য মাইক্রোসফট বাংলাদেশ অফিসের প্রতি অনুরোধ রইল।
আবদুলস্নাহ আল-মামুন
দুমকি, পটুয়াখালী